১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩

রাধারাণীর দিব্য জন্মস্থান




পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিত্য লীলাবিলাস স্থান শ্রীবৃন্দাবন। এ স্থানের ধূলিকণাও এত পবিত্র যে স্বয়ং শ্রীব্রহ্মাসহ সকল দেবতারা এই পবিত্র ভূমির ঘাস হয়ে জন্মাতে অভিলাষ করেন। শ্রীবৃন্দাবন ধাম সকলেরই আরাধ্য। কিন্তু কালের প্রভাবে একসময় এই ধাম অবলুপ্ত হলে কলিযুগের পাবনাবতারী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই ধামের বহু স্থান উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে তিনি তার প্রিয় ষড় গোস্বামীদের উক্ত ধাম পরিচর্যার দায়িত্ব অর্পন করেন। ষড় গোস্বামীগণও বৃন্দাবনের বহু লুপ্ত স্থান উদ্ধার করেন।
বৃন্দাবনের নিকটবর্তী বর্ষাণা এলাকার অন্তর্গত রাভেল নামক অতি পবিত্র স্থানে বৃন্দাবনেশ্বরী শ্রীমতি রাধারাণী আর্বিভূত হন। শ্রীমতি রাধারাণীর আবির্ভাব সম্বন্ধে যে বর্ণনা শাস্ত্রে রয়েছে, তা হল, একদিন রাজা বৃষভানু যমুনা নদীতে স্নান করতে যান। সেই সময়ে যমুনা নদী বর্ষাণার রাভেল স্থানটির পাশ দিয়ে বয়ে যেত। ঐ স্থান দিয়ে এক কালে যমুনা নদী যে বয়ে যেত তা ভূতত্ত্বগত প্রমাণ রয়েছে। সেই যাই হোক, রাজা বৃষভানু যমুনা নদীতে স্নান করতে গিয়ে দেখলেন সহস্য সূর্যের আলোকের মতো জ্যোতির্ময় এক সোনার পদ্ম ঠিক যমুনা নদীর মাঝখানে ফুটে রয়েছে। আর সেই সোনার পদ্মের মধ্যে রয়েছে একটি ছোট শিশুকন্যা। প্রথমে রাজা বৃষভানু বিস্মিত হলেন। কিন্তু ব্রহ্মাজী তখন সেই স্থানে আর্বিভূত হয়ে রাজা বৃষভানুর বিস্ময়ের নিরসন করলেন। তিনি জানালেন যে রাজা বৃষভানু ও তাঁর পত্নী কীর্তিদা পূর্বজন্মে ভগবান বিষ্ণুর পত্নীকে কন্যারূপে লাভ করার জন্য কঠোর তপস্যা সম্পাদন করেছিলেন। সেই তপশ্চর্যার ফলস্বরূপ এই জন্মে তাঁরা স্বয়ং ভগবানের শক্তি তথা পত্নীকে এইভাবে কন্যারূপে লাভ করেছেন। ব্রহ্মাজীর কথা শুনে রাজা বৃষভানু সেই শিশুকন্যা শ্রীমতি রাধারাণীকে নিজ গৃহে নিয়ে এলেন। কিন্তু দেখা গেল সেই শিশু রাধারাণী কিছুতেই চোখ খুলছেন না। তাঁর চোখ সর্বদা বন্ধ রয়েছে। তবে কি এই শিশুকন্যা অন্ধ ? সকলের এই প্রশ্ন নিরসনের উদ্দেশ্য অবশেষে নারদমুনি রাজা বৃষভানুর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে শিশুর এই অন্ধত্ব অবস্থা সত্ত্বেও শিশুর জন্মকালীন সকল ধরনের শুভ উৎসবাদির আয়োজন গৃহে করতে বললেন। নারদমুনীর কথা অনুযায়ী রাজা বৃষ্ণভানু গৃহে উৎসবের আয়োজন করলেন। সেই উৎসবে নন্দ মহারাজ ও শিশু কৃষ্ণসহ সপরিবারে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। ঐ অনুষ্ঠানে আগমন করে শিশু কৃষ্ণ যখন হামাগুড়ি দিয়ে শিশু রাধারাণীর দিকে এগিয়ে গেলেন, রাধারাণী তখন এক দিব্য সৌরভের ঘ্রাণ লাভ করলেন, আর সেই মুহুর্তে রাধারাণী চোখ খুলে প্রথমে দর্শন করলেন তার নিত্য পতি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে। আজ থেকে ৫ হাজার বছর পূর্বে বর্ষাণা ক্ষেত্রের রাভেল নামক স্থানে এইসব ঘটনা ঘটেছিল।
এখন রাভেল অত্যন্ত নির্জন এক প্রান্তর। স্বল্প জনসংখ্যার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। তবে এখনও শ্রীমতি রাণারাণীর লীলাস্থলিগুলো বর্তমান। আসুন আমরা চিত্র অনুসারে সেই দিব্য তীর্থস্থান সমূহ দর্শন করি :
১. রাভেলে একটি মাত্র মন্দির রয়েছে। মন্দিরটি লাইরি লাল মন্দির নামে খ্যাত।
২. খুব ছোট কিন্তু খুব সুন্দর শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণের প্রপৌত্র বজ্রনাভ এই বিগ্রহ প্রতিষ্টা করেছিলেন। মন্দিরটি সাদামাটা ছিচছাপ ধরণের।
৩. মন্দির দর্শন ও পরিক্রমার পর আপনি মন্দিরটির প্রশস্ত ছাদে উঠে একদা যমুনা বয়ে যাওয়ার চিহৃ সুস্পষ্ট দেখতে পাবেন। হাজার বছর আগে এখানেই বয়ে যাওয়া যমুনা থেকেই কীর্তিদা ও বৃষভানু রাজা রাধারাণীকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। ভক্তের দৃষ্টিতে এই নির্জন রাভেলের মন্দির প্রাঙ্গন অনবদ্য।
৪. মন্দিরের বিপরীত দিকে রয়েছে রাধারাণীর উদ্যান। এই স্থানে শ্রীমতি রাধারাণী বিভিন্ন লীলাবিলাস সম্পাদন করেন।
৫. এই উদ্যানে প্রায় অঙ্গাঙ্গিভাবে রয়েছে একটি সাদা রঙের ও একটি কালো রঙের দুটি বৃক্ষ, যা রাধাকৃষ্ণ বৃক্ষ নামে পরিচিত।
বর্ষাণায় অনেকেই গমন করেন। কিন্তু রাধারাণীর মূল এই জন্মক্ষেত্র রাভেল অনেকের কাছেই হয়তো এখনো অজানা। এখনো অতি সাধারণ গ্রামটিতে শ্রীমতি রাধারাণীর দিব্য উপস্থিতি অনুভব করা যায়। তাই আপনি যদি শ্রীমতি রাধারাণীর কৃপা লাভ করতে চান তাহলে বৃন্দাবন পরিক্রমায় এই অপ্রাকৃত ধাম রাভেল দর্শন করে আসতে পারেন।
তথ্যসূত্র- মাসিক চৈতন্য সন্দেশ
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।