ইক্ষাকু ক্ষত্রিয় কূলে ভগবান শ্রীরাম আবির্ভূত হয়েছিলেন । ইক্ষাকু কূলের মহান দাতা রাজা হরিশ্চন্দ্রের উপাখ্যান রামায়নে আছে । ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র মুনির ফুলে ফলে শোভিত বাগানে প্রত্যহ স্বর্গ থেকে দেবকন্যারা এসে ফুল, ফল নিয়ে যেতো। বিশ্বামিত্র মুনি, তাঁর শিষ্যদের চৌকিদারীতে রেখেও সুফল পেলেন না, দেবতাদের মায়ায় শিষ্যরা নিদ্রামগ্ন হতেই দেবকন্যারা ফুল, ফল নিয়ে গেলো। একদিন মুনি বিশ্বামিত্র তপঃ তেজে নিজে এক মায়া রচলেন। যেই মায়াতে দেবকন্যারা ফুল নিতে আসলে লতাপাতার বেস্টনীতে জড়িয়ে চিৎকার করতে লাগলো। রাজা হরিশ্চন্দ্র সেখান দিয়ে যাবার সময়, সেই দেবকন্যাদের মুক্ত করলেন। বিশ্বামিত্র মুনি যোগবলে সব জেনে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজা হরিশ্চন্দ্রকে বললেন- “হে সম্রাট। তুমি কেন সেই দেবকন্যাদের মুক্তি করেছো?” রাজা বললেন- “হে মহর্ষি সেই দেবকন্যারা আমার নিকট মুক্তি ভিক্ষা চেয়েছিলো। আমি দাতাকে তাঁর ইস্পিত সম্পদ দান করি। ইহা আমার জীবনের প্রতিজ্ঞা।” বিশ্বামিত্র শুনে বললেন- “তাই যদি হয়, তবে তুমি তোমার রাজ্য সম্পদ এখুনি আমাকে দান করে এক বস্ত্রে বিদায় হও। আমি তোমার কাছে তোমার রাজ্য দান চাইছি। ” রাজা হরিশ্চন্দ্র তাই দান করে এক বস্ত্রে বেরিয়ে গেলেন। সাথে থাকলো মহারানী শৈব্যা, পুত্র রোহিতাশ্ব ।
রাজা সসাগড়া রাজ্য মুনিকে দান করেছেন, তাই পৃথিবীতে আর কোথাও যাওয়া যাবে না। কিন্তু কাশীধাম কোনো রাজার রাজত্বে নয়। কাশীধাম ভগবান শিবের ত্রিশূলে অবস্থিত। এই স্থানের রাজা ভগবান শিব । রাজা হরিশ্চন্দ্র স্ত্রী, পুত্র নিয়ে কাশীধামে আসতেই বিশ্বামিত্র পুনঃ এসে বলল- “রাজা দান তো দিলে, কিন্তু দক্ষিণা কই ?” রাজা হরিশ্চন্দ্র তখন নিজ স্ত্রী শৈব্যা আর পুত্র রোহিতাশ্ব কে কাজের ঝি হিসাবে বিক্রি করে দিলেন। নিজেও চণ্ডালের কাছে বিক্রিত হয়ে মহর্ষি বিশ্বামিত্র কে দান দিলেন। তবুও মুখের প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গলেন না । মহারানী শৈব্যা আর রাজপুত্র রোহিতাশ্ব ঝিগিরি করে বহু কষ্টে দিন যাপন করতে লাগলো । অপরদিকে হরিশ্চন্দ্র কাশীর শ্মশানে ডোম হয়ে জীবন কাটাতে লাগলেন । একদিনের কথা, রোহিতাশ্বকে সর্পে দংশন করলো। ছটফট করতে করতে মায়ের কোলেই মারা গেলো। রানী শৈব্যা কাশীর শ্মশানে পুত্রকে দাহ করতে গেলেন । অন্ধকার রাত্রিতে সেখানে ডোম রূপে হরিশ্চন্দ্রের দেখা পেলেও একে অপরকে চিনলো না। শৈব্যা তখন ডোম হরিশ্চন্দ্রকে দাহ করতে বললে, হরিশ্চন্দ্র বলল- “মূল্য ছাড়া দাহ হবে না। এ আমাদের সর্দারের আদেশ। যাও মূল্য নিয়ে এসো। ” শৈব্যা কাঁদতে কাঁদতে জানালো- মূল্য নেই। সে নিজেই পড়ের বাড়ীর ঝি। অবশেষে শৈব্যা নিজের মলিন ছিন্ন বস্ত্র থেকে সামান্য বস্ত্র ছিড়ে হরিশ্চন্দ্র কে দিয়ে বলল- “এই নিন। আমার কাছে আর কিছুই নেই।”
রাজা হরিশ্চন্দ্র চিতা সাজিয়ে মৃত রোহিতাশ্বকে রেখে মশাল আনতে গেলো। মশাল নিয়ে এসে চিতায় শায়িত নিজ পুত্রকে দেখে ক্রন্দন করতে লাগলেন। শৈব্যা আর হরিশ্চন্দ্রের মিলন হোলো। মৃত পুত্রকে জড়িয়ে হরিশ্চন্দ্র আর শৈব্যা খুব কাঁদলেন । তারপর হরিশ্চন্দ্র তিনটে চিতা সাজালেন, ঠিক করলেন পুত্রের চিতায় আগুন দিয়ে তারাও চিতেতে উঠে অগ্নিতে নিজেদের ভস্ম করবেন । ঠিক এই সময় শ্মশান আলো করে কাশীর রাজা ভগবান শিব ও কাশীর রাণী মাতা গৌরী আবির্ভূত হলেন। ভগবান শিব মহারাজ হরিশ্চন্দ্র আর রানী শৈব্যার প্রশংসা করে রোহিতাশ্বকে প্রাণদান করলেন । রোহিতাশ্ব তার পিতামাতাকে ফিরে পেলো। অপরদিকে মহর্ষি বিশ্বামিত্র মুনি সেখানে উপস্থিত হলেন। বললেন- “হে রাজন। আমি তোমার পরীক্ষা নিচ্ছিলাম। তুমি সত্যি মহান দাতা। সত্যবাদীর সাক্ষাৎ রূপ। যাও তোমাকে তোমার রাজ্য ফিরিয়ে দিলাম। আজ থেকে তুমি সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র রূপে খ্যাত হবে।” রাজা হরিশ্চন্দ্র তখন রানী শৈব্যা ও রোহিতাশ্বকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরলেন। রাজা আবার রাজাসনে বসলেন। মহারানী শৈব্যা পুত্র রোহিতাশ্বকে ক্রোড়ে নিয়ে রাজার বামে বসলেন। ত্রিলোকে রাজার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লো ।
রামায়ন কথা অপূর্ব সঙ্গীত ।
পাঁচালী প্রবন্ধে কহে কৃত্তিবাস পণ্ডিত ।।
মহারাজ হরিশ্চন্দ্রের অপূর্ব আখ্যান ।
ত্রিলোকে গাহে রাজার কীর্তি ব্যাখান ।।
( ক্রমশঃ )
রাজা সসাগড়া রাজ্য মুনিকে দান করেছেন, তাই পৃথিবীতে আর কোথাও যাওয়া যাবে না। কিন্তু কাশীধাম কোনো রাজার রাজত্বে নয়। কাশীধাম ভগবান শিবের ত্রিশূলে অবস্থিত। এই স্থানের রাজা ভগবান শিব । রাজা হরিশ্চন্দ্র স্ত্রী, পুত্র নিয়ে কাশীধামে আসতেই বিশ্বামিত্র পুনঃ এসে বলল- “রাজা দান তো দিলে, কিন্তু দক্ষিণা কই ?” রাজা হরিশ্চন্দ্র তখন নিজ স্ত্রী শৈব্যা আর পুত্র রোহিতাশ্ব কে কাজের ঝি হিসাবে বিক্রি করে দিলেন। নিজেও চণ্ডালের কাছে বিক্রিত হয়ে মহর্ষি বিশ্বামিত্র কে দান দিলেন। তবুও মুখের প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গলেন না । মহারানী শৈব্যা আর রাজপুত্র রোহিতাশ্ব ঝিগিরি করে বহু কষ্টে দিন যাপন করতে লাগলো । অপরদিকে হরিশ্চন্দ্র কাশীর শ্মশানে ডোম হয়ে জীবন কাটাতে লাগলেন । একদিনের কথা, রোহিতাশ্বকে সর্পে দংশন করলো। ছটফট করতে করতে মায়ের কোলেই মারা গেলো। রানী শৈব্যা কাশীর শ্মশানে পুত্রকে দাহ করতে গেলেন । অন্ধকার রাত্রিতে সেখানে ডোম রূপে হরিশ্চন্দ্রের দেখা পেলেও একে অপরকে চিনলো না। শৈব্যা তখন ডোম হরিশ্চন্দ্রকে দাহ করতে বললে, হরিশ্চন্দ্র বলল- “মূল্য ছাড়া দাহ হবে না। এ আমাদের সর্দারের আদেশ। যাও মূল্য নিয়ে এসো। ” শৈব্যা কাঁদতে কাঁদতে জানালো- মূল্য নেই। সে নিজেই পড়ের বাড়ীর ঝি। অবশেষে শৈব্যা নিজের মলিন ছিন্ন বস্ত্র থেকে সামান্য বস্ত্র ছিড়ে হরিশ্চন্দ্র কে দিয়ে বলল- “এই নিন। আমার কাছে আর কিছুই নেই।”
রাজা হরিশ্চন্দ্র চিতা সাজিয়ে মৃত রোহিতাশ্বকে রেখে মশাল আনতে গেলো। মশাল নিয়ে এসে চিতায় শায়িত নিজ পুত্রকে দেখে ক্রন্দন করতে লাগলেন। শৈব্যা আর হরিশ্চন্দ্রের মিলন হোলো। মৃত পুত্রকে জড়িয়ে হরিশ্চন্দ্র আর শৈব্যা খুব কাঁদলেন । তারপর হরিশ্চন্দ্র তিনটে চিতা সাজালেন, ঠিক করলেন পুত্রের চিতায় আগুন দিয়ে তারাও চিতেতে উঠে অগ্নিতে নিজেদের ভস্ম করবেন । ঠিক এই সময় শ্মশান আলো করে কাশীর রাজা ভগবান শিব ও কাশীর রাণী মাতা গৌরী আবির্ভূত হলেন। ভগবান শিব মহারাজ হরিশ্চন্দ্র আর রানী শৈব্যার প্রশংসা করে রোহিতাশ্বকে প্রাণদান করলেন । রোহিতাশ্ব তার পিতামাতাকে ফিরে পেলো। অপরদিকে মহর্ষি বিশ্বামিত্র মুনি সেখানে উপস্থিত হলেন। বললেন- “হে রাজন। আমি তোমার পরীক্ষা নিচ্ছিলাম। তুমি সত্যি মহান দাতা। সত্যবাদীর সাক্ষাৎ রূপ। যাও তোমাকে তোমার রাজ্য ফিরিয়ে দিলাম। আজ থেকে তুমি সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র রূপে খ্যাত হবে।” রাজা হরিশ্চন্দ্র তখন রানী শৈব্যা ও রোহিতাশ্বকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরলেন। রাজা আবার রাজাসনে বসলেন। মহারানী শৈব্যা পুত্র রোহিতাশ্বকে ক্রোড়ে নিয়ে রাজার বামে বসলেন। ত্রিলোকে রাজার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লো ।
রামায়ন কথা অপূর্ব সঙ্গীত ।
পাঁচালী প্রবন্ধে কহে কৃত্তিবাস পণ্ডিত ।।
মহারাজ হরিশ্চন্দ্রের অপূর্ব আখ্যান ।
ত্রিলোকে গাহে রাজার কীর্তি ব্যাখান ।।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন