দেবী লক্ষ্মী কমলের মতো তিনি সুন্দরী, কমলাসনে তাঁর নিবাস। কমল বা পদ্ম হল বিকাশ বা অভ্যুদয়ের প্রতীক। পুরানে আছে সাগর মন্থন কালে দেবী লক্ষ্মী সমুদ্র থেকে প্রকট হন। সাগর হল লক্ষ্মী দেবীর পিতা। সাগরেই মুক্তা, প্রবাল আদি রত্ন পাওয়া যায়। রত্ন হল ধন, যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন লক্ষ্মী। তিযে স্বর্গে তিনিই স্বর্গ লক্ষ্মী, রাজগৃহে তিনি রাজলক্ষ্মী, গৃহে তিনি গৃহলক্ষ্মী। তিনি শান্তা, দান্তা, সুশীলা, সর্ব মঙ্গলা, ষড়রিপু বর্জিতা। এক কথায় ধন, জ্ঞান, শীল– তিনেরই বিকাশ দেবী নি বিষ্ণুপ্রিয়া। তিনি শ্রী বিষ্ণুর সহধর্মিণী।
তিনি সীতা, তিনি রাধা তথা রুক্মিণী। তিনি মহাপ্রভুর সহধর্মিণী লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। তিনি ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবের সহধর্মিণী মা সারদা। শরত ঋতু তে আমরা যে দুর্গাদেবীর পূজো করি তিনিও মহালক্ষ্মী স্বরূপা। দেবী লক্ষ্মী মহামায়া আদিশক্তির এক অংশ।
যেখানে শীল ও সদাচার থাকে দেবী সেখানেই বাস করেন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানে দেবী নিজ পরিচয় দিয়েছেন -- “যে সকল গৃহে গুরু, ঈশ্বর, পিতামাতা, আত্মীয়, অতিথি, পিতৃলোক রুষ্ট হন, সে সকল গৃহে আমি কদাপি প্রবেশ করি না। আমি সে সকল গৃহে যেতে ঘৃনা বোধ করি, যে সকল ব্যাক্তি স্বভাবতঃ মিথ্যাবাদী, সর্বদা কেবল ‘নাই’, ‘নাই’ করে, যারা দুর্বলচেতা এবং দুঃশীল।
যেখানে শীল ও সদাচার থাকে দেবী সেখানেই বাস করেন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানে দেবী নিজ পরিচয় দিয়েছেন -- “যে সকল গৃহে গুরু, ঈশ্বর, পিতামাতা, আত্মীয়, অতিথি, পিতৃলোক রুষ্ট হন, সে সকল গৃহে আমি কদাপি প্রবেশ করি না। আমি সে সকল গৃহে যেতে ঘৃনা বোধ করি, যে সকল ব্যাক্তি স্বভাবতঃ মিথ্যাবাদী, সর্বদা কেবল ‘নাই’, ‘নাই’ করে, যারা দুর্বলচেতা এবং দুঃশীল।
যারা সত্য হীন, মিথ্যা সাক্ষ্য দান করে, বিশ্বাসঘাতক, কৃতঘ্ন, যে সকল ব্যাক্তি সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, ভয়গ্রস্ত, শত্রু গ্রস্ত, ঋণ গ্রস্ত, অতি কৃপণ, দীক্ষা হীন, শোকার্ত, মন্দঘ্নী, স্ত্রী বশীভূত, কুলটার পতি, দুর্বাক, কলহ পরায়ণ, যারা ভগবানের পূজো ও তাঁর নাম গুন কীর্তনে বিমুখ, যারা শয়নের পূর্বে পাদপ্রক্ষালন করে না, নগ্ন হয়ে শয়ন করে, বেশী ঘুমায়, প্রভাতে সন্ধ্যায় দিবসে নিদ্রা যায়, যাদের দন্ত অপরিচ্ছন্ন, বসন মলিন, মস্তক রুক্ষ, হাস্য বিকৃত, তাদের গৃহে আমি কদাপি গমন করি না।
আমি সে সকল গৃহে বসতি করি, যে সকল গৃহ শ্বেত পারাবত অধুষ্যিত, যেখানে গৃহিণী উজ্জ্বল সুশ্রী, যেখানে কলহ নাই, ধান্য সকল সুবর্ণ সদৃশ, তণ্ডুল রজতোপম এবং অন্ন তুষহীন। যে গৃহস্থ পরিজনের মধ্যে ধন ভোগ্য বস্তুর সমান বিভাগ পূর্বক বিতরণ করেন, যিনি মিষ্টভাষী, বৃদ্ধপোসেবী, প্রিয়দর্শন, স্বল্পভাষী, অ দীর্ঘ সূত্রী, ধার্মিক, জিতেন্দ্রিয়, বিদ্যাবিনয়ী, অ গর্বিত, জনানুরাগী, পরপীড়ন বিমুখ, যিনি ধীরে স্নান করেন, চয়িত পুস্প আঘ্রাণ করেন না, সংযত এমন ব্যাক্তি আমার কৃপা পেয়ে থাকেন। শুধু অর্থ নয়, উন্নত চরিত্রও মানুষের অমূল্য সম্পদ। লক্ষ্মী দেবীর কৃপা তাঁরাই লাভ করেন যারা নৈতিক চরিত্রের অধিকারী।
লক্ষ্মী র কৃপা সব সময় সৎ কাজেই ব্যাবহার করা উচিত। মানুষ যদি লক্ষ্মীর অপপ্রয়োগ করেন তবে অলক্ষ্মীর শাপে সে ধ্বংস হবেই। যে শুদ্ধ নৈতিক চরিত্রের অধিকারী তাঁর গৃহে লক্ষ্মী অচলা হয়ে অবস্থান করেন। আর যারা ঠিক এর উল্টো তারা কর্মদোষে অলক্ষ্মীর আহ্বান করে ধ্বংসের পথে অগ্রসর হয়। লক্ষ্মী হল ‘শ্রী’। সকল নারীর মধ্যে যে শীল ও সদাচার আছে তার মাধ্যমেই তিনি প্রকাশিতা। তাই যেখানে নারী দের প্রতি অবমাননা হয়, বা যারা নারী দের ওপর নির্যাতন করেন– সেই সব জায়গায় কখনই দেবী লক্ষ্মীর কৃপা বর্ষণ হয় না।
-
লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র
===========
-
লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র
===========
"ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-সৃণিভির্ষাম্য-সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।
গৌরবর্ণাং সুরুপাঞ্চ সর্বলঙ্কার-ভূষিতাম্।
রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।"
অর্থ -- যাম্য করে পাশ, অক্ষমালা, সৌম্য করে পদ্ম ও অঙ্কুশ ধারিনী পদ্মাসনে উপবিষ্টা, শ্রী অর্থাৎ ঐশ্বর্য সম্পৎ ও সৌন্দর্য রূপিনী, ত্রিলোকের জননী, গৌরবর্ণা, সুন্দরী, সর্বা অলঙ্কার বিভূষিতা, ব্যগ্রহস্তে স্বর্ণ পদ্ম ধারিনী এবং দক্ষিণ হস্তে বরদানকারিনী দেবীকে ধ্যান করি।
লক্ষ্মী দেবীর স্তোত্র
=============
“লক্ষ্মীঃ শ্রীঃ কমলা বিদ্যা মাতা বিষ্ণুপ্রিয়া সতী।
পদ্মালয়া পদ্মহস্তা পদ্মাক্ষী পদ্মসুন্দরী।।
ভূতানামীশ্বরী নিত্যা মতা সত্যাগতা শুভা।
বিষ্ণুপত্নী মহাদেবী ক্ষীরোদতনয়া ক্ষমা।।
অনন্তলোকলাভা চ ভূলীলা চ সুখপ্রদা।
রুক্মিণী চ তথা সীতা মা বৈ বেদবতী শুভা।।
এতানি পুন্যনামানি প্রাতরুথায় যঃ পঠেৎ।
মহাশ্রিয়নবাপ্নোতি ধনধান্যকল্মষম।।”
অর্থ -- শ্রী, কমলাবিদ্যা, মাতা, বিষ্ণুপ্রিয়া, সতী, পদ্মালয়া পদ্মহস্তা পদ্মাক্ষী পদ্মসুন্দরী, ভূতগণের ঈশ্বরী, নিত্যা, সত্যাগতা, শুভা, বিষ্ণুপত্নী, ক্ষীরোদ– তনয়া, ক্ষমা স্বরূপা, অনন্তলোকলাভা, ভূলীলা, সুখপ্রদা, রুক্মিণী, সীতা, বেদবতী– দেবীর এ সকল নাম। প্রাতেঃ উত্থান কালে যারা দেবীর এই পুন্য নামাবলী পাঠ করেন তারা বিপুল ঐশ্বর্য পেয়ে ধনী হয়ে থাকেন। অগ্নি পুরাণ মতে শ্রী বা লক্ষ্মী হলেন যজ্ঞবিদ্যা, তিনিই আত্ম্যবিদ্যা, যাবতীয় গুহ্যবিদ্যা ও মহাবিদ্যা ও তিনি।
লক্ষ্মী দেবীর প্রণাম মন্ত্র
=================
=================
"ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মী নমঽস্তু তে।।"
-
যে দেবতার পূজা করেন, সেই দেবতার পরিচয় আগে জেনে নিতে হয়। লক্ষ্মীকে আমরা টাকাপয়সার দেবী ভাবি, আসলে লক্ষ্মীর পরিচয় শুধু ওইটুকুতেই নয়। লক্ষ্মী শুধু ধনই দেন না, তিনি জ্ঞান ও সচ্চরিত্রও দান করেন। এককথায় লক্ষ্মীপূজা করলে, মানুষ সার্বিকভাবে সুন্দর ও চরিত্রবান হয়। স্বামী প্রমেয়ানন্দ বলেছেন, ‘কেবল টাকাকড়িই ধন নয়। চরিত্রধন মানুষের মহাধন। যার টাকাকড়ি নেই সে যেমন লক্ষ্মীহীন, যার চরিত্রধন নেই সে তেমনি লক্ষ্মীছাড়া। যাঁরা সাধক তাঁরা লক্ষ্মীর আরাধনা করেন মুক্তিধন লাভের জন্য।’ রূপক সাহিত্যে পুরুষজাতির বীর্যকে রূপকার্থে লক্ষ্মী বলা হয়
লেখকঃ প্রীথিশ ঘোষ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন