এক রহস্যময় দরজা। পাহারা দিচ্ছে দুই নাগ। তাঁদের মূর্তি খোদাই করা আছে দরজার গায়ে। পিছনে গোপন প্রকোষ্ঠে রাখা আছে অতুল ঐশ্বর্য।
যুগ যুগ ধরে এই রহস্যময়তার সাক্ষী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরে। কেরালার তিরুবনন্তপুরমে এই তীর্থস্থান ৫০০০ হাজার বছরের প্রাচীন। কলিযুগ শুরুর দিনে নাকি তৈরির কাজ আরম্ভ হয়েছিল।
তারপর বিভিন্ন সময়ে সংস্কার সাধন করেছেন নানা শাসক। সবথেকে উল্লেখযোগ্য হলেন ষোড়শ শতকের চের বংশীয় রাজারা। এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সাধক কুলশেখর আলওয়ার। বর্তমানে ত্রাভাঙ্কোরের রাজবংশই এই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। রাজাদের উপাধি হল ‘পদ্মনাভদাস‘। অর্থাৎ বিষ্ণুর সেবক।
বিষ্ণুর ১০৮ টি দিব্য দেশমের মধ্যে অন্যতম এই মন্দির। ভগবান বিষ্ণু এখানে অনন্তশয়ানে। নাগরাজ অনন্তর উপরে তিনি যোগনিদ্রায় নিদ্রিত। শ্রী বিষ্ণুর নাভিমূল থেকে উদ্ভূত পদ্ম। তাই তিনি পদ্মনাভন। তাঁর ডান হাত শায়িত শিবলিঙ্গের উপরে। বিষ্ণুর পাশে আছেন দুই দেবী‚ শ্রীদেবী ও ভূদেবী।
হিন্দু ধর্মের মানুষই প্রবেশ করতে পারেন। অনুসরণ করতে হয় কড়া পোশাকবিধি। বৈদিক ও দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যে নির্মিত এই মন্দির নাকি অতুল ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার। তার সামান্যই সামনে এসেছে। গুপ্তধন হয়ে রক্ষিত আছে অকল্পনীয় রাজঐশ্বর্য। বিশ্বের মধ্যে ধনীতম মন্দির এটি।
মন্দিরে আছে মোট ছটি গুপ্ত প্রকোষ্ঠ। ধনরত্নে পরিপূর্ণ। কথিত‚ চের রাজারা অভাবনীয় সম্পত্তি মন্দিরে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
ছটি প্রকোষ্ঠের মধ্যে পাঁচটি খোলা হয়েছে। একটি বাদে। রহস্যময় দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠ। দেবমূর্তির সবথেকে কাছে আছে সেটি। এবং টেম্পল ট্রেজারির মালিকানাও নেই ওর উপরে।
কয়েক বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট সাত সদস্যের কমিটি তৈরি করে। মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সামনে সেই কমিটি উদ্যোগ নেয় প্রকোষ্ঠ খোলার। উন্মুক্ত করা হয় পাঁচটি প্রকোষ্ঠ। কিন্তু বহু চেষ্টাতেও খোলা যায়নি দ্বিতীয়টি।
কিন্তু বাকি পাঁচটিতে কী ছিল ?
ছিল রাশি রাশি হিরের গয়না‚ সোনা-রুপোর বাসন‚ সোনার অস্ত্র‚ সোনার মূর্তি‚ ৫০০ কেজি ওজনের হিরের নেকলেস‚ নানা দেশের অগণিত স্বর্ণমুদ্রা‚ ৯ ফিট লম্বা ২.৫ কেজি ওজনের সোনার হার‚ সোনার দণ্ড‚ সোনার রশি‚ সেইসঙ্গে ফেলে ছড়িয়ে রাখা চুনী পান্নার মতো অমূল্য রত্ন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন‚ সুন্দর করে রাখা নয়। যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে। কিছু বাক্সে‚ কিছু মাটির বাসনে‚ কিছু তামার পাত্রে…উপচে পড়ছে গুপ্তধনের ভাণ্ডার। স্বর্ণমুদ্রার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির আমলের ৭ কেজি মুদ্রা‚ নেপোলিয়নের সমসাময়িক ১৮ টি মুদ্রা।
পাঁচটি প্রকোষ্ঠে শুধু সোনাই পাওয়া গেছে ১ লাখ কোটি টাকার। প্রচলিত বিশ্বাস‚ না খুলতে পারা দ্বিতীয় ঘরে আছে এর থেকেও বেশি ঐশ্বর্য। বহু প্রয়াসেও খোলেনি সেই দরজা। সেরা কর্মকারও ব্যর্থ হয়েছে মরচে ধরা প্রচীন তালা খুলতে।
প্রাচীন জনশ্রুতি হল‚ কোনও প্রযুক্তি এই দরজা খুলবে না। একমাত্র প্রকৃত জ্ঞানী সাধু বা তান্ত্রিকই দ্বারোদ্ঘাটন করতে পারবেন। নাগবন্ধনম মন্ত্র এবং গরুড় মন্ত্র দ্বারা। কারণ স্বয়ং অনন্তনাগ পাহারা দিচ্ছেন এই প্রকোষ্ঠ। প্রক্রিয়ায় কোনওরকম বিচ্যুতি হলে নাকি অশুভ প্রভাব অনিবার্য।
যদিও প্রাক্তন Comptroller and Auditor General বা CAG বিনোদ রাই এই রহস্য মানতে নারাজ। তাঁর দাবি‚ ১৯৯০ থেকে অন্তত সাত বার এই প্রকোষ্ঠ খোলা হয়েছে। কিন্তু ভিতরে কী রাখা আছে তা প্রকাশ করা হয়নি।
এটা মানতে বাধা নেই‚ ভারতে যদি কোথাও এল ডোরাডো থাকে তা নিঃসন্দেহে কেরলের পদ্মনাভস্বামী মন্দির।
- ইন্টারনেট
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন