বনে বেশ আনন্দে আছেন মাতা সীতাদেবী। একদিনের কথা । এক বৎসর অতিকান্ত হয়েছে। একদিন রাজা দশরথ , সীতাদেবীকে দর্শন দিলেন । সীতাদেবী দশরথের আত্মাকে দেখে প্রনাম জানিয়ে বললেন- “পিতা আপনি কেন বিদেহী অবস্থায়?” দশরথ রাজা বললেন- “পুত্রী! আমি অমৃতলোকে স্থান পেয়েছি। সেখানে জেনেছি তুমি স্বয়ং দেবী হরিপ্রিয়া মাতা কমলা । তোমারই আরাধনা করে বণিক গন। তুমি সম্পদ, ঐশ্বর্যের দেবী। তোমার কৃপায় ভিখারীও চক্রবর্তী সম্রাট হতে পারে। পুত্রী সীতা , তুমি আমাকে বালি দ্বারা পিন্ড প্রদান করো । তোমার পিণ্ড প্রাপ্তি করে আমি তৃপ্ত হবো। তুমি আমার কাছে রামের সমান । ” সীতা দেবী তখন ফল্গু নদী, ব্রাহ্মণ, তুলসী বৃক্ষ, বট বৃক্ষ কে সাক্ষী রেখে দশরথ রাজার নামে বালির পিণ্ড দিলো। সে সময় রাম লক্ষণ সেখানে ছিলো না। পড়ে রামচন্দ্র ফিরে এসে সীতাদেবীর হস্তে বালুকা দেখে বললেন- “জানকী। তুমি বুঝি বালুকা দ্বারা ক্রীড়া করছিলে ?” সীতাদেবী বললেন- “না প্রভু। আপনি যখন ছিলেন না তখন শ্বশুর মহাশয় আমাকে দেখা দিয়ে আমার কাছে বালুকার পিণ্ড চাইছিলেন। তাই দিয়েছি।” রামচন্দ্র ভাবলেন একটু কৌতুক করা যাক। তিনি বললেন- “তাই ? এই ঘটনার সাক্ষী কে? পিতা কেন পুত্রবধূর কাছে পিণ্ড চাইবেন? এই ঘটনার প্রমান কি?” সীতা দেবী বললেন- “চলুন । ফল্গু নদী, ব্রাহ্মণ, তুলসী বৃক্ষ, বট বৃক্ষ সাক্ষী আছেন। আপনি তাহাদিগের নিকট প্রশ্ন করুন!” রামচন্দ্র কে নিয়ে গিয়ে জানকী দেবী ব্রাহ্মণকে বললেন- “হে বিপ্রদেব! বলুন ত আমি পিণ্ড দিয়েছি কিনা। আপনি ত সব দেখেছেন। আমার স্বামীর কাছে যা দেখেছেন তাই ব্যক্ত করুন।” ব্রাহ্মণ বলল- “কই না তো! তুমি আবার কখন পিণ্ড দিলে? আমি তো দেখিনি । কেন মিথ্যে সাক্ষী দিতে আমাকে বলছ? আমি ব্রাহ্মণ বংশীয় । মিথ্যা বলি না। মিথ্যা বলা পাপ।” সীতা দেবী রেগে ব্রাহ্মণকে শাপ দিলেন-
মিথ্যা কৈয়া ব্রাহ্মণ এতেক দিলে তাপ ।
ক্রোধে তনু থর থর , দিনু তোমা শাপ ।।
লক্ষ তঙ্কার দ্রব্য যদি থাকে তব ঘরে ।
ভিক্ষার লাগিয়া যেও দেশ- দেশান্তরে ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
এর মানে যতই ঘরে দ্রব্য থাকুক, ব্রাহ্মণ তবুও ভিক্ষা বা চেয়ে বেড়াবে। এই অভিশাপ কলিযুগে আরোও প্রভাব শালী । প্রমাণ তো আপনারাই নিজ চোখে দেখেন । এরপর সীতাদেবী তুলসীকে বললেন- “হে হরির প্রিয়া বৃন্দারানী। বল ত । আমি পিণ্ড দিয়েছি কিনা? সত্যি বল।” তুলসী বলল- “না আপনি পিণ্ড দেননি । কোথায় দিলেন ? আমি ভগবান হরির পাদপদ্মে বিরাজ করি। মিথ্যা আমি বলবো না। ধর্মে সইবে না।” জানকী দেবী রেগে বললেন- “তুমি হরির পাদপদ্মে থাকো, অথচ তোমার মুখে এমন অসত্য বচন । আমি যদি সত্য হই তবে আমার অভিশাপ অক্ষরে অক্ষরে ফলবে। তোমাকে শাপ দেবো।”
কথা শুনি জানকীর জন্মে মনস্তাপ ।
যা রে যা তুলসী আমি তোরে দিনু শাপ ।।
এত দুঃখ দিলি তুই আমার অন্তরে ।
আভূমি জন্মিও তুমি হৈয়া সর্বত্তরে ।।
ক্রোধ ভরে সীতা দেবী কহেন এমন ।
তোর পত্র শ্রীহরির আদরের ধন ।।
অপবিত্র স্থানে তোর অবস্থিতি হবে ।
শৃগাল কুক্কুর মূত্র পুরীষ ত্যাজিবে ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
তুলসী দেবী যেখানে সেখানে জন্মায়। এমনকি দেওয়ালেও জন্মায়। যারা গ্রামে থাকেন তারা দেখবেন তুলসী মঞ্চে উঠে কুকুর মূত্র ত্যাগ করে। আবার মুরগী তুলসী গাছে বিষ্ঠা ত্যাগ করে। তাই হিন্দু বাড়ীতে মুরগী পালন নিষিদ্ধ। এমনকি এক সময় মুরগীর ডিম্ব ও মুরগী ভক্ষণ হিন্দু গৃহে নিষেধ ছিলো। এখন অবশ্য এই সব নিয়ম হিন্দুরাই জলাঞ্জলি দিয়ে দিয়েছেন ।
এরপর সীতাদেবী ফল্গু নদীকে জিজ্ঞেস করলেন- “বল নদী । তুমি তো দেখেছো। এখানে আমার শ্বশুরের আত্মা এসেছিলেন। আমার কাছে পিণ্ড চেয়েছিলেন। আমি দিয়েছি। রঘুনাথকে সব সত্য বল।” ফল্গু বলল- “জানকী দেবী। আপনি কেন রঘুনাথের সামনে অসত্য বলছেন ? আমাকে কেন মিথ্যা বলতে বলছেন। আমি পবিত্র নদী। এই গয়াধামে আমার জলে সকলে পিণ্ড দেয়। আমি কিভাবে মিথ্যা বলি? এখানে স্বর্গীয় রাজা দশরথের আত্মা আসেন নি। আর আপনিও পিণ্ড দেন নি।” সীতাদেবী ক্রোধে বললেন-
এতেক শুনিয়া সীতা কান্দে উচ্চৈঃস্বরে ।
আমি আজি দিব শাপ এ ফল্গুনদীরে ।।
অন্তঃশীলা হয়ে তুমি বহিও সর্বকাল ।
তোমারে ডিঙ্গিয়া যাবে কুক্কুর শৃগাল ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
সীতাদেবীর অভিশাপে ফল্গু নদীর উপরে বালির চড়া পড়লো। একটু খুঁড়লে সেখানে জল পাওয়া যায়। আজও পবিত্র গয়া ধামে ফল্গু নদী এইভাবে আছে । রামচন্দ্র কৌতুকে মজা পাচ্ছিল্লেন। তিনি বললেন- “সীতা । আর প্রমাণ আছে কি?” সীতাদেবী তখন বট বৃক্ষকে বললেন- “বাছা বট! তুমি তো সত্যি বল। নাহলে স্বামী ভাববেন আমি অসত্য বলছি ।তুমি বল যে এখানে আমি আমার শ্বশুরের উদ্দেশ্যে বালিকার পিণ্ড দিয়েছি।” বট ভক্তিভাবে বলল- “মাঃ । প্রভু রামচন্দ্র অন্তর্যামী। তিনি সব জানেন। তবুও আমি বলছি- আমি দেখেছি আপনার শ্বশুর তথা শ্রীরামচন্দ্রের পিতা স্বর্গীয় রাজা দশরথের আত্মা এখানে এসে আপনাকে পিণ্ড দিতে বলেছিলেন। আপনি বালুকা দ্বারা পিণ্ড দিয়েছেন। আমি এই ঘটনার সাক্ষী।” বট বৃক্ষ এরপর রামচন্দ্রকে প্রনাম জানিয়ে বললেন- “প্রভু! আমি এর সাক্ষী। মাতা সীতা ঠিক বলেছেন। সেই ব্রাহ্মণ, তুলসী আর ফল্গু নদী আপনাকে মিথ্যা বলেছে।” সীতাদেবী বললেন- “বাবা বট! তোমায় আশীর্বাদ করি, তুমি চিরজীবি ও অক্ষয় হও।” এই জন্য দেখবেন বট বৃক্ষের ঝুড়ি নামে, সেখান থেকে অপর গাছ হয়। বট বৃক্ষ তলে দেবতারা থাকেন। সাধনার উপযুক্ত যে বৃক্ষ গুলি আছে তাদের একটি বট বৃক্ষ । রাম সীতার যুগল রূপ দেখে বট বৃক্ষ ধন্য হল। অতঃ রামচন্দ্র , সীতাদেবীকে বললেন- “জানকী! আমি তোমার কথা বিশ্বাস পূর্বেই করেছিলাম। কৌতুকচ্ছলে তোমার সাথে ঠাট্টা করেছি।” অপরদিকে দশরথের আত্মা রামসীতাকে দেখা দিলেন। বললেন- “পুত্র রাম আমি সীতাপ্রদত্ত বালুকার পিণ্ড তৃপ্তির সহিত নিয়ে প্রসন্ন হয়েছি। আমি সীতাকে এরূপ আদেশ করেছিলাম।” রাম সীতা দশরথ রাজাকে প্রনাম জানালেন ।
( অযোধ্যাকাণ্ড সমাপ্ত )
মিথ্যা কৈয়া ব্রাহ্মণ এতেক দিলে তাপ ।
ক্রোধে তনু থর থর , দিনু তোমা শাপ ।।
লক্ষ তঙ্কার দ্রব্য যদি থাকে তব ঘরে ।
ভিক্ষার লাগিয়া যেও দেশ- দেশান্তরে ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
এর মানে যতই ঘরে দ্রব্য থাকুক, ব্রাহ্মণ তবুও ভিক্ষা বা চেয়ে বেড়াবে। এই অভিশাপ কলিযুগে আরোও প্রভাব শালী । প্রমাণ তো আপনারাই নিজ চোখে দেখেন । এরপর সীতাদেবী তুলসীকে বললেন- “হে হরির প্রিয়া বৃন্দারানী। বল ত । আমি পিণ্ড দিয়েছি কিনা? সত্যি বল।” তুলসী বলল- “না আপনি পিণ্ড দেননি । কোথায় দিলেন ? আমি ভগবান হরির পাদপদ্মে বিরাজ করি। মিথ্যা আমি বলবো না। ধর্মে সইবে না।” জানকী দেবী রেগে বললেন- “তুমি হরির পাদপদ্মে থাকো, অথচ তোমার মুখে এমন অসত্য বচন । আমি যদি সত্য হই তবে আমার অভিশাপ অক্ষরে অক্ষরে ফলবে। তোমাকে শাপ দেবো।”
কথা শুনি জানকীর জন্মে মনস্তাপ ।
যা রে যা তুলসী আমি তোরে দিনু শাপ ।।
এত দুঃখ দিলি তুই আমার অন্তরে ।
আভূমি জন্মিও তুমি হৈয়া সর্বত্তরে ।।
ক্রোধ ভরে সীতা দেবী কহেন এমন ।
তোর পত্র শ্রীহরির আদরের ধন ।।
অপবিত্র স্থানে তোর অবস্থিতি হবে ।
শৃগাল কুক্কুর মূত্র পুরীষ ত্যাজিবে ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
তুলসী দেবী যেখানে সেখানে জন্মায়। এমনকি দেওয়ালেও জন্মায়। যারা গ্রামে থাকেন তারা দেখবেন তুলসী মঞ্চে উঠে কুকুর মূত্র ত্যাগ করে। আবার মুরগী তুলসী গাছে বিষ্ঠা ত্যাগ করে। তাই হিন্দু বাড়ীতে মুরগী পালন নিষিদ্ধ। এমনকি এক সময় মুরগীর ডিম্ব ও মুরগী ভক্ষণ হিন্দু গৃহে নিষেধ ছিলো। এখন অবশ্য এই সব নিয়ম হিন্দুরাই জলাঞ্জলি দিয়ে দিয়েছেন ।
এরপর সীতাদেবী ফল্গু নদীকে জিজ্ঞেস করলেন- “বল নদী । তুমি তো দেখেছো। এখানে আমার শ্বশুরের আত্মা এসেছিলেন। আমার কাছে পিণ্ড চেয়েছিলেন। আমি দিয়েছি। রঘুনাথকে সব সত্য বল।” ফল্গু বলল- “জানকী দেবী। আপনি কেন রঘুনাথের সামনে অসত্য বলছেন ? আমাকে কেন মিথ্যা বলতে বলছেন। আমি পবিত্র নদী। এই গয়াধামে আমার জলে সকলে পিণ্ড দেয়। আমি কিভাবে মিথ্যা বলি? এখানে স্বর্গীয় রাজা দশরথের আত্মা আসেন নি। আর আপনিও পিণ্ড দেন নি।” সীতাদেবী ক্রোধে বললেন-
এতেক শুনিয়া সীতা কান্দে উচ্চৈঃস্বরে ।
আমি আজি দিব শাপ এ ফল্গুনদীরে ।।
অন্তঃশীলা হয়ে তুমি বহিও সর্বকাল ।
তোমারে ডিঙ্গিয়া যাবে কুক্কুর শৃগাল ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
সীতাদেবীর অভিশাপে ফল্গু নদীর উপরে বালির চড়া পড়লো। একটু খুঁড়লে সেখানে জল পাওয়া যায়। আজও পবিত্র গয়া ধামে ফল্গু নদী এইভাবে আছে । রামচন্দ্র কৌতুকে মজা পাচ্ছিল্লেন। তিনি বললেন- “সীতা । আর প্রমাণ আছে কি?” সীতাদেবী তখন বট বৃক্ষকে বললেন- “বাছা বট! তুমি তো সত্যি বল। নাহলে স্বামী ভাববেন আমি অসত্য বলছি ।তুমি বল যে এখানে আমি আমার শ্বশুরের উদ্দেশ্যে বালিকার পিণ্ড দিয়েছি।” বট ভক্তিভাবে বলল- “মাঃ । প্রভু রামচন্দ্র অন্তর্যামী। তিনি সব জানেন। তবুও আমি বলছি- আমি দেখেছি আপনার শ্বশুর তথা শ্রীরামচন্দ্রের পিতা স্বর্গীয় রাজা দশরথের আত্মা এখানে এসে আপনাকে পিণ্ড দিতে বলেছিলেন। আপনি বালুকা দ্বারা পিণ্ড দিয়েছেন। আমি এই ঘটনার সাক্ষী।” বট বৃক্ষ এরপর রামচন্দ্রকে প্রনাম জানিয়ে বললেন- “প্রভু! আমি এর সাক্ষী। মাতা সীতা ঠিক বলেছেন। সেই ব্রাহ্মণ, তুলসী আর ফল্গু নদী আপনাকে মিথ্যা বলেছে।” সীতাদেবী বললেন- “বাবা বট! তোমায় আশীর্বাদ করি, তুমি চিরজীবি ও অক্ষয় হও।” এই জন্য দেখবেন বট বৃক্ষের ঝুড়ি নামে, সেখান থেকে অপর গাছ হয়। বট বৃক্ষ তলে দেবতারা থাকেন। সাধনার উপযুক্ত যে বৃক্ষ গুলি আছে তাদের একটি বট বৃক্ষ । রাম সীতার যুগল রূপ দেখে বট বৃক্ষ ধন্য হল। অতঃ রামচন্দ্র , সীতাদেবীকে বললেন- “জানকী! আমি তোমার কথা বিশ্বাস পূর্বেই করেছিলাম। কৌতুকচ্ছলে তোমার সাথে ঠাট্টা করেছি।” অপরদিকে দশরথের আত্মা রামসীতাকে দেখা দিলেন। বললেন- “পুত্র রাম আমি সীতাপ্রদত্ত বালুকার পিণ্ড তৃপ্তির সহিত নিয়ে প্রসন্ন হয়েছি। আমি সীতাকে এরূপ আদেশ করেছিলাম।” রাম সীতা দশরথ রাজাকে প্রনাম জানালেন ।
( অযোধ্যাকাণ্ড সমাপ্ত )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন