তারাপীঠের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ সাধক হলেন বামাক্ষ্যাপা (১৮৪৩-১৯১১) তিনি মন্দিরে পূজা করতেন এবং শ্মশানে সাধনা করতেন। তিনি ছিলেন উনিশ শতকের অপর প্রসিদ্ধ কালীভক্ত রামকৃষ্ণ পরমহংসের সমসাময়িক। অল্প বয়সেই তিনি গৃহত্যাগ করেন এবং কৈলাসপতি বাবার সান্নিধ্যে তন্ত্রসাধনা শুরু করেন। পরে তিনি সমগ্র তারাপীঠের প্রধান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। ভক্তেরা তাঁর কাছে আশীর্বাদ বা আরোগ্য প্রার্থনা করতে আসত। কেউ কেউ আবার শুধুই তাঁকে দর্শন করতে আসত। তিনি মন্দিরের নিয়ম মানতেন না।

একবার নৈবেদ্য নিবেদনের পূর্বে খেয়ে ফেলে তিনি পুরোহিতদের রোষ দৃষ্টিতে পড়েছিলেন। শোনা যায়, এরপর তারাদেবী নাটোরের মহারানিকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে দেবীর পুত্র বামাক্ষ্যাপাকে প্রথমে ভোজন করাতে আদেশ দেন। এরপর থেকে মন্দিরে দেবীকে নৈবেদ্য নিবেদনের পূর্বে বামাক্ষ্যাপাকে ভোজন করানো হত এবং কেউ তাঁকে বাধা দিতেন না। কথিত আছে, তারাদেবী শ্মশানক্ষেত্রে ভীষণা বেশে বামাক্ষ্যাপাকে দর্শন দিয়ে তাঁকে স্তন্যপান করিয়েছিলেন।
শৈশবে তিনি এতাই সরল ছিলেন যে, প্রতিবেশীরা তাঁকে বলতেন ‘হাউড়া’ অর্থাৎ নির্বোধ। লেখাপড়ায় তাঁর কোনদিনই মন ছিল না—অভিনয় করতে ভালবাসতেন। তাঁর দিদি জয়কালী দেবীও অল্পবয়সে বিধবা হয়ে সন্ন্যাসিনী হন।
সেই সময় তারাপীঠ মন্দিরের পরিচালনভার ছিল নাটোর রাজের হাতে। তাঁর কর্মচারী দূর্গাদাস সরকার সব কাজ দেখাশোনা করতেন। এই দূর্গাদাসের মাধ্যমেই তারাপীঠের তন্ত্রসাধক কৈলাসপতির সঙ্গে বামাচরণের পরিচয় হয়। কৈলাসপতি বাবা এবং মন্দিরের প্রধান কৌলাচার্য মোক্ষদানন্দের পদতলে বসেই চিরকুমার বামদেবের তন্ত্রসাধনা শুরু হয়। শেষপর্যন্ত ক্ষেপাবাবাই তারাপীঠের প্রধান কৌলপদে বৃত হন। বাংলা ১৩১৮ সালের শ্রাবণ মাস পর্যন্ত তিনি তাঁর নরলীলায় জগৎকল্যাণ করেছেন।
দেবতা ও মানুষে, মানুষ ও পশুতে, জাত ও বেজাতে এবং ধনী ও দরিদ্রে বামদেবের কোনও ভেদজ্ঞান ছিল না। তিনি ছিলেন বাকসিদ্ধ—তাঁর মুখের কথাই ছিল সত্য। ফলে তিনি কখনও কখনও এমন কথা বলে ফেলতেন, যেটা অন্যের পক্ষে ভয়ের বা আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠত। এখানে সেরকমই একটা ঘটনার কথা বলছি।
তারাপীঠের নগেন পাণ্ডা সে-সময়ে খুবই খ্যাতিমান হয়ে উঠেছিলেন। তাঁরই খুব পরিচিত স্থানীয় একজন জমিদার—নাম পূর্ণচন্দ্র সরকার হঠাৎই খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সবরকম ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েও রোগীর কিছুমাত্র উন্নতি হল না। এবার নগেন পাণ্ডা এসে ধরলেন বামদেবকে। তাঁর অনুরোধ, ওই জমিদারকে রোগমুক্ত করে দিতেই হবে। একবার যদি ক্ষেপা মুখ ফুটে বলেন সে কথা, তাহলেই রোগী সুস্থ হয়ে যাবে। কারণ, ক্ষেপা হচ্ছেন বাকসিদ্ধ।
খুব আদর করে পাল্কিতে চাপিয়ে নগেন পাণ্ডা বামদেবকে নিয়ে গেলেন জমিদার বাড়িতে। যাওয়ার পথে নগেন পাণ্ডা ক্ষেপাকে বোঝাতে লাগলেন, ‘বাবা, আপনাকে বিশেষ কিছু করতে হবে না - শুধু রোগীর কাছে গিয়ে জোর গলায় বলবেন, এই উঠে বোস্, তোর রোগ ভাল হয়ে গেছে। আপনি মুখ দিয়ে ওইটুকু বললেই কেল্লা ফতে।’
বামাক্ষেপা সরল শিশুর মতোই বললেন, ‘তুমি যখন বলছ, তখন তা-ই বলব। যদি ভুলে যাই, তুমি আমাকে একটু মনে করিয়ে দিও নগেন কাকা।’ ক্ষেপার কথা শুনে নগেনের আনন্দ আর ধরে না।
তারপর একসময় পাল্কি গিয়ে ঢুকল জমিদার বাড়িতে। সবাই মিলে দারুণ খাতির করে ক্ষেপাকে নিয়ে গেলেন রোগশয্যায় শায়িত জমিদারের কাছে। কিন্তু রোগীর ঘরে ঢুকেই ক্ষেপা যা বললে তাতে সকলের আক্কেল গুড়ুম। রোগীকে দেখে ক্ষেপা বললেন, ‘ও নগেন কাকা, এ শাল তো এখনি ফট।’ ফট মানে শেষ। অর্থাৎ, এ রোগীর আর আশা নেই, এখনই প্রাণান্ত হবে একথা বলেই ক্ষেপা, এসে পাল্কিতে উঠে বসলেন। ওদিকে রোগীও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। এতে নগেন পাণ্ডা রাগতস্বরে ক্ষেপাকে বললেন, ‘এ আপনি কি করলেন। এরকম করবেন জানলে, আমি আপনাকে এখানে নিয়েই আসতাম না।’
সরল বালকের মতোই ক্ষেপা উত্তর দিলেন, ‘আমি তো তোমার শেখানো কথাই বলতে গিয়েছিলাম, কিন্তু মা তারা যে বাধা দিলেন, বললেন, ওকথা বলিস না, বলে দে ফট। আমি তো তাই বললাম। এই হলেন সাধক বামক্ষেপা।’
Courtesy by: Prithwish Ghosh

একবার নৈবেদ্য নিবেদনের পূর্বে খেয়ে ফেলে তিনি পুরোহিতদের রোষ দৃষ্টিতে পড়েছিলেন। শোনা যায়, এরপর তারাদেবী নাটোরের মহারানিকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে দেবীর পুত্র বামাক্ষ্যাপাকে প্রথমে ভোজন করাতে আদেশ দেন। এরপর থেকে মন্দিরে দেবীকে নৈবেদ্য নিবেদনের পূর্বে বামাক্ষ্যাপাকে ভোজন করানো হত এবং কেউ তাঁকে বাধা দিতেন না। কথিত আছে, তারাদেবী শ্মশানক্ষেত্রে ভীষণা বেশে বামাক্ষ্যাপাকে দর্শন দিয়ে তাঁকে স্তন্যপান করিয়েছিলেন।
শৈশবে তিনি এতাই সরল ছিলেন যে, প্রতিবেশীরা তাঁকে বলতেন ‘হাউড়া’ অর্থাৎ নির্বোধ। লেখাপড়ায় তাঁর কোনদিনই মন ছিল না—অভিনয় করতে ভালবাসতেন। তাঁর দিদি জয়কালী দেবীও অল্পবয়সে বিধবা হয়ে সন্ন্যাসিনী হন।
সেই সময় তারাপীঠ মন্দিরের পরিচালনভার ছিল নাটোর রাজের হাতে। তাঁর কর্মচারী দূর্গাদাস সরকার সব কাজ দেখাশোনা করতেন। এই দূর্গাদাসের মাধ্যমেই তারাপীঠের তন্ত্রসাধক কৈলাসপতির সঙ্গে বামাচরণের পরিচয় হয়। কৈলাসপতি বাবা এবং মন্দিরের প্রধান কৌলাচার্য মোক্ষদানন্দের পদতলে বসেই চিরকুমার বামদেবের তন্ত্রসাধনা শুরু হয়। শেষপর্যন্ত ক্ষেপাবাবাই তারাপীঠের প্রধান কৌলপদে বৃত হন। বাংলা ১৩১৮ সালের শ্রাবণ মাস পর্যন্ত তিনি তাঁর নরলীলায় জগৎকল্যাণ করেছেন।
দেবতা ও মানুষে, মানুষ ও পশুতে, জাত ও বেজাতে এবং ধনী ও দরিদ্রে বামদেবের কোনও ভেদজ্ঞান ছিল না। তিনি ছিলেন বাকসিদ্ধ—তাঁর মুখের কথাই ছিল সত্য। ফলে তিনি কখনও কখনও এমন কথা বলে ফেলতেন, যেটা অন্যের পক্ষে ভয়ের বা আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠত। এখানে সেরকমই একটা ঘটনার কথা বলছি।
তারাপীঠের নগেন পাণ্ডা সে-সময়ে খুবই খ্যাতিমান হয়ে উঠেছিলেন। তাঁরই খুব পরিচিত স্থানীয় একজন জমিদার—নাম পূর্ণচন্দ্র সরকার হঠাৎই খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সবরকম ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েও রোগীর কিছুমাত্র উন্নতি হল না। এবার নগেন পাণ্ডা এসে ধরলেন বামদেবকে। তাঁর অনুরোধ, ওই জমিদারকে রোগমুক্ত করে দিতেই হবে। একবার যদি ক্ষেপা মুখ ফুটে বলেন সে কথা, তাহলেই রোগী সুস্থ হয়ে যাবে। কারণ, ক্ষেপা হচ্ছেন বাকসিদ্ধ।
খুব আদর করে পাল্কিতে চাপিয়ে নগেন পাণ্ডা বামদেবকে নিয়ে গেলেন জমিদার বাড়িতে। যাওয়ার পথে নগেন পাণ্ডা ক্ষেপাকে বোঝাতে লাগলেন, ‘বাবা, আপনাকে বিশেষ কিছু করতে হবে না - শুধু রোগীর কাছে গিয়ে জোর গলায় বলবেন, এই উঠে বোস্, তোর রোগ ভাল হয়ে গেছে। আপনি মুখ দিয়ে ওইটুকু বললেই কেল্লা ফতে।’
বামাক্ষেপা সরল শিশুর মতোই বললেন, ‘তুমি যখন বলছ, তখন তা-ই বলব। যদি ভুলে যাই, তুমি আমাকে একটু মনে করিয়ে দিও নগেন কাকা।’ ক্ষেপার কথা শুনে নগেনের আনন্দ আর ধরে না।
তারপর একসময় পাল্কি গিয়ে ঢুকল জমিদার বাড়িতে। সবাই মিলে দারুণ খাতির করে ক্ষেপাকে নিয়ে গেলেন রোগশয্যায় শায়িত জমিদারের কাছে। কিন্তু রোগীর ঘরে ঢুকেই ক্ষেপা যা বললে তাতে সকলের আক্কেল গুড়ুম। রোগীকে দেখে ক্ষেপা বললেন, ‘ও নগেন কাকা, এ শাল তো এখনি ফট।’ ফট মানে শেষ। অর্থাৎ, এ রোগীর আর আশা নেই, এখনই প্রাণান্ত হবে একথা বলেই ক্ষেপা, এসে পাল্কিতে উঠে বসলেন। ওদিকে রোগীও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। এতে নগেন পাণ্ডা রাগতস্বরে ক্ষেপাকে বললেন, ‘এ আপনি কি করলেন। এরকম করবেন জানলে, আমি আপনাকে এখানে নিয়েই আসতাম না।’
সরল বালকের মতোই ক্ষেপা উত্তর দিলেন, ‘আমি তো তোমার শেখানো কথাই বলতে গিয়েছিলাম, কিন্তু মা তারা যে বাধা দিলেন, বললেন, ওকথা বলিস না, বলে দে ফট। আমি তো তাই বললাম। এই হলেন সাধক বামক্ষেপা।’
Courtesy by: Prithwish Ghosh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন