১২ মে ২০২০
Home »
আদ্যশক্তি
» বাংলা সাহিত্যের চণ্ডীমঙ্গল কাব্য ও বাংলায় গৃহে গৃহে আরাধিতা মঙ্গলচণ্ডী নিয়ে কিছু কথা।
বাংলা সাহিত্যের চণ্ডীমঙ্গল কাব্য ও বাংলায় গৃহে গৃহে আরাধিতা মঙ্গলচণ্ডী নিয়ে কিছু কথা।
চণ্ডীমঙ্গল কাব্য বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্যের মধ্যে একটি স্থান অধিকার করে আছে । এই কাব্য “ভবানীমঙ্গল” নামেও উল্লেখিত। এথেকে বোঝা যায় বাংলায় একসময় চণ্ডী আরাধনার ব্যপক প্রচলন ছিলো, বর্তমানে তিনিই মঙ্গলচণ্ডী নামে গৃহে গৃহে আরাধিতা । যতগুলি লেখকের লিখিত ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্য পাওয়া যায়- সবটিতেই দুটি কাহানীর উল্লেখ পাওয়া যায়- ১) আক্ষেটি খণ্ড ( কালকেতু ও ফুল্লরার উপাখ্যান ), ২) বণিক খণ্ড ( ধনপতি বণিকের উপাখ্যান, কমলেকামিনী মূর্তি দর্শন ) । এছাড়া গ্রন্থের পূর্বে “দেবখণ্ড” নামক একটি অধ্যায় দেখা যায় যেখানে শিব পার্বতীর কাহানী ও দেবতাদের বন্দনা । চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আদি রচয়িতা মানিক দত্ত । গবেষক দের মতে মাণিক দত্ত মালদহ এর কবি। কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম তাঁর রচিত চণ্ডীমঙ্গলে বারংবার শ্রদ্ধার সহিত মাণিক দত্তের নাম উল্লেখ করেছেন । চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের অন্য কবি দ্বিজমাধব বা মাধব আচার্য । গবেষক দের মতে ১৫৭৯ শকাব্দে ইনি গ্রন্থ রচনা সমাপ্ত করেন , তিনি প্রথমে নবদ্বীপের বাসিন্দা ছিলেন, পড়ে চট্টগ্রামে চলে যান।
“চণ্ডীমঙ্গল” কাব্যের সবচেয়ে উল্লেখ্য কবি হলেন কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী । বর্ধমানের দামিন্যা গ্রামে এঁনার জন্ম । পড়ে ইনি পরিবার এর সাথে জন্মভূমি ছেড়ে মেদিনীপুরের ব্রাহ্মণভূমির জমিদার বাঁকুড়া রায়ের আশ্রয়ে আসেন । এইসময় একদা দেবী চণ্ডী স্বপ্নে মুকুন্দরামকে দর্শন দিয়ে তাঁর মহিমা বিষয়ক গ্রন্থ লেখতে আদেশ করেন । মুকুন্দরাম একসময় জমিদার বাঁকুড়া রায়ের সন্তানের গৃহশিক্ষক ছিলেন । পরবর্তীতে মুকুন্দরামের সেই ছাত্র জমিদার হয়ে মুকুন্দরামকে চণ্ডীকাব্য লিখতে অনুরোধ জানান। স্বপ্নাদেশ ও জমিদারের ইচ্ছা মেনে মুকুন্দরাম “চণ্ডীমঙ্গল” কাব্য রচনা করতে বসলেন । আনুমানিক ১৫৮৪ সনে তাঁর গ্রন্থ লেখা সমাপ্ত হয় । এই কাব্য “চণ্ডীমঙ্গল” কাব্যের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় । কালকেতু ও ফুল্লরার উপাখ্যান চণ্ডীমঙ্গলের সবথেকে জনপ্রিয় উপাখ্যান । দেবাদিদেব মহাদেবের অভিশাপে ইন্দ্রপুত্র নীলাম্বর শাপিত হয়ে মর্তে ব্যাধ হয়ে জন্ম নেন, তাঁর নাম কালকেতু , অপরদিকে নীলাম্বরের স্ত্রী ছায়া স্বামীকে অনুসরণ করে মর্তে ব্যাধিনী হয়ে জন্মান- এঁর নাম ফুল্লরা। দরিদ্র পরিবারের ব্যাধ আর ব্যাধিনী দম্পতি কে দিয়েই দেবী চণ্ডী তাঁর লীলা আরম্ভ করেন । ব্যাধ কালকেতু দেবীর কৃপায় গুজরাট নগরীর রাজা হন । আজোও দেবী মঙ্গলচণ্ডীর পূজায় পাঁচালীতে দেবীর এই লীলামাহাত্ম্য পাঠ হয় ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন