স্বামী বিবেকানন্দ তখন ব্রিটেনে। তাঁর এক ব্রিটিশ অনুগামী স্বামীজিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, 'স্বামীজি, কোন নদীর জল আপনার সবচেয়ে বেশি পছন্দ?'
স্বামীজি ওই ব্যক্তির দিকে ফিরে উত্তর দিলেন,
'টেমস নদীর জল।'
টেমস হল ব্রিটেনের একটি বিখ্যাত নদী। ওই ব্যক্তি বললেন,
'স্বামীজি, আমরা তো ভেবেছিলাম আপনি বলবেন - গঙ্গা নদীর জল।' স্বামীজি বললেন,
'গঙ্গায় জল কোথায়! ও তো অমৃত। জলের সাথে কি তার তুলনা হয়?'
গঙ্গার উৎসস্থল গঙ্গোত্রী ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উত্তরকাশী জেলাতে অবস্থিত। এটি ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। এই স্থান হিমাদ্রি হিমালয়ে ৩,১০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। গঙ্গোত্রীর নিকট গোমুখে গঙ্গার উৎস। এটি গঙ্গোত্রী শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে গঙ্গোত্রী হিমবাহের উপর অবস্থিত। এখানে দেবী গঙ্গার মন্দির আছে।
পুরাণ অনুসারে, রাজা ভগীরথের পূর্বপুরুষের পাপস্খালনের জন্য গঙ্গা অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তাঁর অবতরণের আগে রাজা ভগীরথ এখানে অনেকদিন তপস্যা করেছিলেন। এখানে ভগীরথ শিলা আজও রয়েছে, যেখানে রাজা ভগীরথ ভগবান শিবের তপস্যা করেছিলেন।
গঙ্গোত্রী থেকে ১.৫ কিমি দুরত্বে রয়েছে পঞ্চ-পাণ্ডবের স্মৃতি বিজড়িত পাণ্ডব-গুহা। মহাভারত অনুসারে এখানে পাণ্ডবরা আশ্রয় নিয়েছিলেন।
গঙ্গোত্রী ছোট চার ধাম তীর্থ-চতুষ্টয়ের একটি। এখানে গঙ্গা নদীর নাম ভাগীরথী নদী। গঙ্গোত্রী থেকে দেবপ্রয়াগ পর্যন্ত গঙ্গা ভাগীরথী নামে প্রবাহিত, তারপর অলকানন্দা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে গঙ্গা নাম ধারণ।
গঙ্গা সনাতন হিন্দু-ধর্মে পূজিতা হন দেবীরূপে। মনে করা হয় যে ভগবান শ্রীহরিই গঙ্গারূপে আবির্ভূত হয়েছেন। বেদান্তে বলা হয়েছে 'সর্বং খলু ইদং ব্রহ্ম।' কিন্তু সব কিছুতেই ব্রহ্মের প্রকাশ হলেও কোনও কোনও বস্তুতে তাঁর বিশেষ প্রকাশ। গঙ্গা-জলেও ব্রহ্মের বিশেষ প্রকাশ। তাই গঙ্গা-জল ভারতে অত্যন্ত পবিত্র বস্তুরূপে গণ্য হয়। গঙ্গাজলের বিশেষত্ব হল যে এই জল দীর্ঘদিন ধরে জমিয়ে রাখলেও নষ্ট হয়না। এর নিশ্চয় কোনও বৈজ্ঞানিক কারণ আছে, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস গঙ্গাজল চির পবিত্র। এই জলের ছোঁয়ায় তাই আমাদের দেহ-মন শুদ্ধ হয়। ভারতীয় সনাতন ধর্মের সাধকগণ গঙ্গা-স্নান, গঙ্গা-দর্শন এগুলোর মধ্যে দিয়ে অনাবিল শান্তি ও শুদ্ধতা অনুভব করেন।
মহাভারতে পাই, মহর্ষি পুলস্ত্য কুরুপিতামহ ভীষ্মকে বলছেন- 'গঙ্গে' 'গঙ্গে' এরূপ নাম স্মরণে সকল পাপ খণ্ডিত হয়, গঙ্গা দর্শনে মঙ্গল প্রাপ্তি ঘটে। গঙ্গাবারি পানে কূল ধন্য হয়। মহর্ষি পুলস্ত্য আরও বলেছেন, 'যেথায় গঙ্গা আছে সেটাই দেশ, গঙ্গা তীরের তপোবন সিদ্ধভূমি।'
© লেখক : তাপস কুমার ঘোষ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন