সেন শাসনামলে রাজা বল্লাল সেনের হাতেই ঢাকায় প্রথম
মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরটি ঢাকেশ্বরী
মন্দির নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে
শঙ্করাচার্যের গিরিধারী অনুসারীরা রমনায় একটি মঠ নির্মাণ করেন। পরে তা রমনা কালীমন্দির হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ঢাকার আদি বাসিন্দা বলে খ্যাত বসাকরা ছিলেন বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারী। তাঁরা মৈশুণ্ডীতে মন্দির নির্মাণ করে উপাসনা করতেন। মৈশুণ্ডীতে প্রাচীন
মন্দিরের স্থলে বর্তমানে নির্মিত হয়েছে ইসকন মন্দির।
এভাবেই বিচ্ছিন্নভাবে মন্দির নির্মাণ চলছিল। তবে সুলতানি আমলে এতে ভাটা পড়ে। মোগল আমলে আবার মন্দির নির্মাণ শুরু হয়। তখন ক্ষুদ্র ভূস্বামীরা নিজ এলাকায় স্বাধীনভাবেই বাস করতেন। বিক্রমপুরের অধিপতি চাঁদ রায় ষোল শতকের আশির দশকে ঢাকায় একটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেটি আজ সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির হিসেবে পরিচিত। ষোল শতকের শেষ দিকে সম্রাট আকবরের সেনাপতি মান সিংহ ঈশা খাঁকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে বাংলায় আসেন। তখন তিনি ঢাকায় একটি দিঘি খনন করেন এবং নামকরণ করেন গঙ্গাসাগর। এ দিঘির পাশেই একটি কালীমন্দির নির্মাণ করেন, নাম বরদেশ্বরী কালীমন্দির। সে মন্দির আজও আছে স্বনামে। ঢাকার যেসব সুবাদার পরধর্মসহিষ্ণু ছিলেন, তাঁদের সময়ও ঢাকায় মন্দির নির্মিত হয়। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্গত শ্রীশ্রী বুড়াশিব ধাম অন্যতম।
এ শহরে মন্দিরের বিকাশ ঘটে মূলত ইংরেজ আমলে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণে জমিদারি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়। এ কারণে হিন্দুদের মধ্যে একটি ধনিক শ্রেণী সৃষ্টি হয়। তারা ঢাকায় বাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি সৌন্দর্যময় মন্দিরও নির্মাণ করে। তা ছাড়া নবাবি আমলে বেশ কিছু মেধাবী হিন্দু উচ্চ রাজকার্যে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের কারণেও ঢাকায় বেশ কিছু মন্দির নির্মিত হয়। আবার কেউ কেউ সাধু-সন্ন্যাসী বা গুরুর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য মঠ-মন্দির নির্মাণ করেন। এভাবেই ঢাকা মহানগরীতে তখন শতাধিক মন্দির নির্মিত হয়।
এসব মন্দির নির্মিত হওয়ার পাশাপাশি মন্দির স্থাপত্যকলারও বিকাশ ঘটে। সৃষ্টি হয় এক শ্রেণীর মন্দির নির্মাতার। প্রথাগত বাংলা রীতির সঙ্গে সুউচ্চ শিখর মন্দির এবং রত্নমন্দিরও দেখা যায় ঢাকায়। এমনকি দালানবাতির মন্দিরও দেখা যায়। যেমন_শাঁখারী বাজার কালীমন্দির। ঢাকার মন্দির নির্মাতাদের দক্ষতা ছিল সুবিদিত। সেই নির্মাতাদের দক্ষতার প্রমাণ আজও বহন করছে বেশ কয়টি মন্দির। ঢাকেশ্বরী মন্দির, জয়কালী মন্দির, রাম সাহা মঠ মন্দির তার অনন্য উদাহরণ। বিশেষ করে এসব মন্দিরের অলংকরণ বিস্ময়কর। মন্দিরের নির্মাণশৈলী দেখেই বোঝা যেত কোনো দেব-দেবী সেখানে পূজিত হন। নিচে ঢাকার ১০টি প্রাচীন ও স্থাপত্যিক সৌন্দর্যময় মন্দিরের পরিচিতি দেওয়া হলো :
১) ঢাকেশ্বরী মন্দির : ঢাকার সর্বপ্রাচীন মন্দির বলে পরিচিত। কথিত আছে বল্লাল সেন (১১৫৯-৭৯) এখানে একটি দুর্গা প্রতিমা পেয়ে মন্দিরটি নির্মাণ করেন। জনশ্রুতি আছে, ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকেই ঢাকা নামের উৎপত্তি। দুটি ভিন্ন কাঠামো দিয়ে মন্দিরটি গঠিত। পঞ্চরত্ন মন্দিরটির ভেতর দেবী দুর্গা নিত্য পূজিত হন। অপর মন্দিরগুলো শিব মন্দির। এটি দেশের জাতীয় মন্দির হিসেবে স্বীকৃত।
২) রমনা কালীবাড়ি : আদিতে এর নাম ছিল কৃপা সিদ্ধির আখড়া। শঙ্করাচার্যের গিরিধারী অনুসারীরা ১৪ শতকে এখানে মঠ নির্মাণ করে সাধন-ভজন করতেন। পরে এখানে বিশাল মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরের ভেতর পাষাণ কালী সংস্থাপিতা হন। মন্দিরের সামনে ছিল সিংহদ্বার। ১৯৭১ সালে ২৭ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রাচীন এ মন্দিরটি ধ্বংস করে।
৩) সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির : আনুমানিক ১৫৮০ সালে বিক্রমপুরের অধিপতি চাঁদ রায় এটি নির্মাণ করেন। একসময় বিরাট এলাকা নিয়ে মন্দিরটি ছিল। ছিল অরণ্য, বাগান এবং একটি পুকুর। এখন আর তা অবশিষ্ট নেই। আগে পৌষ মাসে এখানে মেলা বসত। এ মন্দিরে কালী দেবীর কষ্টিপাথরের মূর্তি আছে। সিদ্ধি লাভের জন্য এ মন্দিরটি বিখ্যাত। সেবাইত সৌমাবরণ গোস্বামী এখানে সিদ্ধি লাভ করেন। মা আনন্দময়ীও এখানে সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেন। তাই মন্দিরের নাম হয় সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির। সে এলাকাটিও এ নামে পরিচিত।
৪) বরদেশ্বরী কালীমন্দির : কথিত আছে ষোড়শ শতকের শেষের দিকে সম্রাট আকবর তাঁর সেনাপতি মান সিংহকে বাংলা বিজয়ের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। সেনাপতি মান সিংহ ঢাকার পূর্ব প্রান্তে এসে তাঁবু ফেলেন। তিনি এখানে গঙ্গাসাগর নামের একটি দিঘি খনন করেন। তিনি ঈশা খাঁকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে বর চেয়ে ওই দিঘির পাশে একটি কালীমন্দিরও নির্মাণ করেন। এরপর থেকে মন্দিরটির নামকরণ হয় বরদেশ্বরী কালীমন্দির। স্থানীয়ভাবে এটি রাজারবাগ কালীমন্দির হিসেবে পরিচিত।
৫) শ্রীশ্রী বুড়াশিব ধাম : এটি ঢাকার সর্বপ্রাচীন এবং সবচেয়ে সুন্দর শিব মন্দির। জনশ্রুতি আছে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় এ মন্দিরটি নির্মিত হয়। তবে বর্তমান কাঠামোটি বর্ধমানের রাজা স্যার বিজয় চাঁদ মাহ্তাব নির্মাণ করে দেন। স্বামী ব্রজানন্দ এখানে সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেন। মূলত তাঁর হাতেই মন্দিরটির শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। তবে '৭১ সালের ২৬ মার্চ এ মন্দিরের প্রধান সেবাইতসহ শত সাধুকে হত্যা করে পাকিস্তানি সৈন্যরা।
৬ ) জয়কালী মন্দির : ঢাকার বহুল পরিচিত এবং সৌন্দর্যময় মন্দির। তিন শতাধিক বছরের প্রাচীন এই মন্দিরে আদিতে দুটি চূড়া ছিল। কালীমন্দিরের ওপর ছিল পঞ্চরত্ন শিখর। তখন শুধু শিব মন্দিরের ওপর নির্মিত চূড়াটি বর্তমান। এই চূড়াটির অলংকরণ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। কৃষ্ণপ্রস্তর নির্মিত কালী দেবী এখানে নিত্য পূজিত হন। একসময় এই মন্দিরের বিপুল জমি ছিল। এখন শুধু মন্দিরের স্থানটি বর্তমান।
৭) শ্যামবাজার শিব মন্দির : ঢাকার অন্যতম প্রাচীন শিব মন্দির। বুড়িগঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে এই মন্দিরের ওপর একসময় সুউচ্চ চূড়া ছিল। ডয়লির আঁকা ছবিতে নর্থব্রুক হলের সঙ্গে এই মন্দিরটিও দেখা যায়। '৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যরা এই চূড়াটি গুঁড়িয়ে দেয়। সেবাইতসহ বহু লোককে হত্যা করে। ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরের ভেতর জগন্নাথ দেবও পূজিত হন। ভাওয়াল মেজ কুমার রমেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী দার্জিলিং থেকে মুগ্ধ হয়ে এ মন্দিরের সামনে কিছুদিন আশ্রয় নেন এবং মন্দিরের প্রসাদ খেয়ে জীবন ধারণ করেন।
৮) রাম সাহা মঠ মন্দির : নবরত্ন এ মন্দির জমিদার রাম সাহা নির্মাণ করেন। তাঁর নামানুসারেই এর নাম রাম সাহা মন্দির। প্রায় ২০০ বছর প্রাচীন এ মন্দির ঢাকার সর্বোচ্চ মন্দির হিসেবে পরিচিত। একসময় বহু দূর থেকে এ মন্দিরটি দেখা যেত। এই মন্দিরের বাহ্যিক অলংকরণ এবং ভেতরের কারুকাজ বিস্ময়কর। এ মন্দিরে শিব নিত্য পূজিত হন।
৯) স্বামীবাগ লোকনাথ আশ্রম : শক্তি ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠা মথুরামোহন মুখোপাধ্যায় ১৯০৫ সালে এ মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এক চালা দালানের ভেতর এখনো লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ভাস্কর্য আছে।
১০) গৌড়ীয় মাধব মঠ : নারিন্দায় শ্রী সিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ ১৯২১ সালে এ মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় পাঁচ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এ মন্দিরে রয়েছে কৃষ্ণ মন্দির, নাটমণ্ডপ ও যাত্রীনিবাস। কৃষ্ণ মন্দিরটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং শ্বেতপাথরে নির্মিত। এখানে শ্রীকৃষ্ণ এবং গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু নিত্য পূজিত হন। নাটমণ্ডপটিও অত্যন্ত দর্শনীয়।
courtesy: Ami Hindu (আমি হিন্দু)' পেজ
এভাবেই বিচ্ছিন্নভাবে মন্দির নির্মাণ চলছিল। তবে সুলতানি আমলে এতে ভাটা পড়ে। মোগল আমলে আবার মন্দির নির্মাণ শুরু হয়। তখন ক্ষুদ্র ভূস্বামীরা নিজ এলাকায় স্বাধীনভাবেই বাস করতেন। বিক্রমপুরের অধিপতি চাঁদ রায় ষোল শতকের আশির দশকে ঢাকায় একটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেটি আজ সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির হিসেবে পরিচিত। ষোল শতকের শেষ দিকে সম্রাট আকবরের সেনাপতি মান সিংহ ঈশা খাঁকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে বাংলায় আসেন। তখন তিনি ঢাকায় একটি দিঘি খনন করেন এবং নামকরণ করেন গঙ্গাসাগর। এ দিঘির পাশেই একটি কালীমন্দির নির্মাণ করেন, নাম বরদেশ্বরী কালীমন্দির। সে মন্দির আজও আছে স্বনামে। ঢাকার যেসব সুবাদার পরধর্মসহিষ্ণু ছিলেন, তাঁদের সময়ও ঢাকায় মন্দির নির্মিত হয়। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্গত শ্রীশ্রী বুড়াশিব ধাম অন্যতম।
এ শহরে মন্দিরের বিকাশ ঘটে মূলত ইংরেজ আমলে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণে জমিদারি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়। এ কারণে হিন্দুদের মধ্যে একটি ধনিক শ্রেণী সৃষ্টি হয়। তারা ঢাকায় বাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি সৌন্দর্যময় মন্দিরও নির্মাণ করে। তা ছাড়া নবাবি আমলে বেশ কিছু মেধাবী হিন্দু উচ্চ রাজকার্যে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের কারণেও ঢাকায় বেশ কিছু মন্দির নির্মিত হয়। আবার কেউ কেউ সাধু-সন্ন্যাসী বা গুরুর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য মঠ-মন্দির নির্মাণ করেন। এভাবেই ঢাকা মহানগরীতে তখন শতাধিক মন্দির নির্মিত হয়।
এসব মন্দির নির্মিত হওয়ার পাশাপাশি মন্দির স্থাপত্যকলারও বিকাশ ঘটে। সৃষ্টি হয় এক শ্রেণীর মন্দির নির্মাতার। প্রথাগত বাংলা রীতির সঙ্গে সুউচ্চ শিখর মন্দির এবং রত্নমন্দিরও দেখা যায় ঢাকায়। এমনকি দালানবাতির মন্দিরও দেখা যায়। যেমন_শাঁখারী বাজার কালীমন্দির। ঢাকার মন্দির নির্মাতাদের দক্ষতা ছিল সুবিদিত। সেই নির্মাতাদের দক্ষতার প্রমাণ আজও বহন করছে বেশ কয়টি মন্দির। ঢাকেশ্বরী মন্দির, জয়কালী মন্দির, রাম সাহা মঠ মন্দির তার অনন্য উদাহরণ। বিশেষ করে এসব মন্দিরের অলংকরণ বিস্ময়কর। মন্দিরের নির্মাণশৈলী দেখেই বোঝা যেত কোনো দেব-দেবী সেখানে পূজিত হন। নিচে ঢাকার ১০টি প্রাচীন ও স্থাপত্যিক সৌন্দর্যময় মন্দিরের পরিচিতি দেওয়া হলো :
১) ঢাকেশ্বরী মন্দির : ঢাকার সর্বপ্রাচীন মন্দির বলে পরিচিত। কথিত আছে বল্লাল সেন (১১৫৯-৭৯) এখানে একটি দুর্গা প্রতিমা পেয়ে মন্দিরটি নির্মাণ করেন। জনশ্রুতি আছে, ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকেই ঢাকা নামের উৎপত্তি। দুটি ভিন্ন কাঠামো দিয়ে মন্দিরটি গঠিত। পঞ্চরত্ন মন্দিরটির ভেতর দেবী দুর্গা নিত্য পূজিত হন। অপর মন্দিরগুলো শিব মন্দির। এটি দেশের জাতীয় মন্দির হিসেবে স্বীকৃত।
২) রমনা কালীবাড়ি : আদিতে এর নাম ছিল কৃপা সিদ্ধির আখড়া। শঙ্করাচার্যের গিরিধারী অনুসারীরা ১৪ শতকে এখানে মঠ নির্মাণ করে সাধন-ভজন করতেন। পরে এখানে বিশাল মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরের ভেতর পাষাণ কালী সংস্থাপিতা হন। মন্দিরের সামনে ছিল সিংহদ্বার। ১৯৭১ সালে ২৭ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রাচীন এ মন্দিরটি ধ্বংস করে।
৩) সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির : আনুমানিক ১৫৮০ সালে বিক্রমপুরের অধিপতি চাঁদ রায় এটি নির্মাণ করেন। একসময় বিরাট এলাকা নিয়ে মন্দিরটি ছিল। ছিল অরণ্য, বাগান এবং একটি পুকুর। এখন আর তা অবশিষ্ট নেই। আগে পৌষ মাসে এখানে মেলা বসত। এ মন্দিরে কালী দেবীর কষ্টিপাথরের মূর্তি আছে। সিদ্ধি লাভের জন্য এ মন্দিরটি বিখ্যাত। সেবাইত সৌমাবরণ গোস্বামী এখানে সিদ্ধি লাভ করেন। মা আনন্দময়ীও এখানে সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেন। তাই মন্দিরের নাম হয় সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির। সে এলাকাটিও এ নামে পরিচিত।
৪) বরদেশ্বরী কালীমন্দির : কথিত আছে ষোড়শ শতকের শেষের দিকে সম্রাট আকবর তাঁর সেনাপতি মান সিংহকে বাংলা বিজয়ের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। সেনাপতি মান সিংহ ঢাকার পূর্ব প্রান্তে এসে তাঁবু ফেলেন। তিনি এখানে গঙ্গাসাগর নামের একটি দিঘি খনন করেন। তিনি ঈশা খাঁকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে বর চেয়ে ওই দিঘির পাশে একটি কালীমন্দিরও নির্মাণ করেন। এরপর থেকে মন্দিরটির নামকরণ হয় বরদেশ্বরী কালীমন্দির। স্থানীয়ভাবে এটি রাজারবাগ কালীমন্দির হিসেবে পরিচিত।
৫) শ্রীশ্রী বুড়াশিব ধাম : এটি ঢাকার সর্বপ্রাচীন এবং সবচেয়ে সুন্দর শিব মন্দির। জনশ্রুতি আছে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় এ মন্দিরটি নির্মিত হয়। তবে বর্তমান কাঠামোটি বর্ধমানের রাজা স্যার বিজয় চাঁদ মাহ্তাব নির্মাণ করে দেন। স্বামী ব্রজানন্দ এখানে সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেন। মূলত তাঁর হাতেই মন্দিরটির শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। তবে '৭১ সালের ২৬ মার্চ এ মন্দিরের প্রধান সেবাইতসহ শত সাধুকে হত্যা করে পাকিস্তানি সৈন্যরা।
৬ ) জয়কালী মন্দির : ঢাকার বহুল পরিচিত এবং সৌন্দর্যময় মন্দির। তিন শতাধিক বছরের প্রাচীন এই মন্দিরে আদিতে দুটি চূড়া ছিল। কালীমন্দিরের ওপর ছিল পঞ্চরত্ন শিখর। তখন শুধু শিব মন্দিরের ওপর নির্মিত চূড়াটি বর্তমান। এই চূড়াটির অলংকরণ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। কৃষ্ণপ্রস্তর নির্মিত কালী দেবী এখানে নিত্য পূজিত হন। একসময় এই মন্দিরের বিপুল জমি ছিল। এখন শুধু মন্দিরের স্থানটি বর্তমান।
৭) শ্যামবাজার শিব মন্দির : ঢাকার অন্যতম প্রাচীন শিব মন্দির। বুড়িগঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে এই মন্দিরের ওপর একসময় সুউচ্চ চূড়া ছিল। ডয়লির আঁকা ছবিতে নর্থব্রুক হলের সঙ্গে এই মন্দিরটিও দেখা যায়। '৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যরা এই চূড়াটি গুঁড়িয়ে দেয়। সেবাইতসহ বহু লোককে হত্যা করে। ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরের ভেতর জগন্নাথ দেবও পূজিত হন। ভাওয়াল মেজ কুমার রমেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী দার্জিলিং থেকে মুগ্ধ হয়ে এ মন্দিরের সামনে কিছুদিন আশ্রয় নেন এবং মন্দিরের প্রসাদ খেয়ে জীবন ধারণ করেন।
৮) রাম সাহা মঠ মন্দির : নবরত্ন এ মন্দির জমিদার রাম সাহা নির্মাণ করেন। তাঁর নামানুসারেই এর নাম রাম সাহা মন্দির। প্রায় ২০০ বছর প্রাচীন এ মন্দির ঢাকার সর্বোচ্চ মন্দির হিসেবে পরিচিত। একসময় বহু দূর থেকে এ মন্দিরটি দেখা যেত। এই মন্দিরের বাহ্যিক অলংকরণ এবং ভেতরের কারুকাজ বিস্ময়কর। এ মন্দিরে শিব নিত্য পূজিত হন।
৯) স্বামীবাগ লোকনাথ আশ্রম : শক্তি ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠা মথুরামোহন মুখোপাধ্যায় ১৯০৫ সালে এ মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এক চালা দালানের ভেতর এখনো লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ভাস্কর্য আছে।
১০) গৌড়ীয় মাধব মঠ : নারিন্দায় শ্রী সিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ ১৯২১ সালে এ মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় পাঁচ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এ মন্দিরে রয়েছে কৃষ্ণ মন্দির, নাটমণ্ডপ ও যাত্রীনিবাস। কৃষ্ণ মন্দিরটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং শ্বেতপাথরে নির্মিত। এখানে শ্রীকৃষ্ণ এবং গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু নিত্য পূজিত হন। নাটমণ্ডপটিও অত্যন্ত দর্শনীয়।
courtesy: Ami Hindu (আমি হিন্দু)' পেজ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন