আমরা জানি যে, প্রাচীন উপনিষদগুলিকেই ভিত্তি করে বেদান্ত দর্শন গড়ে উঠেছে | যেখানে, মুখ্যতঃ তিনটি মতবাদ প্রচলিত – ১) শঙ্করাচার্য্যের অদ্বৈতবাদ ২) রামানুজাচার্য্যের বিশিষ্ট অদ্বৈতবাদ এবং ৩) মাধবাচার্য্যের দ্বৈতবাদ।
আজ আমি সবার সামনে তুলে ধরবো “শঙ্করাচার্য্যের অদ্বৈতবাদ”। মূলত, শঙ্করাচার্য্য এই বিশ্বসত্তাকে অবিভাজ্য এবং এক কল্পনা করেছেন বলেই তাঁর মতবাদকে অদ্বৈতবাদ বলা হয় | তিনি শিক্ষা দিলেন – ব্রহ্ম সত্য জগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ – অর্থাৎ ব্রহ্ম সত্য, এই বিশ্ব মিথ্যা এবং জীবাত্মা ও ব্রহ্ম এক এবং অভিন্ন | এই যে জগৎ প্রত্যক্ষ হচ্ছে যা পরিবর্তনশীল এবং যা নাম ও রূপ এই দুয়ের সমন্বয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে, তা ভ্রম মাত্র | এই ভ্রম ব্রহ্মের মায়াশক্তির প্রভাব | অর্থাৎ আমাদের এই ভ্রম বা ভুলের কারণ হল মায়া | এই মায়া তত্ত্বও অদ্বৈতবাদের একটি অবিভাজ্য অংশ | এইজন্য এই মতবাদকে মায়াবাদ নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে | শঙ্করাচার্য্যের মতে ব্রহ্ম সকল অবস্হাতেই একমেবাদ্বিতীয়ম্ অর্থাৎ ব্রহ্ম এক এবং অদ্বিতীয় | কোন অবস্হাতেই তিনি বহু নন | ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যে জগৎ তা ব্রহ্ম হতে পৃথক নয়; তাকে আমরা ভুল করে বহু আকারে দেখি | শঙ্করাচার্য্যের মতে এই যে দেখার ভুল তার কারণই হল মায়া | মায়া শক্তিটির এমনই ক্ষমতা আছে যা আসল জিনিষটির প্রকৃত রূপকে আবৃত করে রাখে এবং তার বিকৃত রূপটিকে প্রকট করে | সুতরাং দৃশ্যমান বিশ্ব ব্রহ্মের উপরিই প্রতিষ্ঠিত, তাই ব্রহ্ম | কিন্তু তাঁকে দেখার ভুলে আমরা বহুরূপে দেখি | শঙ্করাচার্য্য ব্যাখ্যা করেছেন যে ক্ষর হল জীবজগৎ | এর সর্বদা ক্ষরণ বা ক্ষয় হচ্ছে | আর অক্ষর হল কূটস্হ – জগতের সব কিছুর উৎপত্তির বীজ | শঙ্করাচার্য্যের মতে এটিই মায়া | এই কারণ-রূপিণী মায়া আর কার্য্যরূপী জীবজগতের উপরে আছেন উত্তম পুরুষ যিনি পরমাত্মা | শঙ্করাচার্য্যের মতে অজ্ঞানতাই হল দ্বৈতভাবের উৎপাদক | এই দ্বৈতভাব হতেই সকল কর্ম হয় | দ্বৈতভাব নাশ হলেই নিষ্ক্রিয় আত্মা প্রতিষ্ঠিত হয় আর তাহলেই কর্মসন্ন্যাস হয় | তখনই মানুষের আত্মজ্ঞান লাভ হয় |
হরি ૐ তৎসৎ।
Joy Roy
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন