ভূমিকা :
সনাতনধর্মে গৌরব করার মতো বহু কিছু রয়েছে। অথচ আজকাল আমরা অনেকেই আছি আমাদের সনাতনধর্মীয় সাধারণ ধারণাটুকুও রাখতে চেষ্টা করি না। অথচ অন্যের জিনিসটি আয়ত্ব করতে বা বলতে বেশ ভালই পারি! যুবসমাজের অনেকেই তাদের মোবাইল ফোনট Receive করেন অন্য ধর্মমতের সম্বোধন দিয়ে। অপরিচিত কারো সামনে গিয়েও আমাদের ধর্মমতে ঐতিহ্যগত শব্দ (নমস্কার বা আদাব) না বলে সেই সব ভাষায় কথা বলতে দেখা যায়! আমরা জোড় হাত বুকে রেখে অবনত মস্তকে ‘নমস্কার’ করি। নমস্কারের তাতপর্য কত চমতকার সে কথা ভাবি না! আচার্য ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী নমস্কারের সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তা হলো- আমার সকল হৃদয়, মন, অঙ্গাদি দিয়ে আপনার মধ্যে যে ঈশ্বর বাস করছেন, তাকে অভিবাদন জানাচ্ছি। কারো মৃত্যু সংবাদ শুনলেও অন্যের কথাটি ভাল বলতে দেখা যায়! কিন্তু সনাতনধর্মাবলম্বীগণকে বলতে হয়- ‘দিব্যান লোকান্ স গচ্ছতু’ (তিনি দিব্যলোকে গমন করুন); ঐ কথাটি হয়তো অনেকের জানা নেই। এ প্রসঙ্গে স্বামী প্রণবানন্দজীর ভায়ায় বলতে হয়- ‘মানুষের উত্থান-পতন যে কোনো সময় হইতে পারে।
প্রলোভনই পতনের মূল। অধঃপতন হয় তখন যখন সে আপনার স্বরূপ ভুলিয়া, প্রকৃত জিনিস ছাড়িয়া বাহিরের খোসা লইয়া টানাটানি করে।’ আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, সনাতনধর্ম কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি দ্বারা প্রবর্তিত নয়। স্বয়ং ভগবান কর্তৃক প্রবর্তিত। সনাতনধর্মে গৌরব করার মতো বা শ্রেষ্ঠত্বের চারটি বিষয়ে [(ক) সার্বজনীন প্রার্থনা (খ) মূর্তিপূজা, (গ) দেব-দেবীর সংখ্যা এবং (ঘ) জাতিভেদ প্রথা ] সংক্ষেপে নিম্ন আলোচনা লক্ষ্য করা যাক-সনাতনধর্মে গৌরব করার মতো বহু কিছু রয়েছে। অথচ আজকাল আমরা অনেকেই আছি আমাদের সনাতনধর্মীয় সাধারণ ধারণাটুকুও রাখতে চেষ্টা করি না। অথচ অন্যের জিনিসটি আয়ত্ব করতে বা বলতে বেশ ভালই পারি! যুবসমাজের অনেকেই তাদের মোবাইল ফোনট Receive করেন অন্য ধর্মমতের সম্বোধন দিয়ে। অপরিচিত কারো সামনে গিয়েও আমাদের ধর্মমতে ঐতিহ্যগত শব্দ (নমস্কার বা আদাব) না বলে সেই সব ভাষায় কথা বলতে দেখা যায়! আমরা জোড় হাত বুকে রেখে অবনত মস্তকে ‘নমস্কার’ করি। নমস্কারের তাতপর্য কত চমতকার সে কথা ভাবি না! আচার্য ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী নমস্কারের সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তা হলো- আমার সকল হৃদয়, মন, অঙ্গাদি দিয়ে আপনার মধ্যে যে ঈশ্বর বাস করছেন, তাকে অভিবাদন জানাচ্ছি। কারো মৃত্যু সংবাদ শুনলেও অন্যের কথাটি ভাল বলতে দেখা যায়! কিন্তু সনাতনধর্মাবলম্বীগণকে বলতে হয়- ‘দিব্যান লোকান্ স গচ্ছতু’ (তিনি দিব্যলোকে গমন করুন); ঐ কথাটি হয়তো অনেকের জানা নেই। এ প্রসঙ্গে স্বামী প্রণবানন্দজীর ভায়ায় বলতে হয়- ‘মানুষের উত্থান-পতন যে কোনো সময় হইতে পারে।
খ. মূর্তিপূজা
‘আমরা কেন মূর্তি বা প্রতিমা পূজা করি’ প্রশ্নটি করলে আমরা উত্তর দিতে পারি না। এ আমাদের দুর্ভাগ্য! যুধিষ্ঠির মহারাজকে ধর্মরূপী যক্ষ প্রশ্ন করেছিল- সবচেয়ে চঞ্চল কী? যুধিষ্ঠির মহারাজ উত্তর দিলেন- মন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায়ও বলা হয়েছে-
‘চঞ্চলং হি মনঃ কৃষ্ণ প্রমাথি বলবদ্দৃঢ়ম্।
তস্যাহং নিগ্রহং মন্যে বায়োরিব সুদুষ্করম্ ॥
অর্থাত হে কৃষ্ণ! মন স্বভাবতঃ চঞ্চল, মোহকারী বায়ুকে যেমন নিগ্রহ করা দুষ্কর, সেরূপ মনের নিগ্রহ করাও কঠিন বলে মনে করি’(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, ৬/৩৪)। আমাদের এ চঞ্চল মনকে স্থির করার জন্যই মূর্তিপূজা নয়, মূর্তিতে পূজা করা হয়। ‘মনকে জয় করলে ভগবানকে শুধু পাওয়া নয়, ভগবান হওয়া যায় (স্বামী প্রণবানন্দজী)।’
মূর্তি বা প্রতিমা ঈশ্বরের বসার স্থান মাত্র। মূর্তিপূজায় বৈদিক ঋষিগণ মাটির প্রতিমায় মন্ত্রের দ্বারা প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও চক্ষু দানের মাধ্যমে চিন্ময়ী করে, পূজার বিধান দিয়েছেন। ঋষিগণের এ সাহসের গর্ব আমরাই করতে পারি! মূর্তিপূজা বিষয়ে চিকাগো ধর্মসভায় স্বামী বিবেকানন্দ মনোবিজ্ঞানের সাহায্যে বুঝিয়েছিলেন-`We just cannot think anythings without metarialimage' অর্থাত বস্তুগত প্রতিচ্ছবি ছাড়া আমরা কিছু চিন্তা করতে পারি না। ‘হিন্দুরা মূর্তিপূজক নন, তাঁর আদর্শের পূজারী’। স্বামীজী এ কথাও বলেছেন-
‘পুতুল পূজা করে না হিন্দু
কাঠ মাটি দিয়ে গড়া
মৃন্ময়ী মাঝে চিন্ময়ী হেরে
হয়ে যাই আত্মহারা।’
স্বামী প্রণবানন্দজী বলেছেন- ‘কাঠের পুতুলে, মাটির পুতুলে প্রাণ সঞ্চার করে আমি আমার অভিপ্রেত কাজ করব। আমার শক্তি ও আশীর্বাদ তাদের মধ্যে শক্তি সঞ্চার করবে- যারা দেশের জন্য আর দশের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করবে।’ আবার শিক্ষা গ্রহণের জন্য বলেছেন- ‘হিন্দু! তুমি কি জান না- তুমি শক্তির পূজক, মহাশক্তির উপাসক? তোমার সেই শক্তির সাধনা কোথায়? শিবের হাতে ত্রিশূল, তাহা দেখিয়া তুমি কী চিন্তা করিবে? শ্রীকৃষ্ণের হাতে সুদর্শন, তাহা দেখিয়া তুমি কী ভাবনা ভাবিবে? কালীর হাতে রক্তাক্ত খড়গ, দুর্গার হাতে দশপ্রহরণ, তাহা দেখিয়া তুমি কী শিক্ষা লাভ করিবে? এই মহাশক্তির সাধনা করিয়া মানুষ দুর্বল হইতে পারে কি? একবার ধীর স্থির হইয়া চিন্তা কর।’ মূর্তিপূজা সবাই করে। কোনো আস্তিক ব্যক্তি যদি মূর্তিপূজায় অনিচ্ছুকও হন তবু তাঁর দ্বারা প্রকারান্তরে মূর্তিপূজা হয়ে থাকে। কেমন করে? বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি বলে থাকে- ‘আপনি বেদ মানেন, আপনি হিন্দু। সকলে সমিতির পতাকা তলে একত্রিত হয়ে কাজ করতে পারেন।’ এ কথাও এক প্রকার মূর্তিপূজা। কীভাবে? ‘তিনি যদি বেদাদি গ্রন্থ মানেন এবং সে অনুযায়ী চলতে মনস্থ করেন তা হলে প্রকারান্তরে তার দ্বারা মূর্তিপূজাই হয়। কারণ বেদও (লিখিত পুস্তক হিসেবে) মূর্তিই। বেদ ইত্যাদি গ্রন্থকে সম্মান জানানোও একপ্রকার মূর্তিপূজা’। ‘আমরা যখন কোনো বিদ্বান ব্যক্তিকে সম্মান জানাই, তাতে আমরা তাঁর বিদ্যাকেই সম্মান জানালাম, রক্তমাংসের শরীরটিকে নয়। এইরূপই যে ব্যক্তি মূর্তিতে ভগবানকে মানেন, তাঁরা আসলে ভগবানকেই সম্মান জানিয়ে থাকেন, মূর্তিকে নয়।’ (মূর্তিপূজা- স্বামী রামসুখদাস) সুতরাং ঐ অর্থে সবাই মূর্তির পূজক। লক্ষণীয় যে,সকল পূজায় প্রথমেই ঘট বসানো হয় যা অতীব বিজ্ঞান সম্মত। ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুত, ব্যোম (মাটি, জল, আগুন, বাতাস ও আকাশ) এই পঞ্চতত্ত্বের সমন্বয় তথা সৃষ্টির প্রথম প্রাণীর আবির্ভাব যে জলে, তারই আবাহন জানানো হয় ঐ ঘটে। ঘট এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ও মানুষের দেহভাণ্ডের প্রতীক। ঘট, পট, মূর্তি, বৃক্ষ, পাথর, পশু-পাখি সবার মধ্যেই সনাতনধর্মাবলম্বীগণ ঈশ্বর দর্শন করেন এবং গুণাগুণ বিচার করে হাজার হাজার বছর পূর্বেই ঋষিগণ পূজার বিধান দিয়েছেন। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে বৃক্ষরোপণ, পশু-পাখি রক্ষায় সরকারও এখন ততপর।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন