বেদ আমাদের আদি ও প্রধম ধর্মগ্রন্থ । এই ধর্মগ্রন্থের বাণীগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিপর্তনীয় । এ জন্য এই গ্রন্থের বাণী বেদবাক্য নামে সমাজে পরিচিত । ঋগবেদে ইন্দ্র অগ্নি বরুণ সূর্য্য প্রভৃতি দেবতার স্তব স্তুতি আছে ।আমাদের ধর্ম যেহেতু মানব সভ্যতার আদি আর্য সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষেরা অনুসরণ করতো সেহেতু এই আর্যগণ এই সকল দেবতার স্তব স্তুতি করতো যা বেদে উল্লেখ রয়েছে ।তাঁরা এ সকল দেবদেবতার উদ্দেশ্যে যাগযজ্ঞ করে অভীষ্ট ফল লাভ করতেন ।বেদের প্রধান মূল কথা হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা এক এবং অদ্বিতীয় । আমাদের ধর্মের পূর্বপুরুষ যারা আর্য নামে খ্যাত ছিল তারা জানতেন যে ইন্দ্র অগ্নি বরুণ প্রভৃতি দেবগণ ভগবানের শক্তির বিভিন্ন বিকাশ । বর্তমান বিজ্ঞান জগতে সূর্যকে সকল শক্তির উত্স মনে করা হয় । হিন্দু ধর্মে সূর্যকে তাই দেবতা মনে করে সূর্যদেব বলা হয় । সূর্যদেবতার ক্ষমতা জানার পর হিন্দুরা সূর্যকে পূজা করতে শিখল । অন্যদিকে সূর্যের উপস্থিতিতে উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ করে এবং খাদ্য তৈরী করে তারাই সকল প্রাণী জগতকে এই ধরাধামে টিকিয়ে রেখেছে । তাই আমরা সকল প্রাণী উদ্ভিদের অতিথি ।
এই সময় যাগযজ্ঞাদির প্রাধান্য সমাজে খুবই বৃদ্ধি পায় । বৈদিক ধর্ম তখন কর্ম প্রধান হয়ে উঠল । ঋগবেদ, সামবেদ ও যজর্বেদে এই ধর্মই প্রতিপাদিত হল ।ব্রাহ্মন গ্রন্থগুলি যজ্ঞের নিয়ম কানুনে পরিপূর্ণ হইল ।ফলে কেবল কর্ম দ্বারা স্বর্গ লাভ হয় এই মতবাদ প্রচলিত হল । কিন্তু এই মতবাদ সকলের মনঃপুত হল না এবং এমনকি সকলের গ্রহণযোগ্যতা ও লাভ করল না । তারা চিন্তা করলেন ঈশ্বরকে জানতে না পারলে মানুষের কিছু মোক্ষলাভ অর্থাত্ ঈশ্বরকে লাভ করা সম্ভব নয় । ঈশ্বরকে জানতে হলে জ্ঞানের দরকার ।
এমতাবস্থায় বৈদিক ধর্মে দুইটি রূপ দেখা দিল । একটি হল কর্ম প্রধান ধর্ম অপরটি হল জ্ঞান প্রধান ।কর্ম প্রধান রূপে কর্মকে এজগতে সকল সুখ শান্তি লাভ এবং পরকালে স্বর্গপ্রাপ্তি বলে বিবেচনা করা হয় ।আর জ্ঞান প্রধান ধর্মে ব্রহ্মকে সত্য বলে ধরে নেয়া হয় এবং জগত সংসার মিথ্যা বা মায়ার বন্ধন বলে বিবেচনা করা হয় ।
উপরোক্ত দুটি মতবাদে সমাজে চলতে থাকায় মানুষ বিব্রতবোধ করলো এবং কোনটা সঠিক বলে মেনে চলা উচিত তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়লো ।এমনি এক সংকটজনক মূহুর্তে আর্বিভূত হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ।তিনি কর্মবাদ জ্ঞানবাদ ও ভক্তিবাদের প্রবর্তন করে শ্রীগীতার কর্ম জ্ঞান ও ভক্তি সমন্বয় সাধন করলেন।কুরুক্ষেত্রের ধর্ম যুদ্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই সমন্বয়ের প্রকাশ অর্জুনকে করলেন যেখানে সপ্তশতী শ্লোকের মাধ্যমে এই অমিয় বাণী ব্যক্ত হয় ।
শ্রীগীতার প্রথম কথা হলো নিষ্কাম কর্ম কর । এভাবে কাজ করতে করতে জ্ঞানের উদয় হবে । আর জ্ঞান বলে কর্মী বুঝতে পারবেন ভগবানই হচ্ছে সকল কারণের কারণ এবং এ সমস্থ সকল কাজ ভগবানের জ্ঞান সাধনায় ভক্তি আসে । ভক্ত মন প্রাণ উজাড় করে ভগবানকে আত্মসমর্পন করলে মোক্ষলাভ হয় । শ্রীমদ্ভাগবদগীতায় আমাদের প্রাত্যহিক চলার দিক নির্দেশনা অতি সুন্দরভাবে বিস্তৃত হওয়ায় বেদের চেয়ে এই গ্রন্থের পঠন ও অনুশীলন , প্রশিক্ষণ ও আত্মস্থ করা হয় সবচেয়ে বেশী ।
লিখেছেন-
অধ্যাপক ড.অমূল্য বিকাশ বসাক
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ।
এই সময় যাগযজ্ঞাদির প্রাধান্য সমাজে খুবই বৃদ্ধি পায় । বৈদিক ধর্ম তখন কর্ম প্রধান হয়ে উঠল । ঋগবেদ, সামবেদ ও যজর্বেদে এই ধর্মই প্রতিপাদিত হল ।ব্রাহ্মন গ্রন্থগুলি যজ্ঞের নিয়ম কানুনে পরিপূর্ণ হইল ।ফলে কেবল কর্ম দ্বারা স্বর্গ লাভ হয় এই মতবাদ প্রচলিত হল । কিন্তু এই মতবাদ সকলের মনঃপুত হল না এবং এমনকি সকলের গ্রহণযোগ্যতা ও লাভ করল না । তারা চিন্তা করলেন ঈশ্বরকে জানতে না পারলে মানুষের কিছু মোক্ষলাভ অর্থাত্ ঈশ্বরকে লাভ করা সম্ভব নয় । ঈশ্বরকে জানতে হলে জ্ঞানের দরকার ।
এমতাবস্থায় বৈদিক ধর্মে দুইটি রূপ দেখা দিল । একটি হল কর্ম প্রধান ধর্ম অপরটি হল জ্ঞান প্রধান ।কর্ম প্রধান রূপে কর্মকে এজগতে সকল সুখ শান্তি লাভ এবং পরকালে স্বর্গপ্রাপ্তি বলে বিবেচনা করা হয় ।আর জ্ঞান প্রধান ধর্মে ব্রহ্মকে সত্য বলে ধরে নেয়া হয় এবং জগত সংসার মিথ্যা বা মায়ার বন্ধন বলে বিবেচনা করা হয় ।
উপরোক্ত দুটি মতবাদে সমাজে চলতে থাকায় মানুষ বিব্রতবোধ করলো এবং কোনটা সঠিক বলে মেনে চলা উচিত তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়লো ।এমনি এক সংকটজনক মূহুর্তে আর্বিভূত হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ।তিনি কর্মবাদ জ্ঞানবাদ ও ভক্তিবাদের প্রবর্তন করে শ্রীগীতার কর্ম জ্ঞান ও ভক্তি সমন্বয় সাধন করলেন।কুরুক্ষেত্রের ধর্ম যুদ্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই সমন্বয়ের প্রকাশ অর্জুনকে করলেন যেখানে সপ্তশতী শ্লোকের মাধ্যমে এই অমিয় বাণী ব্যক্ত হয় ।
শ্রীগীতার প্রথম কথা হলো নিষ্কাম কর্ম কর । এভাবে কাজ করতে করতে জ্ঞানের উদয় হবে । আর জ্ঞান বলে কর্মী বুঝতে পারবেন ভগবানই হচ্ছে সকল কারণের কারণ এবং এ সমস্থ সকল কাজ ভগবানের জ্ঞান সাধনায় ভক্তি আসে । ভক্ত মন প্রাণ উজাড় করে ভগবানকে আত্মসমর্পন করলে মোক্ষলাভ হয় । শ্রীমদ্ভাগবদগীতায় আমাদের প্রাত্যহিক চলার দিক নির্দেশনা অতি সুন্দরভাবে বিস্তৃত হওয়ায় বেদের চেয়ে এই গ্রন্থের পঠন ও অনুশীলন , প্রশিক্ষণ ও আত্মস্থ করা হয় সবচেয়ে বেশী ।
লিখেছেন-
অধ্যাপক ড.অমূল্য বিকাশ বসাক
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন