২৭ নভেম্বর ২০১৫

ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বরের মন্দির

ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বর। একদা কলিঙ্গ রাজধানী ইতিহাস প্রসিদ্ধ ভুবনেশ্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অতীত ইতিহাসের সাক্ষী মন্দিরগুলিই প্রধান আকর্ষণ। পাঁচশোরও বেশি মন্দির আছে মন্দিরনগরী ভুবনেশ্বরে। এরমধ্যে উল্লেখ্য- সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত পরশুরামেশ্বর মন্দির, অষ্টম শতকে তৈরি বৈতাল মন্দির, দশম-একাদশ শতকে গড়ে ওঠা মুক্তেশ্বর মন্দির। এরই সমসাময়িক রাজারানি, ব্রহ্মেশ্বর এবং লিঙ্গরাজ মন্দির। মন্দিরগুলির গায়ের ওড়িশি ভাস্কর্যের অপরূপ শিল্পকলা দর্শককে মুগ্ধ করবে।
১০০০ খ্রীষ্টাব্দে রাজা ললাট কেশরী লিঙ্গরাজ মন্দিরটি নির্মাণ করেন। বিশাল এই মন্দিরপ্রাঙ্গণে একসময় ১০৮টি মন্দির ছিল। মূল মন্দিরের উচ্চতা ১৬৫ফুট। মন্দির প্রাঙ্গণটির দৈর্ঘ্য ৫২০ ফুট ও প্রস্থ ৪৬৫ ফুট। গ্র্যানাইট পাথরে তৈরি চক্রাকার লিঙ্গরাজ মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বার তিনটি। কলিঙ্গ স্থাপত্যের রীতি অনুযায়ী মন্দিরটি বিমান, জগমোহন, নাটমন্দির ও ভোগমন্দিরে এই চারঅংশে বিভক্ত। মন্দির ও প্রাচীরের গাত্র ফুল, লতাপাতা প্রভৃতি সূক্ষ্ম কারুকার্য মন্ডিত। মন্দিরমধ্যে গণেশ, কার্তিক, পার্বতীর মূর্তি রয়েছে।
মন্দিরের কাছেই বিন্দু সরোবর। এই সরোবরকে ঘিরে গল্পকথা রয়েছে। পার্বতীর তৃষ্ণা মেটানোর জন্য শিব সমস্ত নদনদীর কাছে অনুরোধ করেন বিন্দু বিন্দু জল দেওয়ার জন্য। সেই বিন্দু বিন্দু জল থেকেই এই সরোবরের সৃষ্টি। কথিত আছে, এই সরোবরে স্নান করলে সর্বপাপ মুক্ত হওয়া যায়। চন্দনযাত্রার সময় লিঙ্গরাজ এই সরোবরে স্নান করেন।
বিন্দু সরোবরের পূর্বপাড়ে অনন্ত বাসুদেব মন্দির। প্রাচীন এই বিষ্ণুমন্দিরটি সম্ভবত ১২৭৮-এ অনঙ্গ ভীমদেবের কন্যা চন্দ্রাদেবী নির্মাণ করেন। মন্দিরের কারুকার্য দেখার মতো।
সিদ্ধারণ্য বা সিদ্ধঅরণ্যটি একসময়ে আম্রকানন বলে পরিচিত ছিল। এখন কেদারগৌরী বা গৌরীকুন্ডের প্রস্রবণটি পুণ্যপুকুর নামে খ্যাত। এখানে রয়েছে নবম শতকে তৈরি মুক্তেশ্বর মন্দিরটি। হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের মিশ্র প্রভাবের ভাস্কর্যে গড়া দেবমূর্তিগুলো দেখার মতো। এখানে সিদ্ধেশ্বর মন্দিরে গণেশের দন্ডায়মান মূর্তিটি অসাধারণ। মুক্তেশ্বরের বিপরীতে ৬৫০ খ্রীষ্টাব্দে তৈরি পরশুরামেশ্বর মন্দির। কেদারেশ্বর মন্দিরটি ষষ্ঠ শতকের। কেদারেশ্বরে দুধগঙ্গার জলে নানা ব্যাধির উপশম হয় বলে বিশ্বাস।
সিদ্ধারণ্যের কাছে সুন্দর এক বাগিচার মধ্যে রাজারানি মন্দির। একাদশ শতাব্দীতে তৈরি সূক্ষ্ম কারুকার্য মন্ডিত এই মন্দির ৫৮ ফুট উঁচু। দেওয়ালে, থামে, কুলুঙ্গিতে নানা দেবদেবী, সুন্দরী নারীমূর্তির বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ছোট ছোট কাজ দেখার মতো। কথিত আছে, রাজা উদ্যত কেশরী তাঁর রানির ইচ্ছেয় এই মন্দির গড়েন, নাম দেন রাজারানি।

Written by :  Prithwish Ghosh
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।