দ্বারকায় কৃষ্ণ রাজা ছিলেন না। যত দূর বুঝিতে পারা যায়, তাহাতে বোধ হয়
যে, ইউরোপীয় ইতিহাসে যাহাকে Oligarchy বলে, যাদবেরা দ্বারকায় তাহাই ছিলেন।
অর্থাৎ তাঁহারা সমাজের অধিনায়ক ছিলেন, কিন্তু তাঁহারা পরস্পর সকলে
সমানস্পর্ধী। বয়োজ্যেষ্ঠকে আপনাদিগের মধ্যে প্রধান বিবেচনা করিতেন, সেই
জন্য উগ্রসেনের রাজা নাম। কিন্তু এরূপ প্রধান ব্যক্তির কার্যতঃ বড় কর্তৃত্ব
থাকিত না। যে বুদ্ধিবিক্রমে প্রধান, নেতৃত্ব তাহারই ঘটিত। কৃষ্ণ যাদবদিগের
মধ্যে বলবীর্য বুদ্ধিবিক্রমে সর্বশ্রেষ্ঠ, এই জন্যই তিনি যাদবদিগের
নেতৃস্বরূপ ছিলেন। তাঁহার অগ্রজ বলরাম এবং কৃতবর্মা প্রভৃতি অন্যান্য
বয়োজ্যেষ্ঠ যাদবগণও তাঁহার বশীভূত ছিলেন। কৃষ্ণও সর্বদা তাঁহাদিগের
মঙ্গলকামনা করিতেন। কৃষ্ণ হইতেই তাঁহাদিগের রক্ষা সাধিত হইত এবং কৃষ্ণ
বহুরাজ্যবিজেতা হইয়াও জ্ঞাতিবর্গকে না দিয়া আপনি কোন ঐশ্বর্যভোগ করিতেন না।
তিনি সকলের প্রতি তুল্যপ্রীতিসম্পন্ন ছিলেন। সকলেরই হিতসাধন করিতেন।
জ্ঞাতিদিগের প্রতি আদর্শ মনুষ্যের যেরূপ ব্যবহার কর্তব্য, তাহা তিনি
করিতেন। কিন্তু জ্ঞাতিভাব চিরকালই সমান। তাঁহার বলবিক্রমের ভয়ে জ্ঞাতিরা
তাঁহার বশীভূত ছিল বটে, কিন্তু তাঁহার প্রতি দ্বেষশূন্য ছিল না। এ বিষয়ে
কৃষ্ণ স্বয়ং যাহা নারদের কাছে বলিয়াছিলেন, ভীষ্ম তাহা নারদের মুখে শুনিয়া
যুধিষ্ঠিরকে বলিয়াছিলেন। কথাগুলি সত্য হউক মিথ্যা হউক, লোকশিক্ষার্থে আমরা
তাহা মহাভারতের শান্তিপর্ব হইতে উদ্ধৃত করিতেছি,—
“জ্ঞাতিদিগকে ঐশ্বর্যের অর্ধাংশ প্রদান ও তাহাদিগের কটুবাক্যে
শ্রবণ করিয়া তাহাদিগের দাসের ন্যায় অবস্থান করিতেছি। বহ্নিলাভার্থী ব্যক্তি
যেমন অরণি কাষ্ঠকে মথিত করিয়া থাকে, তদ্রূপ জ্ঞাতিবর্গের দুর্বাক্য
নিরন্তর আমার হৃদয় দগ্ধ করিতেছে। বলদেব বল, গদ সুকুমারতা এবং আমার আত্মজ
প্রদ্যুম্ন সৌন্দর্য—প্রভাবে জনসমাজে অদ্বিতীয় বলিয়া পরিগণিত হইয়াছেন। আর
অন্ধক ও বৃষ্ণিবংশীয়েরাও মহাবলপরাক্রান্ত, উৎসাহসম্পন্ন ও অধ্যবসায়শালী;
তাঁহারা যাহার সহায়তা না করেন, সে বিনষ্ট হয় যাহারা সহায়তা করেন, সে
অনায়াসে অসামান্য ঐশ্বর্য লাভ করিয়া থাকে। ঐ সকল ব্যক্তি আমার পক্ষ থাকিতেও
আমি অসহায় হইয়া কালযাপন করিতেছি। আহুক ও অক্রূর আমার পরম সুহৃৎ, কিন্তু ঐ
দুই জনের মধ্যে একজনকে স্নেহ করিলে, অন্যের ক্রোধোদ্দীপন হয়; সুতরাং আমি
কাহারও প্রতি স্নেহ প্রকাশ করি না। আর নিতান্ত সৌহার্দবশতঃ উহাদিগকে
পরিত্যাগ করাও সুকঠিন। অতঃপর আমি এই স্থির করিলাম যে, আহুক ও অক্রূর যাহার
পক্ষ, তাহার দুঃখের পরিসীমা নাই, আর তাঁহারা যাহার পক্ষ নহেন, তাহা
অপেক্ষাও দুঃখী আর কেহই নাই। যাহা হউক, এক্ষণে আমি দ্যূতকারী সহোদরদ্বয়ের
মাতার ন্যায় উভয়েরই জয় প্রার্থনা করিতেছি। হে নারদ! আমি ঐ দুই মিত্রকে
আয়ত্ত করিবার নিমিত্ত এইরূপ কষ্ট পাইতেছি।”
এই কথার উদাহরণস্বরূপ স্যমন্তক মণির বৃত্তান্ত পাঠককে উপহার দিতে ইচ্ছা করি। সামন্তক মণির বৃত্তান্ত অতিপ্রকৃত পরিপূর্ণ। অতিপ্রকৃত অংশ বাদ দিলে যেটুকু থাকিবে, তাহাও কত দূর সত্য, বলা যায় না। যাহা হউক, স্থূল বৃত্তান্ত পাঠককে শুনাইতেছি।
সত্রাজিত নামে এক জন যাদব দ্বারকায় বাস করিতেন। তিনি একটি অতি উজ্জ্বল সর্বজনলোভনীয় মণি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন! মণির নাম স্যমন্তক। কৃষ্ণ সেই মণি দেখিয়া বিবেচনা করিয়াছিলেন যে, ইহা যাদবাধিপতি উগ্রসেনেরই যোগ্য। কিন্তু জ্ঞাতিবিরোধ-ভয়ে সত্রাজিতের নিকট মণি প্রার্থনা করেন নাই। কিন্তু সত্রাজিত মনে ভয় করিলেন যে, কৃষ্ণ এই মণি চাহিবেন। চাহিলে তিনি রাখিতে পারিবেন না, এই ভয়ে মণি তিনি নিজে ধারণ না করিয়া আপনার ভ্রাতা প্রসেনকে দিয়াছিলেন। প্রসেন সেই মণি ধারণ করিয়া এক দিন মৃগয়ায় গিয়াছিলেন। বনমধ্যে একটা সিংহ তাঁহাকে হত করিয়া সেই মণি মুখে করিয়া লইয়া চলিয়া যায়। জাম্ববান্ সিংহকে হত করিয়া সেই মণি গ্রহণ করে। জাম্ববান্ একটা ভল্লুক। কথিত আছে যে, সে ত্রেতাযুগে রামের বানরসেনার মধ্যে থাকিয়া রামের পক্ষে যুদ্ধ করিয়াছিল।
এই কথার উদাহরণস্বরূপ স্যমন্তক মণির বৃত্তান্ত পাঠককে উপহার দিতে ইচ্ছা করি। সামন্তক মণির বৃত্তান্ত অতিপ্রকৃত পরিপূর্ণ। অতিপ্রকৃত অংশ বাদ দিলে যেটুকু থাকিবে, তাহাও কত দূর সত্য, বলা যায় না। যাহা হউক, স্থূল বৃত্তান্ত পাঠককে শুনাইতেছি।
সত্রাজিত নামে এক জন যাদব দ্বারকায় বাস করিতেন। তিনি একটি অতি উজ্জ্বল সর্বজনলোভনীয় মণি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন! মণির নাম স্যমন্তক। কৃষ্ণ সেই মণি দেখিয়া বিবেচনা করিয়াছিলেন যে, ইহা যাদবাধিপতি উগ্রসেনেরই যোগ্য। কিন্তু জ্ঞাতিবিরোধ-ভয়ে সত্রাজিতের নিকট মণি প্রার্থনা করেন নাই। কিন্তু সত্রাজিত মনে ভয় করিলেন যে, কৃষ্ণ এই মণি চাহিবেন। চাহিলে তিনি রাখিতে পারিবেন না, এই ভয়ে মণি তিনি নিজে ধারণ না করিয়া আপনার ভ্রাতা প্রসেনকে দিয়াছিলেন। প্রসেন সেই মণি ধারণ করিয়া এক দিন মৃগয়ায় গিয়াছিলেন। বনমধ্যে একটা সিংহ তাঁহাকে হত করিয়া সেই মণি মুখে করিয়া লইয়া চলিয়া যায়। জাম্ববান্ সিংহকে হত করিয়া সেই মণি গ্রহণ করে। জাম্ববান্ একটা ভল্লুক। কথিত আছে যে, সে ত্রেতাযুগে রামের বানরসেনার মধ্যে থাকিয়া রামের পক্ষে যুদ্ধ করিয়াছিল।
এ দিকে প্রসেন নিহত এবং মণি অন্তর্হিত জানিতে পারিয়া দ্বারকাবাসী লোকে
এইরূপ সন্দেহ করিল যে, কৃষ্ণের যখন এই মণি লইবার ইচ্ছা ছিল, তখন তিনিই
প্রসেনকে মারিয়া মণি গ্রহণ করিয়া থাকিবেন। এইরূপ লোকাপবাদ কৃষ্ণের অসহ্য
হওয়ায় তিনি মণির সন্ধানে বহির্গত হইলেন। যেখানে প্রসেনের মৃতদেহ দেখিলেন,
সেইখানে সিংহের পদচিহ্ন দেখিতে পাইলেন। তাহা সকলকে দেখাইয়া আপনার কলঙ্ক
অপনীত করিলেন। পরে সিংহের পদচিহ্নানুসরণ করিয়া ভল্লুকের পদচিহ্ন দেখিতে
পাইলেন। সেই পদচিহ্ন ধরিয়া গর্তের মধ্যে প্রবেশ করিলেন। তথায় জাম্ববানের
পুত্রপালিকা ধাত্রীর হস্তে সেই স্যমন্তক মণি দেখিতে পাইলেন। পরে জাম্ববানের
সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া তাহাকে পরাভব করিলেন। তখন জাম্ববান্ তাঁহাকে স্যমন্তক
মণি দিল, এবং আপনার কন্যা জাম্ববতীকে কৃষ্ণে সম্প্রদান করিল। কৃষ্ণ মণি
লইয়া দ্বারকায় আসিয়া মণি সত্রাজিতকেই প্রত্যর্পণ করিলেন। তিনি পরস্ব কামনা
করিতেন না। কিন্তু সত্রাজিত, কৃষ্ণের উপর অভূতপূর্ব কলঙ্ক আরোপিত
করিয়াছিলেন, এই ভয়ে ভীত হইয়া কৃষ্ণের তুষ্টিসাধনার্থ আপনার কন্যা
সত্যভামাকে কৃষ্ণে সম্প্রদান করিলেন। সত্যভামা সর্বজনপ্রার্থনীয় রূপবতী
কন্যা ছিলেন। এজন্য তিন জন প্রধান যাদব, অর্থাৎ শতধন্বা, মহাবীর কৃতবর্মা
এবং কৃষ্ণের পরম ভক্ত ও সুহৃৎ অক্রূর ঐ কন্যাকে কামনা করিয়াছিলেন। এক্ষণে
সত্যভামা কৃষ্ণে সম্প্রদত্তা হওয়ায় তাঁহারা আপনাদিগেক অত্যন্ত অপমানিত
বিবেচনা করিলেন এবং সত্রাজিতের বধের জন্য ষড়যন্ত্র করিলেন। অক্রূর ও
কৃতবর্মা শতধন্বাকে পরামর্শ দিলেন যে, তুমি সত্রাজিতকে বধ করিয়া তাহার মণি
চুরি কর। কৃষ্ণ তোমাদের যদি বিরুদ্ধাচরণ করেন, তাহা হইলে, আমরা তোমার
সাহায্য করিব। শতধন্বা সম্মত হইয়া কদাচিৎ কৃষ্ণ বারণাবতে গমন করিলে,
সত্রাজিতকে নিদ্রিত অবস্থায় বিনাশ করিয়া মণি চুরি করিলেন।
সত্যভামা পিতৃবধে শোকাতুরা হইয়া কৃষ্ণের নিকট নালিশ করিলেন। কৃষ্ণ তখন দ্বারকায় প্রত্যাগমন করিয়া, বলরামকে সঙ্গে লইয়া, শতধন্বার বধে উদ্যোগী হইলেন। শুনিয়া শতধন্বা কৃতবর্মা অক্রূরের সাহায্য প্রার্থনা করিলেন। তাঁহারা কৃষ্ণ বলরামের সহিত শত্রুতা করিতে অস্বীকৃত হইলেন। তখন শতধন্বা অগত্যা অক্রূরকে মণি দিয়া দ্রুতগামী ঘোটকে আরোহণ পূর্বক পলায়ন করিলেন। কৃষ্ণ বলরাম রথে যাইতেছিলেন, রথ ঘোটককে ধরিতে পারিল না। শতধন্বার অশ্বিনীও পথক্লান্তা হইয়া প্রাণত্যাগ করিল। শতধন্বা তখন পাদচারে পলায়ন করিতে লাগিল। ন্যায়যুদ্ধপরায়ণ কৃষ্ণ তখন রথে বলরামকে রাখিয়া স্বয়ং পাদচারে শতধন্বার পশ্চাৎ ধাবিত হইলেন। কৃষ্ণ দুই ক্রোশ গিয়া শতধন্বার মস্তকচ্ছেদন করিলেন। কিন্তু মণি তাঁহার নিকট পাইলেন না। ফিরিয়া আসিয়া বলরামকে এই কথা বলিলে বলরাম তাঁহার কথায় বিশ্বাস করিলেন না। ভাবিলেন, মণির ভাগে বলরামকে বঞ্চিত করিবার জন্য কৃষ্ণ মিথ্যা কথা বলিতেছেন। বলরাম বলিলেন, “ধিক্ তোমায়! তুমি এমন অর্থলোভী! এই পথ আছে, তুমি দ্বারকায় চলিয়া যাও; আমি আর দ্বারকায় যাইব না।” এই বলিয়া তিনি কৃষ্ণকে ত্যাগ করিয়া বিদেহ নগরে গিয়া তিন বৎসর বাস করিলেন। এদিকে অক্রূরও দ্বারকা ত্যাগ করিয়া পলায়ন করিলেন। পরে যাদবগণ তাঁহাকে অভয় দিয়া পুনর্বার দ্বারকায় আনাইলেন। কৃষ্ণ তখন এক দিন সমস্ত যাদবগণকে সমবেত করিয়া অক্রূরকে বলিলেন যে, স্যমন্তক মণি তোমার নিকট আছে, আমরা তাহা জানি। সে মণি তোমারই থাক্, কিন্তু সকলকে একবার দেখাও। অক্রূর ভাবিলেন, আমি যদি অস্বীকার করি, তাহা হইলে সন্ধান করিলে, আমার নিকট মণি বাহির হইবে। অতএব তিনি অস্বীকার না করিয়া মণি বাহির করিলেন। তাহা দেখিয়া বলরাম এবং সত্যভামা সেই মণি লইবার জন্য অতিশয় ব্যস্ত হইলেন। কিন্তু সত্যপ্রতিজ্ঞ কৃষ্ণ সেই মণি বলরাম বা সত্যভামা কাহাকেও দিলেন না, আপনিও লইলেন না, অক্রূরকেই প্রত্যর্পণ করিলেন।*
এই স্যমন্তকমণিবৃত্তান্তেও কৃষ্ণের ন্যায়পরতা, স্বার্থশূন্যতা, সত্যপ্রতিজ্ঞতা এবং কার্যদক্ষতা অতি পরিস্ফুট। কিন্তু উপন্যাসটা সত্যমূলক বলিয়া বোধ হয় না।
সত্যভামা পিতৃবধে শোকাতুরা হইয়া কৃষ্ণের নিকট নালিশ করিলেন। কৃষ্ণ তখন দ্বারকায় প্রত্যাগমন করিয়া, বলরামকে সঙ্গে লইয়া, শতধন্বার বধে উদ্যোগী হইলেন। শুনিয়া শতধন্বা কৃতবর্মা অক্রূরের সাহায্য প্রার্থনা করিলেন। তাঁহারা কৃষ্ণ বলরামের সহিত শত্রুতা করিতে অস্বীকৃত হইলেন। তখন শতধন্বা অগত্যা অক্রূরকে মণি দিয়া দ্রুতগামী ঘোটকে আরোহণ পূর্বক পলায়ন করিলেন। কৃষ্ণ বলরাম রথে যাইতেছিলেন, রথ ঘোটককে ধরিতে পারিল না। শতধন্বার অশ্বিনীও পথক্লান্তা হইয়া প্রাণত্যাগ করিল। শতধন্বা তখন পাদচারে পলায়ন করিতে লাগিল। ন্যায়যুদ্ধপরায়ণ কৃষ্ণ তখন রথে বলরামকে রাখিয়া স্বয়ং পাদচারে শতধন্বার পশ্চাৎ ধাবিত হইলেন। কৃষ্ণ দুই ক্রোশ গিয়া শতধন্বার মস্তকচ্ছেদন করিলেন। কিন্তু মণি তাঁহার নিকট পাইলেন না। ফিরিয়া আসিয়া বলরামকে এই কথা বলিলে বলরাম তাঁহার কথায় বিশ্বাস করিলেন না। ভাবিলেন, মণির ভাগে বলরামকে বঞ্চিত করিবার জন্য কৃষ্ণ মিথ্যা কথা বলিতেছেন। বলরাম বলিলেন, “ধিক্ তোমায়! তুমি এমন অর্থলোভী! এই পথ আছে, তুমি দ্বারকায় চলিয়া যাও; আমি আর দ্বারকায় যাইব না।” এই বলিয়া তিনি কৃষ্ণকে ত্যাগ করিয়া বিদেহ নগরে গিয়া তিন বৎসর বাস করিলেন। এদিকে অক্রূরও দ্বারকা ত্যাগ করিয়া পলায়ন করিলেন। পরে যাদবগণ তাঁহাকে অভয় দিয়া পুনর্বার দ্বারকায় আনাইলেন। কৃষ্ণ তখন এক দিন সমস্ত যাদবগণকে সমবেত করিয়া অক্রূরকে বলিলেন যে, স্যমন্তক মণি তোমার নিকট আছে, আমরা তাহা জানি। সে মণি তোমারই থাক্, কিন্তু সকলকে একবার দেখাও। অক্রূর ভাবিলেন, আমি যদি অস্বীকার করি, তাহা হইলে সন্ধান করিলে, আমার নিকট মণি বাহির হইবে। অতএব তিনি অস্বীকার না করিয়া মণি বাহির করিলেন। তাহা দেখিয়া বলরাম এবং সত্যভামা সেই মণি লইবার জন্য অতিশয় ব্যস্ত হইলেন। কিন্তু সত্যপ্রতিজ্ঞ কৃষ্ণ সেই মণি বলরাম বা সত্যভামা কাহাকেও দিলেন না, আপনিও লইলেন না, অক্রূরকেই প্রত্যর্পণ করিলেন।*
এই স্যমন্তকমণিবৃত্তান্তেও কৃষ্ণের ন্যায়পরতা, স্বার্থশূন্যতা, সত্যপ্রতিজ্ঞতা এবং কার্যদক্ষতা অতি পরিস্ফুট। কিন্তু উপন্যাসটা সত্যমূলক বলিয়া বোধ হয় না।
* এইরূপ বিষ্ণুপুরাণে আছে। হরিবংশ বলেন, কৃষ্ণ আপনিই মণি ধারণ করিলেন।
=বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়=
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন