মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাচীন জনপদ-- নবগ্রামের কিরীটেশ্বরীমন্দির, ডাহাপাড়া থেকে প্রায় চার কিমি পশ্চিমে, মুর্শিদাবাদের প্রাচীনতম দেবস্থান। এখানে দেবীর কিরীট পড়েছিল বলে এটি একটি পীঠস্থান বা মতান্তরে উপপীঠ।
পৌষ মাসের শেষ মঙ্গলবারের পূজা ও এই কালীমন্দিরকে ঘিরে সুদূর অতীত থেকে ওই এলাকায় প্রতি বছর পৌষ মাস জুড়ে মেলা হয়ে আসছে। পৌষ মাস জুড়ে মেলা হলেও মানুষের ঢল নামে মূলত মঙ্গলবার ও শনিবার। তার মধ্যে আবার মঙ্গলবারের ‘মাহাত্ম্য’ই বেশি বলে বিশ্বাসী লোকজনের ঢল নামে ওই দিন। প্রাচীন কালীমন্দির ঘিরে নানান কিংবদন্তী প্রচারিত থাকায় মুর্শিদাবাদ ও লাগোয়া ৪টি জেলা বর্ধমান, বীরভূম, নদিয়া ও মালদা থেকে দলে দলে পূণার্থীরা এখানে ভিড় করেন। দেবীর পায়ে অঞ্জলি দেওয়ার পাশাপাশি বন্ধু অথবা পরিবারের লোকজনদের নিয়ে তাঁরা মন্দির চত্বর জুড়ে পৌষ মাসের বনভোজনেও মেতে ওঠেন।
ফলে দিনভর ভিড়ে ঠাসা ওই এলাকার অন্তত পৌষ মাসে যথেষ্ট আর্থিক উন্নতি ঘটে। ঐতিহাসিক নিখিলনাথ রায়ের ‘মুর্শিদাবাদ কাহিনি’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে ১১৫ বছর আগে ১৩০৪ বঙ্গাব্দে। ওই গ্রন্থের‘ ‘কিরীটেশ্বরী’ র্শীষক প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “প্রবাদ আছে যে, দক্ষযজ্ঞে বিশ্বজননী পতিপ্রাণা সতী প্রাণত্যাগ করিলে, ভগবান বিষ্ণু তাঁহার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করিয়া সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন, সেই সময় দেবীর কিরীটের একটি কণা এই স্থলে পতিত হয়; তজ্জন্য ইহা উপপীঠ মধ্যে গণ্য এবং ইহার অধিষ্ঠাত্রী কিরীটেশ্বরী বলিয়া কীর্তিতা।” ‘রিয়াজুস্-সালাতীন’ গ্রন্থে, মেজর রেনেলের কাশিমবাজার দ্বীপের মানচিত্রে ও তন্ত্রচূড়ামণির ‘পাঠনির্ণয়’-এ কিরীটেশ্বরী উল্লেখ রয়েছে বলেও নিখিলনাথ তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন। নবাব মুর্শিদকুলির আমলে বাংলার কানুনগো ছিলেন দর্পনারায়ন রায়। নিখিলনাথের মতে, “দর্পনারায়ন রায় কিরীটেশ্বরী মেলার সৃষ্টি করেন।”
তন্ত্রচূড়ামণি, মহানীলতন্ত্র প্রমুখ গ্রন্থে বিখ্যাত শক্তিপীঠ হিসেবে কিরীটকণার উল্লেখ রয়েছে। এই মন্দিরও হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন। পাঠান-মুঘলরাও পুজো দিতেন এই দেবীকে। জনশ্রুতি, মীরজাফর অন্তিম শয্যায় দেবীর চরণামৃত পান করে দেহজ্বালা প্রশমিত করেন। তার সঙ্গেই শাক্তক্ষেত্রে শ্রী চৈতন্যের বৈষ্ণব লীলার প্রকাশভূমিও বটে। শোনা যায়, মঙ্গল নামের এক বৈষ্ণবের পূর্বপুরুষ ছিলেন এই মন্দিরের সেবক। মঙ্গলকে শ্রীচৈতন্য বৈষ্ণবমতে দীক্ষিত করলে মন্দিরে দৈন্য দশা নেমে আসে। পরে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে বঙ্গাধিপতি দর্পনারায়ণ মন্দির সংস্কার করেন এবং কয়েকটি শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। খনন করান কালীসাগর নামে এক দীঘি। মন্দিরটি পশ্চিমদ্বারী এবং মূর্তিহীন। গর্ভগৃহে একটি উঁচু বেদীর উপরে একটি ছোট বেদী দেবীর কিরীট রূপে পূজা পায়। মন্দিরের কাছেই গুপ্তমঠের নতুন মন্দিরে লাল কাপড়ে কিরীট-টি ঢাকা থাকে, রক্ষা করা হয় সযতনে। কোনও সময়েই তা দেখা বারণ। কিরীটেশ্বরী মন্দির কমিটির পূজারী রক্ষাকর বলেন, “আগে দেবীর অনেক সম্পত্তি ছিল। ছিল ১০০টি মন্দির। বর্তমানে অধিকাংশ জমিই বেহাত হয়ে গিয়েছে। পোড়ামাটির বাংলা ইটের তৈরি মন্দির গুলিরও অধিকাংশই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১২ বিঘা জমির উপর রয়েছে মূল মন্দির ছাড়াও আরও ২৫-৩০টি মন্দির।”
Courtesy by: Prithwish Ghosh
পৌষ মাসের শেষ মঙ্গলবারের পূজা ও এই কালীমন্দিরকে ঘিরে সুদূর অতীত থেকে ওই এলাকায় প্রতি বছর পৌষ মাস জুড়ে মেলা হয়ে আসছে। পৌষ মাস জুড়ে মেলা হলেও মানুষের ঢল নামে মূলত মঙ্গলবার ও শনিবার। তার মধ্যে আবার মঙ্গলবারের ‘মাহাত্ম্য’ই বেশি বলে বিশ্বাসী লোকজনের ঢল নামে ওই দিন। প্রাচীন কালীমন্দির ঘিরে নানান কিংবদন্তী প্রচারিত থাকায় মুর্শিদাবাদ ও লাগোয়া ৪টি জেলা বর্ধমান, বীরভূম, নদিয়া ও মালদা থেকে দলে দলে পূণার্থীরা এখানে ভিড় করেন। দেবীর পায়ে অঞ্জলি দেওয়ার পাশাপাশি বন্ধু অথবা পরিবারের লোকজনদের নিয়ে তাঁরা মন্দির চত্বর জুড়ে পৌষ মাসের বনভোজনেও মেতে ওঠেন।
ফলে দিনভর ভিড়ে ঠাসা ওই এলাকার অন্তত পৌষ মাসে যথেষ্ট আর্থিক উন্নতি ঘটে। ঐতিহাসিক নিখিলনাথ রায়ের ‘মুর্শিদাবাদ কাহিনি’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে ১১৫ বছর আগে ১৩০৪ বঙ্গাব্দে। ওই গ্রন্থের‘ ‘কিরীটেশ্বরী’ র্শীষক প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “প্রবাদ আছে যে, দক্ষযজ্ঞে বিশ্বজননী পতিপ্রাণা সতী প্রাণত্যাগ করিলে, ভগবান বিষ্ণু তাঁহার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করিয়া সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন, সেই সময় দেবীর কিরীটের একটি কণা এই স্থলে পতিত হয়; তজ্জন্য ইহা উপপীঠ মধ্যে গণ্য এবং ইহার অধিষ্ঠাত্রী কিরীটেশ্বরী বলিয়া কীর্তিতা।” ‘রিয়াজুস্-সালাতীন’ গ্রন্থে, মেজর রেনেলের কাশিমবাজার দ্বীপের মানচিত্রে ও তন্ত্রচূড়ামণির ‘পাঠনির্ণয়’-এ কিরীটেশ্বরী উল্লেখ রয়েছে বলেও নিখিলনাথ তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন। নবাব মুর্শিদকুলির আমলে বাংলার কানুনগো ছিলেন দর্পনারায়ন রায়। নিখিলনাথের মতে, “দর্পনারায়ন রায় কিরীটেশ্বরী মেলার সৃষ্টি করেন।”
তন্ত্রচূড়ামণি, মহানীলতন্ত্র প্রমুখ গ্রন্থে বিখ্যাত শক্তিপীঠ হিসেবে কিরীটকণার উল্লেখ রয়েছে। এই মন্দিরও হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন। পাঠান-মুঘলরাও পুজো দিতেন এই দেবীকে। জনশ্রুতি, মীরজাফর অন্তিম শয্যায় দেবীর চরণামৃত পান করে দেহজ্বালা প্রশমিত করেন। তার সঙ্গেই শাক্তক্ষেত্রে শ্রী চৈতন্যের বৈষ্ণব লীলার প্রকাশভূমিও বটে। শোনা যায়, মঙ্গল নামের এক বৈষ্ণবের পূর্বপুরুষ ছিলেন এই মন্দিরের সেবক। মঙ্গলকে শ্রীচৈতন্য বৈষ্ণবমতে দীক্ষিত করলে মন্দিরে দৈন্য দশা নেমে আসে। পরে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে বঙ্গাধিপতি দর্পনারায়ণ মন্দির সংস্কার করেন এবং কয়েকটি শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। খনন করান কালীসাগর নামে এক দীঘি। মন্দিরটি পশ্চিমদ্বারী এবং মূর্তিহীন। গর্ভগৃহে একটি উঁচু বেদীর উপরে একটি ছোট বেদী দেবীর কিরীট রূপে পূজা পায়। মন্দিরের কাছেই গুপ্তমঠের নতুন মন্দিরে লাল কাপড়ে কিরীট-টি ঢাকা থাকে, রক্ষা করা হয় সযতনে। কোনও সময়েই তা দেখা বারণ। কিরীটেশ্বরী মন্দির কমিটির পূজারী রক্ষাকর বলেন, “আগে দেবীর অনেক সম্পত্তি ছিল। ছিল ১০০টি মন্দির। বর্তমানে অধিকাংশ জমিই বেহাত হয়ে গিয়েছে। পোড়ামাটির বাংলা ইটের তৈরি মন্দির গুলিরও অধিকাংশই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১২ বিঘা জমির উপর রয়েছে মূল মন্দির ছাড়াও আরও ২৫-৩০টি মন্দির।”
Courtesy by: Prithwish Ghosh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন