১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বেদ পরিচয় পর্বঃ ১

সমস্ত শাস্ত্রের মূল কথা হইতেছে – পরম পবিত্র বেদ । বেদ চারিভাগে বিভক্ত- ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ , সামবেদ ও অথর্ববেদ। সৃষ্টির প্রথমে আদিপুরুষ ভগবান ব্রহ্মা যোগাসনে সমীসন হইয়া স্থিরচিত্তে পরমাত্ম-চিন্তায় নিমগ্ন আছেন; এমন সময় কল্যানময় পরমেশ্বরের কৃপায় তাহার হৃদয় কন্দরে একটি অস্ফুট নাদ-ধ্বনি প্রকাশ পাইল। পরে তাহা হইতে সর্ববেদের বীজরূপী ব্রহ্মনাম ‘প্রনব’ এবং স্বর- ব্যঞ্জনময় বর্ণরাশি একে একে অভিব্যক্ত হইল । তখন ভগবান ব্রহ্মা সেই বর্ণরাশির সহায়ে যে শব্দসমহ উচ্চারণ করিলেন, তাহাইজগতে বেদবিদ্যা বলিয়া বিখ্যাত হইল ।

অতঃপর ভগবান ব্রহ্মা সেই অপূর্ব বেদবিদ্যার বিস্তার করিবার ইচ্ছায় মরীচি, অত্রী, অঙ্গিরা প্রভৃতি ঋষিগনকে তাহা শিক্ষা দিতে লাগিলেন । ক্রমে বৈদিকজ্ঞান জগতে প্রসার লাভ করিল। এইরূপে গুরু-শিষ্যানুক্রমে যুগ যুগান্তর চলিতে লাগিল । ক্রমে দ্বাপর যুগ আসিয়া পড়িল । মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস হইয়া পড়িল । তখন-

পরাশরাৎ সত্যবত্যামংশাংশ-কলয়া বিভুঃ ।
অবতীর্ণো মহাভাগো বেদং চক্রে চতুবির্ধম্ ।।
ঋগথর্ব-যজুঃ-সাম্নাং রাশীনুদ্ধৃত্য বর্গশঃ।
চতস্রঃ সংহিতাশ্চচক্রে মন্ত্রৈ-মনির্গণা ইব ।।

অনুবাদঃ ভগবান নারায়ন, পরাশরের ওরসে মাতা সত্যবতীর গর্ভে পুত্ররূপে আবির্ভুত হইলেন । তাহার নাম হইল-‘কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন’ । তিনি বেদশিক্ষার সুবিধার্থে এক এক শ্রেনীর মন্ত্রসমুহ একত্র সংগ্রহ করিয়া ঋক্, যজুঃ, সাম ও অথর্ব নামে এক বেদকে চারটি ভাগে ভাগ করিলেন, এইভাবে বেদকে বিভাগ করিভার জন্য তখন হইতে তাহার অপর নাম হইল- ‘বেদব্যাস’।

মহর্ষি ব্যাসদেব বেদকে চারভাগে বিভক্ত করিয়া তাহার বহুল প্রচারোদ্দেশ্যে স্বীয় শিষ্য পৈলকে ঋগ্বেদ, বৈশম্পায়নকে যজুর্বেদ , জৈমনিকে সামবেদ এবং সুমন্তকে অথর্ববেদ শিক্ষা দিলেন । পরে তাহারাও আবার স্বীয় স্বীয় শিষ্যমণ্ডলীকে যথাযথরূপে চতুর্বেদ শিক্ষা দিতে লাগিলেন । এইরূপে এক বেদ বহু শাখাপ্রশাখায় বিভক্ত হইয়া পড়িল ।

ওম শান্তি শান্তি শান্তি

তথসুত্রঃ স্বামী অরুণানন্দ রচিত ''বেদসার- সংগ্রহ'' হতে । 
Share:

2 Comments:

Unknown বলেছেন...

প্রকৃত পক্ষে আমরা বেদ কে প্রধান ধর্ম গ্রন্থ মানলে ও তার সম্পর্কে কিছুই জানি না এবং জানার সুযোগ ও হয়না। আপনার এ চেষ্টা কে সাধুবাদ জানায়। ইন্টারনেট এ আমরা অনেক অযথা সময় নষ্ট করি। সবার একটা সুযোগ হবে জানার। ধন্যবাদ।

Unknown বলেছেন...

ধর্ম বা ধর্মীয় কোন গ্রন্থ সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞানই নেই , তারপরেও যতটুকু শুনেছি তার সাথে উপরের লেখার কিছুটা অমিল পাচ্ছি , তাই জানার জন্য জিজ্ঞাস্য ব্রহ্মাকে কি ভগবান বলা যায় ? উপরের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে যে , সৃষ্টির প্রথমে আদি পুরুষ ভগবান ব্রহ্মা যোগাসনে সমীসন হইয়া স্থিরচিত্তে পরমাত্ম-চিন্তায় নিমগ্ন আছেন; এমন সময় কল্যানময় পরমেশ্বরের কৃপায় তাহার হৃদয় কন্দরে একটি অস্ফুট নাদ-ধ্বনি প্রকাশ পাইল। পরে তাহা হইতে সর্ববেদের বীজরূপী ব্রহ্মনাম ‘প্রনব’ এবং স্বর- ব্যঞ্জনময় বর্ণরাশি একে একে অভিব্যক্ত হইল । তখন ভগবান ব্রহ্মা সেই বর্ণরাশির সাহায্যে যে শব্দসমুহ উচ্চারণ করিলেন, তাহাইজগতে বেদবিদ্যা বলিয়া বিখ্যাত হইল ।

অতঃপর ভগবান ব্রহ্মা সেই অপূর্ব বেদবিদ্যার বিস্তার করিবার ইচ্ছায় মরীচি, অত্রী, অঙ্গিরা প্রভৃতি ঋষিগনকে তাহা শিক্ষা দিতে লাগিলেন । ক্রমে বৈদিকজ্ঞান জগতে প্রসার লাভ করিল। এইরূপে গুরু-শিষ্যানুক্রমে যুগ যুগান্তর চলিতে লাগিল । এ কথাগুলো কি ঠিক ? আমি সঠিক সত্য জানতে চাচ্ছি । দয়া করে জানাবেন এটা আমার অনুরোধ ।

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।