২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

রামায়ন কথা - আদিকাণ্ড পর্ব- ৪

ভগবান ভক্তের প্রদত্ত যেমন পূজা, নৈবদ্য সানন্দে গ্রহণ করেন, তেমনি ভক্ত রুষ্ট হয়ে অভিশাপ দিলে ভগবান সানন্দে তা মাথা পেতে গ্রহণ করেন । ভগবান শ্রী হরির পরম ভক্ত নারদ মুনির কথা শোনা যাক । একবার নারদ মুনি হিমালয়ে কঠিন যোগসাধনায় নিমগ্ন হয়েছিলেন । অবিরত তুষারপাতেও তাঁর সেই সাধনা ভঙ্গ হয়নি। দেবতারা এসে তাকে আহ্বান করলেও তিনি যোগসাধনা ভঙ্গ করেননি । ইন্দ্রদেবতা তখন মদন দেব ও রতি দেবীর শরণাপন্ন হলেন। মদন দেবতা হিমালয়ে সেই তুষারাছন্ন পরিবেশে বসন্ত সৃষ্টি করে নারদ মুনিকে কামবাণ নিক্ষেপ করে বিদ্ধ করলেন। কিন্তু মদনের বাণ উপেক্ষা করেই নারদের যোগ সাধনা চলতে লাগলো। অবশেষে একদিন নারদের যোগা সমাপ্ত হোলো। নারদ মুনি নিজেকে শিবতুল্য জ্ঞান করলেন, যেহেতু কাম বাণে দেবাদিদেবের মনে কাম জাগেনি, সেইরূপ নারদের ওপর কামবাণ ব্যর্থ হয়েছে- সেইহেতু নারদ মুনি নিজেকে শিবতুল্য জাহির করলেন। নারদের এরূপ অহংকার দেখে প্রজাপতি ব্রহ্মা চিন্তায় পড়ে বৈকুণ্ঠে গেলেন। ভগবান নারায়ণকে অনুরোধ জানালেন নারদের দর্প চূর্ণ করতে । ভগবান নারায়ণ একটি অদ্ভুত লীলা করলেন। যোগমায়া শক্তি অবলম্বন করে একটি মায়াপুরী নির্মাণ করলেন । তথায় সমুদ্র রাজা রত্নাকর কে রাজা বানিয়ে বসালেন। লক্ষ্মী দেবীর অংশ রূপিনী এক সুন্দরী সুশীলা কন্যা সেই রাজ্যের রাজকণ্যা হয়ে নিবাস করতে লাগলেন। বিষ্ণু মায়াতে সেখানে প্রজাদি ঘর গৃহ নির্মিত হল ।
একদা নারদ মুনি ভ্রমণ করতে করতে সেই রাজ্যে উপস্থিত হলেন । তথায় তিনি রাজকণ্যাকে দেখে মোহিত হয়ে ভাবেন এই রাজকন্যাকেই বিবাহ করবেন । রাজকন্যাকে জিজ্ঞেস করলেন- “হে কন্যে তুমি কেমন পতি আশা কর?” কন্যা বললেন- “আমি হরি সদৃশ পুরুষ কেই পতি রূপে গ্রহণ করবো।” নারদ মুনি ছদ্দবেশী রত্নাকর কে জানালেন শীঘ্র মেয়ের স্বয়ম্বর আয়োজন করতে । এই বলে নারদ মুনি বৈকুণ্ঠে গিয়ে নারায়ণকে বললেন- “প্রভু আমাকে হরি মুখ করে দিন।” হরি শব্দের এক অর্থ বানর , যেহেতু বানর সুযোগ পেলেই হরণ করে। শ্রী নারায়ণ নারদ মুনিকে বানর মুখী করে দিলেন । নারদ মুনি আয়না তে নিজ মুখ না দেখেই স্বয়ম্বরের দিন সেই রাজ্যে গেলেন। তাকে দেখে সকলে হেসে লুটোপুটি খেতে লাগলো । নারদ মুনি ধারনা করলেন তাঁর সুন্দর মুখ দেখে হয়তো সকলে হিংসা বশত হাস্য করছে । কন্যা বরমাল্য নিয়ে ঘুরতে লাগলো। মর্কটের মতো লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে নারদ মুনি তার আগে পিছে ঘুরতে লাগলো। কিন্তু কন্যা কিছুতেই তাকে বরমালা দিলেন না । হঠাত সভা মাঝে শ্রী নারায়ণ আবির্ভূত হলেন। কন্যা শ্রী নারায়নের কণ্ঠে মাল্য দিলেন। এই দেখে নারদ মুনি রেগে নদীর ধারে চলে গেলো। জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বৈকুণ্ঠে গিয়ে বলল- “প্রভু আপনি আমাকে ছলনা করলেন?” নারায়ণ বললেন- “দেবর্ষি তুমি হরি মুখ চেয়েছিলে, হরি শব্দের এক অর্থ বাঁদর, তুমি তো বল নি যে আমার মতোন মুখাবয়ব প্রদান করতে।” নারদ মুনি বললেন- “হে প্রভু। আপনি আমাকে যে ছলনা করলেন তার শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে। আমি আপনাকে অভিশাপ দিচ্ছি যেমন আমি সেই রাজকণ্যাকে হারালাম , আপনিও আগামী অবতারে বারংবার স্ত্রী বিচ্ছেদের কষ্ট পাবেন।”
নারদের অভিশাপ বাক্য মাথা পেতে নিলেন নারায়ণ । তখন ব্রহ্মা প্রকট হয়ে বললেন- “পুত্র তোমার গর্ব চূর্ণ করবার জন্যই এই লীলা রচনা হয়েছে । সেই কণ্যা স্বয়ং দেবী লক্ষ্মী। আর সেই রাজা লক্ষ্মী দেবীর পিতা রত্নাকর। তুমি ব্রহ্মচারী, তোমার মনে এইহেন চিন্তা কিভাবে আসে ? কিভাবে তুমি নিজেকে শিবতুল্য মনে কর ?” নারদ মুনির দর্প চূর্ণ হল। তিনি বুঝলেন তিনি মহাপাপ করেছেন। বারংবার নারায়নের চরণে ক্ষমা প্রার্থনা চাইলেন । শ্রীনারায়ন জানালেন , “ভক্তের অভিশাপ অসত্য হবে না। তোমার অভিশাপে বারংবার আমার আর লক্ষ্মী দেবীর বিচ্ছেদ ঘটবেই।” অপরদিকে রাবনের দিগ্বিজয় বেড়ে চলল। যক্ষ, নাগ, গন্ধর্ব, কিন্নর, অসুর, দেবতা, মানব ইত্যাদিরা রাবণের বশ্যতা স্বীকার করলো । কিন্তু সে যখন পাতালপুরী অসুর রাজ বলির রাজ্য আক্রমণ করলো- তখন তার আর রক্ষা থাকলো না। বলির সাথে যুদ্ধে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হোলো। বলি রাবণকে বন্দী বানিয়ে কারাগারে আটকে রাখলো। শেষে মহর্ষি পুলস্ত্য এসে বলিকে অনুরোধ জানিয়ে রাবণ কে মুক্তি করলো ।
( ক্রমশঃ )
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।