ধর্ম, সত্যি একটি অমৃতের স্বাদ দেয়। চিরকাল বিচার-বহির্ভূত
হত্যাকাণ্ডের মত, ধর্মকে যার যার ইচ্ছেমত
গালি, নিন্দা, যত অভিমান সহ যা কিছু আছে, সব ঢেলে দিলেই, কেউ কেউ শান্তি পায়। ধর্মের প্রেমী-ও রয়েছে। কিন্তু এই আধুনিক যুগে, বিজ্ঞান-মনস্ক মানুষ, যতই চালাক হোক না কেন, যতই নিজেদের বুদ্ধি-সম্পন্ন ভাবুক না কেন, এখনও ঐ দলের ৯৯% ধর্ম ও অধর্মের পার্থক্য নির্ণয় জানে না।
যত কিছু মন্দ হয়, সব কিছুই যেন ধর্মের
জন্যই হয়ে থাকে। আধুনিক মানুষ বা বিজ্ঞান-মনস্ক মানুষের এই একটি ডাস্টবিন, ১২ মাস ব্যবহারের যোগ্য। কোথাও অশান্তি হয়েছে, ওরা খুঁজে কোনোভাবে যদি ঐ অশান্তির কারণের জন্য, ধর্মকে দায়ী করা যায়, একদিকে যেমন শান্তি বা তৃপ্তি, অপরদিকে সমাজে আঁতেল বলেও কিছু মানুষের নিকট মর্যাদা লাভ
করা যায়।
ধর্ম, মানে কি? ধারণ করা অর্থে
যা কিছু, তাই ধর্ম? ঐসব বিশ্লেষণ স্কুলের শিশুদের জন্য। তোমার বয়সের সাথে সাথে,
আর কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না, সেদিকে খেয়াল রেখেছ? চুল পাকলেই তো মস্তিষ্ক পাকে না। মস্তিষ্ক পাকানো সে ভিন্ন
বিষয়। কে তুমি, ধর্ম নিয়ে এত সংশয় রাখো?
তুমি কি তাঁর ব্যাখ্যান উপলব্ধি করতে বা ধারণ
করতে নিজেকে প্রস্তুত করেছ? এ বিষয়ে কথা বলতে
হলেই, নিজের নিকট নিজে পরীক্ষা
দিয়ে দেখো, সে পরীক্ষাতে কি ফল আসে।
তোমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আজ থেকে আগামী
১০০ বা ২০০ বা ৫০০ বছরের পৃথিবীর অগ্রীম ইতিহাস লেখার জন্য, কতটুকু তোমার চিন্তাশক্তি কাজ করবে? তোমার কলমই বা কতদূর চলতে পারবে? তুমি কি সত্যি সত্যি দেখতে পাচ্ছো, আগামীর দিনগুলোকে? বা আরও পরে এ জগতে কি হবে? তখনের মানুষের
আকৃতি কি একই রকম থাকবে, মানুষের খাবার
পোষাক পরিচ্ছদ, মানুষের সার্বিক চিন্তা
ভাবনায় পরিবর্তন আসবে কি না? মানবতার সংজ্ঞা
কি একই রকম থাকবে না পালটে যাবে? মানুষের পরিবার
বলতে কিছু কি থাকবে, যদি থাকে তা হলে কি,
আজকের মতই থাকবে না কি সবকিছুই পালটে যাবে?
যদি তুমি ভবিষ্যতের ঐ
অল্প ক'টি দিনের চিত্র আঁকতে না
পারো, যদি ওই সময়টিকে মানসপটে
দেখতে না পাও, তা হলে তুমিই বলো,
এই যে হাজার হাজার বছর আগের ধর্মকে কিছু না
বুঝেই গালমন্দ করো, তা কি সুন্দর দেখায়?
তা কি কোনো অর্থ বহন করে? না কি তোমার অগোচরেই নিজের মূর্খতা জগতকে জানাচ্ছো?
** তোমার জানা উচিত, সেই পরম ব্রহ্মের প্রেমে মাতোহারা হওয়া ব্যতীত, রাব্বুল আল-আমীনের আশিক হওয়া ব্যতীত, সেই সর্বজ্ঞ বা সর্বশক্তিমানের সাথে সখ্য-ভাব প্রতিষ্ঠা
ব্যতীত, বাকী সব কিছুই ধর্মের অতি
নগণ্য অংশ মাত্র। বাকী সবকিছু স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। তা নিয়ে
তর্ক বা যুক্তি আসতে পারে, মারামারি হতেই
পারে, ধর্মের দোহাই দিয়ে,
কালে কালে যা **অধর্মে পর্যবসিত হয় এবং হয়েছে।
যে আধ্যাত্মিক-প্রেম প্রচার পাওয়ার কথা, তাই রয়ে গেল অন্ধকারে, আর আনুষ্ঠানিকতা
এবং পৌরাণিকতার উপর লাগল আলোর রোশনি, এই নিয়ে প্রচারযন্ত্রে বেশী বেশী শব্দ হয়!! যা অধর্মের নামান্তর, তাই হয়ে আছে ধর্ম। এভাবেই পবিত্র মানব সন্তান ভয়ংকর দানব
হয়ে ওঠে।
ঈশ্বর-প্রেমের শুরু হয়,
ইন্দ্রিয়-জ্ঞানে। যেখানে কেবল বর্ণমালার
অতিরিক্ত কিছু লাভ করা যায় না। কিন্তু রাব্বুল আল-আমীনের আশিক হওয়ার জন্য, পরম ব্রহ্মের প্রেমী হওয়ার জন্য, যে জ্ঞান দরকার, তা থাকে ইন্দ্রিয়-জ্ঞানের ওপারে। যাকে বলা হয় অতীন্দ্রিয় জ্ঞান। অতীন্দ্রিয়
জ্ঞান লাভের পূর্বে, প্রেমীর নিকট রিপুগণের
শোচনীয় পরাজয় ঘটে। মন আর চাইলেই, নীচতার দিকে যেতে
পারে না। অর্থাৎ মনকে কুমন্ত্র দিয়ে বা সস্তা আনন্দের লোভ দেখিয়ে, পথচ্যুত করার জন্য যে রিপুরা সর্বদা তৎপর থাকত, তারা হয়ে যায় নিষ্ক্রিয়। তাই অতীতের আনন্দের সকল উপকরণকে
অর্থহীন মনে হয়। তখনই যে জ্ঞান জেগে ওঠে, যে নব-জ্যোতিতে চোখ দেখতে পায়, তাতে মনে হয়,
ব্রহ্মাণ্ডের একটি 'সত্যকে' একেকজন একেক মঞ্চ
থেকে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন কোণ থেকে
দেখেছে, দর্শনার্থীরা নিজেদের মতো
করে মত প্রকাশ করেছে- - -এই যা। প্রকৃতপক্ষে যা ছিল, একটি সত্য, যা চিরকালের
সত্য।
তোমার যতই সংশয় থাকুক
ধর্মগ্রন্থে, তোমাকেই সেই সংশয় দূর
করতে হবে। তোমাকে রাজহংসের গুণাবলী অর্জন করতে হবে, দুধ মিশ্রিত জল থেকে, দুধটুকু পান করা শিখতে হবে। পিঁপড়ে হয়ে 'বালি-মিশ্রিত চিনি' থেকে, চিনিটুকু আলাদা করার
গুণাবলী অর্জন করা চাই। পরম-ব্রহ্ম ব্যতীত আর শতভাগ শুদ্ধতা কোথাও নেই।
ধর্ম-গ্রন্থের হাজার হাজার বছর পূর্বের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা, কালের আবর্তনে কিছু নতুনত্ব দাবী করতেই পারে তার অর্থ এই নয়
যে ঐগুলো ভ্রান্ত ছিল। হয়ত তুমি দু-হাজার বা পাঁচ-হাজার বছর অতীতে, নিজের চিন্তাশক্তিকে প্রেরণ করতে পারো নি। ব্যর্থতা তোমারই।
ধর্ম ব্যর্থ হয় নি বলেই আজো টিকে আছে। তোমার চিন্তার উন্নতি চাই। যখনই
ঈশ্বর-প্রেমে, নিজেকে সমর্পণ করবে,
তখনই দেখা যাবে, সেখানে একটিই নিয়ম। সকলেই কৃত্রিমতা ধুয়ে মুছে এসেছে। তা
যেমন, যত রকমের বিষাক্ত সর্পই
থাকুক জগতে, যত বিচিত্র রঙের সর্পই
থাকুক না কেন, গর্তে ঢুকার পূর্বে সকলেই
সোজা হতে জানে এবং হতে হয়।
লিখেছেনঃ Asit Ray
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন