ইদানীং একটি ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেখানে সবাই স্বামিজী'র সমালোচনা করছেন বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন আঙ্গিকে। কেউ কেউ যারা নিজেদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বলে দাবি করেন, তাদের মতে স্বামিজী যথেষ্ট পরিমাণে হিন্দুত্ববাদী ছিলেন না আর যেসব হিন্দুত্ববাদীরা স্বামিজী-কে আদর্শ বলে মানেন তাদেরকে প্রকৃত হিন্দুত্ববাদী বলে মনে করেন না বরং হেয়দৃষ্টিতেই দেখেন। আবার, কেউ কেউ যারা নিজেদের মুক্তমনা বলে দাবি করেন তারা সমালোচনা করে প্রাণপণে চেষ্টা করেন এটাই প্রমাণ করতে যে, স্বামিজী কোন দৈবিক সত্তা ছিলেন না, ছিলেন একজন মানুষ অথচ সমালোচনার সময়ে এমনভাবে তা উপস্থাপন করেন যেন মানুষ হিসেবে স্বামিজী'র ন্যূনতম কোন ত্রুটিই গ্রহণীয় নয়; কারণ, তিনি মানুষের স্তরে নয় তিনি অতিদৈবিক স্তরের।
দেখুন, অতি কট্টরপন্থী হিন্দুদের যা হজম হয় না তাহল, স্বামিজী'র সবাইকে নিয়ে চলার, গ্রহিষ্ণুতার মতাদর্শ। তাদের মতে, অন্য পথের অনুসারিদের ধ্বংসাত্মক কাজের প্রতিক্রিয়ায় যেহেতু এই কট্টরপন্থার উদ্ভব তাই যে কেউ গ্রহিষ্ণুতার কথা বলবেন তিনিই বর্জনীয় এবং নিন্দার্হ। কিন্তু, এরা ভুলে যান তারা যে আদর্শের নামে চালিত বলে দাবি করেন সেই 'হিন্দু' নাম বহনকারী ধর্মটি কোন প্রচলিত আচারিক ধর্ম নয় বরং একটি দর্শন যা নিয়ত পরিবর্তনীয় এবং যা কিছুই ভাল তাকে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে নেয়ার মত শক্তিশালী, তা সেই ভালো যদি গোবরে পদ্মফুলও হয় তবুও তাকে চিনে নিয়ে গ্রহণ করতে পারে। স্বামিজী'র আদর্শিক গ্রহিষ্ণুতাও সেই দর্শনের ভিত্তিতেই বিচার করতে হবে, যেখানে নিজের স্বকীয়তাকে ভিত্তি করেই অন্যের ভালকে নিজের ভিতরে আত্মস্থ করার উদারতা আছে। আবার, স্বামিজী বারবার বলেছেন কখনোই নিজের উদারতাকে নিজের দুর্বলতা না ভাবতে। অন্যের প্রতি কোন অন্যায় বা যেছে গিয়ে অত্যাচার না করতে; কিন্তু, তাই বলে অন্য কেউ অত্যাচার করতে আসলে সেই অত্যাচারকে উদারতা দেখিয়ে সহ্য করার নামে কাপুরুষতা নয় বরং, যথাসাধ্য সাহসের সাথে তার প্রতিরোধ, প্রতিবাদ করতে। তাই, অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা তাদের অন্যতম আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দকে।
অপরদিকে, মুক্তমনারা স্বামিজী'র সমালোচনা করতে গিয়ে 'স্ববিরোধিতা'-র অভিযোগ তুলেন। তবে, তারা ভুলে যান ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে খণ্ড খণ্ডভাবে বলা কথা কখনোই একটি মানুষের আপোসকামিতাকে বা 'স্ববিরোধিতা' নামের আড়ালে ভণ্ডামিকে সূচিত করেনা। কোন প্রেক্ষাপটে একজন ব্যক্তি কি কথা বললেন, তা বিচার করতে হয় সে নির্দিষ্ট সময়ের নিরিখে। প্রত্যেক মানুষেরই অধিকাংশ কথারই কিছু না কিছু পূর্বাপর থাকে; একটি মানুষকে তাই বিচার করতে এগুলোও মাথায় রাখতে হয়। মানুষ কোন যন্ত্র নয় যার কৃত কাজ দিয়েই তার প্রকৃতি/ প্রবৃত্তি-কে এককথায় প্রকাশ যাবে, মানুষ এক জটিলতায় পূর্ণ, বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ একটি সামাজিক প্রাণি। আর, স্বামিজী'র মত একজন মহামানবকে বিচার করতে গেলে শুধু কিছু কথার বা বক্তৃতার খণ্ডাংশ নিয়ে বিচার করা একধরনের বাতুলতাই বটে; স্বামী বিবেকানন্দের জীবনকে বিচার করতে হলে তা করতে হবে তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা, অভিজ্ঞতার বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে, সংক্ষিপ্ত কলেবরে নয়। কারণ, এতে সে বিচার অপূর্ণ থাকবে, কখনোই পূর্ণ নয়। আর একজন মানুষকে যখন আপনি মানুষ হিসেবে সমালোচনা করবেন তখন আপনি নিশ্চয়ই সমালোচনা করে এভাবে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে পারেননা যাতে সে প্রশ্ন শুনে মনে হয়, এমন 'দেবমানব'-র এই এই ত্রুটি থাকে কি করে? আপনি একজনের সমালোচনা করবেন মানুষ হিসেবে আর প্রত্যাশা করবেন ত্রুটিহীন দেবতার, এমন স্ববিরোধিতাও নিশ্চয়ই গ্রহণীয় নয়।
তাই, বলব সমালোচনা করুন তবে সেই সমালোচনা যেন কখনো অন্ধ অযৌক্তিক আক্রোশে পরিণত না হয়।
অবশেষে, আমাদের আদর্শ স্বামিজী মহারাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি-
নমোঃ শ্রীযতিরাজায় বিবেকানন্দ সূরয়ে
সচ্চিৎসুখস্বরূপায় স্বামিনে তাপহারিণে।।
(স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা)
দেখুন, অতি কট্টরপন্থী হিন্দুদের যা হজম হয় না তাহল, স্বামিজী'র সবাইকে নিয়ে চলার, গ্রহিষ্ণুতার মতাদর্শ। তাদের মতে, অন্য পথের অনুসারিদের ধ্বংসাত্মক কাজের প্রতিক্রিয়ায় যেহেতু এই কট্টরপন্থার উদ্ভব তাই যে কেউ গ্রহিষ্ণুতার কথা বলবেন তিনিই বর্জনীয় এবং নিন্দার্হ। কিন্তু, এরা ভুলে যান তারা যে আদর্শের নামে চালিত বলে দাবি করেন সেই 'হিন্দু' নাম বহনকারী ধর্মটি কোন প্রচলিত আচারিক ধর্ম নয় বরং একটি দর্শন যা নিয়ত পরিবর্তনীয় এবং যা কিছুই ভাল তাকে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে নেয়ার মত শক্তিশালী, তা সেই ভালো যদি গোবরে পদ্মফুলও হয় তবুও তাকে চিনে নিয়ে গ্রহণ করতে পারে। স্বামিজী'র আদর্শিক গ্রহিষ্ণুতাও সেই দর্শনের ভিত্তিতেই বিচার করতে হবে, যেখানে নিজের স্বকীয়তাকে ভিত্তি করেই অন্যের ভালকে নিজের ভিতরে আত্মস্থ করার উদারতা আছে। আবার, স্বামিজী বারবার বলেছেন কখনোই নিজের উদারতাকে নিজের দুর্বলতা না ভাবতে। অন্যের প্রতি কোন অন্যায় বা যেছে গিয়ে অত্যাচার না করতে; কিন্তু, তাই বলে অন্য কেউ অত্যাচার করতে আসলে সেই অত্যাচারকে উদারতা দেখিয়ে সহ্য করার নামে কাপুরুষতা নয় বরং, যথাসাধ্য সাহসের সাথে তার প্রতিরোধ, প্রতিবাদ করতে। তাই, অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা তাদের অন্যতম আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দকে।
অপরদিকে, মুক্তমনারা স্বামিজী'র সমালোচনা করতে গিয়ে 'স্ববিরোধিতা'-র অভিযোগ তুলেন। তবে, তারা ভুলে যান ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে খণ্ড খণ্ডভাবে বলা কথা কখনোই একটি মানুষের আপোসকামিতাকে বা 'স্ববিরোধিতা' নামের আড়ালে ভণ্ডামিকে সূচিত করেনা। কোন প্রেক্ষাপটে একজন ব্যক্তি কি কথা বললেন, তা বিচার করতে হয় সে নির্দিষ্ট সময়ের নিরিখে। প্রত্যেক মানুষেরই অধিকাংশ কথারই কিছু না কিছু পূর্বাপর থাকে; একটি মানুষকে তাই বিচার করতে এগুলোও মাথায় রাখতে হয়। মানুষ কোন যন্ত্র নয় যার কৃত কাজ দিয়েই তার প্রকৃতি/ প্রবৃত্তি-কে এককথায় প্রকাশ যাবে, মানুষ এক জটিলতায় পূর্ণ, বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ একটি সামাজিক প্রাণি। আর, স্বামিজী'র মত একজন মহামানবকে বিচার করতে গেলে শুধু কিছু কথার বা বক্তৃতার খণ্ডাংশ নিয়ে বিচার করা একধরনের বাতুলতাই বটে; স্বামী বিবেকানন্দের জীবনকে বিচার করতে হলে তা করতে হবে তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা, অভিজ্ঞতার বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে, সংক্ষিপ্ত কলেবরে নয়। কারণ, এতে সে বিচার অপূর্ণ থাকবে, কখনোই পূর্ণ নয়। আর একজন মানুষকে যখন আপনি মানুষ হিসেবে সমালোচনা করবেন তখন আপনি নিশ্চয়ই সমালোচনা করে এভাবে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে পারেননা যাতে সে প্রশ্ন শুনে মনে হয়, এমন 'দেবমানব'-র এই এই ত্রুটি থাকে কি করে? আপনি একজনের সমালোচনা করবেন মানুষ হিসেবে আর প্রত্যাশা করবেন ত্রুটিহীন দেবতার, এমন স্ববিরোধিতাও নিশ্চয়ই গ্রহণীয় নয়।
তাই, বলব সমালোচনা করুন তবে সেই সমালোচনা যেন কখনো অন্ধ অযৌক্তিক আক্রোশে পরিণত না হয়।
অবশেষে, আমাদের আদর্শ স্বামিজী মহারাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি-
নমোঃ শ্রীযতিরাজায় বিবেকানন্দ সূরয়ে
সচ্চিৎসুখস্বরূপায় স্বামিনে তাপহারিণে।।
(স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন