২৬ জুলাই ২০১২

মূর্তি পুজা


সামান্য একটা সহজ মৌলিক ও প্রধান গুরুত্বপুর্ন বিষয় অনেকে যদি না জানে তাহলে মনে করতে হবে ডাল ম্যা কুচ কালা নেহি কিউকে ও পুরাই কালা হ্যায় উস ম্যা কই ডালই নেহি। কথাগুলো বললাম মূর্তি পূজা প্রসঙ্গে। এখনও অনেক হিন্দু মনে করে হিন্দুরা মূর্তি পুজা করে এবং মানুষের বানানো মূর্তিকে প্রনাম করে। প্রথমে বলি, আরে বাবা ওটা মূর্তি নয় ওটা হবে বিগ্রহ। নিন্দুকেরা ওটাকে মূর্তি বলে। মেনে নিলাম শিক্ষা ব্যাবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার অপ্রতুলতার কারনেই এটা হয়েছে কিন্তু যা আছে তাও যদি ঠিক ঠাক মতো না পড়ি তাহলেতো আসলেই বিপদ আর সেই বিপদই বর্তমানে মানবধর্ম, অসুস্থ ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা নিজেকে সনাতনী হিন্দু হিসেবে পরিচয় দিতে বিব্রতবোধ করা ইত্যাদি ইত্যাদির জন্ম হয়েছে। আরে বাবু সোনা ক্লাস সেভেনের বইতে ছিল হিন্দুরা মূর্ত পুজা করে কিনা সেখানে স্বামী বিবেকানন্দের একটি কবিতা ও ছিল "পুতুল পূজা করে নাকো রাজা..............." কিন্তু পরীক্ষা এটা আসবে না বলে পড়া হয়নি। এই ফাঁকি ঝুঁকি শিক্ষার কারনে ধর্মীয় বোধই হারিয়ে যাচ্ছে ।আমি যদি প্রশ্নপত্র তৈরী করতাম তাহলে প্রতি বছর কিছু কমন প্রশ্ন করতাম। যাকগে তাতো আর কখনো হবার নয় তাই ক্ষোভের অংশ আপাতত আলুর দমের মত পেটে টুস করে চালিয়ে দিলাম। এবার আসি শাস্ত্র কি বলে। দেব দেবী কি তা এখন আমরা সবাই জানি কিন্তু এর পুজা করা কেন তাও জানিয়েছি তবুও সংক্ষেপে বলি , শ্রীমাদ্ভাগবত গীতায় আছে ত্রিগুনের প্রভাবে মোহগ্রস্থ হয়ে কামনা বাসনায় মশগুল মূর্খরাই দেব দেবীর পুজা করে এবং এই নির্দেশ আমিই(স্রষ্টা) দিয়েছে আর তা করেই একজন সাধক মুক্তি লাভ করবে ধাপে ধাপে। গীতা ও উপনিষদ এই শিক্ষাই দেয় শুধু মাত্র নিরাকার ঈশ্বরের পুজা করো কিন্তু আমাদের মন কেবল চায় আর চায়। এটা চাই ওটা চাই, সুন্দরী বউ চাই আবার উপঢৌকন হিসেবে আবার কয়েক জোড়া শ্যালিকা হলে মন্দ হয় না। গাড়ি চাই, বাড়ি চাই, টাকা চাই, গহনা চাই আর এই আবদারগুলো করি ভগবানের কাছে কিন্তু নিরাকার ইশ্বরকে নিজের আত্মায় আত্মস্থ করতে চাই না তাহলে কিভাবে নিরাকার ব্রক্ষের পূজা করবো। শ্রীমাদ্ভাগবত শিক্ষাতো এটাই নিষ্কাম কর্ম কর। কিন্তু আমরা এমনই কর্ম করি যার ফলে মন আকামে গাঁজন নষ্ট করে ধুতি ভিজিয়ে ফেলি। তাই সাধনার পারম্ভে এই বিগ্রহ পুজা ছাড়া কোন গতি নেই। বিগ্রহ চোখের সামনে রেখে ভক্তরা পূজা করি তখন ঈশ্বরের এই রুপের ছায়া ভক্ত মনের মাঝে নিয়ে প্রার্থনা করে আর মনে মনে তার আকুতি জানায় সে আকুতি মিনতি কিন্তু কাঠ, মাটি দিয়ে গড়া ঐ মূর্তি কাছে ভক্ত করে না। মুর্তির কাছে ভক্ত তার আকূল আবেদন জানায় না। এটাতো আরও কমন ব্যাপার যে পুজা ও প্রার্থনা মনের ভেতরে হয় এটা কোন বাহ্যিক বিষয় না। ঈশ্বর ভক্তের ভক্তিকে দেখেন কেবল সেখানে মন্ত্র সঠিক ভাবে উচ্চারন করতে না পারলে তিনি মাইন্ড করবেন না। তাই কাঠ, মাটি দিয়ে গড়া ঐ বিগ্রহ নিন্দুকের কাছে মূর্তি আর তারা সেটাকে মূর্তি মনে করেই তারা ভাংগে কিন্তু আমাদের মনের ভেতের সেতো ঈশ্বরের রুপ তা কি করে ভাঙ্গবে। ভক্তি বিষয়টা কি সেটা সহজে বোঝানোর চেষ্টা করি। অন্য কেউ নয় , বাবা মা, ভাই বোন কেউ না ধরুন আপনার হাতে আপনার প্রানপ্রিয় প্রেমিকার ছবির আছে। আপনি কি করেন ঐ ছবিটাতে? আমি কিন্তু চুমু খাই(বিদ্যা বাল্যন, শ্রী দেবী, কাজল আরও মেলা লম্বা লিস্ট) এবং আপনি অবশ্যই রোমাঞ্চিত হন কারন তার প্রতি আপনার যে নিখাদ ভালবাসা এটাই তারই নমূনা মাত্র। এখন ভাবুন আপনার প্রেমিকার ছবিতে আপনার সামনে আপনার বন্ধু চুমু খেলো এমনকি অশ্লীল কিছু করে বসল। আপনি কি নিজেকে সংযত রাখতে পারবেন?? কিন্তু আসলেতো রাগ করার মত কিছুই হয়নি কারন ওটা একটা কাগজের টুকরো মাত্র আর ঐ কাগজের যার ছবি সেতো আপনার প্রেমিকার মত কথা বলে না, চলে না , হাঁটে না আবার মিষ্টি করে হাসেও না আপনার দিল কি ধাড়কন বৃদ্ধি করার জন্য তাহলে কেন চটবেন। চটবেন কারন আপনার প্রবিত্র প্রেমিক মনে সেটা কেবলই ছবি নয় তাই এর অপমান আপনি আপনার প্রেমের অপমানই মনে করেন যা কোন সত্যিকারের প্রেমিক সহ্য করতে পারে না। ঠিক যারা নিন্দুক তাদের বলবেন পারলে তোমার বাবা মায়ের ছবির উপর থু থু দাও বা বাজে কিছু করো। দেখবেন এই কথা কেন বললেন তাই আপনাকে শাকিব খান ঘুষা দেবার জন্য হাতের দলা পাকাবে। আরও কঠিন করলে বলতে পারেন পারলে কাব্বা শরীফের উপর থুথু ফেল। দেখবেন আসমান জমিন এক করে ফেলবে। অথচ এই মানুষই সারাদিন হিন্দুরা মূর্তি পুজা করে, এটা হারাম, এটা মুশরীক এই কথা বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে কিন্তু এই বেলায় ঐ সব কিছু ভূলে যায় যখন নিজের ঘাড়ে আসে। যদি বলেন কেন ক্ষেপছো এটাতো শুধু মাত্র একটা কাগজে টুকরো আর এর চারিদিকে মানুষগুলোর কোন প্রান নেই, হাড় নেই , মাংস নেই, এরা কথাও বলতে পারে না তাহলে এত ক্রোধ কিসের? কারন তার মনে কখনোই এটা কাগজের টুকরা নয় বা কোন ছবিও নয়। তার ভক্তির কাছে এটাই প্রকৃত কাবা শরীফ তাই এর অপমান সে ঐ আসল কাবা শরীফের অপমানই মনে করেন ঠিক যেমন আমাদের মনের মানস পটে তা ঈশ্বরের ছায়া বা রুপ এবং প্রার্থনায় আমরা ঈশ্বরের এই রুপেই ভক্তিতে নিমগ্ন হই। তাই আমরা কখনোই মূর্তি পুজা করি না আর এটা কেবলই ভক্তই জানে অজ্ঞানী, মূর্খ ঐ নিন্দুকেরা জানে না।
Collect from: Hemonto Kumer Mozu রণ।
 
Share:

1 Comments:

Unknown বলেছেন...

ইসলাম ধর্মে অন্য সমস্ত ধর্মকে সম্ৃান করতে বলা হয়েছে ঐ ধর্মকে সম্মান করার জন্য না, বরং ঐ ধর্ম পালনকারী মানুষদেরকে সম্মান দেখানোর জন্য,আর আমাদের প্রভু আমাদেরকে বলেছেন আমরা যেন ধর্মের ব্যপারে বাড়াবাড়ি না করি। তবে কোনো মুর্তি তৈরি করা বা মুর্তী রাখা আমাদের মধ্য কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। আমাদের প্রভু একজন, তিনি সর্ব ক্ষমতাবান, তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, তিনিই সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছেন, তার ক্ষমতায় কোনো কিছুকে অংশ প্দান করা সম্পুর্নরুপে নিষিদ্ধ, আর নিষিদ্ধ শব্দের আরবীই হল "হারাম", আর "অংশিদারস্থাপনকারী" শ্দের আরবী হল মুশরিক,, আর আপনারা এক প্রভুর ক্ষমতাকে অনেকের মাঝে ভাগ করে দিয়ে অংশ স্থাপন করে অবশ্যই নিষিদ্ধ কাজ করেছেন।

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।