রাজা রামমোহন রায় কে আমরা সবাই চিনি। নতুন করে তাঁর পরিচয় দেওয়ার হয়তো প্রয়োজন নেই। তবে তাঁর একটি মহৎ কর্মকে আজ আমি সবার সামনে তুলে ধরছি।
আমাদের হিন্দু দর্শন যেসব গ্রন্থাবলীর উপর নির্ভর করে এত ব্যাপক ও গভীরতা লাভ করেছে, উপনিষদ তাদের মধ্য একটি। বলা হয়ে থাকে, বেদের উত্তর ভাগই হল উপনিষদ। কিন্তু সংস্কৃত ভাষার জটিলতা ও এর দুষ্প্রাপ্যতার জন্য আজ আমরা অধিকাংশ হিন্দুরাই আমাদের মূল দর্শন জানা থেকে বঞ্চিত।
আর এই উপলব্ধি থেকেই বঙ্গদেশে সর্বপ্রথম উপনিষদ চর্চা শুরু করেন - রাজা রামমোহন রায়। উনবিংশ শতাব্দীতে খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে পরিচয় হওয়া এবং নতুন ইংরেজি শেখার ফলে অনেক হিন্দুই সনাতন ধর্মের প্রতি আকর্ষণ হারাতে শুরু করে। তাদের ধারণা ছিল ইংরেজি শিখে আধুনিক হতে গেলে এই প্রাচীন ধর্ম ত্যাগ করতে হবে। এই দৃশ্য রাজা রামমোহন রায়কে ব্যাথিত করে তুলে। তিনি বিকল্প পথের কথা ভাবতে থাকেন। আর এই ভাবনা থেকেই তিনি আকৃষ্ট হন – “ব্রহ্মসূত্র ” এবং উপনিষদের প্রতি। এই উপনিষদীয় দর্শন নিয়েই তিনি রচনা করেন “বেদান্ত গ্রন্থ”। আর এই বেদান্ত গ্রন্থের দর্শনকে কেন্দ্র করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “ব্রাহ্ম সমাজ” এবং নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা। সংস্কৃত না জানা বাঙ্গালীকে উপনিষদের বানীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই তিনি নিজে পাঁচটি উপনিষদ যথা ঈশ, কেন, কঠ, মুণ্ডক ও মাণ্ডুক্য উপনিষদ বাংলায় অনুবাদ করেন।
✔ ✔ ✔ লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে যে- আমাদের বাংলাদেশের নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্য পুস্তকে যেটা হাইলাটস করা হয় সেটা হল, "রাজা রামমোহন রায় একেশ্বরবাদী ছিলেন। তিনি 'মূর্তিপূজা'সহ বিভিন্ন "অর্থহীন" ধর্মীয় অনুষ্ঠান দূর করার চেষ্টা করেন। আর এই জন্যই রামমোহন রায় ব্রাহ্মধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু সব থেকে দুঃখ যে, তারা ব্রাহ্মধর্ম বা ব্রাহ্ম সমাজ গড়ে তোলার পিছনে প্রকৃত কারন টা আমাদের সামনে তুলে ধরছে না। আর এই জন্য ছোটবেলা থেকেই আমাদের হিন্দু সন্তানদের মনে রাজা রামমোহন রায় ও সনাতন ধর্মের প্রতিমাপূজার প্রতি একটা ভুল ধারণা বা পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। সত্যিই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা করুন!!!
জয় রায়
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন