আমাদের নিত্য পুজোয় প্রদীপ জ্বালিয়ে থাকি। বিশ্বাস করা হয় যে প্রদীপ না জ্বালিয়ে কোনও পুজোই শেষ হয় না। কিন্তু একথা কি জানা আছে যে বিশেষ কিছু দেব-দেবীর সামনে নিয়মিত সকাল-বিকাল প্রদীপ জ্বালালে এই জীবনে যে যে সমস্যার কথা আমরা জানি বা শুনে এসেছি, তার কোনওটাই মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। শুধু তাই নয়, জীবন পথে চলতে চলতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠা যে কোনও বাধা সরে যেতেও সময় লাগে না। হিন্দু শাস্ত্রের উপর লেখা একাধিক বই অনুসারে বেশ কিছু দেব-দেবী আছেন, যারা প্রদীপের আলো পছন্দ করেন, তাই তো তাঁদের আরাধনা করার পর যদি প্রদীপ জ্বালানো হয়, তাহলে দারুন সব উপকার মেলে।
★ প্রতিদিন সূর্য দেবতার সামনে প্রদীপ জ্বালালে সূর্যদেব এতটাই প্রসন্ন হন যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। রবিবার হল সূর্য দেবের দিন। তাই এদিন সাকাল সকাল উঠে স্নান সেরে যদি সূর্যদেবকে জল দান করে পূজা করতে পারেন, তাহলে আরও অনেক উপকার মেলে।
★ একথা তো সবাই জানেন যে প্রতি সোমবার দেবাদিদেবকে দুধ দিয়ে স্নান করালে মনের মতো জীবনসঙ্গী পাওয়া যায় তেমনি প্রতিদিন রাধা-কৃষ্ণের সামনে প্রদীপ জ্বালালে মনের মতো জীবনসঙ্গীও মেলে আর সেই সঙ্গে বৈবাহিক জীবনে কোনও সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা হ্রাস পায়। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, তা হল রাধা-কৃষ্ণের ছবির সামনে ভুলেও সকালবেলা প্রদীপ জ্বালাবেন না যেন! এক্ষেত্রে জ্বালাতে হবে সন্ধ্যাবেলায় -- এমনটা করলে তবেই কিন্তু উপকার মেলে।
★ পঞ্চমুখি হনুমানজির ছবি বা মূর্তির সামনে প্রদীপ জ্বালালে খারাপ স্বপ্ন আসার আশঙ্কা হ্রাস পাবে। সেই সঙ্গে মনের লুকিয়ে থাকা ভয় দূর হবে এবং বাড়ীর মধ্যে খারাপ শক্তির আগমণ ঘটার সম্ভাবনাও যাবে কমে। ফলে কোনও ধরনের খারাপ ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আর থাকবে না।
★ শত চেষ্টা করেও কি টাকা জমাতে পারছেন না? এদিকে প্রতিদিন যেন খরচের মাত্রা বেড়েই চলেছে? তাহলে আপনি উত্তর দিকে ধন দেবতা কুবেরের ছবি বা মূর্তি রেখে প্রতিদিন কুবের দেবের সামনে প্রদীপ জ্বালানো শুরু করুন। দেখবেন অর্থনৈতিক সমস্যা মিটে যাবে।
★ অল্প সময়ে কর্মক্ষেত্রে চরম উন্নতি লাভ করতে যদি চান, তাহলে বাড়ির ঠাকুর ঘরে রাখা গণেশ দেবের সামনে অফিস বেরনোর আগে প্রদীপ জ্বালানো শুরু করুন। দেখবেন মনের ইচ্ছা পূরণ হতে সময় লাগবে না। প্রসঙ্গত, গণেশ দেব হলেন সমৃদ্ধির দেবতা। তাই তো প্রতিদিন গণেশের সামনে প্রদীপ জ্বালালে দেবতা বেজায় প্রসন্ন হন। ফলে পরিবারে সুখ এবং সমৃদ্ধির ছোঁয়া লাগতে সময় লাগে না।
★ রাম, লক্ষণ, সীতা এবং হনুমানজি একসঙ্গে রয়েছেন এমন ছবির সামনে প্রতিদিন প্রদীপ জ্বালালে বাড়ীর মধ্যে উপস্থিত খারাপ শক্তি দূরে পালায়। ফলে পরিবারের মধ্যে কোনও কলহ বা বিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা যেমন হ্রাস পায়, তেমনি ভাইয়ে-ভাইয়ে হওয়া বিবাদ বা ঝগড়া মিটে যেতেও সময় লাগে না।
প্রসঙ্গত, দেব-দেবীদের সামনে প্রদীপ জ্বালানোর সময় কতগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। কারণ এই নিয়মগুলি না মানলে কিন্তু কোনও সুফলই পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে, সেগুলি হল --
* প্রদীপ জ্বালানোর সময় কম করে দুটো এবং সর্বচ্চ তিনটি সেলতে জ্বালানো উচিত। কারণ এমনটা করলে দূর্গা, লক্ষ্মী এবং সরস্বতী দেবীর আশীর্বাদ লাভ করা সম্ভব হয়।
* খেয়াল করে দেখবেন অনেকেই প্রদীপ জ্বালানোর সময় হাতে লাগা তেল হয় পরে থাকা জামায় মুছে ফেলেন, নয়তো চুলে লাগিয়ে নেন। কিন্তু এমনটা করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে দিনের পর দিন এমনটা করলে মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই যদি এমন ঘটনা এড়িয়ে চলতে চান, তাহলে ঠাকুর ঘরে হাত মোছার একটা পরিচ্ছন্ন কাপড় রাখতে ভুলবেন না যেন।
* প্রদীপ জ্বালানোর সময় কী ধরনের তেল ব্যবহার করা উচিত জানা আছে? বিশেষজ্ঞদের মতে দেবতাদের সামনে দিয়া জ্বালানোর সময় হয় তিল তেল, সরষের তেল অথবা ঘি ব্যবহার করা উচিত। কারণ এমনটা করলে পরিবারে সমৃদ্ধির ছোঁয়া লাগে। সেই সঙ্গে বাড়ীতে সুখ-শান্তির পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
সনাতনী শ্রী পৃথ্বীশ ঘোষ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন