১৯৭১ সালে যাঁরা বাস্তুত্যাগী হিন্দুর সম্পত্তি
দখল করেছিলেন, ১৯৭২-এ তা কেউ কেউ ফেরত দেননি এবং এ-বিষয়ে সরকার থেকেও
প্রতিকার পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বিধ্বস্ত রমনা
কালীবাড়ি পুনর্নির্মাণের দাবি কোনো সরকারই পূরণ করেনি। ১৯৭২-৭৩-এ
পুজোর সময়ে এদিকে ওদিকে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল যে, তুলনায় পাকিস্তানের কালে
সাম্প্রদায়িক সহনশীলতা ও নিরাপত্তা বেশি ছিল বলে ভাবার কারণ ছিল। জিয়াউর
রহমান ও এরশাদের আমলে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার উচ্ছেদ, ইসলামের প্রতি
রাষ্ট্রের প্রকাশ্য পক্ষপাত, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের ক্ষমতাসীন হওয়া এবং শেষ
পর্যন্ত রাষ্ট্রধর্মের প্রবর্তন সাম্প্রদায়িক শক্তিকেই উৎসাহিত করেছে। আমরা
আশির দশকে ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করেছিলাম এবং
রাষ্ট্রধর্ম প্রবর্তনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা রুজু করেছিলাম, কিন্তু
তাতে অমুসলমানদের আস্থা বা স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যায়নি। তাঁরা
‘হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদ’ গঠন করে নিজেদের স্বার্থরক্ষার পথ
খুঁজেছেন। সংখ্যাগুরুর সাম্প্রদায়িকতা যে সংখ্যালঘুর সাম্প্রদায়িকতা উশকে
দেয়, তার দৃষ্টান্ত আমরা পৃথিবীর বহু দেশে দেখেছি।
একটি দৈনিক পত্রিকার মিথ্যা প্রচারণার ফলে ১৯৯০ সালে এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় ১৯৯২ সালে দেশের নানা জায়গায় সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ১৯৬৪ সালে যেমন রাজনৈতিক দল, প্রচারমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজ একযোগে দাঙ্গা-প্রতিরোধে সফলভাবে অগ্রসর হয়েছিল, ১৯৯০ ও ১৯৯২-তে তেমন উদেযাগ অনেক দুর্বল ছিল। প্রশাসনের তৎপরতায় ছিদ্র ছিল, অন্যেরাও জোর প্রতিরোধ করতে পারেনি। অমুসলমান নাগরিকেরা আওয়ামী লীগের ভোট-ব্যাংক, আওয়ামী লীগই তাদের রক্ষা করুক—সরকারের মনোভাব ছিল এ-রকম। আর নাগরিকদের নিরাপত্তাদানের দায়িত্ব সরকারের, তাদেরকেই যা করার তা করতে হবে—আওয়ামী লীগের মনোভাব ছিল অনেকটা এমন।
গত এক বছরের কিছু বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের পুবে-পশ্চিমে উত্তরে-দক্ষিণে নানা জায়গায় হিন্দু ও বৌদ্ধদের পীড়ন করা হয়েছে। ঘটনাগুলোর ধরন একইরকম। বাড়িঘর ও লোকজন তেমন আক্রান্ত হয়নি, কিন্তু উপাসনালয় ও প্রতিমাবিগ্রহের ধ্বংসসাধন করে উপাসকদের মনে ভীতির সঞ্চার করা হয়েছে। ভয় পেয়ে তারা যেন ভিটেবাড়ি ও দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়, সেটাই, মনে হয়, আক্রমণকারীদের লক্ষ্য। প্রশাসনের যে-সক্রিয়তা আশা করা গিয়েছিল, তা দেখা যায়নি—ঔদাসীন্য বা অপারগতা ছিল তার মূলে। নাগরিক সমাজ এসব প্রতিরোধ করতে তাৎক্ষণিক ও তাৎস্থানিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েনি, পরে কিছু কিছু প্রতিবাদ হয়েছে। কিছু সাংগঠনিক উদেযাগও নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। সরকার অনেক ধর্মস্থান পুনর্নির্মাণ করে দিচ্ছেন বটে, তাতে ভাঙাবাড়ি জোড়া লাগবে, ভাঙামন জোড়া লাগবে কি?
# আনিসুজ্জামান:
লেখক ও শিক্ষাবিদ;
ইমেরিটাস অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
একটি দৈনিক পত্রিকার মিথ্যা প্রচারণার ফলে ১৯৯০ সালে এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় ১৯৯২ সালে দেশের নানা জায়গায় সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ১৯৬৪ সালে যেমন রাজনৈতিক দল, প্রচারমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজ একযোগে দাঙ্গা-প্রতিরোধে সফলভাবে অগ্রসর হয়েছিল, ১৯৯০ ও ১৯৯২-তে তেমন উদেযাগ অনেক দুর্বল ছিল। প্রশাসনের তৎপরতায় ছিদ্র ছিল, অন্যেরাও জোর প্রতিরোধ করতে পারেনি। অমুসলমান নাগরিকেরা আওয়ামী লীগের ভোট-ব্যাংক, আওয়ামী লীগই তাদের রক্ষা করুক—সরকারের মনোভাব ছিল এ-রকম। আর নাগরিকদের নিরাপত্তাদানের দায়িত্ব সরকারের, তাদেরকেই যা করার তা করতে হবে—আওয়ামী লীগের মনোভাব ছিল অনেকটা এমন।
গত এক বছরের কিছু বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের পুবে-পশ্চিমে উত্তরে-দক্ষিণে নানা জায়গায় হিন্দু ও বৌদ্ধদের পীড়ন করা হয়েছে। ঘটনাগুলোর ধরন একইরকম। বাড়িঘর ও লোকজন তেমন আক্রান্ত হয়নি, কিন্তু উপাসনালয় ও প্রতিমাবিগ্রহের ধ্বংসসাধন করে উপাসকদের মনে ভীতির সঞ্চার করা হয়েছে। ভয় পেয়ে তারা যেন ভিটেবাড়ি ও দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়, সেটাই, মনে হয়, আক্রমণকারীদের লক্ষ্য। প্রশাসনের যে-সক্রিয়তা আশা করা গিয়েছিল, তা দেখা যায়নি—ঔদাসীন্য বা অপারগতা ছিল তার মূলে। নাগরিক সমাজ এসব প্রতিরোধ করতে তাৎক্ষণিক ও তাৎস্থানিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েনি, পরে কিছু কিছু প্রতিবাদ হয়েছে। কিছু সাংগঠনিক উদেযাগও নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। সরকার অনেক ধর্মস্থান পুনর্নির্মাণ করে দিচ্ছেন বটে, তাতে ভাঙাবাড়ি জোড়া লাগবে, ভাঙামন জোড়া লাগবে কি?
# আনিসুজ্জামান:
লেখক ও শিক্ষাবিদ;
ইমেরিটাস অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন