বহু শাস্ত্রে উল্লেখ আছে দুর্গা কালী আদি সকল দেবদেবীই বৈষ্ণব। ব্রহ্মা বলেছেন-
সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় সাধন শক্তিরেকা
ছায়েব যস্য ভুবনানি বিভর্তি দুর্গা ।
ইচ্ছানুরূপমপি যস্য চ চেষ্টতে সা
গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি॥
অর্থাৎ "প্রাপঞ্চিক জগতের সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়-সাধন কারিণী মায়া শক্তিই ভূবনপূজিতা দূর্গা , তিনি যাঁর ইচ্ছানুরূপ চেষ্টা করেন , সেই আদি পুরুষ গোবিন্দকে ভজনা করি "। (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৪)
দেবীদুর্গাকে মহাদেব শিব বলেছেন, "আরাধনানাং সর্বেষাং বিষ্ণোঃ আরাধনা"
অর্থাৎ সকল আরাধনার মধ্যে বিষ্ণুর আরাধনাই শ্রেষ্ঠ।(পদ্মপুরাণ) শিব শ্রীনারদ পঞ্চরাত্র গ্রন্থে প্রতিদিন কিভাবে শ্রীগোবিন্দের অর্চনা করতে হয় তা দুর্গাদেবীকে নির্দেশ দিয়েছেন । শিব আমিষ ভক্ষণ করেন না।
পতিপরায়ণা সতী দুর্গা শিবের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ গ্রহণ করেন । কালী ও দূর্গারই প্রকাশ মাত্র। তারা মাংসভুক্ বা রক্ত পিশাচী নন ।
কলিযুগের ধর্মভ্রষ্ট, উগ্র ও পিশাচগুন সম্পন্ন মানুষেরা তাদের নিজেদের তামসিকতার অনুকূলে উগ্র ও উলঙ্গ কালী-মূর্তির আরাধনা করে এবং মাংসলোলুপতা চরিতার্থ করতে পশুবলি দেয় । তারা কালী দুর্গাকে বৈষ্ণবীরূপে দেখে না , তারা রক্তপায়ী মাংস পিশাচীরূপেই দেখে ।
এই হলো কলির জীবের ভয়ংকর বৈষ্ণব-অপরাধ ।কলিযুগে পশুবলি নিষিদ্ধ ।অন্যান্য যুগে বৈদিক আচার সম্পন্ন শুদ্ধ ব্রাহ্মনগণ যজ্ঞে বৃদ্ধ পশু আহুতি দিয়ে তত্ক্ষণাত্ মন্ত্রযোগে পশুর উন্নত নবজীবন দান করবার যথেষ্ঠ ক্ষমতা তাদের ছিল । কিন্তু কলিযুগে বৈদিক আচারভ্রষ্ট ব্রাহ্মনদের সে ক্ষমতাই নেই । ভগবান শ্রীবিষ্ণুর অবতার বুদ্ধদেব জগতে পশুবলি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন , সেই ইতিহাস সবার জানা ।
মনুসংহিতায় "মাংস" কথাটির অর্থ ব্যাখ্যাত হয়েছে "মাম্ স খাদিত ইতি মাংস" অর্থাত্ 'সেও আমাকে এইভাবে খাবে যেরূপ আমি তাকে খাচ্ছি' । "বলি দিয়ে মাংস খাওয়া ধর্মানুমোদিত মনে করে যদি কেউ মাংসাশী হয় , তবে সে স্বধর্ম ত্যাগ করে বিধর্মকেই স্বধর্ম মনে করে ।(ভাঃ ১১/৫/১৩বিবৃতি)"
"ধর্মজ্ঞানহীন সাধুত্ব অভিমানী দুর্জন ব্যক্তি নিঃশঙ্কচিত্তে পশু হিংসা করলে পরলোকে সেই পশুরাই ঘাতকদের অনুরূপভাবে ভক্ষন করে থাকে" (ভাঃ ১১/৫/১৪) "আর যে দাম্ভিক ব্যক্তি ইহলোকে দম্ভ প্রকাশ করার জন্য যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে এবং সেই যজ্ঞে পশু বধ করে পরলোকে তারা বৈশস নামক নরকে নিক্ষিপ্ত হয় । যমদূতগণ তাদেরকে অশেষ যাতনা দিয়ে বধ করে ।"(ভাঃ ১১/৫/২৫)
ছাগল মহিষ আদি বলি দিয়া পূজে।
বৈশস -নরকে যাথে বধস্থান বলি ।
নরক ভুঞ্জায়ে তারে তথা লৈঞা পেলি ।
ছাগ মহিষের রূপ ধরি ভয়ঙ্কর
খন্ড খন্ড করি তার কাটে কলেবর
আর্তনাদ করি কান্দে হইয়া ফাপর
মহাশূলে তার অঙ্গ বিন্ধে নিরন্তর ॥
(শ্রীকৃষ্ণপ্রেম তরঙ্গিনী ৫/৫/৪১-৪৪)
শ্রীমদ্ভাগবত (৫/২৬/৩১) শ্লোকে বলা হয়েছে -"যারা পশুবলি দিয়ে ভৈরব বা ভদ্রকালী প্রভৃতি দেবদেবীর পূজা করে , হিংসা কবলিত সেই পশু যমালয়ে রাক্ষস হয়ে ঘাতকের মতো সুতীক্ষ্ন অস্ত্র দিয়ে তাদের বধ করে । ইহলোকে যারা পশুর রক্তপান করে আনন্দে নৃত্যগীত , করে সেই সব হিংস্রাশ্রিত পশু সেইরূপে পরলোকে হিংসাকারীর রক্ত পান করে আনন্দে নৃত্যগীত করতে থাকে।