গুরু রেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ।।
গুরুভক্তির জন্য মহাভারতে অমর হয়ে থাকা একটি চরিত্র হচ্ছে “একলব্য” । একলব্য ছিল মগধের অধিবাসী নিষাদরাজ হিরণ্যধনুর পুত্র। এই নিষাদরা ছিল অনার্য জাতি বা উপজাতি। নিজের প্রতি একলব্যের ছিল গভীর আস্থা এবং সেই সাথে ছিল বিখ্যাত ধনুর্ধর হবার প্রবল বাসনা। আর সেই জন্য বনের মধ্য দ্রোণাচার্যের মাটির মূর্তি তৈরি করে দ্রোণাচার্যকে গুরু বলে বরণ করে পরম শ্রদ্ধার সাথে ধনুর্বেদ শিক্ষা অর্জন করতে থাকে।
কিন্তু একসময় দ্রোণাচার্যের আদেশেই এই একলব্য নিজের ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুল কেটে গুরু দক্ষিণা দিয়েছে। মহাভারতের এই কাহিনীটি আমরা অনেকেই caste প্রথার দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখে থাকি। এমনকি আমরা অনেকেই ভেবে থাকি যে, “অর্জুনকে সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর হিসেবে তৈরি করতেই দ্রোণ পক্ষপাতমূলক ভাবে একলব্যের প্রতি এই রূপ আচরণ করেছে।” কিন্তু, বাস্তবিক অর্থে এই প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন।
সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে এই কাহিনীর মধ্য দিয়ে আমরা গুরু দ্রোণাচার্যের দূরদর্শিতা ও হস্তিনাপুরের প্রতি আনুগত্যতার পরিচয় পাই। একলব্য ছিল মগধদেশের উপজাতি। এই মগধের রাজা ছিল জরাসন্ধ এবং তাঁর সেনাপতি ছিল শিশুপাল। মগধ ছিল হস্তিনাপুরের শত্রুরাজ্য; তাই হস্তিনাপুরের অন্নে প্রতিপালিত দ্রোণাচার্য চায়নি যে তাঁর বিদ্যা হস্তিনাপুরের বিপক্ষে প্রয়োগ করা হোক। ভবিষ্যতে একলব্য যাতে অজেয় হতে না পারে সেই জন্য দ্রোণ একলব্যের কাছ থেকে তাঁর ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুল গুরু দক্ষিণা হিসেবে গ্রহন করে। অতএব, বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে একলব্যের প্রতি এরূপ ব্যবহারে আমাদের দুঃখ হবে না ।
মহাভারতে অনেকবার একটা কথা বলা হয়েছে যে, “কালই মহাভারতের নায়ক।” আর এই কালের নিয়ন্ত্রক হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ধর্মসংস্থাপনের জন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। কুরুক্ষেত্রের সেই ধর্মযুদ্ধে একলব্য, জরাসন্ধ কিংবা শিশুপাল; এরা প্রত্যেকেই অধর্মের সহায়ক হতো। তাই, গভীরভাবে চিন্তা করলে একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, “ধর্ম রক্ষার্থে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছানুসারেই কালের প্রভাবে একলব্যের বীরত্ব নষ্ট হয়েছে।”
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন