বিগত কয়েক দশক ধরে ভাঙছে একান্তবর্তী পরিবার৷ নারীশিক্ষার প্রসার ঘটছে – কাজের জন্য বাইরে পা রেখেছে মেয়েরা৷ ধীরে ধীরে প্রকৃত অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছে মেয়েরা৷ তাই আগের মতো আজ আর বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য কোনও ছুতো খুঁজতে হয় না মেয়েদের ৷শুধু জামাই ষষ্ঠী কেন, যে কোনও দিনই চাইলে এখন বিবাহিত মেয়েরা একবার বাবা -মাকে দেখে আসতে পারে ৷ শুধু তাই নয় কোনও কোনও ক্ষেত্রে কন্যা সন্তানই তাদের বৃদ্ধ বাবা মায়ের দেখা শোনার ভার তুলে নিচ্ছে হয়তো সে বাবা মায়ের একমাত্র কন্যা সন্তান। ৷সেক্ষেত্রে কন্যার গৃহে থাকার সুবাদে তো প্রতিদিনই জামাইবাবাজির দর্শন পাচ্ছেন শাশুড়ি মা৷ যা দেখে কেউ কেউ মনে করেন জামাই ষষ্ঠী প্রথাটাই আজ অপ্রাসঙ্গিক ৷ কিন্তু প্রতিদিন জামাই দর্শন হলেও তার মধ্য থেকেই একটা বিশেষ দিনে জামাইকে একটু আলাদা করে দেখতে চাওয়ার শখ তো কোন শাশুড়ি মায়ের হতে পারে ৷তার আগের প্রজন্মের মানুষেরা যা শিখিয়েছেন স্থান, কাল, পাত্র বদলে গেলেও তিনি যদি নতুন আঙ্গিকে সেই ধারারাহিকতা বজায় রাখতে চান তাহলে বঙ্গজীবনে জামাই ষষ্ঠী রয়ে যাবে৷
ষষ্ঠী পুজোয় ব্রতীরা সকালে চান করে উপোস থেকে নতুন পাখার ওপর আম্রপল্লব, আমসহ পাঁচফল আর ১০৮টি দুর্বাবাঁধা আঁটি দিয়ে পূজার উপকরণের সঙ্গে রাখে। করমচাসহ পাঁচ-সাত বা নয় রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার ওপর সাজিয়ে পুজোর সামনে রাখা হয়। ধান এ পুজোর সমৃদ্ধির প্রতীক, বহু সন্তানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং দুর্বা চিরসবুজ, চিরসতেজ বেঁচে থাকার ক্ষমতার অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ দুর্বা হল দীর্ঘ জীবনের প্রতীক। শাশুড়ি-মেয়ে-জামাতার দীর্ঘায়ু কামনা করে ধানদুর্বা দিয়ে উলুধ্বনিসহ বরণ করেন। প্রবাদ আছে, যম-জামাই ভাগনা-কেউ নয় আপনা। কারণ যম মানুষের মৃত্যুর দূত। জামাই এবং ভাগনা অন্যের বাড়ির উত্তরাধিকারী। তাদের কখনও নিজের বলে দাবি করা যায় না। এদের খুশি করার জন্য মাঝে মাঝেই আদর আপ্যায়ন করে খাওয়াতে হয়। তাই মেয়ে যাতে সুখে-শান্তিতে তার দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারে এজন্য জ্যৈষ্ঠ মাসে নতুন জামাইকে আদর করে বাড়িতে ডেকে এনে আম-দুধ খাইয়ে পরিতৃপ্ত করে। আশীর্বাদস্বরূপ উপহারসমাগ্রীও প্রদান করে।
গ্রামীণ জীবনে এখনো এর সার্বজনীন আবহ দেখতে পাওয়া যায়। জামাই ষষ্ঠীর সমস্ত আয়োজন করা হয় বাড়ির জামাইকে ঘিরে। জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই আচারটি পালন করা হয় বলেই এর নাম জামাই ষষ্ঠী। অবশ্য এর অন্য নাম অরণ্য ষষ্ঠী। পুজো হয়ে থাকে ষষ্ঠী দেবীরও । ষষ্ঠী দেবী মাতৃত্বের প্রতীক। সে কারণে ষষ্ঠী প্রতিমাতে দেখা যায় তিনি কোলে সন্তান ধারণ করে আছেন। ষষ্ঠী মাতার কাছে জামাইদের জন্য দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। ষষ্ঠী পুজোর আরেকটি বিশিষ্ট দিক হচ্ছে বেড়াল সেবা । বাড়ির গৃহপালিত বেড়ালদের এদিন খুব সেবা দেওয়া হয়। কারণ বেড়াল ষষ্ঠী দেবীর বাহন। প্রথমে জামাইরা পরে বাচ্চারা এবং সবশেষে বাড়ির বাকি সদস্যরা ষষ্টির জল নেয়। দূর্বা ঘাস জলে ডুবিয়ে শরীরে ছোঁয়ানো হয়। তারপর জলে ডোবানো পাখার বাতাস করতে করতে ‘ষাট ষাট, বালাই ষাট’ মন্ত্র আওড়ানো, সবশেষে দূর্বা পুঁটুলির চাল আর গামলাতে ডোবানো ফল হাতে দিয়ে প্রাথমিক ষষ্ঠীর ইতি টানা হয়। পরে শ্বাশুড়িরা মেয়ে জামাইকে নিয়ে মন্দিরে যান তাদের ভবিষ্যৎ মঙ্গল কামনার্থে।
এর পরের পর্বটি জামাইদের জন্য খুবই লোভনীয়। এ পর্বে দুপুরের ভুড়িভোজ, সাত রকমের ভাজা, শুক্তো, মুগের ডালের মুড়িঘন্ট, বিভিন্ন মাছের বাহারি রকমের পদ, কচি পাঁঠার ঝোল, চাটনি,দই-মিষ্টি, আম কাঁঠাল আরো কতো কি! সকাল থেকে শ্বাশুড়ি মায়েরা এতোসব রান্না করেন। নিজেরা কিন্তু উপবাস থাকেন কেউ কেউ আবার নিরামিশ খান। সনাতন ধর্মাবলম্বী মতে, এই পার্বণ মূলত পরিবেশ রক্ষার্থে গাছকে দেবতা বিশ্বাসে পুজো করা। কেননা এ আয়োজনে বিবিধ গাছের ডাল যেমন দরকার হয় তেমনি এ দিনে সনাতন পরিবারে থাকে বাহারি মৌসুমি ফল। কিন্তু এখন সময়ের পরিক্রমায় ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এ পার্বনের মূল উদ্দেশ্য, শতবর্ষী ষষ্ঠী গাছ আর পুজোর জন্য পাওয়া যায় না। জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝি, যখন আম-কাঁঠালের গন্ধে চারদিক সুবাসিত, তখনই জামাই ষষ্ঠী ব্রতটি হওয়ায় এর হাওয়া ধর্মীয় গন্ডি পেরিয়ে প্রভাব ফেলে গ্রামীণ সাধারণ জনজীবনেও। এ সময় শ্বশুর বাড়িতে জামাইরা আমন্ত্রণ পান।। ঠিক পুজোর মত না হলেও বাড়িতে জামাই আদরের ঘটা পড়ে যায়।
তবে জামাইবাবাজী খালি হাতে শ্বশুরবাড়ি আসেনা এই বিশেষ দিনটিতে, যতই আত্মভোলা হোক না কেন, শাশুড়ি মায়ের জন্য শাড়ী, ঝুড়ি ভর্তি আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, পান-সুপুরী, কানকো নাড়ানো রুই-কাতল মাছ, রসগোল্লার হাঁড়ি, ছানার সন্দেশ সাথে আনতে ভোলেনা। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেও জ্যৈষ্ঠ মাসে জামাতাকে বাড়িতে এনে আম-দুধ খাওয়ানোর রেওয়াজ রয়েছে। তবে জামাই ষষ্ঠীর উপাচারগুলো সব অঞ্চলে এক রকম নয়। অঞ্চল ভেদে এর ভিন্নতা রয়েছে।
__আনন্দবাজার পত্রিকা হতে সংগৃহিত
ষষ্ঠী পুজোয় ব্রতীরা সকালে চান করে উপোস থেকে নতুন পাখার ওপর আম্রপল্লব, আমসহ পাঁচফল আর ১০৮টি দুর্বাবাঁধা আঁটি দিয়ে পূজার উপকরণের সঙ্গে রাখে। করমচাসহ পাঁচ-সাত বা নয় রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার ওপর সাজিয়ে পুজোর সামনে রাখা হয়। ধান এ পুজোর সমৃদ্ধির প্রতীক, বহু সন্তানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং দুর্বা চিরসবুজ, চিরসতেজ বেঁচে থাকার ক্ষমতার অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ দুর্বা হল দীর্ঘ জীবনের প্রতীক। শাশুড়ি-মেয়ে-জামাতার দীর্ঘায়ু কামনা করে ধানদুর্বা দিয়ে উলুধ্বনিসহ বরণ করেন। প্রবাদ আছে, যম-জামাই ভাগনা-কেউ নয় আপনা। কারণ যম মানুষের মৃত্যুর দূত। জামাই এবং ভাগনা অন্যের বাড়ির উত্তরাধিকারী। তাদের কখনও নিজের বলে দাবি করা যায় না। এদের খুশি করার জন্য মাঝে মাঝেই আদর আপ্যায়ন করে খাওয়াতে হয়। তাই মেয়ে যাতে সুখে-শান্তিতে তার দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারে এজন্য জ্যৈষ্ঠ মাসে নতুন জামাইকে আদর করে বাড়িতে ডেকে এনে আম-দুধ খাইয়ে পরিতৃপ্ত করে। আশীর্বাদস্বরূপ উপহারসমাগ্রীও প্রদান করে।
গ্রামীণ জীবনে এখনো এর সার্বজনীন আবহ দেখতে পাওয়া যায়। জামাই ষষ্ঠীর সমস্ত আয়োজন করা হয় বাড়ির জামাইকে ঘিরে। জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই আচারটি পালন করা হয় বলেই এর নাম জামাই ষষ্ঠী। অবশ্য এর অন্য নাম অরণ্য ষষ্ঠী। পুজো হয়ে থাকে ষষ্ঠী দেবীরও । ষষ্ঠী দেবী মাতৃত্বের প্রতীক। সে কারণে ষষ্ঠী প্রতিমাতে দেখা যায় তিনি কোলে সন্তান ধারণ করে আছেন। ষষ্ঠী মাতার কাছে জামাইদের জন্য দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। ষষ্ঠী পুজোর আরেকটি বিশিষ্ট দিক হচ্ছে বেড়াল সেবা । বাড়ির গৃহপালিত বেড়ালদের এদিন খুব সেবা দেওয়া হয়। কারণ বেড়াল ষষ্ঠী দেবীর বাহন। প্রথমে জামাইরা পরে বাচ্চারা এবং সবশেষে বাড়ির বাকি সদস্যরা ষষ্টির জল নেয়। দূর্বা ঘাস জলে ডুবিয়ে শরীরে ছোঁয়ানো হয়। তারপর জলে ডোবানো পাখার বাতাস করতে করতে ‘ষাট ষাট, বালাই ষাট’ মন্ত্র আওড়ানো, সবশেষে দূর্বা পুঁটুলির চাল আর গামলাতে ডোবানো ফল হাতে দিয়ে প্রাথমিক ষষ্ঠীর ইতি টানা হয়। পরে শ্বাশুড়িরা মেয়ে জামাইকে নিয়ে মন্দিরে যান তাদের ভবিষ্যৎ মঙ্গল কামনার্থে।
এর পরের পর্বটি জামাইদের জন্য খুবই লোভনীয়। এ পর্বে দুপুরের ভুড়িভোজ, সাত রকমের ভাজা, শুক্তো, মুগের ডালের মুড়িঘন্ট, বিভিন্ন মাছের বাহারি রকমের পদ, কচি পাঁঠার ঝোল, চাটনি,দই-মিষ্টি, আম কাঁঠাল আরো কতো কি! সকাল থেকে শ্বাশুড়ি মায়েরা এতোসব রান্না করেন। নিজেরা কিন্তু উপবাস থাকেন কেউ কেউ আবার নিরামিশ খান। সনাতন ধর্মাবলম্বী মতে, এই পার্বণ মূলত পরিবেশ রক্ষার্থে গাছকে দেবতা বিশ্বাসে পুজো করা। কেননা এ আয়োজনে বিবিধ গাছের ডাল যেমন দরকার হয় তেমনি এ দিনে সনাতন পরিবারে থাকে বাহারি মৌসুমি ফল। কিন্তু এখন সময়ের পরিক্রমায় ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এ পার্বনের মূল উদ্দেশ্য, শতবর্ষী ষষ্ঠী গাছ আর পুজোর জন্য পাওয়া যায় না। জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝি, যখন আম-কাঁঠালের গন্ধে চারদিক সুবাসিত, তখনই জামাই ষষ্ঠী ব্রতটি হওয়ায় এর হাওয়া ধর্মীয় গন্ডি পেরিয়ে প্রভাব ফেলে গ্রামীণ সাধারণ জনজীবনেও। এ সময় শ্বশুর বাড়িতে জামাইরা আমন্ত্রণ পান।। ঠিক পুজোর মত না হলেও বাড়িতে জামাই আদরের ঘটা পড়ে যায়।
তবে জামাইবাবাজী খালি হাতে শ্বশুরবাড়ি আসেনা এই বিশেষ দিনটিতে, যতই আত্মভোলা হোক না কেন, শাশুড়ি মায়ের জন্য শাড়ী, ঝুড়ি ভর্তি আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, পান-সুপুরী, কানকো নাড়ানো রুই-কাতল মাছ, রসগোল্লার হাঁড়ি, ছানার সন্দেশ সাথে আনতে ভোলেনা। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেও জ্যৈষ্ঠ মাসে জামাতাকে বাড়িতে এনে আম-দুধ খাওয়ানোর রেওয়াজ রয়েছে। তবে জামাই ষষ্ঠীর উপাচারগুলো সব অঞ্চলে এক রকম নয়। অঞ্চল ভেদে এর ভিন্নতা রয়েছে।
__আনন্দবাজার পত্রিকা হতে সংগৃহিত
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন