১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২
“Varieties of Religious Experience”
Sir William James কে আমরা হয়তো অনেকেই চিনি; একজন নামকরা বিজ্ঞানী। তিনি ঈশ্বর বলে কিছু মানতেন না। কিন্তু, যারা মানতেন তাঁদের সম্বন্ধে তাঁর বিশেষ দরদ ছিল। কারণ, তিনি দেখেছেন যে পৃথিবীর কোটি কোটি লোক ঈশ্বর মানে। তিনি অনেক ঈশ্বর বিশ্বাসী সাধারন লোকের সাথে মিলে মিশে তাদের
মনের ভাব জেনে একটা বই লিখেছিলেন- “Varieties
of Religious Experience”
এই বইটিতে তিনি বিজ্ঞানীদের সতর্ক করে দিয়েছেন এই কথা বলে
যে; “ঈশ্বর বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই- একথা কখনোই মানুষের কাছে প্রচার করবেন না। কারণ, ঈশ্বর বিশ্বাস মানুষকে যা দিতে পারে; আপনারা কিছুতেই
তা দিতে পারেন না। ঈশ্বর নেই এইকথা
মানব সমাজে বলার কোন অধিকারই আপনার নেই। একটি ব্যাধিগ্রস্ত ছেলের মা যখন ঠাকুর মন্দিরে ডুকে কিছুক্ষন পরে বেরিয়ে এলো; তখন দেখা গেল, তার দুঃখভারাকান্ত
মুখে উজ্জ্বলতার ছাপ পড়েছে। সে যেন তার মনের বাথা কাউকে জানিয়ে এলো এবং যাকে জানালো সে তার কথা শুনেছে এবং
তার ছেলেকে ভালও করে দিবে। ব্যাধিগ্রস্ত সন্তানের মায়ের মনের এ পরিবর্তন কোন বিজ্ঞানী আনতে পারবে না।
আজ পর্যন্ত কোন Laboratory তে এমন কোন যন্ত্র বা Chemical আবিস্কার হয় নি, এমন কোন অংকের ফরমুলা
বা equation নেই। কাজেই যতদিন না
আপনারা সে ধরনের কিছু আবিস্কার করতে পারছেন, ততদিন তাকে বিশ্বাস করতে দেন যে, ভগবান আছেন।
তার এ বিশ্বাসটুকু কেড়ে নেবার আপনার কি অধিকার আছে???
[পুনশ্চঃ নাস্তিকতার আবরণ পরে বিজ্ঞানের হাওয়ায় গাঁ ভাসিয়ে মানবের চৈতন্যকে অস্বীকার
করা এবং মানব চেতনার ক্রমবিকাশ, ব্যাপকতা ও বিশালতাকে উপেক্ষা করা একটি ক্ষতিকারক দুর্গতিপূর্ণ বিপ্লব। এটা একটা বিশাল বড় বোকামি। হিন্দু জাতির যে আধ্যাত্মিক ধাত, সেই ধাতে আমাদের
পূর্বপুরুষ সহস্র বছর ধরে সাধনা করে আসছে; আমরা যেন তা থেকে বিচ্যুত না হই। বিজ্ঞানের চর্চা আমরা অবশ্যই করবো, তবে আমাদের ধর্মীয়
চেতনাকে বিসর্জন দিয়ে নয়। তবেই সর্বনাশ হতে পারবে না। মঙ্গল আসবেই।]
@joy ray
"গুড়পুকুরের মেলা ও বিশ্বকর্মা পূজা"- ডা. সুব্রত ঘোষ
সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলা। সম্ভবত দ্বাদশ শতকের
প্রথমদিকে এই মেলার সূচনা। এই মেলার ইতিহাস ও উৎপত্তি সম্পর্কে কয়েকটি কিংবদন্তী প্রচলিত
আছে। গুড়পুকুর মূলত সাতক্ষীরা
জেলার অন্তর্গত একটি ঐতিহাসিক স্থান। সাতক্ষীরা এক সময় সুন্দরবনের মতোই বনবেষ্ঠিত ছিল। বন কেটে বসত করার ফলে
এখন বন অনেকটাই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। এইসব এলাকার একটি নাম পাওয়া যায় ‘বুড়ন’। অর্থাৎ ওই অঞ্চল যে জলাভ’মি ছিল, তার প্রমাণ এই নাম থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। ‘মনসা মঙ্গল’ -এর বেহুলা লখিন্দরের কাহিনীও এই অঞ্চলকে স্পর্শ করেছে। বেহুলা যখন সর্পদষ্ট মৃত স্বামীর লাশ কলার
ভেলায় করে জলপথে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে যে ঘাটে তাঁর
দেখা হয়েছিল গোদা পাটনির সঙ্গে, সেই গোদা পাটনির নামে
গড়ে ওঠে ‘গোদাঘাট’ নামে একটি গ্রাম। তার এক মাইল দূরে আরেকটি জায়গার নাম হরো ‘রেহুলার ঝোড়’। সর্পসঙ্কুল সাতক্ষীরায় বেহুলা লখিন্দরের কাহিনী নিয়ে প্রতি বছরই ‘মনসা পূজা’ অনুষ্ঠিত হয়। এসব এলাকায় প্রতি বছরই
সর্পদংশনে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। এখানকার অধিবাসীদের বিশ্বাস, সর্পদেবঅ মনসাকে পূজা করলে সাপের উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের
শেষ তারিখে গুড়পুকুরের ধারে যে বিশাল বটবৃক্ষ ছিল, তার বাঁধানো চাতালে মনসা পূজা হয়। সেই উপলক্ষে হয় গুড়পুকুরের মেলা। গুড়পুকুরের সেই প্রাচীন বটবৃক্ষটি এখন আর
নেই। তদস্থলে একটি নতুন
বটগাছ রোপণ করা হয়েছে। গুড়পুকুর কেন নামকরণ করা হয়েছে, এ নিয়েও একাধিক
কিংবদন্তী প্রচলিত রয়েছে। গুড়পুকুর নামক এই পুকুরে নাকি একসময় মোটেই পানি থাকত না। তখন স্থানীয় কেউ স্বপ্ন
দেখেন, ওই পুকুরে একশ ভাড় গুড় ঢাললে পানি উঠবে এবং
কখনো শুকাবে না। স্বপ্ন অনুযায়ী পুকুরে গুনে গুনে একশ ভাড় গুড় ঢালা হলো। আর অমনি পুকুরের তলদেশ থেকে পানি উঠে পুকুরটি
কানায় কানায় ভরে গেলো। পলাশপোল এলাকার প্রবীণদের কাছ থেকে আর এক রকম কিংবদন্তী শোনা যায়। এখানকার অত্যন্ত প্রবীণ
পরিবারদের অন্যতম খান চৌধুরী পরিবার। এই পরিবারের পূর্বপুরুষেরা ব্রহ্মণ ছিলেন এবং তারা ছিলেন গৌর
বর্ণের অধিকারী। উত্তরাধিকার সূত্রে গৌরবর্ণের অধিকারী ছিলেন তারাও। গৌরবর্ণের অধিকারী খান চৌধুরীরা ওই পুকুরের
মালিক বিধায় পুকুরের নাম হয়েছে ‘গুড়পুকুর’। ‘গৌড়’ লোক মুখে ঘুরতে ঘুরতে ‘গুড়ে’ রূপান্তরিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। গুড়পুকুরের মেলাটা
মূলত ‘মনসা পূজা’ -কে কেন্দ্র করেই কারো কারো মতে ওটা হবে ‘বিশ্বকর্মা পূজা’। পঞ্জিকা অনুযায়ী ভাদ্রের শেষ তারিখে বিশ্বকর্মা পূজা হওয়াই সঙ্গত। কেননা মনসা পূজা হয়
শ্রাবণ সংক্রান্তিতে অর্থাৎ শ্রাবণের শেষ তারিখে। গুড়পুকুরের মেলার স্থানীয় উচ্চারণ ‘গুড়পুকুরির মিলা’। সাতক্ষীরা জেলার সবচেয়ে বড় ও উল্লেখযোগ্য এই মেলা। ভাদ্র মাসের শেষ তারিখে
মনসা পূজা উপলক্ষে গুড়পুকুর থেকে ইটাগাছা-কামাননগর পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে মেলা বসে। মূল মেলা এক দিনের
হলেও তা একমাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই মেলার অন্যতম প্রদান বৈশিষ্ট হলো, বিভিন্ন প্রজাতির আম-জাম-লিচু-কাঠালের কলম ও চারার ব্যাপক সমারোহ। এছাড়া আরও অনেক ফল-ফলারীর
চারাও উঠে এখানে। কলমের চারার দোকানগুলো বসে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। আরও একটি ুজুনস আমদানি হয় এখানে। আম-জাম-সেগুন গাছের
আসবাবপত্র তৈরীর কাঠ ও তৈরী আসবাবপত্র। এই কাঠ বিশেষকরে সুন্দবন এলাকা থেকে আসে। আগে কাঠের তৈরী আসবাবপত্র
এই মেলায় আসত নদীপথে। এগুলো আসত ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল প্রভৃতি অঞ্চল থেকে। তখন সাতক্ষীরার প্রাণ-সায়ার খালে প্রাণের ¯্রােত বইত। এখন সে খাল শুকিয়ে যাওয়ায় সেসব পণ্যের আমদানির একমাত্র মাধ্যম
স্থলপথ। মেলার বিশেষ একটি আকর্ষন ছিল বিনোদনমূলক ব্যবস্থা। এগুলোর মধ্যে নাগরদোলা, যাদু, পুতুলনাচ, মৃত্যুকূপ, সার্কাস, যাত্রাগান উল্লেখযোগ্য।
মূল শহরের কোলহল থেকে একটু দূরে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ
সড়কে পলাশপোল স্কুলের উত্তর-পশ্চিম কোণের বটতলায় গুড়পুকুরের ঠিক পাশেই সংরক্ষিত জায়গায়
প্রায় তিন’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলা মূলত
হিন্দু সম্প্রদায়ের মনসা পূজাকে কেন্দ্র করে হলেও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এক মিলনমেলায়
পরিনত হয়ে ওঠে। আগেকার দিনে মেলা উপলক্ষে আত্মীয়-স্বপন চলে আসত সাতক্ষীরায়। বাড়ি বাড়ি পড়ে যেত
সাজ সাজ রব। ঈদ, দূর্গাপূজা কিংবা অন্যান্য অনেক উল্লেখযোগ্য
পার্বনকে ছাপিয়ে এ মেলাই হয়ে উঠত সকলের মিলন মেলা- প্রাণের উৎসবে। বিভিন্ন ব্যবসায়ীরাও
সারা বছর প্রস্তুতি নিত এই মেলাকে ঘিরে। কাঠের মিস্ত্রীরা এই মেলাকে ঘিরে সারাবছর ধরে তৈরী করত কাঠের
আসবাবপত্র, কামার রা সারা বছর গায়ের ঘাম ঝরাত এই মেলাকে
উপলক্ষ করেই। আবাল বৃদ্ধবনিতা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকত এই মেলার জন্য। কোন এক সময় কলকাতা,
লন্ডন প্রভৃতি শহরসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও ব্যবসায়ীরা
আসত এই মেলায় অংশগ্রহনের জন্য। বর্তমানে মেলার মূলস্থানের আশেপাশে স্থায়ী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান
গড়ে ওঠা, শহরের প্রধান প্রধান সড়কের ফুটপাত বেদখল হওয়াসহ
বিভিন্ন কারণে মেলাটি তার জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। এই সব ছোটখাট সমস্যাকে অতিক্রম করে মেলার
চূড়ান্ত সমাধি রচিত হয় ২০০২ সালে। স্থানীয় প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী শক্তিরা আগে থেকেই মেলাটি বন্ধ
করার জন্য বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করে আসছিল। ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এরই অংশ হিসেবে মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে
একটি সিনেমা হলে শো ও স্টেডিয়ামে সার্কাস চলাকালীন দুইটি শক্তিশালী বোমার বিষ্ফোরণ
ঘটায়। বোমা হামলায় ৩ জন নিহত
হয়। আহত হয় নারী-শিশুসহ
কয়েক শতাধিক মানুষ। অনেকেই পঙ্গু হয়ে এখনো সেই হামলার দুর্বিষহ স্মৃতি বহন করে বেড়াচ্ছে। বর্বর এই হামলার পর
থেকে মেলাটি এক প্রকার বন্ধই হয়ে যায়। পূজা আর দায়সারাভাবে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়েই সাতক্ষীরার সবচেয়ে
ঐতিহ্যবাহী মেলাটি পালিত হতে থাকে। মেলার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো মেলাটি বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে
সীমাবদ্ধ না থেকে আন্তঃধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধের মিলনমেলায় পরিণত হতো। গুড়পুকুরের মেলা কেবল
একটি পূজা নয় মাত্র সাতক্ষীরাবাসীয় চিরায়ত ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। ব্যাক্তি-স্থান-কাল-পাত্রকে
ছাড়িয়ে এ মেলার আবেদন সার্বজনীন। আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় স্থানীয় জেলা প্রশাসন এবারে
মাসব্যাপী জাকজমকভাবে মেলাটি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গুড়পুকুরের মেলা আগের জৌলুসে ফিরে আসুক এটাই
কাম্য।
বারমাসে তের পার্বনের অন্যতম প্রধান পূজা
বিশ্বকর্মা। বিষ্ণু পুরাণ মতে বিশ্বকর্মা একজন দেবশিল্পী। বেদে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বকর্মা বলা
হয়েছে। তাঁর পিতার নাম প্রভাষ। প্রভাষ হচ্ছেন অষ্ট
বসুর মধ্যে সপ্তম বসু। অষ্টবসু মানে আটজন গণদেবতা। তাঁর হলেনঃ ধর, ধ্রুব,
সোম, অনিল, অনল, প্রত্যুষ, প্রভাষ ও দ্যু। এই অষ্টবসু দক্ষরাজার কন্যা বসুর পুত্র। ধর্মের ঔরসে বসু ভার্য্যার
গর্ভের সন্তান। তবে শাস্ত্রে নয় শ্রেণী গণদেবতার উল্লেখ রয়েছেঃ ১. আদিত্য ১২ জন, ২. ডবশ্বদেব ১০ জন, ৩. বসু ৮ জন,
৪. তুষিত ৩৬ জন, ৫. আভাশ্বর.
৬৪ জন, ৬. অনিল ৪৯ জন, ৭. মহারাজিক ২২০ জন, ৮. সাধ্য ১২ জন ও ৯.
রুদ্র ১১ জন। নয় শ্রেণীর গণদেবতা সকলেই শিবের অনুচর। এই নয় শ্রেণীর গণদেবতার নেতা হচ্ছেন গনেশ। গণদেবতারা গণপর্বত
কৈলাসে বসবাস করেন। বিশ্বকর্মার মাতার নাম যোগসিদ্ধা। যোগসিদ্ধা হচ্ছেন দেবগুরু বৃহস্পতির বোন। বৃহস্পতি ও শুক্র দুই
ভাই। ব্রহ্মা তনয় কশ্যপ
ঋষির ঔরসে অদিতির গর্ভের সন্তান বৃহস্পতি এবং কশ্যপ ঋষির ঔরসে দিতির গর্ভের সন্তান
শুক্র। বৃহস্পতি দেবতাদের
গুরু এবং শুক্র অসুরদের গুরু। দেবতা ও অসুর কোন পৃথক জাতি নয়। মহাভারত ও পুরাণ মতে তারা একই পিতার ঔরসজাত
সন্তান। কশ্যপের অপর পতœী দনুর গর্ভজাত সন্তান দানব। দেবতাদের সন্তান প্রসব
একটি জ্যোতি মাত্র। এই জ্যোতি নাভি স্পর্শ হলেই সঙ্গে সঙ্গে সন্তান প্রসব হয়। আর তৎকালীন ব্রাহ্মনদের সন্তান হতে সময় লাগত
একমাস এবং ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রের সন্তান প্রসব হতে সময় ক্ষেপন
হয় ১০ মাস ১০ দিন। তবে ব্রাহ্মনদের বর্তশান সন্তান প্রসব প্রক্রিয়া ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রের অনুরূপ। ঋকবেদে উল্লেখ আছে যে, বিশ্বকর্মা সর্বদর্শী ভগবান। তাঁর চক্ষু, মুখমন্ডল, বাহু ও পদদ্বয় সর্বদিক ব্যাপিয়া রয়েছে। বাহু ও পদদ্বয়ের সাহায্যে
তিনি স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল অর্থাৎ ত্রিভ’বন নির্মাণ করেছেন। বিশ্বকর্মা শিল্প সমূহের প্রকাশক, অলংকারের ¯্রষ্টা এবং দেবতাদের বিমান ও রথ নির্মাতা। তাঁর অশেষ কৃপায় মানবজাতি
শিল্প কলায় পারদর্শিতা লাভ করেছে। উপবেদ, স্থাপত্যবেদ এর রচয়িতা
এবং চতুঃষষ্ঠী কলার অধিষ্ঠাতা হচ্ছেন বিশ্বকর্মা। তিনি প্রাসাদ, ভবন, উদ্যান প্রভৃতির শিল্প প্রজাপতি। বিশ্বকর্মা কেবল দেবশিল্পীউ
নন, দেবতার অস্ত্রাদিও প্রস্তুত করেছেন। সকল আগ্নেয়াস্ত্র তাঁরই নির্মিত। মহাভারত মতে তিনি শিল্পের
শ্রেষ্ঠকর্তা, সহ¯্র শিল্পের আবিস্কারক এবং সর্বপ্রকার কারুকার্য নির্মাতা। পুরাণ অনুসাওে বিশ্বকর্মা রাক্ষসপুরী লঙ্কা
নগরীর নির্মাতা। নল নামধারী বানর বিশ্বকর্মার পুত্র। ত্রেতাযুগের অবতার রামচন্দ্র সমুদ্রের সেতু বন্ধান নির্মাণকালে
বিশ্বকর্মা নল বানরকে সৃষ্টি করেছিলেন। পুরাণের কল্পনা অনুসারে নলের জন্মকালে বিশ্বকর্মাও বানর ছিলেন। পরবর্তীকালে বিশ্বকর্মার
যে মূর্তিটি পরিচিত হয়েছে, সেটি ছিল হস্তীবাহন। পক্ষান্তরে হরপ্পা
সংস্কৃতির শীলমোহরে হাতীর চিহ্ন বহুবারই পাওয়া গিয়েছে। বিশ্বকর্মা দেবতাদের পুস্পক রথের নির্মাতা,
আগ্নেয়াস্ত্রের ¯্রষ্টা,
শ্রীবিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, লক্ষ্মীর কোষাধ্যক্ষ কুবেরের কুবের পাশ,
কার্তিক বল, পঞ্চপানডবের ইন্দ্রপ্রস্থ
নগরী তৈরী এবং শ্রী ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ জগন্নাথের বিগ্রহ নির্মাতা সহ¯্র শিল্প বিদ্যার অধিকারী বিশ্বকর্মা যবিষ্ঠ বা অগ্নিরূপে কথিত। তাঁর হস্তীবাহন মূর্তির
হাতে মশালও রয়েছে হাতুরীর সঙ্গে।
বিশ্বকর্মা সৃষ্টিশক্তির রূপক নাম। তিনি ধাতা,
বিশ্ব দ্রষ্টা ও প্রজাপতি। তিনি পিতা, সর্বজ্ঞ দেবতাদের নাম দাতা এবং মর্ত্যজীবের অনধিগম্য। বিশ্বকর্মা সর্বমেধ যজ্ঞে নিজেকে নিজের কাছে
বলি দিয়েছেন। তিনি বাচস্পতি, মনোজব, বদান্য, কল্যাণ কর্মা ও বিধাতা। কোন এক পুরাণ মতে বিশ্বকর্মা
বৈদিক ত্বষ্টা দেবতাদের কর্মশক্তিও আত্মসাৎ করেছিলেন। এইজন্য তিনি ত্বষ্টা নামেও অভিহিত। বৈদিক দেবতা ত্বষ্টার
বিভিন্ন গুণ ছিল। ত্বষ্টা, বিশ্বকর্মা এবং বিস্মৃতনামা হরপ্পীয় শিল্প
দেবতা একাকার হয়ে মিলেমিশে গিয়েছে। বিশ্বকর্মা নিজের কন্যা সজ্ঞাকে সূর্য্যরে সঙ্গে বিবাহ দেনে। রামায়ণ ও মহাভারত মতে
সূর্য হচ্ছে কশ্যপ ঋষির ঔরসে অদিতির গর্ভের সন্তান। অদিতির নাম অনুসারে সূর্যের আরেক নাম আদিত্য। সজ্ঞা সূর্য্যরে প্রখর
তাপ সহ্য করতে পারেন নাই, তাই সজ্ঞার পিতা বিশ্বকর্মা
শান চক্র স্থাপন করে সূর্য্যওে উজ্জ্বলতার এক অষ্টমাংশ কর্তন করেন। এই কর্তিত অংশ পৃথিবীর
উপর পতিত হলে উক্ত অংশের দ্বারা বিশ্বকর্মা দেবতাদের বিভিন্ন অস্ত্র তৈরী করে দিয়েছেন। বিশ্বকর্মা পূজা ভাদ্র
সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। ভাদ্র সংক্রান্তিতেই কেন তার পূজা করা হয় এ সম্পর্কে বৃহৎ সংহিতাতে
উল্লেখ রয়েছে, গ্রীষ্মের শেষে সূর্য মেঘ রচনা করে কর্মের
মাধ্যমে বিশ্বের কর্ম অর্থাৎ কৃষি সংরক্ষণ করেন। তাই তিনি হচ্ছেন বিশ্বকর্মা। ভাদ্র মাসের শেষের
দিকে বর্ষা শেষ হয়ে যায়। তখন কৃষি কর্মের পূর্ণতা হয় এবং তখন কৃষকেরা ফসলের জন্য প্রতিক্ষা
করেন। তাই সেই কর্ম ক্ষান্তিতে
অর্থাৎ ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে তাঁকে পূজা করে কৃতজ্ঞতা নিবেদন করেন। এমতাবস্থায় দেখা যায়,
বিশ্বকর্মা শুধু শ্রমিকের নয়, কৃষকদেরও উপাস্য দেবতা। বিশ্বকর্মা শুধু দেবশিল্পী নন, তিনি মর্ত্যবাসী মানবদেরও শিল্প প্রজাপতি। তাঁর আশীর্বাদে মর্ত্যবাসীগণ শিল্পকাজে যথেষ্ট
পারদর্শী হয়েছেন। তিনি বর্তমান শ্রীলংকা নগরীর নির্মাতা এবং পঞ্চপান্ডবের প্রসাদও নির্মাণ করেছেন। তাই দেবশিল্পী বিশ্বকর্মাকে
পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তারূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ঋকবেদেও বিশ্বকর্মাকে সর্বদর্শী ভগবান বলা
হয়েছে।
(তথ্যসূত্রঃ হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থাবলী)
লেখকঃ কলামিস্ট, সংগঠক, চিকিৎসক ও সমাজকর্মী।
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১২
"সনাতন ধর্ম, মানব ধর্ম"
-->
(সহায়ক গ্রন্থ : মানবধর্ম, ডঃ মহানামব্রত
ব্রক্ষচারী)
হিন্দু ধর্ম মানবের ধর্ম। হিন্দু নামটা আমাদের
দেওয়া নয়, পরের দেওয়া নাম। সংস্কৃতে এ শব্দটি নেই, কিন্তু এই নামটা আমরাও ছাড়তে
পারি না। একেবারে চামড়ার সাথে মিশে গেছে। যেমন, একটি মানুষের নাম ঢেমনা। ঢেমনা
মানে একটি লতার শেকড়। কিন্তু, নাম একবার হয়ে গেছে, তাই মানুষ তার নাম ঢেমনাই বলতে
হবে। তেমনি, আমাদের ধর্মের নামও থাকবে হিন্দু। কিন্তু, হিন্দু আমাদের নাম নয়। এর
একটি সুন্দর নাম আছে। নামটি হল “সনাতন ধর্ম”।
সনাতন মানে চিরস্থায়ী, চিরকালের ধর্ম। আসল নামটা
হল মনুষ্যত্ব- এটাই মূল ধর্ম। মূল তত্ত্বটাই “মানবধর্ম”। প্রাচীন নাম সনাতন ধর্ম-
মানব মাত্রেই এটা ধর্ম। আর এ জন্যই এই ধর্মে “conversion” নেই।
ধর্মে কখনো convert
করা যায় না। আপনার মধ্যে যদি মনুষ্যত্ব না থাকে, তবে আপনাকে মনুষ্যত্ব দেবার চেষ্টা
করতে হবে। কি করে দেব? উপদেশ আর আদর্শ। আমি নিজে মানুষ হয়ে আপনার সাথে মেলামেশা
করতে করতে আপনি আমাকে দেখে মানুষ হয়ে যাবেন। এই জন্যই হিন্দু ধর্মে convert করার কোন চেষ্টাই করা হয় নি। যেটা মানব ধর্ম, সেখানে
আবার conversion কিসের? আপনি মানুষ আপনাকে অপর ধর্মে নেবার কোন অর্থ হয়
না। যে মনুষ্যত্ব অর্জন করে নি, তাকে মনুষ্যত্ব দেবার
চেষ্টা করা যায়; মানুষকে মনুষ্যপদ বাচ্য করে তোলবার চেষ্টা করা যায়।
তবে হ্যাঁ, শুধুমাত্র উপদেশ
দিয়ে মানুষ গড়া কষ্টকর। চুরি করো না, মিথ্যা বলো না, হিংসা করো না, মানুষ হও,
মানুষ হওয়া উচিত- ইত্যাদি উপদেশের সাথে একটি পরম আদর্শের যোগ করে দিতে হয়- যার
কাছে যেতে হলে, যার কৃপা পেতে হলে আগে মানুষ হওয়া দরকার। যে চোর, সে তার অনুগ্রহ
পায় না। যে মিথ্যাবাদী, তিনি তাকে শাস্তি দেন। এ ভাবে একটি বড় জিনিসের সাথে
যোগাযোগ রাখতে হয়। যেমন, মানুষকে ভাল করার জন্য পুলিশের ভয়, রাজার ভয়, জেলখানার
ভয়- ইত্যাদি ব্যবস্থা সমাজকে রাখতে হয়েছে। তেমনি, মানুষকে মানুষ করার জন্য ভয়,
ভালোবাসা, প্রেম, প্রীতি ইত্যাদি মিলিয়ে ঈশ্বরের সাথে একটা সম্পর্ক রাখতে হয়।
অর্থাৎ মনুষ্যত্বের সাথে দেবত্বের আলো দেওয়া প্রয়োজন।
লক্ষ্যটা মনুষ্যত্ব পর্যন্তই থাকবে না, আরও উপরে লক্ষ্যটি রাখতে হবে, তবেই ঠিক ঠিক
মনুষ্যত্ব লাভ হবে।
আর তবেই, সার্থক হবে “মানবধর্ম”, সার্থক হবে “সনাতন
ধর্ম”।
"গর্বের সাথে বলুন আমি হিন্দু"
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন , '' ধর্ম হল সেটাই , যা পশুকে মানুষে
এবং মানুষকে দেবতায় পরিণত করে। ''
এর অর্থ হল , - ধর্ম ' হল একটি বিকাশের প্রক্রিয়া । পাশবিক মানুষের আনন্দ
শুধু শরীরগত । শরীরের সুখ বা ইন্দ্রিয়চরিতার্থতা ছাড়া সে আর কিছুই বোঝেনা ।
আর একটু উন্নত হলে মানুষ মানসিক আনন্দলাভের
অধিকারী হয় , তখন সে সাহিত্য রস , শিল্পের রস অনুভব করতে পারে । এটাকে মানবীয় স্তর বলা যায় ।
আরও উন্নত অবস্থায় মানুষ ঈশ্বরীয় আনন্দে
বিভোর হয় , ধ্যানাবস্থায় শান্তির অপূর্ব পরিবেশ অনুভব
করতে পারে ; যাকে বলা যায় দৈবী স্তর ।
এভাবে উন্নত হতে হতে মানুষ যখন দেহ ,
মন ইন্দ্রিয়ের গণ্ডি অতিক্রম করে তখনই সে লাভ করে শাশ্বত জ্ঞান
বা সনাতন সত্য ।
সে অনুভব করে সে ক্ষুদ্র নয় সে দেহ নয় ,
মন নয় এমনকি চিন্তা চেতনাও নয় , সে আত্মা । সে এক অনন্ত , অখণ্ড অস্তিত্ব ।
মানুষ তখন তার ক্ষুদ্রতার খোলস পরিত্যাগ করে
অনন্ত ' আমিত্বে ' লীন হয়ে যায় ।
' নির্গচ্ছতি জগজ্জালাৎ পিঞ্জরাদিব কেশরী '
-- সিংহ যেমন পিঞ্জর ভেঙ্গে ফেলে বেরিয়ে যায় ঠিক তেমনি সে এই
জগৎ-জাল ভেদ করে মুক্ত হয়ে যায় । ধর্মের চরম লক্ষ্য হল মুক্তি । ধর্ম হল এই রূপান্তরের প্রক্রিয়া ,
যা পশুকে মানুষে , মানুষকে দেবতায়
এবং দেবতাকে ঈশ্বরে বিকশিত করে ।
ঋষিদের আবিষ্কৃত এই সত্যলাভের পথই সনাতন ধর্ম
।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০১২
সনাতন আর্য্যধর্ম ও বিবর্তনবাদ
বিবর্তনবাদ-মানব তথা প্রাণীজগতের উদ্ভবের নতুনতত্ত্ব। যা গড়ে ওঠে মূলতঃ
ধর্মের বিরুদ্ধ কিছু মতবাদ নিয়েই। হিফেসটাস, সিসেরা, প্লুটার্ক,
কোপার্নিকাস, জি ব্রুনো, গ্যালিলিও প্রভৃতিরা সূচনা করেন সূর্য ও পৃথিবী
কেন্দ্রীক বিরোধিতা, যা বাইবেলকে সরাসরি বিরোধিতা করে। ফলে পরবর্তীতে
ডারউইন যখন তার বিবর্তনবাদ তত্ত্ব প্রকাশ করেন, তা স্বভাবতই ধর্মগ্রন্থের
বর্ণনার বিরোধী দিক হিসেবে গৃহীত
হয় ১৯৫৯
সালে তার Origin of species by means of Natural selection এবং ১৮৭১ সালে
Decent of man বই দ্বারা তার তত্বটিকে তিনি স্পষ্ট করেন। যদিও তখন থেকেই তা
ধর্মের বিরুদ্ধে ছাড়িয়ে যায় প্রধানত ১৮৬০ সালের ৩০ জন ডারুইনবাদ নিয়ে
প্রকাশ্য বিতর্কের জন্য যার আয়োজন করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের
Association for the Advancement of science পক্ষে বিবর্তনবাদী T.H. Haxli
বিপক্ষে বিশপ Wilberforce ১৯২৭ সালের জানুয়ারীতে মামলা হয়, যা নিষ্পত্তি হয়
৬০ এর দশকে যেখানে বিবর্তনবাদ পড়ানোর পাশাপাশি বাইবেলীয় সৃষ্টিতত্ত্ব
পড়ানোর ও সিদ্ধান্ত হয়। তবে প্রকৃত সেতুবন্ধনটি কেউ খোঁজার চেষ্টাও করেনি।
তুলনামূলক ভাবে দেখা যায় যে বিবর্তনবাদ অনুসারে প্রথমে জলজ জীব হিসেবে ছোট
কনিকা বা জেলির ন্যায় কোষের উদ্ভব হয়। এর কিছু কিছু সাগরের নীচে মৃত বা
জীবিত জমে শ্যাওলা জাতীয় উদ্ভিদের জন্ম দেয়, যা দেখে সমুদ্রের নীচের
বৃক্ষরাজির উদ্ভব। ক্রমান্বয়ে ম্যানগ্রোভ জাতীয় বৃক্ষ এবং স'লজ বৃক্ষ। আবার
ঐ জেলী গুলোই ক্রমান্বয়ে মৎস্যজাতীয় প্রাণীতে পরিনত হয়। ছোট মাছ থেকে বড়
মাছ। মৎস্য জাতীয় জলজ প্রাণী থেকে উভচর প্রাণীর উদ্ভব যেমনঃ ব্যাঙ, কচ্ছপ।
তার থেকে উদ্ভব সরীসৃপ প্রাণীর যেমনঃ সাপ, টিকটিকি ডাইনোসোর বা কিংবা
পেঙ্গুইন, এমু, উটপাখি প্রভৃতি পাখির, যা পরবর্তীতে পূর্ণ পাখিতে রুপান-রিত
হয়। আবার, সরীসৃপ থেকে স-ন্যপায়ী বৃহদাকার প্রানীর উদ্ভব হয় শূকর, বাঘ,
হাতি, তৃণভোজী বৃহদাকার বিলুপ্ত প্রাণী সমূহের এরই একটা অংশ এ্যাপ জাতীয়
উপধারা যেখানে গরিল, বানর শিম্পাজী প্রভৃতি অন-ভূক্ত। এরই ধারায় আদিম মানুষ
ক্রমান্বয়ে সভ্য মানুষ। পক্ষান-রে সনাতন ধর্মের বা আর্য্যমতের শাস্ত্র
শতপথও তৈত্তিরীয় সংহিতা কিংবা বায়ু পুরাণ বা সৌরপুরাণও তাই বলে। মুলতঃ
আর্যশাস্ত্র সমূহ বিবর্তনবাদের সমর্থন বা ইঙ্গিত পূর্বেই দিয়েছিল।
পূর্বোক্ত বিবর্তনবাদের ধারা বিবরণীতে ৫টি ধরণ দেখতে পাই যার সাথে শাস্ত্র সমুহের অবতারের সামঞ্জস্য মেলে। যেমন:
১.জলজ প্রাণী (মৎস্য জাতীয়)--------মৎস্য অবতার (মাছ)
২.উভচর প্রাণী (কচ্ছপ, ব্যাঙ, প্রভৃতি)-কূর্ম অবতার (কচ্ছপ)
৩.স্থলজ প্রাণী (শূকর, গরু, সিংহ প্রভৃতি)-----বরাহ অবতার (শূকর)
৪.এ্যাপজাতীয় প্রাণী (শিম্পাজী বা বন্যদশার মানুষ)--------- নৃসিংহ অবতার
৫.মানবজাতি (বর্বরদশা) ------------------ বামন অবতার
৬.মানবজাতি (সভ্যতা)-------রাম অবতার ও তৎপরবর্তীগণ
অর্থাৎ জলজ প্রাণীদেরকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিতে পরমপিতাকে বা ভগবানকে মৎস্যজাতীয় প্রাণী হয়েই জন্মাতে হয়েছে। কারণ মানুষের কথা তো আর মাছে বোঝে না। এভাবেই উভচর প্রাণীর উদ্ভব হলে তিনি কচছপ জাতীয় প্রাণী হয়েই জন্মগ্রহন করেন। এক্ষেত্রে মূল বিষয় হল তিনি উভচর প্রাণীদের জন্য আসেন। পরে স্থলজ প্রাণী সমূহের উদ্ভব হলে তিনি তাদেরকে ও উদ্ধার করতে অবতীর্ণ হন শূকররুপী স্থলজ জীববেশে। পরবর্তীতে যখন স্তন্যপায়ী বা এ্যাপজাতীয় প্রানীর উদ্ভব হয়, তখন থেকে বনমানুষ পর্যন্ত তাদেরকে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে দেখা হয় না। অর্থাৎ দেখতে ক্রমান্বয়ে মানুষের মত হলেও পশুপ্রবৃত্তি বিদ্যমান ছিল তাদের খাদ্যাভ্যাস বাসস্থান, যৌনক্রিয়া প্রভৃতিতে। ঠিক এরই স্বয়ম্ভু যেন অর্ধেক নর(মানুষ)+ অর্ধেক সিংহ(পশু)=নৃসিংহরূপ। পরবর্তীতে সভ্য মানুষের মধ্যে বিভিন্ন অবতারের আর্বিভাব।
যাহোক, এখানে দুটি বিতর্ক আসতে পারে।
১। এগুলো কাল্পনিকও তো হতে পারে!
২। আর সত্য হলেও ভগবান কেন শুধু মাছ, কচ্ছপ ও শূকর হয়ে জন্মাবেন, অন্য কোন জলজ, উভচর বা স্থলজ প্রানী কেন হলেন না।
প্রথমত, কাল্পনিকতার প্রশ্নটি আসবে বিবর্তনবাদীদের পক্ষ থেকে। কিন্ত ভেবেছেন কি, একটা সূত্র ধরে জেলী থেকে সভ্য মানুষ পর্যন্ত যে ক্রম তা কি নিছকই কল্পনা নয়। আর দ্বিতীয়ত এখানে জলজ প্রাণীগুলোর অধিপতি হিসেবে মৎস্য অবতারকে, উভচর প্রাণীর অধিপতি হিসেবে কূর্ম অবতারকে এবং স্থলজ প্রাণীর অধিপতি হিসেবে শূকরকে দেখানো হয়েছে। তৎপর মানুষের পূর্বরূপ বা এ্যাপজাতীয় রূপের কল্পনায় নৃসিংহ অবতার। যার অবয়ব মানুষের মত হলেও সিংহের মত হিংস্র পশুবৃত্তি সম্পন্ন রূপের প্রকাশ। তাহলে কি পাখি, সাপ, ডাইনোসর, প্রভৃতির ভিতর অবতারের আবশ্যকতা ছিল না। অবশ্যই ছিল। গীতা অনুসারে পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ আরও বৈজ্ঞানিকভাবে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে যখন যখন ধর্মের গ্লানি হবে তখন তখনই তিনি আসতে পারেন, অর্থাৎ তার সংখ্যা অর্নিণেয়। আবার উল্লেখ করেছেন, যে যেভাবে তার ভজনা করেন, সেইভাবে তিনি তা গ্রহন করেন। অর্থাৎ তা শুধু মানুষ নয়, পাখি, মাছ, পশু সহ সমগ্র প্রাণীজগতের জন্য প্রযোজ্য। সব চেয়ে বড় প্রশ্ন তাহলে পৃথিবীর আদি মাতা-পিতা মনু বা শতরুপার স্থান কোথায়? ধর্ম তো বলে তারাই আদি পিতা এবং আদি মাতা। মিথ্যা নয়। আমরা মনুর পুত্র বলেই মনু+ষ্ণ = মানব জাতি বলে অভিহিত।
নৃ-তাত্ত্বিক গবেষণা বলে প্রত্যেক নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী যা একই গোষ্ঠীর ধারাকে বজায় রেখে চলে বা এখনও চলেছে তাদের মধ্যে Headman বা গোষ্ঠী প্রধান বলে একজন থাকেন যিনি সব নিয়ন্ত্রন করেন। অনেক ক্ষেত্রে কোন কোন গোষ্ঠী প্রধানকে নিয়ে বা তার প্রভাবকে নিয়ে বহুদিন মুখে মুখে গল্প প্রচলিত থাকে। তৈরী হয় মিথ। যাকে তারা তাদের গোষ্ঠীর উৎপত্তির নেতা স্বরপ ধরে নেয় এবং তাকে তদ্রুপ সম্মানও করে। ঠিক তেমনিই ভারতীয় আর্য্যসমাজের প্রথম রূপকার ভগবান মনু। এর অর্থ এই নয় যে, তার কোন পিতা-মাতা ছিল না। আবার তার যোগ্য সহধর্মিনী ছিলেন মা শতরূপা। তাই মনু রচিত মনুসংহিতা আজও আর্য সংস্কার সমুহের প্রধান নিদের্শক গ্রন্থ । এখন কথা হচ্ছে, আধুনিক ‘ব’ কলম শিক্ষিতরা যেটা হরহামেশাই বলে থাকেন যে, হয়তো দশাবতারের কল্পনা বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে অনুসরণ করেই করা হয়েছে। অর্থাৎ তত্ত্ব আগে, শাস্ত্র পরে তৈরী হয়েছে । কিন্ত না, বিবর্তনবাদ তত্ত্ব শুরুই হয় মাত্র ১৫১ বছর পূর্বে। মূলত তার কয়েক হাজার পূর্বেই বিবর্তনবাদের অস্তিত্ব বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন আর্য্যঋষিরা, কিন্ত আধ্যাত্মিক চিন্তার প্রাধান্যের কারণে এর রূপটি ছিল অন্যরকম। পদ্মপুরানের বর্ননায় এসব প্রাণীর সংখ্যাও
নির্দিষ্ট। যুগে যুগে বিভিন্ন অবতার ভগবান বা পুরুষোত্তমেরা এসবের যুগোপযোগী বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল-"Theory of evolution কি ?" ঠাকুর বললেন-"From the fine to the gross and from the gross to the fine. এই যে being এর ক্রমবিবর্তন একেই evolution বলে। অর্থাৎ Being এর external becoming কে evolution বলে । এই evolution চলছে beyond and environment যে Stimulus দিচ্ছে being এর উপর তার দরুন জীব তার evolution কে Control, Manipulate, profitably manage করতে চেষ্টা করছে সৃষ্টির আদি থেকে। কারন এই পরিবেশে তাকে দিচেছ পদে-পদে আঘাত। এর ফলে হচ্ছে জীবের further progress towards struggle করার জন্য তাদের শরীর ও মনের একটা পরিবর্তন আসছে, যার ফলে বেঁচে থাকতে থাকতেই তাদের Appearance এর একটা palpable পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এ পরিবর্তন পরিস্কার হয়ে ফুটে উঠেছে তাদের Descendants দের ভিতর দিয়ে। কোন particular environment কে manage করতে হলে শারীরিক বিধানের ভিতর যে যে পরিবর্তন দরকার সেখানে তেমন পরিবর্তন সবটাই দেখা দিয়েছে এবং মনের পরিবর্তন এসেছে ঐ অনুপাতে। পূবর্তন যারা
struggle করে করে মারা গেল হয়তো তাদের জীবন environment কে control করতে তেমনভাবে সক্ষম হলো না। তারা তাদের ঐ মনের অবস্থা নিয়ে জন্মান Descendants হয়ে। Science ঐ আগের টুকু স্বীকার করে। কিন্ত বর্ণাশ্রমধর্মী আর্যেরা জন্মান্তরবাদ স্বীকার করে ঐ জিনিষটাকে আরও ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। এই ক্রমপরিবর্তনের ধারা চলতে চলতে এক স্তরে এ্যাপমেন এ পৌঁছেছে। এরপর থেকেই মানুষের সৃষ্টি। এমনকি এখনও অনেক অনেক এ্যাপমেন এর মত মুখ দেখা যায় । গায়ে লোমও ঠিক পশুর মতন। সৃষ্টি একই সময় হয়নি বলে এবং এখনও সমানভাবে চলছে বলে জীবের মধ্যে কতগুলো মানুষ অবস্থায় এসে পৌছে গেছে, কতক মানুষ অবস্থার দিকে চলছে, কতক Embryonic stage-এ এখনও আছে। মানুষ আমরা আস্তে আস্তে এই evolution এর ফলে superior man এ পরিবর্তিত হচ্ছি।" এত সহজে, ধারাবাহিকভাবে এবং সংক্ষিপ্ত পরিসরে Theory of evolution ডারুইনের বইতে বটেই, নৃবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে কোন পাঠ্যবইয়ে বা নৃবৈজ্ঞানিক বইয়ে আমি পাইনি। সবচেয়ে বিস্ময়কর কথা হচ্ছে ঠাকুর তিনটি ধাপ স্পষ্ট করেছেন। Apeman>>>Man>>>Superior Man যার শেষ স্তরটি বিবর্তনবাদীদের ধারনায় এখনও এসেছে কিনা সন্দেহ। কাল্পনিক Super man বা Alien কে যদিও কেউ কেউ কল্পনা করে থাকেন। তবে যেহেতু পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, আচরণগত প্রভৃতি বিভিন্ন পরিবর্তন দ্বারা বিবর্তনের ধারা ক্রমবহমান। তাই Super man এর পরিপূর্ণ রূপ পাওয়া যায় না। অর্থাৎ খাদ্যভ্যাসে কি পরিবর্তন আসবে? পরিবেশে কি পরিবর্তন আসবে? কিংবা পোশাক বা আচরণে কি পরিবর্তন আসবে? ঠাকুর কিন্তু Super man হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো সূচক স্পষ্ট করেই গেছেন। যেমন খাদ্যের দিক থেকে যদি দেখা হয়, তবে একটি পর্যায় লক্ষ্যনীয় - কাঁচা মাছ-মাংস আহার >>> সিদ্ধ মাছ-মাংস আহার>>>রান্না মাছ-মাংস আহার>>>নিরামিষ আহার। বর্তমানে যা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাদ্যমান ও পুষ্টিগুনের কারণে, ধর্মীয় কারণ তো আছেই। আবার এই বিবর্তনের ধারাকেও ঠাকুর সর্বদা চলমান বলেছেন, যা বিবর্তনবাদের মূলকথা। কিন্ত বিবর্তনবাদ নিজেই জেলী থেমে মানুষে যেন থেমে গেছে। অর্থাৎ ধর্মীয় ব্যাখ্যায় যেমন মানুষকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, বিবর্তনবাদীরাও তার বাইরের বিবর্তন যেন ব্যাখ্যা করতে অসমর্থ। ঠাকুর প্রথম নৃবিজ্ঞানী যিনি মানুষের পরেও বিবর্তন সম্ভব এবং তা কিভাবে তার ব্যাখ্যা করে গেছেন। ঠাকুরের মতে, বিবর্তন সর্বদা উন্নতিমূখী হবে। তার মতে, "Revolution এর মধ্যে evolution নাও
থাকতে পারে। হয়তো প্লাবিত করে দিল কিন্ত কেন্দ্রে আকৃষ্ট করল না। কিন্ত বিবর্তিত হতে গেলে সুকেন্দ্রিক হওয়াই চাই।" অর্থাৎ পূর্বে থেকে Headman কে মেনে যেমন গোষ্ঠীগুলো টিকে ছিল, সেখানে Headman গোষ্ঠীর সবকিছুর নিয়ন্তা ছিলেন। সেখানে বর্তমানে আধুনিক তথা অত্যাধুনিক যুগে গোষ্ঠীর সংকীর্ণতা পেরিয়ে মানুষ বহুজাতিক সংমিশ্রনে কিংবা বিশ্বায়নের একজন সদস্য। তাই তার বিবর্তনের জন্য তেমনই একজন Headman প্রয়োজন যার মধ্যে আছে দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র, ব্যবসায় শিক্ষা, অর্থনীতি, কৃষি-শিল্প, যৌন শাস্ত্র, স্বাস্থ্য ও সদাচার সূত্র তথা জীবনের বাঁচা-বাড়ার লওয়াজিমার সকল দিক। এমন ব্যক্তিই হতে পারে বর্তমান বিশ্বায়িত সমাজের মানুষের জন্য যোগ্যতম আদর্শ বা Headman। আর এভাবেই তো গড়ে উঠে সমাজ ক্রমবিবর্তনের পথে। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এসব অবতারবাদকে বিবর্তনবাদের উদাহরণ হিসেবেই দেখেছেন এবং সুন্দরভাবে সমাজের বিবর্তনের সংজ্ঞায়ন করেছেন,“ এক আদেশে চলে যারা, তাদের নিয়ে সমাজ গড়
পূর্বোক্ত বিবর্তনবাদের ধারা বিবরণীতে ৫টি ধরণ দেখতে পাই যার সাথে শাস্ত্র সমুহের অবতারের সামঞ্জস্য মেলে। যেমন:
১.জলজ প্রাণী (মৎস্য জাতীয়)--------মৎস্য অবতার (মাছ)
২.উভচর প্রাণী (কচ্ছপ, ব্যাঙ, প্রভৃতি)-কূর্ম অবতার (কচ্ছপ)
৩.স্থলজ প্রাণী (শূকর, গরু, সিংহ প্রভৃতি)-----বরাহ অবতার (শূকর)
৪.এ্যাপজাতীয় প্রাণী (শিম্পাজী বা বন্যদশার মানুষ)--------- নৃসিংহ অবতার
৫.মানবজাতি (বর্বরদশা) ------------------ বামন অবতার
৬.মানবজাতি (সভ্যতা)-------রাম অবতার ও তৎপরবর্তীগণ
অর্থাৎ জলজ প্রাণীদেরকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিতে পরমপিতাকে বা ভগবানকে মৎস্যজাতীয় প্রাণী হয়েই জন্মাতে হয়েছে। কারণ মানুষের কথা তো আর মাছে বোঝে না। এভাবেই উভচর প্রাণীর উদ্ভব হলে তিনি কচছপ জাতীয় প্রাণী হয়েই জন্মগ্রহন করেন। এক্ষেত্রে মূল বিষয় হল তিনি উভচর প্রাণীদের জন্য আসেন। পরে স্থলজ প্রাণী সমূহের উদ্ভব হলে তিনি তাদেরকে ও উদ্ধার করতে অবতীর্ণ হন শূকররুপী স্থলজ জীববেশে। পরবর্তীতে যখন স্তন্যপায়ী বা এ্যাপজাতীয় প্রানীর উদ্ভব হয়, তখন থেকে বনমানুষ পর্যন্ত তাদেরকে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে দেখা হয় না। অর্থাৎ দেখতে ক্রমান্বয়ে মানুষের মত হলেও পশুপ্রবৃত্তি বিদ্যমান ছিল তাদের খাদ্যাভ্যাস বাসস্থান, যৌনক্রিয়া প্রভৃতিতে। ঠিক এরই স্বয়ম্ভু যেন অর্ধেক নর(মানুষ)+ অর্ধেক সিংহ(পশু)=নৃসিংহরূপ। পরবর্তীতে সভ্য মানুষের মধ্যে বিভিন্ন অবতারের আর্বিভাব।
যাহোক, এখানে দুটি বিতর্ক আসতে পারে।
১। এগুলো কাল্পনিকও তো হতে পারে!
২। আর সত্য হলেও ভগবান কেন শুধু মাছ, কচ্ছপ ও শূকর হয়ে জন্মাবেন, অন্য কোন জলজ, উভচর বা স্থলজ প্রানী কেন হলেন না।
প্রথমত, কাল্পনিকতার প্রশ্নটি আসবে বিবর্তনবাদীদের পক্ষ থেকে। কিন্ত ভেবেছেন কি, একটা সূত্র ধরে জেলী থেকে সভ্য মানুষ পর্যন্ত যে ক্রম তা কি নিছকই কল্পনা নয়। আর দ্বিতীয়ত এখানে জলজ প্রাণীগুলোর অধিপতি হিসেবে মৎস্য অবতারকে, উভচর প্রাণীর অধিপতি হিসেবে কূর্ম অবতারকে এবং স্থলজ প্রাণীর অধিপতি হিসেবে শূকরকে দেখানো হয়েছে। তৎপর মানুষের পূর্বরূপ বা এ্যাপজাতীয় রূপের কল্পনায় নৃসিংহ অবতার। যার অবয়ব মানুষের মত হলেও সিংহের মত হিংস্র পশুবৃত্তি সম্পন্ন রূপের প্রকাশ। তাহলে কি পাখি, সাপ, ডাইনোসর, প্রভৃতির ভিতর অবতারের আবশ্যকতা ছিল না। অবশ্যই ছিল। গীতা অনুসারে পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ আরও বৈজ্ঞানিকভাবে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে যখন যখন ধর্মের গ্লানি হবে তখন তখনই তিনি আসতে পারেন, অর্থাৎ তার সংখ্যা অর্নিণেয়। আবার উল্লেখ করেছেন, যে যেভাবে তার ভজনা করেন, সেইভাবে তিনি তা গ্রহন করেন। অর্থাৎ তা শুধু মানুষ নয়, পাখি, মাছ, পশু সহ সমগ্র প্রাণীজগতের জন্য প্রযোজ্য। সব চেয়ে বড় প্রশ্ন তাহলে পৃথিবীর আদি মাতা-পিতা মনু বা শতরুপার স্থান কোথায়? ধর্ম তো বলে তারাই আদি পিতা এবং আদি মাতা। মিথ্যা নয়। আমরা মনুর পুত্র বলেই মনু+ষ্ণ = মানব জাতি বলে অভিহিত।
নৃ-তাত্ত্বিক গবেষণা বলে প্রত্যেক নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী যা একই গোষ্ঠীর ধারাকে বজায় রেখে চলে বা এখনও চলেছে তাদের মধ্যে Headman বা গোষ্ঠী প্রধান বলে একজন থাকেন যিনি সব নিয়ন্ত্রন করেন। অনেক ক্ষেত্রে কোন কোন গোষ্ঠী প্রধানকে নিয়ে বা তার প্রভাবকে নিয়ে বহুদিন মুখে মুখে গল্প প্রচলিত থাকে। তৈরী হয় মিথ। যাকে তারা তাদের গোষ্ঠীর উৎপত্তির নেতা স্বরপ ধরে নেয় এবং তাকে তদ্রুপ সম্মানও করে। ঠিক তেমনিই ভারতীয় আর্য্যসমাজের প্রথম রূপকার ভগবান মনু। এর অর্থ এই নয় যে, তার কোন পিতা-মাতা ছিল না। আবার তার যোগ্য সহধর্মিনী ছিলেন মা শতরূপা। তাই মনু রচিত মনুসংহিতা আজও আর্য সংস্কার সমুহের প্রধান নিদের্শক গ্রন্থ । এখন কথা হচ্ছে, আধুনিক ‘ব’ কলম শিক্ষিতরা যেটা হরহামেশাই বলে থাকেন যে, হয়তো দশাবতারের কল্পনা বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে অনুসরণ করেই করা হয়েছে। অর্থাৎ তত্ত্ব আগে, শাস্ত্র পরে তৈরী হয়েছে । কিন্ত না, বিবর্তনবাদ তত্ত্ব শুরুই হয় মাত্র ১৫১ বছর পূর্বে। মূলত তার কয়েক হাজার পূর্বেই বিবর্তনবাদের অস্তিত্ব বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন আর্য্যঋষিরা, কিন্ত আধ্যাত্মিক চিন্তার প্রাধান্যের কারণে এর রূপটি ছিল অন্যরকম। পদ্মপুরানের বর্ননায় এসব প্রাণীর সংখ্যাও
নির্দিষ্ট। যুগে যুগে বিভিন্ন অবতার ভগবান বা পুরুষোত্তমেরা এসবের যুগোপযোগী বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল-"Theory of evolution কি ?" ঠাকুর বললেন-"From the fine to the gross and from the gross to the fine. এই যে being এর ক্রমবিবর্তন একেই evolution বলে। অর্থাৎ Being এর external becoming কে evolution বলে । এই evolution চলছে beyond and environment যে Stimulus দিচ্ছে being এর উপর তার দরুন জীব তার evolution কে Control, Manipulate, profitably manage করতে চেষ্টা করছে সৃষ্টির আদি থেকে। কারন এই পরিবেশে তাকে দিচেছ পদে-পদে আঘাত। এর ফলে হচ্ছে জীবের further progress towards struggle করার জন্য তাদের শরীর ও মনের একটা পরিবর্তন আসছে, যার ফলে বেঁচে থাকতে থাকতেই তাদের Appearance এর একটা palpable পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এ পরিবর্তন পরিস্কার হয়ে ফুটে উঠেছে তাদের Descendants দের ভিতর দিয়ে। কোন particular environment কে manage করতে হলে শারীরিক বিধানের ভিতর যে যে পরিবর্তন দরকার সেখানে তেমন পরিবর্তন সবটাই দেখা দিয়েছে এবং মনের পরিবর্তন এসেছে ঐ অনুপাতে। পূবর্তন যারা
struggle করে করে মারা গেল হয়তো তাদের জীবন environment কে control করতে তেমনভাবে সক্ষম হলো না। তারা তাদের ঐ মনের অবস্থা নিয়ে জন্মান Descendants হয়ে। Science ঐ আগের টুকু স্বীকার করে। কিন্ত বর্ণাশ্রমধর্মী আর্যেরা জন্মান্তরবাদ স্বীকার করে ঐ জিনিষটাকে আরও ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। এই ক্রমপরিবর্তনের ধারা চলতে চলতে এক স্তরে এ্যাপমেন এ পৌঁছেছে। এরপর থেকেই মানুষের সৃষ্টি। এমনকি এখনও অনেক অনেক এ্যাপমেন এর মত মুখ দেখা যায় । গায়ে লোমও ঠিক পশুর মতন। সৃষ্টি একই সময় হয়নি বলে এবং এখনও সমানভাবে চলছে বলে জীবের মধ্যে কতগুলো মানুষ অবস্থায় এসে পৌছে গেছে, কতক মানুষ অবস্থার দিকে চলছে, কতক Embryonic stage-এ এখনও আছে। মানুষ আমরা আস্তে আস্তে এই evolution এর ফলে superior man এ পরিবর্তিত হচ্ছি।" এত সহজে, ধারাবাহিকভাবে এবং সংক্ষিপ্ত পরিসরে Theory of evolution ডারুইনের বইতে বটেই, নৃবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে কোন পাঠ্যবইয়ে বা নৃবৈজ্ঞানিক বইয়ে আমি পাইনি। সবচেয়ে বিস্ময়কর কথা হচ্ছে ঠাকুর তিনটি ধাপ স্পষ্ট করেছেন। Apeman>>>Man>>>Superior Man যার শেষ স্তরটি বিবর্তনবাদীদের ধারনায় এখনও এসেছে কিনা সন্দেহ। কাল্পনিক Super man বা Alien কে যদিও কেউ কেউ কল্পনা করে থাকেন। তবে যেহেতু পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, আচরণগত প্রভৃতি বিভিন্ন পরিবর্তন দ্বারা বিবর্তনের ধারা ক্রমবহমান। তাই Super man এর পরিপূর্ণ রূপ পাওয়া যায় না। অর্থাৎ খাদ্যভ্যাসে কি পরিবর্তন আসবে? পরিবেশে কি পরিবর্তন আসবে? কিংবা পোশাক বা আচরণে কি পরিবর্তন আসবে? ঠাকুর কিন্তু Super man হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো সূচক স্পষ্ট করেই গেছেন। যেমন খাদ্যের দিক থেকে যদি দেখা হয়, তবে একটি পর্যায় লক্ষ্যনীয় - কাঁচা মাছ-মাংস আহার >>> সিদ্ধ মাছ-মাংস আহার>>>রান্না মাছ-মাংস আহার>>>নিরামিষ আহার। বর্তমানে যা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাদ্যমান ও পুষ্টিগুনের কারণে, ধর্মীয় কারণ তো আছেই। আবার এই বিবর্তনের ধারাকেও ঠাকুর সর্বদা চলমান বলেছেন, যা বিবর্তনবাদের মূলকথা। কিন্ত বিবর্তনবাদ নিজেই জেলী থেমে মানুষে যেন থেমে গেছে। অর্থাৎ ধর্মীয় ব্যাখ্যায় যেমন মানুষকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, বিবর্তনবাদীরাও তার বাইরের বিবর্তন যেন ব্যাখ্যা করতে অসমর্থ। ঠাকুর প্রথম নৃবিজ্ঞানী যিনি মানুষের পরেও বিবর্তন সম্ভব এবং তা কিভাবে তার ব্যাখ্যা করে গেছেন। ঠাকুরের মতে, বিবর্তন সর্বদা উন্নতিমূখী হবে। তার মতে, "Revolution এর মধ্যে evolution নাও
থাকতে পারে। হয়তো প্লাবিত করে দিল কিন্ত কেন্দ্রে আকৃষ্ট করল না। কিন্ত বিবর্তিত হতে গেলে সুকেন্দ্রিক হওয়াই চাই।" অর্থাৎ পূর্বে থেকে Headman কে মেনে যেমন গোষ্ঠীগুলো টিকে ছিল, সেখানে Headman গোষ্ঠীর সবকিছুর নিয়ন্তা ছিলেন। সেখানে বর্তমানে আধুনিক তথা অত্যাধুনিক যুগে গোষ্ঠীর সংকীর্ণতা পেরিয়ে মানুষ বহুজাতিক সংমিশ্রনে কিংবা বিশ্বায়নের একজন সদস্য। তাই তার বিবর্তনের জন্য তেমনই একজন Headman প্রয়োজন যার মধ্যে আছে দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র, ব্যবসায় শিক্ষা, অর্থনীতি, কৃষি-শিল্প, যৌন শাস্ত্র, স্বাস্থ্য ও সদাচার সূত্র তথা জীবনের বাঁচা-বাড়ার লওয়াজিমার সকল দিক। এমন ব্যক্তিই হতে পারে বর্তমান বিশ্বায়িত সমাজের মানুষের জন্য যোগ্যতম আদর্শ বা Headman। আর এভাবেই তো গড়ে উঠে সমাজ ক্রমবিবর্তনের পথে। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এসব অবতারবাদকে বিবর্তনবাদের উদাহরণ হিসেবেই দেখেছেন এবং সুন্দরভাবে সমাজের বিবর্তনের সংজ্ঞায়ন করেছেন,“ এক আদেশে চলে যারা, তাদের নিয়ে সমাজ গড়
লিখেছেন-মাদল দেব বর্মন
০২ সেপ্টেম্বর ২০১২
সনাতন হলো সত্তের ধারক
সনাতন সন্দেশরবিবার, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১২অন্যান্য, জীবন দর্শন, প্রশ্নোত্তর, হিন্দুত্ববাদ.
কোন মন্তব্য নেই
প্রমানিত সত্য হলো বিজ্ঞান, আর সনাতন হলো সত্তের
ধারক। নিত্য নতুন আবিষ্কার কে সনাতন সব সময় শ্রদ্ধা করেছে। সনাতন
প্রকৃতিকেই ঈশ্বর বলে (বেদ মতে), সুতরাং বিজ্ঞান ও সনাতনের মধ্যে কোন
প্রতিযোগিতা নেয়। সনাতন সত্যকে মেনে নিতে সদা প্রস্তুত। বিজ্ঞান এ
র
আবিষ্কার মানুষ কে আজ অনেক অনেক উন্নত করেছে। সভ্যতাকে করেছে বিকশিত,
কিন্তু মানুষ এখনো অনেক অসহায়, কারণ প্রকৃতির সাহায্য ছাড়া এখনো একটি বালি
কনাও তৈরি করতে পারেনি মানুষ। আমার মনে হয় সনাতন এর সাথে বিজ্ঞানের দৈরথ
তৈরি না করে সনাতন এর ধারণা কে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞান কে আরো সমৃদ্ধ করা
উচিৎ। সূর্যের সাত রঙের বর্ণনা বেদ ও বিষ্ণু পুরাণে আছে। কিন্তু বেদ কে
অন্ধকারে রাখার কারণে সেটি প্রকাশিত হয় নি। মহা জ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন পড়ে
টা আবিষ্কার করেন। আমি প্রতিটি বিজ্ঞানী কে এক এক জন ঋষি মনে করি, তিনি যে
ধর্মের অবলম্বী হোন না কেন বা ধর্ম বিশ্বাসে বিশ্বাসী না হলেও তাঁকে আমি
ঋষিই মনে করি। প্রজুক্তির কোন সাহায্য ছারাই সপ্ত মণ্ডল সহ মাহাকাশের অনেক
অনেক ধারণা কে বেদ উল্লেখ করেছে অনেক অনেক আগেই। বেদ এর সেই আবিষ্কার কে
আমি বিজ্ঞান ই বলি। সুতরাং সনাতন ও বিজ্ঞান অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত।
আমাদের মহা জ্ঞান বেদ কে আমি চর্চা করার চেষ্টা করছি বেশ কিছুদিন ধরেই। যা শিখছি চেষ্টা করছি সবার সাথে তা শেয়ার করার জন্যে। আমি অবাক ও বিস্মিত হচ্ছি এই ভেবে যে, হাজার হাজার বছর আগে কিভাবে আমাদের মহা জ্ঞানী মুনি ঋষিরা এতো এতো আবিষ্কার আমাদের জন্যে করে গেলেন। কত বেশী জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন তাঁরা। আমরা চর্চা করি না বলেই সনাতন কে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। আমি বেদ চর্চার সময় ভালো বা খারাপ কোন রকমের ধারণা ছারাই শুদ্ধ ও শূন্য মনেই শুরু করি। যাতে আমার নিজের কোন ধারণা জ্ঞান চর্চায় অন্তরায় না হয় এবং আমি যত বেদ এর জ্ঞানের মধ্যে প্রবেশ করছি তত বিস্মিত হচ্ছি। এতো এতো সমৃদ্ধ জ্ঞান থাকতে কেন এমন একটা জ্ঞান কে অন্ধকারে রেখেছে সমাজ !!!!!!!! দয়া করে কেও, কার দোষ বেদ কে অন্ধকারে রাখার পেছনে এ নিয়ে তর্ক করবেন না। তার চেয়ে বেদ পড়ার অভ্যাস করুণ। এতে মহা জ্ঞান সবার ঘড়ে ঘড়ে প্রবেশ করব। সমাজ কুসংস্কার মুক্ত হবে। আমি এ কথা নিশ্চিৎ ভাবেই বলছি বৈদিক সমাজ আধুনিক ত্বম সমাজ ছিলো।
ধর্ম মানতে হবে হবে কথা নেয়, কিন্তু ধর্ম কে জানতে হবে। সবচেয়ে আদি সনাতন ধর্মে কি আছে তা জানার চেষ্টা করুণ কেন তা এতদিন ধরে টিকে আছে? কি আছে এতে? মিথ্যে হলে তো এতদিন ধরে টিকে থাকতে পারতো না।
সনাতন ধর্মের নির্যাশ বলতে আমি পেয়েছি "জীব আত্মায় পরম আত্মা" "যত্র জীব তত্র শিব" "সকল পথ ই ঈশ্বরের দিকে ধাবিত" "যত মত তত পথ" "জীবে প্রেম করে যে জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর" "মেরেছিস কলশীর কানা তা বলে কি প্রেম দিব না" তাহলে আপনি নাস্তিক হোন আর আস্তিক সনাতন এর সাথে আপনার তো কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। লোকাচার কে ধর্ম বলে অনেকেই ভুল করেন বলেন এবং মনে করেন সনাতন কুসংস্কারে ভরা। যেমন ধরুন সতী দাহ প্রথা বা বিধবা প্রথা এগুলি কি ছিলো বেদে? অথচ অনেকেই মনে করেন এগুলি আমাদের সনাতনের কু-সংস্কার।
সনাতন ধরমালম্বিরা প্রকৃতি পূজারী। সনাতন ধর্ম মতে প্রকৃতিই হলো ভগবান। আপনার খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের প্রত্যেকটি পুজাতেই গাছ পালার ব্যবহার আছে। যেমন ধরেন বেল পাতা, তুলশী পাতা, বট পাতা, অশত্ত পাতা, আম পাতা সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফল সহ প্রকৃতির সব সব কিছুকেই ব্যবহার করতে বলেছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো প্রকৃতি সংরক্ষণ। পূজার মাধ্যমে প্রকৃতি কে সংরক্ষণ করতে বলেছে সনাতন। আবার প্রাণী কুল কে রক্ষার জন্যে প্রত্যেক দেব দেবী এক এক টা বাহন নিয়েছেন, যা আমাদের ইকোসিস্টেম কে রক্ষার কাজে সহায়তা করে। এত বড় গনেশ দেবতা কিন্তু তার বাহন ইঁদুর, আবার প্যাঁচা হলো লক্ষ্মীর বাহন === এভাবে প্রাণী কুল কে ও সন্মানিত করেছে সনাতন।
অথচ না জেনে না বুঝে অনেকেই বলেন আমরা বহু ঈশ্বর বাদী। প্রকৃত পক্ষে ঈশ্বর নিজে কিছু করেন না তিনি করান। তাঁর শক্তি কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন জনের মধ্যে সেই শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। একে গণতন্ত্র ও বলতে পারেন। তাহলে সনাতনে গণতন্ত্র অনেক আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত ছিলো।
সবার প্রতি আমার অনুরোধ "ধর্ম মানতে হবে কথা নেয় জানতে হবে" না জেনে কেও কুমন্তব্য করবেন না। সনাতনের একটি ঘটনা দিয়ে কোন বিষয় কে বিশ্লেষণ করবেন না সনাতনের এক এক টা ঘটনার পেছনে অনেক অনেক গুলি কারণ জড়িত থাকে। যেমনঃ স্বর্গের দার রক্ষী অভিশপ্ত হয়ে তিন বার পৃথিবীতে জন্ম নেন ১/- হিরন্যক ২/- রাবণ ৩/- কংশ। অথচ নচিকেতা বলে বসলেন রাম যদি হেরে যেত রাবণ রাজ হতো সেখানে (রবন ছিলেন মহা জ্ঞানী তিনি নিজেই জান্তেন রাম দ্বারা তিনি নিহত হবেন। আর এ কারণেই অকাল বোধনে নিজেই দুর্গা পূজা করে নিজের মৃত্যু কে ডেকে এনেছেন এবং মুক্ত হয়েছিলেন পৃথিবী থেকে)
তায় না জেনে কোন মন্তব্য করবেন না, জানার জন্যে প্রশ্ন করুণ। যারা জানবেন তাঁরা উত্তর দিবেন। সবার কাছে সব কিছু জানা থাকবে এমন ও কোণ কথা নেয়।
ঈশ্বর সবার মঙ্গল করুণ।
by Lincon Chakraborty
আমাদের মহা জ্ঞান বেদ কে আমি চর্চা করার চেষ্টা করছি বেশ কিছুদিন ধরেই। যা শিখছি চেষ্টা করছি সবার সাথে তা শেয়ার করার জন্যে। আমি অবাক ও বিস্মিত হচ্ছি এই ভেবে যে, হাজার হাজার বছর আগে কিভাবে আমাদের মহা জ্ঞানী মুনি ঋষিরা এতো এতো আবিষ্কার আমাদের জন্যে করে গেলেন। কত বেশী জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন তাঁরা। আমরা চর্চা করি না বলেই সনাতন কে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। আমি বেদ চর্চার সময় ভালো বা খারাপ কোন রকমের ধারণা ছারাই শুদ্ধ ও শূন্য মনেই শুরু করি। যাতে আমার নিজের কোন ধারণা জ্ঞান চর্চায় অন্তরায় না হয় এবং আমি যত বেদ এর জ্ঞানের মধ্যে প্রবেশ করছি তত বিস্মিত হচ্ছি। এতো এতো সমৃদ্ধ জ্ঞান থাকতে কেন এমন একটা জ্ঞান কে অন্ধকারে রেখেছে সমাজ !!!!!!!! দয়া করে কেও, কার দোষ বেদ কে অন্ধকারে রাখার পেছনে এ নিয়ে তর্ক করবেন না। তার চেয়ে বেদ পড়ার অভ্যাস করুণ। এতে মহা জ্ঞান সবার ঘড়ে ঘড়ে প্রবেশ করব। সমাজ কুসংস্কার মুক্ত হবে। আমি এ কথা নিশ্চিৎ ভাবেই বলছি বৈদিক সমাজ আধুনিক ত্বম সমাজ ছিলো।
ধর্ম মানতে হবে হবে কথা নেয়, কিন্তু ধর্ম কে জানতে হবে। সবচেয়ে আদি সনাতন ধর্মে কি আছে তা জানার চেষ্টা করুণ কেন তা এতদিন ধরে টিকে আছে? কি আছে এতে? মিথ্যে হলে তো এতদিন ধরে টিকে থাকতে পারতো না।
সনাতন ধর্মের নির্যাশ বলতে আমি পেয়েছি "জীব আত্মায় পরম আত্মা" "যত্র জীব তত্র শিব" "সকল পথ ই ঈশ্বরের দিকে ধাবিত" "যত মত তত পথ" "জীবে প্রেম করে যে জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর" "মেরেছিস কলশীর কানা তা বলে কি প্রেম দিব না" তাহলে আপনি নাস্তিক হোন আর আস্তিক সনাতন এর সাথে আপনার তো কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। লোকাচার কে ধর্ম বলে অনেকেই ভুল করেন বলেন এবং মনে করেন সনাতন কুসংস্কারে ভরা। যেমন ধরুন সতী দাহ প্রথা বা বিধবা প্রথা এগুলি কি ছিলো বেদে? অথচ অনেকেই মনে করেন এগুলি আমাদের সনাতনের কু-সংস্কার।
সনাতন ধরমালম্বিরা প্রকৃতি পূজারী। সনাতন ধর্ম মতে প্রকৃতিই হলো ভগবান। আপনার খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের প্রত্যেকটি পুজাতেই গাছ পালার ব্যবহার আছে। যেমন ধরেন বেল পাতা, তুলশী পাতা, বট পাতা, অশত্ত পাতা, আম পাতা সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফল সহ প্রকৃতির সব সব কিছুকেই ব্যবহার করতে বলেছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো প্রকৃতি সংরক্ষণ। পূজার মাধ্যমে প্রকৃতি কে সংরক্ষণ করতে বলেছে সনাতন। আবার প্রাণী কুল কে রক্ষার জন্যে প্রত্যেক দেব দেবী এক এক টা বাহন নিয়েছেন, যা আমাদের ইকোসিস্টেম কে রক্ষার কাজে সহায়তা করে। এত বড় গনেশ দেবতা কিন্তু তার বাহন ইঁদুর, আবার প্যাঁচা হলো লক্ষ্মীর বাহন === এভাবে প্রাণী কুল কে ও সন্মানিত করেছে সনাতন।
অথচ না জেনে না বুঝে অনেকেই বলেন আমরা বহু ঈশ্বর বাদী। প্রকৃত পক্ষে ঈশ্বর নিজে কিছু করেন না তিনি করান। তাঁর শক্তি কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন জনের মধ্যে সেই শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। একে গণতন্ত্র ও বলতে পারেন। তাহলে সনাতনে গণতন্ত্র অনেক আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত ছিলো।
সবার প্রতি আমার অনুরোধ "ধর্ম মানতে হবে কথা নেয় জানতে হবে" না জেনে কেও কুমন্তব্য করবেন না। সনাতনের একটি ঘটনা দিয়ে কোন বিষয় কে বিশ্লেষণ করবেন না সনাতনের এক এক টা ঘটনার পেছনে অনেক অনেক গুলি কারণ জড়িত থাকে। যেমনঃ স্বর্গের দার রক্ষী অভিশপ্ত হয়ে তিন বার পৃথিবীতে জন্ম নেন ১/- হিরন্যক ২/- রাবণ ৩/- কংশ। অথচ নচিকেতা বলে বসলেন রাম যদি হেরে যেত রাবণ রাজ হতো সেখানে (রবন ছিলেন মহা জ্ঞানী তিনি নিজেই জান্তেন রাম দ্বারা তিনি নিহত হবেন। আর এ কারণেই অকাল বোধনে নিজেই দুর্গা পূজা করে নিজের মৃত্যু কে ডেকে এনেছেন এবং মুক্ত হয়েছিলেন পৃথিবী থেকে)
তায় না জেনে কোন মন্তব্য করবেন না, জানার জন্যে প্রশ্ন করুণ। যারা জানবেন তাঁরা উত্তর দিবেন। সবার কাছে সব কিছু জানা থাকবে এমন ও কোণ কথা নেয়।
ঈশ্বর সবার মঙ্গল করুণ।
by Lincon Chakraborty