০৫ মে ২০২২

হিন্দুর একেশ্বরের ভাবনা

 জ্ঞানদৃষ্টিতে আমরা সকলেই একই পরমসত্তা - ঈশ্বরের প্রকাশ। আমাদের এই প্রকৃত 'আমিত্বের' সন্ধান পেয়েছিলেন প্রাচীন ভারতবর্ষের ঋষিরা তাঁদের সাধনার মধ্যে দিয়ে। জন্ম হয়েছিল বিশ্বের একমাত্র' ও প্রাচীনতম আধ্যাত্মিক দর্শনের। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ যখন অজ্ঞানের মোহনিদ্রায় আচ্ছন্ন, সেই সুপ্রাচীন অতীতে হিমালয় শিখরে ধ্বনিত হয়েছিল - '

' শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্যপুত্রাঃ। 

আ যে ধামানি দিব্যানি তস্থু।। 

বেদাহমেতাং পুরুষং মহান্তম্।

আদিত্য বর্ণং তমসো পরস্তাৎ।।

ত্বমেব বিদিত্বাহতি মৃত্যুমেতি।

নান্যং পন্থা বিদ্যতেহনায় ।। 

---------------------------''এই সনাতন চেতনা - সনাতন ধর্ম, যার বর্তমান প্রচলিত নাম ' হিন্দু ধর্ম'। বিশ্বে এমন কোনও ধর্মমত নেই যার মূল ভাব সনাতন ধর্মে নেই। কারণ সকল ধর্মমতই সনাতনের কাছে ঋণী।

-

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার মধ্যে যে মৌলিক প্রভেদ দেখা যায় , তা হল - প্রাচ্যবাসীরা অন্তর্জগতের অনুসন্ধানে তাঁদের অধিকাংশ শক্তি ব্যয় করেছেন। প্রাচীন ভারতবর্ষ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় প্রভুত উন্নতি সাধন করা সত্ত্বেও সেগুলোকে 'অপরা বিদ্যা' বলে চিহ্নিত করে 'পরা বিদ্যা' অর্থাৎ অন্তর্জগতের সন্ধানে আত্মনিয়োগ করেছিল। অন্তর্জগত-সন্ধানী ঋষিরা ক্রমশঃ এই দৃশ্যমান জগতের অবাস্তবতা অনুধাবন করলেন। এই দৃশ্যমান জগৎ পরিবর্তনশীল , আর যা পরিবর্তনশীল তা নিত্য বা পরম ( absolute ) হতে পারে না। জগতের ঘটনাগুলি নির্দিষ্ট frame of reference এর সাপেক্ষেই সত্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। frame of reference বদলে গেলেই তা অন্যভাবে প্রতিভাত হবে। ঋষিগণ খুঁজতে চেয়েছেন এই পরিবর্তনশীল অনিত্যতার পিছনে কি সেই নিত্যবস্তু, যাকে পরম সত্য (absolute truth) বলে নির্দেশ করা যাবে? এই সন্ধানই ভারতে অধ্যাত্মবিদ্যার জন্ম দিয়েছে। অপরপক্ষে পাশ্চাত্য দেশের মানুষ জড়জগতের রহস্যভেদ করতে গিয়ে জড়বিজ্ঞানে ক্রমশঃ পারদর্শী হয়ে উঠেছে। পাশ্চাত্য সভ্যতা তাই বহির্মুখী এবং প্রাচ্য তথা ভারতীয় সভ্যতা অন্তর্মুখী। 

-

কোনও ধর্মমতের মানুষই প্রাথমিক ভাবে সীমাহীন অনন্তের ধারণা করতে পারেনা। অনন্তের ভাব অবলম্বন করতে সক্ষম হলে আর বিশেষ দিকনির্দেশের দরকার পড়তোনা। কারণ অনন্ত যিনি তিনি তো সর্ব দিকে সমভাবে বিরাজমান। 'হিন্দুরা' মানব মনের এই সীমাবদ্ধতার কথা জানে, কিন্তু অন্যদের মতো এটাকে এড়িয়ে যায়না। তাই ''নির্বিকল্প - নিরাকার - সচ্চিদানন্দঘন'' ঈশ্বরীয় সত্তার প্রথম আবিষ্কারক হয়েও হিন্দু ঋষিরা মূর্তি পূজার প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করেননি। সুদূর অতীতে সমগ্র জগত যখন অজ্ঞানের আদিম অন্ধকারে ঘুমাচ্ছে তখন ভারতবর্ষের সনাতন ধর্মই আলোকবর্তিকা রূপে মানুষকে এই নিরাকার, অব্যক্ত, সচ্চিদানন্দ ব্রহ্মর দিকে আকৃষ্ট করেছিল। হিন্দুরা কখনোই প্রতিমাকেই ঈশ্বর মনে করে না। হিন্দুরা মূর্তিতে দেবতাদের পূজা করে এবং পূজা শেষে জলে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। বহুতে এক এবং একের মধ্যে বহুর দর্শনই হিন্দুর দর্শন।

Written by: Prithwish Ghosh

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।