বনের প্রাকৃতিক পরিবেশে রাম, সীতাদেবী ও লক্ষণের দিন কেটে যাছিল্ল । অনেক মুনি ঋষি সন্ত রোজ ভগবান রাম সীতার দর্শন করতে আসতেন । অনেক আধ্যাত্মিক তত্ত্ব আলোচনা হতো। বনের পশুগুলি যেনো এই সময়ে ভগবান রাম, সীতাদেবীকে খুব আপন করে নিয়েছিলেন । নির্ভয়ে বিচরণ করতে লাগলেন । সম্পূর্ণ অন্য এক পরিবেশ । সীতাদেবীকে এত প্রসন্ন দেখে ভগবান রাম খুশী হলেন। তিনি ভেবেছিলেন মিথিলার রাজকুমারী- এত সুখ ঐশ্বর্য বৈভবে লালিতা পালিতা- হয়তো বনে এসে তিনি খুবুই রোদন করবেন। কারন এই স্থানে রাজকীয় সুখ, রাজকীয় ঐশ্বর্য , শত দাস দাসী, গমনের জন্য স্বর্ণরথ , প্রচণ্ড দাবাদাহে পথ চলবার জন্য স্বর্ণছত্র , চরণে কোমল পাদুকা কিছুই নেই । সীতাদেবী একা ঘর সংসারের কাজ চালান । সীতাদেবী এত নিখুত ভাবে ঘর সংসারের দায়িত্ব পালন করেন কে বলবে তিনি এক রাজার দুহিতা, অতি যত্নে লালিতা। ছড়া দিয়ে কুটির লেপা, খড়ের মার্জনী দ্বারা গৃহ আঙিনা পরিষ্কার, কলসিতে গোদাবরীর জল বয়ে আনা, বৃক্ষে জল সিঞ্চন, সকলকে আহার বিতরণ করা। নিস্কালন্ত ভাবে সকল কর্ম নিয়মানুযায়ী করে যাচ্ছেন । মুখে কোন না নেই, আলস্য নেই। মনে হতে লাগলো অরণ্যের এই কুটিরে যেনো এক রত্নের ন্যায় প্রভাবশালী উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় সীতাদেবী অবস্থান করছেন । যিনি রাজার গৃহে পলান্ন , মিষ্টান্ন, হালুয়া- পুরি নিত্য সেবা নিতেন, তিনি সামান্য ফলমূলেই সন্তুষ্ট । যেনো বিধাতা সর্ব উত্তম সুস্বাদু রস ফলমূলে স্থাপিত করে দিয়েছেন । যিনি গজমতী হার, মণি মুক্তা বসানো বালা, স্বর্ণ কুণ্ডল ধারন করতেন তিনি বনের সামান্য পুস্পমালার সাজেই এত খুশী হচ্ছেন । রামচন্দ্র মনে সান্ত্বনা পেলেন । চারিদিকে কি সুন্দর পরিবেশ। হেমন্ত এর আগমন ঘটেছে। গুবাক, নারকেল, খর্জূর, আমলকী , পনস, আম্র , শাল, সেগুন, চন্দন বৃক্ষের রাশি চতুর্দিকে ।
রাক্ষস খড় আর দূষণের প্রেরিত মায়াবী রাক্ষসেরা অবগত হয়ে খড় ও দূষণ কে বলল- “রাক্ষসরাজ ! অযোধ্যার রাজকুমার শ্রীরাম সস্ত্রীক ও ভ্রাতা লক্ষণ সহিত অরণ্যে এসেছেন । এরাই সেই বীর যারা মারীচকে শত যোজন দূরে নিক্ষেপ করেছে। এরাই তাড়কার ন্যায় বীরাঙ্গনা রাক্ষসী ও সুবাহু রাক্ষসকে সংহার করেছে। এরাই বিরাধ বধ করেছে। আপনি লঙ্কায় রক্ষরাজ দশাননের নিকট সংবাদ প্রেরন করুন। ” খড় ও দূষণ অট্টহাস্য করে বলল- “ঐ দুই মানবের জন্য ভ্রাতা দশগ্রীবের আসবার প্রয়োজন নেই। আমার আশ্রিত চতুর্দশ রাক্ষস নরমাংসভোজী । তাহারাই ঐ দুই যুবককে হত্যা করে আহার করুক। আর পরম রূপসী রামচন্দ্রের পত্নীকে আমরা বন্দী করে লঙ্কায় প্রেরণ করবো, সে ভ্রাতা দশাননের পত্নী হবার উপযুক্ত। দশাননের মতো বীরকে অবশ্যই সেই সুন্দরী বিবাহ করবে।” এইভাবে রাক্ষসেরা নানা অলীক কল্পনাতে হাস্য করতে লাগলো। অমরাবতীর দেবতাবৃন্দ চাইছিলো খড় ও দূষণ শ্রীরামের নিকটে যুদ্ধ করতে গমন করুক। সেখান হতে একটি রাক্ষসও বেঁচে আসবে না। সবকটা প্রাণ হারাবে । তখনই দেবশক্তির জয় হবে। রাবণের সাঙ্গপাঙ্গ সকলেই নিধন হলে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা হবে। অনার্য সংস্কৃতি লুপ্ত হবে । অপরদিকে বনের কথা শোনা যাক । বিবিধ সুগন্ধি পুস্প দ্বারা সীতাদেবী মাল্য রচনা করেছেন । প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য সেই পুস্পমালায় একত্রিত হয়েছিলো। তার সুবাস স্বর্গের পারিজাত বৃক্ষের পুস্পকেও হার মানিয়েছিলো । দিব্য চন্দনের প্রলেপ দ্বারা সীতাদেবী সেই মাল্যগুলিকে সৌরভিত করেছিলেন । সন্ধ্যার পর নির্মল আকাশে চন্দোদয় হল। সমগ্র অরণ্য জ্যোৎস্নায় প্লাবিত হল। বড় বড় মহীরুহ গুলো যেনো জ্যোৎস্না প্লাবনে স্নানাদি করলো। শাখায় শাখায় উজ্জ্বল শুভ্র কিরণ ছড়িয়ে পড়লো। নিঃশব্দ গোদাবরী তট, কেবল চন্দ্রালোকে বালুকারাশি চকচক করছিলো, কেবল জলপ্রবাহের শব্দ। চতুর্দিকে জোনাকী পোকার মিটিমিটি আলোক পুঞ্জ জলে উঠে নিভে যাছিল্ল। শাখায় শাখায় সুগন্ধি পুস্প শোভিত, তাতে জোনাকীর দল স্বীয় আলো দ্বারা শোভা বর্ধন করছিলো। যেনো আকাশের নক্ষত্রমণ্ডলী ধরিত্রীর বুকে নেমে আসছিলো ।
শ্রীরাম ও সীতা সেই সুন্দর নিশিতে বন মাঝে ছিলেন। উভয়ে উভয়ের হৃদয় যেনো ধারন করেছিলেন। মনের ভাব মুখ হতে নিঃসৃত হবার পূর্বেই বুঝে নিয়েছিলেন । জ্যোৎস্না আলোকে সীতাদেবীর মুখমণ্ডলে এক অকৃত্রিম সৌন্দর্য শোভা পাছিল্ল। তা দেখে যেনো মাঝে মাঝে রোহিনীপতি নিশানাথ মেঘ মণ্ডলের মাঝে নিজেকে লুক্কায়িত করেছিলেন । কোটি চন্দ্রের রূপকেও লজ্জা দেবে জনকদুহিতার রূপ । একে অপরকে পুস্পমাল্য চন্দনের প্রলেপ দ্বারা সুসজ্জিত করলেন । পুস্পসাজে উভয়ের রূপ শতগুণ বর্ধিত হয়েছিলো। সুগন্ধি চন্দন এক দিব্য সুগন্ধ প্রাপ্ত করলো উভয়ের গাত্রে অবস্থান করে । পুস্প, চন্দনের সুবাসে চতুর্দিকে আমোদিত করলো। উভয়ের মধ্যে দিব্য ঐশ্বরিক ভাব ফুটে ফুটলো । রামচন্দ্রএর মধ্যে বিষ্ণু ভাব, দেবী সীতার মধ্যে লক্ষ্মীর ভাব ফুটে উঠলো । ভগবান রাম বললেন- “হে মধুমুখী সীতা! সময় এসেছে আমার তোমার বিচ্ছেদের। পূর্বে নারদ মুনি আমাকে যে অভিশাপ দিয়েছিলেন, তা এখন কার্যকারী হবে। মনে আছে পূর্বে আমাদের বিবাহ লগ্ন চন্দ্রদেব ভঙ্গ করেছিলো। দেবতাদের ইচ্ছা আমার তোমার বিচ্ছেদ হোক, নাহলে লঙ্কার পতন হবে না। রাবণের মৃত্যু হবে না।” দেবী সীতা বললেন- “হে ভগবান! আমি আপনি এক। লৌকিক দৃষ্টিতে এই বিচ্ছেদ। আপনার মধ্যে আমি, আমার মধ্যে আপনি সদা বিদ্যমান। আমিও বিস্মৃত হই নি, বেদবতী রূপে আমি রাবণকে কি অভিশাপ প্রদান করেছিলাম । হে নাথ! এই বিচ্ছেদ কে সৃষ্টির কল্যাণে আমি মস্তকে গ্রহণ করলাম। কারন রাবণের ধ্বংস না হলে অধর্মের রাজত্ব চলতেই থাকবে।” বলা হয় এরপর রামচন্দ্র আসল সীতাদেবীকে অগ্নি দেবতার কাছে রেখে সুরক্ষার দায়িত্ব প্রদান করেন। একজন নকল সীতাদেবীকে আনয়ন করেন। রাবণ একেই হরণ করেছিলো ।
( ক্রমশঃ )
রাক্ষস খড় আর দূষণের প্রেরিত মায়াবী রাক্ষসেরা অবগত হয়ে খড় ও দূষণ কে বলল- “রাক্ষসরাজ ! অযোধ্যার রাজকুমার শ্রীরাম সস্ত্রীক ও ভ্রাতা লক্ষণ সহিত অরণ্যে এসেছেন । এরাই সেই বীর যারা মারীচকে শত যোজন দূরে নিক্ষেপ করেছে। এরাই তাড়কার ন্যায় বীরাঙ্গনা রাক্ষসী ও সুবাহু রাক্ষসকে সংহার করেছে। এরাই বিরাধ বধ করেছে। আপনি লঙ্কায় রক্ষরাজ দশাননের নিকট সংবাদ প্রেরন করুন। ” খড় ও দূষণ অট্টহাস্য করে বলল- “ঐ দুই মানবের জন্য ভ্রাতা দশগ্রীবের আসবার প্রয়োজন নেই। আমার আশ্রিত চতুর্দশ রাক্ষস নরমাংসভোজী । তাহারাই ঐ দুই যুবককে হত্যা করে আহার করুক। আর পরম রূপসী রামচন্দ্রের পত্নীকে আমরা বন্দী করে লঙ্কায় প্রেরণ করবো, সে ভ্রাতা দশাননের পত্নী হবার উপযুক্ত। দশাননের মতো বীরকে অবশ্যই সেই সুন্দরী বিবাহ করবে।” এইভাবে রাক্ষসেরা নানা অলীক কল্পনাতে হাস্য করতে লাগলো। অমরাবতীর দেবতাবৃন্দ চাইছিলো খড় ও দূষণ শ্রীরামের নিকটে যুদ্ধ করতে গমন করুক। সেখান হতে একটি রাক্ষসও বেঁচে আসবে না। সবকটা প্রাণ হারাবে । তখনই দেবশক্তির জয় হবে। রাবণের সাঙ্গপাঙ্গ সকলেই নিধন হলে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা হবে। অনার্য সংস্কৃতি লুপ্ত হবে । অপরদিকে বনের কথা শোনা যাক । বিবিধ সুগন্ধি পুস্প দ্বারা সীতাদেবী মাল্য রচনা করেছেন । প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য সেই পুস্পমালায় একত্রিত হয়েছিলো। তার সুবাস স্বর্গের পারিজাত বৃক্ষের পুস্পকেও হার মানিয়েছিলো । দিব্য চন্দনের প্রলেপ দ্বারা সীতাদেবী সেই মাল্যগুলিকে সৌরভিত করেছিলেন । সন্ধ্যার পর নির্মল আকাশে চন্দোদয় হল। সমগ্র অরণ্য জ্যোৎস্নায় প্লাবিত হল। বড় বড় মহীরুহ গুলো যেনো জ্যোৎস্না প্লাবনে স্নানাদি করলো। শাখায় শাখায় উজ্জ্বল শুভ্র কিরণ ছড়িয়ে পড়লো। নিঃশব্দ গোদাবরী তট, কেবল চন্দ্রালোকে বালুকারাশি চকচক করছিলো, কেবল জলপ্রবাহের শব্দ। চতুর্দিকে জোনাকী পোকার মিটিমিটি আলোক পুঞ্জ জলে উঠে নিভে যাছিল্ল। শাখায় শাখায় সুগন্ধি পুস্প শোভিত, তাতে জোনাকীর দল স্বীয় আলো দ্বারা শোভা বর্ধন করছিলো। যেনো আকাশের নক্ষত্রমণ্ডলী ধরিত্রীর বুকে নেমে আসছিলো ।
শ্রীরাম ও সীতা সেই সুন্দর নিশিতে বন মাঝে ছিলেন। উভয়ে উভয়ের হৃদয় যেনো ধারন করেছিলেন। মনের ভাব মুখ হতে নিঃসৃত হবার পূর্বেই বুঝে নিয়েছিলেন । জ্যোৎস্না আলোকে সীতাদেবীর মুখমণ্ডলে এক অকৃত্রিম সৌন্দর্য শোভা পাছিল্ল। তা দেখে যেনো মাঝে মাঝে রোহিনীপতি নিশানাথ মেঘ মণ্ডলের মাঝে নিজেকে লুক্কায়িত করেছিলেন । কোটি চন্দ্রের রূপকেও লজ্জা দেবে জনকদুহিতার রূপ । একে অপরকে পুস্পমাল্য চন্দনের প্রলেপ দ্বারা সুসজ্জিত করলেন । পুস্পসাজে উভয়ের রূপ শতগুণ বর্ধিত হয়েছিলো। সুগন্ধি চন্দন এক দিব্য সুগন্ধ প্রাপ্ত করলো উভয়ের গাত্রে অবস্থান করে । পুস্প, চন্দনের সুবাসে চতুর্দিকে আমোদিত করলো। উভয়ের মধ্যে দিব্য ঐশ্বরিক ভাব ফুটে ফুটলো । রামচন্দ্রএর মধ্যে বিষ্ণু ভাব, দেবী সীতার মধ্যে লক্ষ্মীর ভাব ফুটে উঠলো । ভগবান রাম বললেন- “হে মধুমুখী সীতা! সময় এসেছে আমার তোমার বিচ্ছেদের। পূর্বে নারদ মুনি আমাকে যে অভিশাপ দিয়েছিলেন, তা এখন কার্যকারী হবে। মনে আছে পূর্বে আমাদের বিবাহ লগ্ন চন্দ্রদেব ভঙ্গ করেছিলো। দেবতাদের ইচ্ছা আমার তোমার বিচ্ছেদ হোক, নাহলে লঙ্কার পতন হবে না। রাবণের মৃত্যু হবে না।” দেবী সীতা বললেন- “হে ভগবান! আমি আপনি এক। লৌকিক দৃষ্টিতে এই বিচ্ছেদ। আপনার মধ্যে আমি, আমার মধ্যে আপনি সদা বিদ্যমান। আমিও বিস্মৃত হই নি, বেদবতী রূপে আমি রাবণকে কি অভিশাপ প্রদান করেছিলাম । হে নাথ! এই বিচ্ছেদ কে সৃষ্টির কল্যাণে আমি মস্তকে গ্রহণ করলাম। কারন রাবণের ধ্বংস না হলে অধর্মের রাজত্ব চলতেই থাকবে।” বলা হয় এরপর রামচন্দ্র আসল সীতাদেবীকে অগ্নি দেবতার কাছে রেখে সুরক্ষার দায়িত্ব প্রদান করেন। একজন নকল সীতাদেবীকে আনয়ন করেন। রাবণ একেই হরণ করেছিলো ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন