নারায়ণং নমস্কৃত্য নরঞ্চৈব নরোত্তমম্ ।
দেবীং সরস্বতীঞ্চৈব ততোজয়মুদীরয়েৎ ।।
ভয়হর মঙ্গল দশরথ রাম ।
জয় জয় মঙ্গল সীতা রাম ।।
মঙ্গলকর জয় মঙ্গল রাম ।
সঙ্গতশুভবিভবোদয় রাম ।।
আনন্দামৃতবর্ষক রাম ।
আশ্রিতবৎসল জয় জয় রাম ।।
রঘুপতি রাঘব রাজা রাম ।
পতিতপাবন সীতা রাম ।।
( সন্ত তুলসীদাস গোস্বামী )
ভারতবর্ষের উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক পাহাড়ে ঘেরা সুন্দর বন ছিলো । সেই বনে রত্নাকর নামক এক ডাকাত বাস করতো । ব্রাহ্মণ সন্তান চবনের পুত্র হয়েও তিনি ডাকাতি করে পরিবার পালন করতেন । সেই বনে যে যেতো রত্নাকর তাকে হত্যা করে তার সর্বস্ব লুট করতেন । এমনই নিষ্ঠুর ছিলো সেই ডাকাত । সেই সময় ছিলো ত্রেতা যুগের শেষ পর্যায় । একদিন ব্রহ্মা ও নারদ মুনি দুই সন্ন্যাসীর ছদ্দবেশে সেই বনে এসেছিলেন । রত্নাকর তাদের দেখে হত্যা করতে উদ্যত হলে ছদ্দবেশী ব্রহ্মা বললেন- “ওহে রত্নাকর। তুমি এই রকম ভাবে তস্কর বৃত্তি করে কেন হত্যা করছ ? এতে তোমার বিপুল পাপ জমা হচ্ছে ।” রত্নাকর বললেন- “আমি এইভাবে আমার পরিবার পালন করি। যদি পাপ হয় তাহলে আমার পরিবারে সবার পাপ হবে।” ব্রহ্মা বললেন- “তাই যদি হয়, তবে এক কাজ করো। তুমি আমাদের রজ্জুতে আবদ্ধ করে তারপর পরিবারের কাছে শুনে এসো যে তাহারা তোমার পাপের ভাগ গ্রহণ করবেন কিনা?”
রত্নাকর ছদ্দেবশী নারদ ও ব্রহ্মা কে দড়ি দিয়ে বেধে পরিবারের কাছে শুনতে গেলো। বৃদ্ধ চবন বলল- “তুমি যখন ছোটো ছিলে আমি তোমাকে খাইয়েছি । পিতামাতা বয়স্ক হলে তাদের দেখার দায়িত্ব সন্তানের। আমি তোমার পাপের ভাগ কেন নেবো?” চবনের পত্নী তথা রত্নাকরের মা এক কথাই বলল। তখন রত্নাকর নিজ স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলে স্ত্রী বলল- “বিবাহের পর কন্যার সমস্ত দায়িত্ব স্বামীর হয়। আপনি অগ্নি সাক্ষী রেখে আমাকে বিবাহ করেছেন। আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব এখন আপনার। আমি কেন আপনার পাপের ভাগ নেবো?” শুনে রত্নাকর কাঁদতে কাঁদতে এসে আবদ্ধ মুক্ত করে ছদ্দবেশী ব্রহ্মা ও নারদের চরণে পড়ে বলল- “হে ঠাকুর। আমি নরাধম । বহু ঘৃনিত পাপ করেছি। আমার পাপের ভাগ কেউ নেবে না।” ব্রহ্মা ও নারদ মুনি তখন স্বরূপে এসে বললেন- “হে রত্নাকর। পাপ করলে প্রায়শ্চিত্তের বিধান আছে। তোমাকে দিয়ে আগামী দিনে একটি মহৎ কাজ হবে। তুমি পবিত্র চিত্তে এখন তপস্যা করে প্রায়শ্চিত্ত করো। তুমি ‘রাম’ নাম জপ করো। আমি তোমাকে রাম মন্ত্রে দীক্ষা প্রদান করিব। ” রত্নাকর পুষ্করিণীতে স্নান করতে গেলে পুষ্করিণী শুকিয়ে গেলো। তখন ব্রহ্মা কমণ্ডলুর বারি সেচন করলেন রত্নাকরের মস্তকে । কিন্তু পাপী রত্নাকরের মুখে পবিত্র ‘রাম’ নাম আসলো না। ব্রহ্মা তাকে ‘রাম’ শব্দের উল্টো ‘মরা’ নাম জপ করতে বললেন।
রত্নাকর ‘মরা’ শব্দ করতে করতে ‘রাম’ নাম উচ্চারনে এনে বহু বছর তপস্যা করলো। তপস্যার সময় উই পোকার ঢিপি হয়ে গেলো তার উপরে । ব্রহ্মা দর্শন দিলেন। বললেন- “তুমি রাম কথা লেখবে। ভগবান শ্রী বিষ্ণু অযোধ্যায় নর অবতার নেবেন। তাঁর জীবনি লেখবে তুমি। তুমি আমার কৃপায় দিব্যদৃষ্টি ও ভবিষ্যৎ দেখতে সমর্থ হবে। বল্মীকের ভেতর তপস্যা করেছিলে তাই তুমি জগতে মহর্ষি বাল্মিকী নামে খ্যাত হবে। তোমার জিহ্বাতে সরস্বতী দেবী অবস্থান করবেন ।” এই ভাবে মহাডাকাত রত্নাকর হলেন দিব্যজ্ঞানী মহর্ষি বাল্মিকী । অপরদিকে একদিন দেবর্ষি নারদ মুনি বৈকুণ্ঠে গিয়ে দেখলেন শ্রী নারায়ন নিজেকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন । মূল স্বরূপে তিনি নব দূর্বাদল বর্ণ ধারন করেছেন। চতুর্ভুজা দেবী বিষ্ণুপ্রিয়া কমলা দেবী দ্বিভুজা হয়ে নারায়নের বামে অবস্থান করছেন। নারদ মুনি এমন রূপের কারণ জানতে চাইলে শ্রীহরি জানালেন- তিনি এই রূপে মর্তে অবতার গ্রহণ করতে চলেছেন।”
( ক্রমশঃ )
◄Like our fb page ► ☑ www.facebook.com/shonatonsondesh
দেবীং সরস্বতীঞ্চৈব ততোজয়মুদীরয়েৎ ।।
ভয়হর মঙ্গল দশরথ রাম ।
জয় জয় মঙ্গল সীতা রাম ।।
মঙ্গলকর জয় মঙ্গল রাম ।
সঙ্গতশুভবিভবোদয় রাম ।।
আনন্দামৃতবর্ষক রাম ।
আশ্রিতবৎসল জয় জয় রাম ।।
রঘুপতি রাঘব রাজা রাম ।
পতিতপাবন সীতা রাম ।।
( সন্ত তুলসীদাস গোস্বামী )
ভারতবর্ষের উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক পাহাড়ে ঘেরা সুন্দর বন ছিলো । সেই বনে রত্নাকর নামক এক ডাকাত বাস করতো । ব্রাহ্মণ সন্তান চবনের পুত্র হয়েও তিনি ডাকাতি করে পরিবার পালন করতেন । সেই বনে যে যেতো রত্নাকর তাকে হত্যা করে তার সর্বস্ব লুট করতেন । এমনই নিষ্ঠুর ছিলো সেই ডাকাত । সেই সময় ছিলো ত্রেতা যুগের শেষ পর্যায় । একদিন ব্রহ্মা ও নারদ মুনি দুই সন্ন্যাসীর ছদ্দবেশে সেই বনে এসেছিলেন । রত্নাকর তাদের দেখে হত্যা করতে উদ্যত হলে ছদ্দবেশী ব্রহ্মা বললেন- “ওহে রত্নাকর। তুমি এই রকম ভাবে তস্কর বৃত্তি করে কেন হত্যা করছ ? এতে তোমার বিপুল পাপ জমা হচ্ছে ।” রত্নাকর বললেন- “আমি এইভাবে আমার পরিবার পালন করি। যদি পাপ হয় তাহলে আমার পরিবারে সবার পাপ হবে।” ব্রহ্মা বললেন- “তাই যদি হয়, তবে এক কাজ করো। তুমি আমাদের রজ্জুতে আবদ্ধ করে তারপর পরিবারের কাছে শুনে এসো যে তাহারা তোমার পাপের ভাগ গ্রহণ করবেন কিনা?”
রত্নাকর ছদ্দেবশী নারদ ও ব্রহ্মা কে দড়ি দিয়ে বেধে পরিবারের কাছে শুনতে গেলো। বৃদ্ধ চবন বলল- “তুমি যখন ছোটো ছিলে আমি তোমাকে খাইয়েছি । পিতামাতা বয়স্ক হলে তাদের দেখার দায়িত্ব সন্তানের। আমি তোমার পাপের ভাগ কেন নেবো?” চবনের পত্নী তথা রত্নাকরের মা এক কথাই বলল। তখন রত্নাকর নিজ স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলে স্ত্রী বলল- “বিবাহের পর কন্যার সমস্ত দায়িত্ব স্বামীর হয়। আপনি অগ্নি সাক্ষী রেখে আমাকে বিবাহ করেছেন। আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব এখন আপনার। আমি কেন আপনার পাপের ভাগ নেবো?” শুনে রত্নাকর কাঁদতে কাঁদতে এসে আবদ্ধ মুক্ত করে ছদ্দবেশী ব্রহ্মা ও নারদের চরণে পড়ে বলল- “হে ঠাকুর। আমি নরাধম । বহু ঘৃনিত পাপ করেছি। আমার পাপের ভাগ কেউ নেবে না।” ব্রহ্মা ও নারদ মুনি তখন স্বরূপে এসে বললেন- “হে রত্নাকর। পাপ করলে প্রায়শ্চিত্তের বিধান আছে। তোমাকে দিয়ে আগামী দিনে একটি মহৎ কাজ হবে। তুমি পবিত্র চিত্তে এখন তপস্যা করে প্রায়শ্চিত্ত করো। তুমি ‘রাম’ নাম জপ করো। আমি তোমাকে রাম মন্ত্রে দীক্ষা প্রদান করিব। ” রত্নাকর পুষ্করিণীতে স্নান করতে গেলে পুষ্করিণী শুকিয়ে গেলো। তখন ব্রহ্মা কমণ্ডলুর বারি সেচন করলেন রত্নাকরের মস্তকে । কিন্তু পাপী রত্নাকরের মুখে পবিত্র ‘রাম’ নাম আসলো না। ব্রহ্মা তাকে ‘রাম’ শব্দের উল্টো ‘মরা’ নাম জপ করতে বললেন।
রত্নাকর ‘মরা’ শব্দ করতে করতে ‘রাম’ নাম উচ্চারনে এনে বহু বছর তপস্যা করলো। তপস্যার সময় উই পোকার ঢিপি হয়ে গেলো তার উপরে । ব্রহ্মা দর্শন দিলেন। বললেন- “তুমি রাম কথা লেখবে। ভগবান শ্রী বিষ্ণু অযোধ্যায় নর অবতার নেবেন। তাঁর জীবনি লেখবে তুমি। তুমি আমার কৃপায় দিব্যদৃষ্টি ও ভবিষ্যৎ দেখতে সমর্থ হবে। বল্মীকের ভেতর তপস্যা করেছিলে তাই তুমি জগতে মহর্ষি বাল্মিকী নামে খ্যাত হবে। তোমার জিহ্বাতে সরস্বতী দেবী অবস্থান করবেন ।” এই ভাবে মহাডাকাত রত্নাকর হলেন দিব্যজ্ঞানী মহর্ষি বাল্মিকী । অপরদিকে একদিন দেবর্ষি নারদ মুনি বৈকুণ্ঠে গিয়ে দেখলেন শ্রী নারায়ন নিজেকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন । মূল স্বরূপে তিনি নব দূর্বাদল বর্ণ ধারন করেছেন। চতুর্ভুজা দেবী বিষ্ণুপ্রিয়া কমলা দেবী দ্বিভুজা হয়ে নারায়নের বামে অবস্থান করছেন। নারদ মুনি এমন রূপের কারণ জানতে চাইলে শ্রীহরি জানালেন- তিনি এই রূপে মর্তে অবতার গ্রহণ করতে চলেছেন।”
( ক্রমশঃ )
◄Like our fb page ► ☑ www.facebook.com/shonatonsondesh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন