পর্ব(১-৪): http://sonatonvabona.blogspot.com/2013/11/blog-post_14.html
(পর্ব ৫)
-----------------------------------
যতক্ষণ না অধার্মিক জরাসন্ধকে শেষ করা
যাচ্ছে; ততক্ষন যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের ফলপ্রাপ্তি অসম্ভব। কিন্তু, জরাসন্ধের বিশ অক্ষৌহিনী
সৈন্যের সাথে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করা কখনোই সম্ভব
ছিল না। আর সেজন্যই, যুধিষ্ঠিরের অনুমতি নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ, ভীম ও অর্জুন
ব্রাহ্মণের বেশ ধারন করে জরাসন্ধের রাজধানী গিরিব্রজে যায়। সেখানে ভগবান
শ্রীকৃষ্ণের কৌশলে ভীমের সাথে জরাসন্ধ মল্লযুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়। সেই যুদ্ধে ভীম
জরাসন্ধকে বধ করে। জরাসন্ধের মৃত্যুর পর ৮৬ জন বন্দী রাজাকে মুক্তি দেয়া হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এইসব রাজাদের যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে সাহায্য করতে বলেন
এবং তিনি জরাসন্ধের ছেলে সহদেবকে মগধের রাজ্যে অভিষিক্ত করেন।
শ্রীকৃষ্ণ, ভীম ও অর্জুন সফলভাবে
ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে আসার পর রাজসূয় যজ্ঞের প্রাথমিক পর্ব শুরু হয় দিগ্বিজয় দিয়ে।
যুধিষ্ঠিরের চার ভাই চারদিকে দিগ্বিজয় সেরে আসে প্রায় বিনাবাঁধায়। আর এই
নির্বিঘ্নতার প্রথম কারণ ছিল জরাসন্ধের মৃত্যু, যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আগেই করে
ফেলেছিল। জরাসন্ধের এই মৃত্যুর পর শিশুপাল ও পৌন্ড্রক-বাসুদেব
পাণ্ডবদের দিগবিজয় পর্বে যুধিষ্ঠিরের সাময়িক বশ্যটা স্বীকার করে নিয়েছিলো সৌজন্য
দেখিয়ে। এর মাধ্যমে যুধিষ্ঠির বুঝতে পারে যে, “তাঁর নিজের ধর্মভাবনায় অন্য সব কিছু
সম্ভব হলেও একজন শক্তিশালী রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব হত না; যদি না ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ বুদ্ধিদাতা হিসেবে তাদের পাশে থাকতেন।”
আর তাই, ভীষ্মের উপদেশে রাজসূয় যজ্ঞে যুধিষ্ঠির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে শ্রীকৃষ্ণকে
অর্ঘ্য প্রদান করে। কারণ, ভীষ্মের নিকট
শ্রীকৃষ্ণ শুধু একজন ভারতবিখ্যাত যোদ্ধারূপেই প্রতিভাত হয় নি বরং শ্রীকৃষ্ণের মধ্য
মনুষ্যদেহে ঈশ্বরের আবির্ভাবকেই তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলো।
অন্যদিকে,
জরাসন্ধের সেনাপতি চেদিরাজ "শিশুপাল" এর তীব্র প্রতিবাদ
করেন। রাজসূয় যজ্ঞসভায় ভীষ্ম, যুধিষ্ঠির ও শ্রীকৃষ্ণকে অকথ্য ভাষায়
তিরস্কার করেন শিশুপাল। সম্পর্কের
দিক থেকে এই শিশুপাল ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পিসতুতো ভাই। কৃষ্ণপিতা বসুদেবের বোন শ্রতস্রবার ছেলে ছিল
শিশুপাল। শ্রীকৃষ্ণ বেশ কিছুক্ষন নিশ্চুপ ছিলেন; কারণ নিজ পিসী অর্থাৎ শিশুপালের
জননীর কাছে তিনি শিশুপালের একশো অপরাধ ক্ষমা
করতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু, যজ্ঞ সভায়
শিশুপাল সেই সীমাকে অতিক্রম করে। অবশেষে সকলের সামনেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সুদর্শন চক্র দ্বারা
শিশুপালকে বধ করেন।
মহাভারতে এই প্রথম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজ হাতে দুষ্কৃতির বিনাশ করলো। জরাসন্ধ ও শিশুপালকে বিনাশ করে
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শুরু করলেন ধর্মসংস্থাপনের কাজ......
(পর্ব ৬)
------------------------------
মহাভারতের প্রধান মর্মবানী ধর্মের জয় ও অধর্মের বিনাশ। কখনো কখনো মানুষের
জীবনে অভিশাপ হয় আশীর্বাদ; আশীর্বাদ আবার অভিশাপে পরিণত হয়।
দুর্যোধন ও শকুনির কপট পাশা খেলায় পরাজিত হলে পাণ্ডবদের বনবাসে যেতে হয়।
বনবাসে অতিদুঃখে পাণ্ডবদের জীবন কাটলেও সর্বদা তাঁরা পেয়েছে ঋষিদের আশীর্বাদ;
জীবনের অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতায় তাঁরা হয়েছেন প্রাজ্ঞ, দৃঢ় ও সমৃদ্ধ।
বলা হয়ে থাকে যে, “জীবনের পূর্ণ বিকাশের জন্য
তপস্যার দ্বারা দুঃখের তাপকে সহ্য করতে হয়।” তাই আমাদের হিন্দু ধর্মের আচার-আচরণে
তপস্যার মূল্য অসীম। শ্রীরামকৃষ্ণ ভবিষ্যতের আচার্যপদে স্বামী বিবেকানন্দকে
অধিষ্ঠিত করতে তাঁকে দুঃখের আগুনে পুড়িয়ে
বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। তেমনি, এই বনবাসের মাধ্যমেই
পাণ্ডবরা লাভ করেছে আত্মবল, আত্মসংযম ও চিত্তশুদ্ধি।
কাম্যক বনে পাণ্ডবদের দুর্দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাদের সাথে দেখা করতে যায়।
অনেক ক্রুদ্ধ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ যেদিন বলেছিল, “ভয়ঙ্কর রণভূমি দুরাত্মা দুর্যোধন,
কর্ণ, শকুনি ও দুঃশাসনের রক্ত পান করবে। তাদের অনুগামীদের আমরা বধ করবো। অধর্মের
অনুগামীদের বধ করাই সনাতন ধর্ম।” (বনপর্ব, ১২ অধ্যায়) সভাপর্বে
দ্রৌপদীকে বিবস্ত্র করার চেষ্টা হলে শ্রীকৃষ্ণই সেদিন দ্রৌপদীকে রক্ষা করেছিলেন।
পাণ্ডবদের বনবাস ও অজ্ঞাতবাসের সমাপ্তির পরে বেশ চিন্তিত হয়ে পরে ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ। বহুদিন আগে পরশুরাম বলেছিল, “কুরুপাণ্ডবদের কলহকে কেন্দ্র করে
কুরুক্ষেত্রে ঘটবে এক ভীষণ সংগ্রাম।” তাই, এই আসন্ন
দুর্দিনের প্রতিচ্ছবি প্রত্যক্ষ করে শ্রীকৃষ্ণ বেদনাহত।
কিন্তু, যে অন্যায় পাণ্ডবদের ও দ্রৌপদীর ওপর হয়েছে, তাতে যুদ্ধ নৈতিক হয়ে
উঠে। পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাস শেষ হবার পর বিরাটনগরে যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছিল,
সেখানে বলরাম দুর্যোধনের পক্ষে কথা বলেন। বলরামের মতে, “দুর্যোধনের
কোন দোষ নেই। যুধিষ্ঠির নিজের হঠকারিতার জন্য রাজ্য হারিয়েছেন।” প্রকাশ্য সভায় সকলের সামনে শ্রীকৃষ্ণের অগ্রজ বলরাম যুধিষ্ঠিরের
নিন্দা করে দুর্যোধনের প্রশংসা করলে সবাই বিস্মিত হয়। কিন্তু, শ্রীকৃষ্ণ ছিল
শান্ত। দুই পক্ষকেই শান্তির জন্য হস্তিনাপুরে দ্রুপদকে দূতরূপে পাঠাতে অনুরোধ করে
শ্রীকৃষ্ণ...।
মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন সৎ গৃহস্থ, রাজনীতিজ্ঞ, বীর যোদ্ধা ও
ধর্মসংস্থাপক। বহুজনসুখায় বহুজনহিতায় কর্মে লিপ্ত, অথচ তিনি ছিলেন নির্বিকার ও
আসক্তিহীন। এই ধারাবাহিকের পরবর্তী পর্বগুলোতে তুলে ধরা হবে ধর্মরাষ্ট্র গঠনে
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেই সর্বোচ্চ লীলা ও প্রচেষ্টাকে......
(পর্ব ৭)
-----------------------------
মহাভারতে কুরুপাণ্ডবদের পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে তৎকালীন ভারতের
রাজন্যবর্গ নিজ নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার খেলায় মত্ত হয়েছিলো। কুরুকুলের
প্রাচীন শত্রু ছিল মৎস্যদেশ (বর্তমান জয়পুরের নিকটবর্তি স্থান)। মৎস্যদেশের
রাজা বিরাট। আবার, মৎস্যদেশের সাথে চিরশত্রুতা ছিল মদ্রদেশের। পঞ্চ-পাণ্ডবদের
মামা অর্থ্যাৎ মাদ্রীর ভাই “শল্য” ছিল মদ্রদেশের রাজা। বলা হয়ে থাকে,
এই সকল কারনেই পাণ্ডবদের মামা শল্য যুদ্ধে কৌরবপক্ষে যোগ দেন।
অন্যদিকে কৌরবদের আধিপত্যকে পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ (দ্রৌপদীর পিতা) কোনদিন
স্বীকার করেন নি। যাদবগণও চিন্তিত; কারন দ্রুপদ অতীতে জরাসন্ধের সাথে যোগ
দিয়ে ১৮ বার মথুরা আক্রমণ করে। এই সকল রাজনৈতিক জটিলতা ছিল শ্রীকৃষ্ণের চিন্তার
কেন্দ্রবিন্দু। তাই, যুদ্ধ অনিবার্য জেনেও শ্রীকৃষ্ণ চেয়েছিলেন শান্তি।
শান্তি আলোচনার জন্য শ্রীকৃষ্ণ হস্তিনাপুরে দূত
পাঠালেও সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। অপরদিকে,
সঞ্জয় (ধৃতরাষ্ট্রের সারথি) দূত হিসেবে আসে পাণ্ডবশিবিরে। শ্রীকৃষ্ণের মনোভাব অবগত
হয়েই যুধিষ্ঠির সঞ্জয়কে মাত্র পাঁচটি গ্রাম দেবার জন্য আবেদন করে।
সঞ্জয়ের মাধ্যমে কৌরবরা জানতে পারে, “মাত্র পাঁচটি গ্রাম দিলেই যুদ্ধ এড়ানো
সম্ভব হবে।” কিন্তু,
দুর্যোধন এই প্রস্তাবকে পাণ্ডবদের ভয় ও দুর্বলতা মনে করলো। তিনি দম্ভ প্রকাশ করে
বললো, “বিনা যুদ্ধে
তীক্ষ্ণ সূচের অগ্রভাগ দ্বারা যতটুকু ভুমি বিদ্ধ হয়, ততটুকু ভূমিও পাণ্ডবদের দেওয়া
হবে না।” সমগ্র শান্তি প্রচেষ্টা
ব্যর্থ হল। কিন্তু, শেষ চেষ্টা করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ নিজেই এবার হস্তিনাপুরে যাবার
সিদ্ধান্ত নিলেন। হস্তিনাপুরে যাবার আগে শ্রীকৃষ্ণ সন্ধির বিষয়ে মতামত চাইলে
যুধিষ্ঠির-অর্জুন ও ভীম নিজেদের মধ্য রক্তক্ষয় বন্ধ করার জন্য শ্রীকৃষ্ণকে অনুরোধ
করে।
এদিকে শ্রীকৃষ্ণ সন্ধি প্রস্তাব নিয়ে
গেলে, দুর্যোধন শ্রীকৃষ্ণকে বন্দি করতে চায়। শ্রীকৃষ্ণ জানতেন দুর্যোধনের এই হীন
ষড়যন্ত্রের কথা। কারন, পূর্বে শ্রীকৃষ্ণের কাছে পরাজিত হয়ে প্রতিহিংসার সুযোগ
নেবার জন্য ভারতের অসংখ্য রাজা যোগ দিয়েছে কৌরব শিবিরে। ধৃতরাষ্ট্র দুর্যোধনের এই
অশুভ পরিকল্পনা অনুমোদন করেনি। মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্রের
জীবনে দেখা যায় তাঁর বিবেক বুদ্ধি মাঝে মাঝে তাঁকে ধর্মপথে চলতে সাহায্য করেছে। কিন্তু, তার সেই শুভবুদ্ধি অতি অল্পক্ষণ স্থায়ী থাকতো। ভীষ্ম ও বিদুরের
কাছ থেকে অনেক ধর্মকথা শুনলেও, পুত্রপ্রেমে পাগল
হয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সব ভুলেও গেছে।
ধৃতরাষ্ট্র জানতেন শ্রীকৃষ্ণের সাথে শত্রুতা করলে তাদের সমস্ত কিছুই নষ্ট হবে; কারণ শ্রীকৃষ্ণ ছিল নররুপী ভগবান। তাই, দুর্যোধন শ্রীকৃষ্ণকে বন্দি করতে চাইলে ধৃতরাষ্ট্র বাঁধা
দেয়। সন্ধি প্রস্তাবে ভীষ্ম, দ্রোণ, বিদুর ও ধৃতরাষ্ট্র সকলেই শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শ মেনে নেওয়ার
জন্য দুর্যোধনকে অনুরোধ করে। কিন্তু দাম্ভিক দুর্যোধন যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে সকলের অনুরোধ
অমান্য করে। আর এভাবেই শান্তি স্থাপনে শ্রীকৃষ্ণের শেষ প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
ফিরে আসার সময় শ্রীকৃষ্ণ বিদুরকে
বলেছিল, “বিদুর, আমি
জানি আমার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। তবুও একবার শেষ চেষ্টা করেছি, যদি কৌরবদের আসন্ন
ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো যায়। লোকে জানবে, আমি নিজেও বুঝবো- আমি চেষ্টার ত্রুটি
করেনি (উদ্যোগপর্ব)।” সেদিন আসন্ন ভয়াবহ যুদ্ধের হাত থেকে
ভারতবর্ষ ও কুরুকুলকে বাঁচানোর সর্বান্তকরণ চেষ্টা করেছিল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ......
(পর্ব ৮)
-----------------------------
মহাভারতে ভয়াবহ যুদ্ধের হাত থেকে
ভারতবর্ষ ও কুরুকুলকে বাঁচানোর জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সর্বান্তকরণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। তিনি শান্তি
চাইতে গিয়েছিলো বলেই দুর্যোধন-কর্ণরা তাকে বন্দি করার দুঃসাহস দেখিয়েছিল।
দুর্যোধনের এই চরম অহংকার যুদ্ধের পথটা এতটাই প্রতিষ্ঠা করে দিল যে, কুরু-পাণ্ডবের
যুদ্ধ রূপ নিল ধর্মযুদ্ধে। এই ধর্মযুদ্ধ না করাটাই এখন অন্যায় পাপ হবে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে যুদ্ধের আয়োজন করতে বলে। শান্তির জন্য
যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও তিনি কাপুরুষতা ও ক্লীবত্বের পক্ষপাতী ছিল না। কৌরবদের
সীমাহীন লোভ ও ঈর্ষার জন্য শ্রীকৃষ্ণ মনস্থির করলেন যুদ্ধে জয়ী হয়ে পাণ্ডবদের
মাধ্যমে ভারতে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করবে। কারণ, শ্রীকৃষ্ণের যথার্থ উদ্দেশ্যই হলো-“ধার্মিককে
রক্ষা করে দুষ্কৃতির বিনাশ এবং অধর্ম দূর করে ধর্মের সংস্থাপন।”
কুরু ও পাণ্ডবগণ যুদ্ধের জন্য অর্থ ও সৈন্য সংগ্রহ করতে শুরু করে। কৌরব
পক্ষে যোগ দিয়েছে শ্রীকৃষ্ণের শত্রুরা। ক্ষত্রিয়ের পক্ষে সারথির কর্ম কোনদিন গৌরবজনক
নয়, অথচ শ্রীকৃষ্ণ সেই কর্মই স্বেচ্ছায় বেছে নিলো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে। নিরস্ত্র
হয়ে প্রিয় সখা অর্জুনের সারথি হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবপক্ষে যোগ দিলো। এতে
প্রমাণিত হয় যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিব্যজীবনে কোন মানুষী দুর্বলতার স্থান ছিল না।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যারা দুর্যোধনকে সৈন্য দিয়ে সাহায্য করে তাঁরা ছিল
সুযোগ-সন্ধানী; যাদের মধ্য অনেকেই কুরুবংশের প্রভাবকে ভাঙতে চায়। এদের মধ্য
উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মদ্র, অবন্তী, সিন্ধুপ্রদেশ; যাদের সাথে বর্বর জাতিও ছিল।
অন্যদিকে, পাঞ্চাল ও যাদববংশ সহ যারা অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন দেখেছে তাঁরা সকলেই
পাণ্ডবপক্ষে যোগ দেয়।
মহাভারতের যুদ্ধ এমন একটি সময়ে সংঘটিত হয়; যখন সমাজের ক্ষত্রিয়গণ আসুরিক
ভাবাপন্ন হয়ে পড়ে। এই সমাজে দুর্যোধন ছিল স্বেচ্ছাচার, দর্প ও অহঙ্কারের প্রতীক।
বলা হয়ে থাকে যে, কলিযুগের প্রভাব তখন থেকেই আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, শুধুমাত্র
শ্রীকৃষ্ণের কারনে কলি তার প্রভাব বিশেষ ভাবে বিস্তার করতে পারে নি।
স্বয়ং ভগবান যার সাথে থাকে, তার ক্ষতি করার সাধ্য কারো নেই। মহাভারতে
দুর্যোধন শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান ও সর্বসংহার কর্তা জেনেও পাণ্ডবদের প্রতি প্রবল হিংসার
কারনে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি বিদ্রোহী হয়। আমরা মানুষ; তাই আমাদের জীবনে দুর্বলতা স্বাভাবিক। কিন্তু অত্যধিক
দুর্বলটার ফল একসময় আমাদের ভোগ করতেই হয়। মহাভারত আমাদের সেই শিক্ষায় দেয়। গীতায়
বলা আছে, “কর্মের ফলদাতা ভগবান এবং এই কর্মই আমাদের সুখ-দুঃখের কারণ।” তাই,
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নিজ নিজ কর্ম অনুসারেই পাণ্ডবদের জয় ও কৌরবদের পরাজয় ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ আগেই লিখে রেখেছিলো......
(To be Continue….)
# শ্রী জয় রায়,
সনাতন ভাবনা ও সংস্কৃতি
এই লেখার পরবর্তী পর্বগুলো পড়ুনঃ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন