স্বামী বিবেকানন্দ একবার এক দুর্ভিক্ষকবলিত অঞ্চলে ত্রাণ পাঠানোর জন্য বেলুড় মঠের জমি বেচে
দিতে চেয়েছিলেন। মঠ-ফট করার আগে মানুষ বাঁচানো জরুরী। আদর্শ বাঁচানোটাই জরুরী! ওটা সর্বাগ্রে দরকার। পরে গুরু-ভায়েরা বুঝিয়ে সুঝিয়ে মঠের জমি বাঁচান। স্বামীজি আজকের এই আধুনিক বেলুড় মঠ দেখে যেতে পারেননি।
৮০ এর দশকের একটা সময়ে রামকৃষ্ণ মিশন বামদের গ্রাস থেকে নিজেদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে সরকারের কাছে নিজেদের মাইনরিটি স্ট্যাটাস চেয়ে বসে! তারা হিন্দু নয়। তারা অন্য টাইপের চিজ! তারা অন্য রকম মাইনরিটি। অবশ্য কোর্ট এই আর্জি খারিজ করে। এতে অবশ্য রামকৃষ্ণ মিশনের ভেতরেই অনেক শোরগোল হয়, ফাটলও ধরে। স্বামীজি আদর্শ বাঁচাতে জমি বেচতে চেয়েছিলেন, আর এরা জমি বাঁচাতে আদর্শ! অনেক দিন পার হয়ে গেল। এখন আর তেতো অতীত মনে করা কেন?
ভারতে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের দিনে বিবেকানন্দ একটা আইকন হয়েছিলেন। গান্ধী, নেহেরু, নেতাজী, অরবিন্দ সবার কথাতেই দেখবেন সেটা। তখন অনেক অনেক বিপ্লবী তরুন রামকৃষ্ণ মঠেও যোগ দিয়েছিলেন। সেই দিন কি আর আছে? এখনও স্বামী বিবেকানন্দের নামটা আছে অবশ্য। ওটা ভাঙিয়ে যুগের পর যুগ টিকে থাকা যাবে।
আমাকে বিভিন্ন সময় অনেকে বলেছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে রামকৃষ্ণ মিশন নিয়ে কিছু লিখতে। বর্তমান পরিস্থিতিটা কি? কেন আপনি চোখে দেখেন না? ভারতের প্রসঙ্গে পরে আসছি। বাংলাদেশে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও হিন্দু নিগ্রহের যে ঘনঘোর তা আপনি টের পান না বুঝি? তা রামকৃষ্ণ মিশন কি করতে পারে? নাসিরনগরে উপজেলা পরিষদে গিয়ে সরকারি সুরক্ষায় থেকে মৌলভীবৃন্দ বেষ্টিত হয়ে রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকার সম্পাদক বলতে পারেন- 'এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা!' এর চেয়ে বেশী তারা কি করতে পারেন? চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় নিয়ে আনন্দেই তো দিনাতিপাত করছেন, করেই যাবেন। কথা হচ্ছে- তাদের কি দরকার পড়েছে কিছু বলার? মশাই যারা তাদের চর্ব্যচোষ্য জুটিয়ে যাচ্ছে তাদের অস্তিত্বই যখন বিপন্ন তখন তাদের পাশে দাঁড়ানোটা শুধু দায়িত্ব-কর্তব্য না, কৃতজ্ঞতার পর্যায়েও পরে। অবশ্য রামকৃষ্ণ মিশনের ভরণ-পোষণ উঁচুতলার বাবুরা করেন। বাবুদের সাথে বেশ স্বচ্ছ একটা তেলাতেলি ভাব তাদের আছে।
দিনাজপুরে একবার কয়েকঘর হিন্দু বাড়িতে সহীহ আগুন দেবার পর সেই পরিবারগুলোকে তৎক্ষণাৎ আশ্রয় দেয় ইসকন। আমি ইসকনের ভাবাদর্শের কট্টর বিরোধী হলেও তাদের এই সৎসাহস ও সুবিবেচনার জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে সম্মান করি। অপরদিকে রামকৃষ্ণ মিশনের স্থানীয় ব্রাঞ্চ সাহায্যে যায় ঘটনার কয়েকদিন পর। দিনাজপুরের রামকৃষ্ণ মিশন নিজেই একটা দুঃস্থ প্রতিষ্ঠান। তাদের বড়সড় ত্রাণ দেবার সামর্থ্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশে তো আরও বুর্জোয়ানির্ভর কর্তাভজা রামকৃষ্ণ মিশনের ব্রাঞ্চ ছিল, তারা কিছু পাঠাতে পারত না? ঢাকার এক বরেণ্য সন্ন্যাসী বললেন- 'এগুলো পলিটিক্যালি এফেক্টেড এরিয়া। এখানে আমরা গেলে আমাদেরও একটা রাজনৈতিক পরিচয় বানিয়ে দেবে ওরা।' ঘেন্নায় জিভ আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছিল আমার! এরা বিবেকানন্দের অনুগামী?
যে সকল হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিন্দুর অর্থায়নে চলে অথচ হিন্দুর বেদনায় সামান্যতম সহানুভূতি দেখায় না, এদের অবিলম্বে বর্জন করুন। আমাদের প্রভূত আধ্যাত্মিকতা আছে। এখন অস্তিত্ব বাঁচানোটাই ফরজ! বাংলাদেশে স্বামী অক্ষরানন্দজী এবং স্বামী অমৃতত্ত্বানন্দজীর পর বিবেকানন্দের সুরে কথা বলার মত আর কোন সন্ন্যাসী দেখা যায়নি। এখন যারা আছেন এদের কেউ কেউ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, কেউ কেউ মারাত্মক কপটাচারী, অনেকের কাছে ভীরুতাই ধর্মবিশেষ, যারা ভীরুতাকে সহনীয়তা বলে; আবার একদল নির্বিঘ্নচিত্ত সদাচারী কুলীন বৈরাগী- কার ঠাকুরঘরে আগুন লাগল আমার জেনে কাজ কি, আমি কলাটা পেলেই হল! এরা কোনদিন আপনার আমার মত সাধারণ মানুষের জন্য টু-শব্দ করে না। চলুন তাদের সাষ্টাঙ্গ পেন্নাম ঠুকে আসি!
ভারতে রামকৃষ্ণ মিশনের গোড়া তো বাংলা। বাংলায় রামকৃষ্ণ মিশন কখনো স্পেসিফিক্যালি হিন্দুর হয়ে কথা বলে? বলে না। সর্বধর্মসমণ্বয়ের কথা বলে। আমি এই থিওরিকে লজিক্যালি সাপোর্টও করি। তবে সর্বধর্ম সমণ্বয়ের কথা বলব আর এদিকে স্বধর্মের লোক অত্যাচারে মরবে- তা নিয়ে কিচ্ছুটি বলব না- এমন আদর্শ কি বিবেকানন্দের? নাকি ঠাকুর রামকৃষ্ণের? নাকি বেদান্তের? এখানেও একই লজিক- রামকৃষ্ণ মিশন রাজনীতির বলয়ে যাবে না? হা-হতোস্মি মহারাজ! ন্যায়ের কথা যদি রাজনীতিতেই পড়ে, সত্য যদি একটা দলের দিকেও যায়- তবে তা বলা কি অধর্ম? আবু-পাহাড়ে বসে যে বিবেকানন্দ বৃটিশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবের কল্পনা করতে পারেন, আপনি সেই বিবেকানন্দকে চেনেন তো? সন্ন্যাসী ঢাল তলোয়ার না ধরুক, অন্যায়ের বিপক্ষে দুটো মৃদু বচন তো দিতে পারেন!
পশ্চিমবঙ্গেও হিন্দু সংগঠনগুলো পিঠ-বাঁচানো, গা-বাঁচানো নীতিতেই চলে। আজকে আমার লেখায় পুষ্পেন্দু বাবু কমেন্টে লিখলেন- নগর পুড়লে দেবালয় রক্ষা পায় না। এসব পেসাদভোজী ভজগোবিন্দ আর 'জয় ঠাকুর' 'জয় গুরুর' দল কবে এই সত্যকে অনুভব করবে?
(c)বিশাখদত্ত দত্ত
দিতে চেয়েছিলেন। মঠ-ফট করার আগে মানুষ বাঁচানো জরুরী। আদর্শ বাঁচানোটাই জরুরী! ওটা সর্বাগ্রে দরকার। পরে গুরু-ভায়েরা বুঝিয়ে সুঝিয়ে মঠের জমি বাঁচান। স্বামীজি আজকের এই আধুনিক বেলুড় মঠ দেখে যেতে পারেননি।
৮০ এর দশকের একটা সময়ে রামকৃষ্ণ মিশন বামদের গ্রাস থেকে নিজেদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে সরকারের কাছে নিজেদের মাইনরিটি স্ট্যাটাস চেয়ে বসে! তারা হিন্দু নয়। তারা অন্য টাইপের চিজ! তারা অন্য রকম মাইনরিটি। অবশ্য কোর্ট এই আর্জি খারিজ করে। এতে অবশ্য রামকৃষ্ণ মিশনের ভেতরেই অনেক শোরগোল হয়, ফাটলও ধরে। স্বামীজি আদর্শ বাঁচাতে জমি বেচতে চেয়েছিলেন, আর এরা জমি বাঁচাতে আদর্শ! অনেক দিন পার হয়ে গেল। এখন আর তেতো অতীত মনে করা কেন?
ভারতে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের দিনে বিবেকানন্দ একটা আইকন হয়েছিলেন। গান্ধী, নেহেরু, নেতাজী, অরবিন্দ সবার কথাতেই দেখবেন সেটা। তখন অনেক অনেক বিপ্লবী তরুন রামকৃষ্ণ মঠেও যোগ দিয়েছিলেন। সেই দিন কি আর আছে? এখনও স্বামী বিবেকানন্দের নামটা আছে অবশ্য। ওটা ভাঙিয়ে যুগের পর যুগ টিকে থাকা যাবে।
আমাকে বিভিন্ন সময় অনেকে বলেছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে রামকৃষ্ণ মিশন নিয়ে কিছু লিখতে। বর্তমান পরিস্থিতিটা কি? কেন আপনি চোখে দেখেন না? ভারতের প্রসঙ্গে পরে আসছি। বাংলাদেশে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও হিন্দু নিগ্রহের যে ঘনঘোর তা আপনি টের পান না বুঝি? তা রামকৃষ্ণ মিশন কি করতে পারে? নাসিরনগরে উপজেলা পরিষদে গিয়ে সরকারি সুরক্ষায় থেকে মৌলভীবৃন্দ বেষ্টিত হয়ে রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকার সম্পাদক বলতে পারেন- 'এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা!' এর চেয়ে বেশী তারা কি করতে পারেন? চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় নিয়ে আনন্দেই তো দিনাতিপাত করছেন, করেই যাবেন। কথা হচ্ছে- তাদের কি দরকার পড়েছে কিছু বলার? মশাই যারা তাদের চর্ব্যচোষ্য জুটিয়ে যাচ্ছে তাদের অস্তিত্বই যখন বিপন্ন তখন তাদের পাশে দাঁড়ানোটা শুধু দায়িত্ব-কর্তব্য না, কৃতজ্ঞতার পর্যায়েও পরে। অবশ্য রামকৃষ্ণ মিশনের ভরণ-পোষণ উঁচুতলার বাবুরা করেন। বাবুদের সাথে বেশ স্বচ্ছ একটা তেলাতেলি ভাব তাদের আছে।
দিনাজপুরে একবার কয়েকঘর হিন্দু বাড়িতে সহীহ আগুন দেবার পর সেই পরিবারগুলোকে তৎক্ষণাৎ আশ্রয় দেয় ইসকন। আমি ইসকনের ভাবাদর্শের কট্টর বিরোধী হলেও তাদের এই সৎসাহস ও সুবিবেচনার জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে সম্মান করি। অপরদিকে রামকৃষ্ণ মিশনের স্থানীয় ব্রাঞ্চ সাহায্যে যায় ঘটনার কয়েকদিন পর। দিনাজপুরের রামকৃষ্ণ মিশন নিজেই একটা দুঃস্থ প্রতিষ্ঠান। তাদের বড়সড় ত্রাণ দেবার সামর্থ্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশে তো আরও বুর্জোয়ানির্ভর কর্তাভজা রামকৃষ্ণ মিশনের ব্রাঞ্চ ছিল, তারা কিছু পাঠাতে পারত না? ঢাকার এক বরেণ্য সন্ন্যাসী বললেন- 'এগুলো পলিটিক্যালি এফেক্টেড এরিয়া। এখানে আমরা গেলে আমাদেরও একটা রাজনৈতিক পরিচয় বানিয়ে দেবে ওরা।' ঘেন্নায় জিভ আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছিল আমার! এরা বিবেকানন্দের অনুগামী?
যে সকল হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিন্দুর অর্থায়নে চলে অথচ হিন্দুর বেদনায় সামান্যতম সহানুভূতি দেখায় না, এদের অবিলম্বে বর্জন করুন। আমাদের প্রভূত আধ্যাত্মিকতা আছে। এখন অস্তিত্ব বাঁচানোটাই ফরজ! বাংলাদেশে স্বামী অক্ষরানন্দজী এবং স্বামী অমৃতত্ত্বানন্দজীর পর বিবেকানন্দের সুরে কথা বলার মত আর কোন সন্ন্যাসী দেখা যায়নি। এখন যারা আছেন এদের কেউ কেউ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, কেউ কেউ মারাত্মক কপটাচারী, অনেকের কাছে ভীরুতাই ধর্মবিশেষ, যারা ভীরুতাকে সহনীয়তা বলে; আবার একদল নির্বিঘ্নচিত্ত সদাচারী কুলীন বৈরাগী- কার ঠাকুরঘরে আগুন লাগল আমার জেনে কাজ কি, আমি কলাটা পেলেই হল! এরা কোনদিন আপনার আমার মত সাধারণ মানুষের জন্য টু-শব্দ করে না। চলুন তাদের সাষ্টাঙ্গ পেন্নাম ঠুকে আসি!
ভারতে রামকৃষ্ণ মিশনের গোড়া তো বাংলা। বাংলায় রামকৃষ্ণ মিশন কখনো স্পেসিফিক্যালি হিন্দুর হয়ে কথা বলে? বলে না। সর্বধর্মসমণ্বয়ের কথা বলে। আমি এই থিওরিকে লজিক্যালি সাপোর্টও করি। তবে সর্বধর্ম সমণ্বয়ের কথা বলব আর এদিকে স্বধর্মের লোক অত্যাচারে মরবে- তা নিয়ে কিচ্ছুটি বলব না- এমন আদর্শ কি বিবেকানন্দের? নাকি ঠাকুর রামকৃষ্ণের? নাকি বেদান্তের? এখানেও একই লজিক- রামকৃষ্ণ মিশন রাজনীতির বলয়ে যাবে না? হা-হতোস্মি মহারাজ! ন্যায়ের কথা যদি রাজনীতিতেই পড়ে, সত্য যদি একটা দলের দিকেও যায়- তবে তা বলা কি অধর্ম? আবু-পাহাড়ে বসে যে বিবেকানন্দ বৃটিশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবের কল্পনা করতে পারেন, আপনি সেই বিবেকানন্দকে চেনেন তো? সন্ন্যাসী ঢাল তলোয়ার না ধরুক, অন্যায়ের বিপক্ষে দুটো মৃদু বচন তো দিতে পারেন!
পশ্চিমবঙ্গেও হিন্দু সংগঠনগুলো পিঠ-বাঁচানো, গা-বাঁচানো নীতিতেই চলে। আজকে আমার লেখায় পুষ্পেন্দু বাবু কমেন্টে লিখলেন- নগর পুড়লে দেবালয় রক্ষা পায় না। এসব পেসাদভোজী ভজগোবিন্দ আর 'জয় ঠাকুর' 'জয় গুরুর' দল কবে এই সত্যকে অনুভব করবে?
(c)বিশাখদত্ত দত্ত
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন