কিছুদিন সেখানে থেকে রামচন্দ্র ঠিক করলেন এই স্থান ত্যাগ করবেন। কারন এখান থেকে অযোধ্যা খুব একটা দূরে না । তাই নিষাদ রাজ্য থেকে বিদায় চাইলেন । রামচন্দ্রের বন্ধু, গুহক ত কিছুতেই ছাড়বে না। নিষাদেরা কিছুতেই যেতে দেবেন না। সকলে রোদন করতে লাগলো। রামচন্দ্রকে এইস্থানেই বণে থেকে যেতে অনেক কাকুতি মিনতি জানালো। কিন্তু রাক্ষস বধ করতে হলে আরোও গভীরে যেতে হবে। সেখানে রাক্ষসদের হাতে নিপীড়িত লোকেরা ক্রমাগত যে তাঁকে আহ্বান জানাচ্ছেন । একবার রামচন্দ্র লক্ষণ কে বললেন- “ভ্রাতা। তুমি এই স্থান হতেই অযোধ্যা প্রস্থান করো। দেখেছো তো অরণ্যে কি নিদারুন কষ্ট ।” লক্ষণ বলল- “এ হয় না দাদা! যদি ফিরতেই হতো তবে আপনার সাথে কেন এলাম? অরণ্যে চতুর্দশ বৎসর আপনার ও বৌঠানের সেবা সুরক্ষার ব্রত গ্রহণ করেছি। চতুর্দশ বৎসর সমাপন হলে আপনার ও বৌঠানের সহিত আমি অযোধ্যায় ফিরবো। এখন কোনোমতেই নয়।” গুহক বলল- “মিত্র! তোমার বিহনে আমরা বড়ই দুঃখিত হব। তোমার যখন এই ইচ্ছা তবে তাই হবে। আমি নিজে নৌকা চালনা করে তোমাকে গঙ্গা পার করে দেবো। ” নিষাদ রাজ্য শোকে মগ্ন হল। সকল নিষাদ দের চোখের মণি হয়ে গিয়েছিলেন ভগবান। এখন ভগবানকে বিদায় দিতে সকলের নয়ন বর্ষার ধারার ন্যায় সিক্ত হয়েছিলো । অবিরত অশ্রু বিসর্জনে সকলে বিদায় জানালেন । অপরদিকে মাতা গঙ্গা দেবী এই সংবাদ পেলেন যে ভগবান রামচন্দ্র আসছেন । ভগবতী জাহ্নবীর অপর নাম “বিষ্ণুপদী” । ব্রহ্মার কমণ্ডলু নিবাসিনী ভগবতী গঙ্গার আশ্রয় স্থল ভগবান হরির পাদপদ্ম । সেই বৈকুণ্ঠাধিপতি পূর্ণব্রহ্ম নারায়ণ , আজ রাম রূপে আসছেন।
গঙ্গার ধারায় যেনো চাঞ্চল্য প্রকাশ পেলো। শত শত লহরী সমানে কিনারে ভেসে আসতে লাগলো। যেনো গঙ্গা দেবী শত হস্ত প্রসারিত করে বারংবার সেই ঘাটের পথ তীব্র বেগে ধৌত করে দিচ্ছেন। মাঝি, জেলে তপস্যারত মুনি ঋষিরা ভাবল এত সুন্দর ঝড় বিহীন পরিবেশে গঙ্গায় এত তরঙ্গ কেন ? নবযৌবণা ষোড়োশী যুবতীর ন্যায় চঞ্চলা হয়ে গঙ্গা বারংবার ঘাটের দিকে প্রবাহিত হচ্ছিল্ল। গঙ্গার অমৃতধারায় পদ্মপুস্প যেনো কোথার থেকে ভেসে আসছিলো। সকলে অবাক হল, গঙ্গায় এত পদ্মপুস্প ভাসমান হয়ে আজ কেন আসছে? কেউ বলল- নিশ্চয়ই ভাগীরথীর ধারা আজ ভাঙনে কোনো দীঘিকে সম্মিলিত করেছে, সেই কারণেই এত পদ্মপুস্প নৃত্যের তালে গঙ্গার লহরীতে প্রবাহিত হয়ে আসছে । সেই পদ্মপলাশলোচন সকল মঙ্গলের অধিনায়ক ভগবান রাম আসতে লাগলেন ঘাটের পথে। প্রভুকে দেখে গঙ্গার চঞ্চলতা আগ্রহ এত বৃদ্ধি পেলো মনে হল গঙ্গা এখুনি ঘাট ভেঙ্গে দিক পরিবর্তন করে ফেলবে । ভগবান রাম তখন গঙ্গার সামনে আসলেন। সকলে মিলে ভগবতী সুরেশ্বরী গঙ্গাকে প্রনাম করলেন । বারংবার গঙ্গা দেবী যেনো শত হস্ত প্রকট করে লহরীতে রূপান্তরিত করে পদ্মপুস্প ভাসিয়ে রামচন্দ্রের চরণে প্রণাম জানালেন। যাঁর চরণ স্থাপন মাত্রেই সেখানে স্তবকে স্তবকে পদ্মপুস্প বিকশিত হয়ে ওঠে, তাঁর চরণেই পদ্মপুস্পরাশি শোভা পেতে লাগলো । গঙ্গা দেবীর চঞ্চলতা ও আনন্দ এত প্রকাশ পেলো, সকলে ভাবল আজ নিশ্চয়ই গঙ্গা এই বনভূমি ভাসিয়ে দিক পরিবর্তন করবে । সকলে এখানে গঙ্গা স্নান করলেন । রামচন্দ্র গঙ্গাকে প্রনাম জানিয়ে স্তবস্তুতি করলেন । এবং জানালেন- বনবাস অন্তে এখানে ফিরে তিনি গঙ্গা পূজা করবেন । গঙ্গা দেবী প্রভুর দর্শনে আনন্দ লাভ করলেন । গুহক নিজে নৌকা চালনা করে রাম, লক্ষণ, জানকী দেবীকে গঙ্গা পার করলেন । এরপর তারা এলেন ভরদ্বাজ মুনির আশ্রমে । ভরদ্বাজ মুনি স্বাগত জানালেন। রামচন্দ্রের পূজা করলেন । এখান থেকে রামচন্দ্র নিষাদরাজ বন্ধু গুহক কে বিদায় দিলেন। কথা দিলেন চতুর্দশ বৎসর অন্তে এখানে এসে তিনি সকলের সাথে একাত্ম হবেন ।
রামচন্দ্র এখান থেকে চিত্রকূট যেতে চাইলেন। কদলী বৃক্ষের ভেলা বানিয়ে যমুনা পার হতে লাগলেন । যমুনার কালো জলে বসবাসকারী হিংস্র কুমীর গুলো আজ শান্ত হয়ে ভেলার পাশে এসে ভগবান রামকে দর্শন করতে লাগলেন সকল প্রকার হিংস্রতা ভুলে । সীতা দেবী এতে ভীত হয়েছিলেন । ইন্দ্রদেবতার পুত্র জয়ন্ত , পিতার ন্যায় কিছুটা কামুক স্বভাব লাভ করেছিলো । সীতাদেবীর রূপ লাবণ্য দেখে সে মাতৃভাব বিস্মৃত হয়ে কামুক ভাব প্রাপ্ত করলো। একটি বায়সের রূপে ধরে আসলো। সীতা দেবীকে কাক রূপ ধরে বারবার উত্যক্ত করতে লাগলো। আচর দিতে লাগলো। সীতাদেবী প্রথমে ক্ষমা করলেন, ভাবলেন পশুর বুদ্ধি। কিন্তু সেই কাক কিছুতেই স্তব্ধ হল না। কামুক জয়ন্ত কাক হয়ে সীতাদেবীকে আচর দিতে লাগলে সীতাদেবীর কোমল অঙ্গ দিয়ে রক্তপাত হল। সীতাদেবী রাম, লক্ষণ কে সব জানালেন। রামচন্দ্র সেই কাকের পানে ঐষিক বাণ নিক্ষেপ করলেন । সেই বাণ আসতে দেখে ভয়ে জয়ন্ত পালাতে লাগলো। প্রথমে কৈলাসে গিয়ে ভগবান শিবকে জানালো রক্ষা করতে । ভগবান শম্ভু ক্রোধিত হয়ে বললেন- “তোমার কর্মের ফল ভোগ করো। এই বাণ থেকে কেউ তোমাকে রক্ষা করবে না। দূর হও। তোমার ন্যায় কাম কুক্কুটের স্থান এই কৈলাসে নেই। বিদায় হও, নচেৎ আমি তোমাকে ভস্ম করবো।” জয়ন্ত এরপর ব্রহ্মলোকে গেলো। প্রজাপতি ব্রহ্মা বললেন- “পাপীষ্ঠি ! তুমি জগত জননী লক্ষ্মী দেবীর অবতার সীতামাতাকে উত্যক্ত করেছিলে। তোমায় কেউ বাঁচাতে পারবে না। রামবাণ থেকে কেউ তোমাকে মুক্তি দিতে পারবে না। যেমন পাপ কর্ম করেছো, সেইরূপ ফল ভোগ করো।” জয়ন্ত তখন স্বর্গে গেলো। সেখানে নারদ মুনির কাছে কাকুতি মিনতি করলো। নারদ বললেন- “জয়ন্ত! রামচন্দ্রের বাণ থেকে কেউ তোমাকে নিস্তার দিতে পারবে না। যদি চাও তো এখুনি ভগবান রাম ও মাতা সীতার নিকট ক্ষমা চাও।” জয়ন্ত তখন ক্ষমা চাইলো। রামচন্দ্র , সীতাদেবী ক্ষমা করলেও সেই ঐষিক বাণে কাকরূপধারী জয়ন্তের এক চোখ নষ্ট হয়। সেই থেকে প্রবাদ আছে কাকেদের নাকি এক চোখ অন্ধ।
( ক্রমশঃ )
গঙ্গার ধারায় যেনো চাঞ্চল্য প্রকাশ পেলো। শত শত লহরী সমানে কিনারে ভেসে আসতে লাগলো। যেনো গঙ্গা দেবী শত হস্ত প্রসারিত করে বারংবার সেই ঘাটের পথ তীব্র বেগে ধৌত করে দিচ্ছেন। মাঝি, জেলে তপস্যারত মুনি ঋষিরা ভাবল এত সুন্দর ঝড় বিহীন পরিবেশে গঙ্গায় এত তরঙ্গ কেন ? নবযৌবণা ষোড়োশী যুবতীর ন্যায় চঞ্চলা হয়ে গঙ্গা বারংবার ঘাটের দিকে প্রবাহিত হচ্ছিল্ল। গঙ্গার অমৃতধারায় পদ্মপুস্প যেনো কোথার থেকে ভেসে আসছিলো। সকলে অবাক হল, গঙ্গায় এত পদ্মপুস্প ভাসমান হয়ে আজ কেন আসছে? কেউ বলল- নিশ্চয়ই ভাগীরথীর ধারা আজ ভাঙনে কোনো দীঘিকে সম্মিলিত করেছে, সেই কারণেই এত পদ্মপুস্প নৃত্যের তালে গঙ্গার লহরীতে প্রবাহিত হয়ে আসছে । সেই পদ্মপলাশলোচন সকল মঙ্গলের অধিনায়ক ভগবান রাম আসতে লাগলেন ঘাটের পথে। প্রভুকে দেখে গঙ্গার চঞ্চলতা আগ্রহ এত বৃদ্ধি পেলো মনে হল গঙ্গা এখুনি ঘাট ভেঙ্গে দিক পরিবর্তন করে ফেলবে । ভগবান রাম তখন গঙ্গার সামনে আসলেন। সকলে মিলে ভগবতী সুরেশ্বরী গঙ্গাকে প্রনাম করলেন । বারংবার গঙ্গা দেবী যেনো শত হস্ত প্রকট করে লহরীতে রূপান্তরিত করে পদ্মপুস্প ভাসিয়ে রামচন্দ্রের চরণে প্রণাম জানালেন। যাঁর চরণ স্থাপন মাত্রেই সেখানে স্তবকে স্তবকে পদ্মপুস্প বিকশিত হয়ে ওঠে, তাঁর চরণেই পদ্মপুস্পরাশি শোভা পেতে লাগলো । গঙ্গা দেবীর চঞ্চলতা ও আনন্দ এত প্রকাশ পেলো, সকলে ভাবল আজ নিশ্চয়ই গঙ্গা এই বনভূমি ভাসিয়ে দিক পরিবর্তন করবে । সকলে এখানে গঙ্গা স্নান করলেন । রামচন্দ্র গঙ্গাকে প্রনাম জানিয়ে স্তবস্তুতি করলেন । এবং জানালেন- বনবাস অন্তে এখানে ফিরে তিনি গঙ্গা পূজা করবেন । গঙ্গা দেবী প্রভুর দর্শনে আনন্দ লাভ করলেন । গুহক নিজে নৌকা চালনা করে রাম, লক্ষণ, জানকী দেবীকে গঙ্গা পার করলেন । এরপর তারা এলেন ভরদ্বাজ মুনির আশ্রমে । ভরদ্বাজ মুনি স্বাগত জানালেন। রামচন্দ্রের পূজা করলেন । এখান থেকে রামচন্দ্র নিষাদরাজ বন্ধু গুহক কে বিদায় দিলেন। কথা দিলেন চতুর্দশ বৎসর অন্তে এখানে এসে তিনি সকলের সাথে একাত্ম হবেন ।
রামচন্দ্র এখান থেকে চিত্রকূট যেতে চাইলেন। কদলী বৃক্ষের ভেলা বানিয়ে যমুনা পার হতে লাগলেন । যমুনার কালো জলে বসবাসকারী হিংস্র কুমীর গুলো আজ শান্ত হয়ে ভেলার পাশে এসে ভগবান রামকে দর্শন করতে লাগলেন সকল প্রকার হিংস্রতা ভুলে । সীতা দেবী এতে ভীত হয়েছিলেন । ইন্দ্রদেবতার পুত্র জয়ন্ত , পিতার ন্যায় কিছুটা কামুক স্বভাব লাভ করেছিলো । সীতাদেবীর রূপ লাবণ্য দেখে সে মাতৃভাব বিস্মৃত হয়ে কামুক ভাব প্রাপ্ত করলো। একটি বায়সের রূপে ধরে আসলো। সীতা দেবীকে কাক রূপ ধরে বারবার উত্যক্ত করতে লাগলো। আচর দিতে লাগলো। সীতাদেবী প্রথমে ক্ষমা করলেন, ভাবলেন পশুর বুদ্ধি। কিন্তু সেই কাক কিছুতেই স্তব্ধ হল না। কামুক জয়ন্ত কাক হয়ে সীতাদেবীকে আচর দিতে লাগলে সীতাদেবীর কোমল অঙ্গ দিয়ে রক্তপাত হল। সীতাদেবী রাম, লক্ষণ কে সব জানালেন। রামচন্দ্র সেই কাকের পানে ঐষিক বাণ নিক্ষেপ করলেন । সেই বাণ আসতে দেখে ভয়ে জয়ন্ত পালাতে লাগলো। প্রথমে কৈলাসে গিয়ে ভগবান শিবকে জানালো রক্ষা করতে । ভগবান শম্ভু ক্রোধিত হয়ে বললেন- “তোমার কর্মের ফল ভোগ করো। এই বাণ থেকে কেউ তোমাকে রক্ষা করবে না। দূর হও। তোমার ন্যায় কাম কুক্কুটের স্থান এই কৈলাসে নেই। বিদায় হও, নচেৎ আমি তোমাকে ভস্ম করবো।” জয়ন্ত এরপর ব্রহ্মলোকে গেলো। প্রজাপতি ব্রহ্মা বললেন- “পাপীষ্ঠি ! তুমি জগত জননী লক্ষ্মী দেবীর অবতার সীতামাতাকে উত্যক্ত করেছিলে। তোমায় কেউ বাঁচাতে পারবে না। রামবাণ থেকে কেউ তোমাকে মুক্তি দিতে পারবে না। যেমন পাপ কর্ম করেছো, সেইরূপ ফল ভোগ করো।” জয়ন্ত তখন স্বর্গে গেলো। সেখানে নারদ মুনির কাছে কাকুতি মিনতি করলো। নারদ বললেন- “জয়ন্ত! রামচন্দ্রের বাণ থেকে কেউ তোমাকে নিস্তার দিতে পারবে না। যদি চাও তো এখুনি ভগবান রাম ও মাতা সীতার নিকট ক্ষমা চাও।” জয়ন্ত তখন ক্ষমা চাইলো। রামচন্দ্র , সীতাদেবী ক্ষমা করলেও সেই ঐষিক বাণে কাকরূপধারী জয়ন্তের এক চোখ নষ্ট হয়। সেই থেকে প্রবাদ আছে কাকেদের নাকি এক চোখ অন্ধ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন