০৮ মে ২০২২

দেবী গঙ্গা

স্বামী বিবেকানন্দ তখন ব্রিটেনে। তাঁর এক ব্রিটিশ অনুগামী স্বামীজিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, 'স্বামীজি, কোন নদীর জল আপনার সবচেয়ে বেশি পছন্দ?'

স্বামীজি ওই ব্যক্তির দিকে ফিরে উত্তর দিলেন,

'টেমস নদীর জল।'

টেমস হল ব্রিটেনের একটি বিখ্যাত নদী। ওই ব্যক্তি বললেন,

 'স্বামীজি, আমরা তো ভেবেছিলাম আপনি বলবেন - গঙ্গা নদীর জল।' স্বামীজি বললেন,

 'গঙ্গায় জল কোথায়! ও তো অমৃত। জলের সাথে কি তার তুলনা হয়?'

গঙ্গার উৎসস্থল গঙ্গোত্রী ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উত্তরকাশী জেলাতে অবস্থিত। এটি ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। এই স্থান হিমাদ্রি হিমালয়ে ৩,১০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। গঙ্গোত্রীর নিকট গোমুখে গঙ্গার উৎস। এটি গঙ্গোত্রী শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে গঙ্গোত্রী হিমবাহের উপর অবস্থিত। এখানে দেবী গঙ্গার মন্দির আছে।

পুরাণ অনুসারে, রাজা ভগীরথের পূর্বপুরুষের পাপস্খালনের জন্য গঙ্গা অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তাঁর অবতরণের আগে রাজা ভগীরথ এখানে অনেকদিন তপস্যা করেছিলেন। এখানে ভগীরথ শিলা আজও রয়েছে, যেখানে রাজা ভগীরথ ভগবান শিবের তপস্যা করেছিলেন।


 

গঙ্গোত্রী থেকে ১.৫ কিমি দুরত্বে রয়েছে পঞ্চ-পাণ্ডবের স্মৃতি বিজড়িত পাণ্ডব-গুহা। মহাভারত অনুসারে এখানে পাণ্ডবরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। 

গঙ্গোত্রী ছোট চার ধাম তীর্থ-চতুষ্টয়ের একটি। এখানে গঙ্গা নদীর নাম ভাগীরথী নদী। গঙ্গোত্রী থেকে দেবপ্রয়াগ পর্যন্ত গঙ্গা ভাগীরথী নামে প্রবাহিত, তারপর অলকানন্দা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে গঙ্গা নাম ধারণ।  

গঙ্গা সনাতন হিন্দু-ধর্মে পূজিতা হন দেবীরূপে। মনে করা হয় যে ভগবান শ্রীহরিই গঙ্গারূপে আবির্ভূত হয়েছেন। বেদান্তে বলা হয়েছে 'সর্বং খলু ইদং ব্রহ্ম।' কিন্তু সব কিছুতেই ব্রহ্মের প্রকাশ হলেও কোনও কোনও বস্তুতে তাঁর বিশেষ প্রকাশ। গঙ্গা-জলেও ব্রহ্মের বিশেষ প্রকাশ। তাই গঙ্গা-জল ভারতে অত্যন্ত পবিত্র বস্তুরূপে গণ্য হয়। গঙ্গাজলের বিশেষত্ব হল যে এই জল দীর্ঘদিন ধরে জমিয়ে রাখলেও নষ্ট হয়না। এর নিশ্চয় কোনও বৈজ্ঞানিক কারণ আছে, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস গঙ্গাজল চির পবিত্র। এই জলের ছোঁয়ায় তাই আমাদের দেহ-মন শুদ্ধ হয়। ভারতীয় সনাতন ধর্মের সাধকগণ গঙ্গা-স্নান, গঙ্গা-দর্শন এগুলোর মধ্যে দিয়ে অনাবিল শান্তি ও শুদ্ধতা অনুভব করেন। 

মহাভারতে পাই, মহর্ষি পুলস্ত্য কুরুপিতামহ ভীষ্মকে বলছেন- 'গঙ্গে' 'গঙ্গে'  এরূপ নাম স্মরণে সকল পাপ খণ্ডিত হয়, গঙ্গা দর্শনে মঙ্গল প্রাপ্তি ঘটে। গঙ্গাবারি পানে কূল ধন্য হয়।  মহর্ষি পুলস্ত্য আরও বলেছেন,  'যেথায় গঙ্গা আছে সেটাই দেশ, গঙ্গা তীরের   তপোবন সিদ্ধভূমি।'


© লেখক : তাপস কুমার ঘোষ 

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।