০৩ মার্চ ২০১৫

কামাখ্যা পীঠের দেবী কামাখ্যা


শম্ভুনেত্রাগ্নিনির্দগ্ধঃ শম্ভোরনুগ্রাৎ । ত্রত রূপং যতঃ প্রাপ কামরূপং ততোহভবৎ ।। ( কালিকাপুরান ।। একপঞ্চাশ অধ্যায় ।। ৬৭ ) অর্থাৎ- হর ললাট অগ্নিতে কামদেব ভস্মীভূত হন। পুনরায় হরের ইচ্ছায় কামদেব এখানেই তার সুন্দর রূপ ফিরে পান। তাই এই স্থানকে কামরূপ বলা হয়েছে । কামরূপং মহাপীঠং সর্বকামফলপ্রদম্ । কলৌ শীঘ্রফলং দেবী কামরূপে জপঃ স্মৃত ।। ( কুব্জিকা তন্ত্র/ সপ্তম পটল ) এর অর্থ- এখানে কামনার অনুরূপ ফল পাওয়া যায় বলে এই স্থান কামরূপ নামে খ্যাত। বিশেষতঃ কলিযুগে এই স্থান অতীব জাগ্রত। কামরূপ অভিযান কালে কোচ ( কোচবিহার রাজ বংশ ) নরপতি রাজা বিশ্বসিংহ দেবীর এই পীঠ উদ্ধার ও মন্দির নির্মাণ করেছিলেন । আহোম রাজার সাথে যুদ্ধ চলার সময় একদা তিনি ও তাঁর ভাই শিবসিংহ মূল সৈন্য দল থেকে পৃথক হয়ে পড়েন । এবং তাঁরা দুজন ক্লান্ত ও তৃষ্ণার্ত হয়ে এই পর্বতে জঙ্গলে ঢাকা কুন্ডের সামনে এসে উপস্থিত হন। তারা জানতেন না সেটি দেবী পীঠ। উভয়ে দেখলেন সামনে এক বৃদ্ধা পূজা করছেন । দুইজন গিয়ে সেই বৃদ্ধার কাছে জল চাইলেন । বৃদ্ধা বললেন- ‘সামনের ঝর্না থেকে জল পান করো।’ জল পান করে এসে রাজা বিশ্বসিংহ ও তাঁর ভাই শিবসিংহ জানতে চাইলেন এই মৃত্তিকা স্তূপের সামনে কার পূজা করছেন ? বৃদ্ধা জানালো- ‘ইনি তাঁদের দেবী। এখানে যে যা প্রার্থনা ব্যক্ত করে- দেবী তাঁর সেই ইচ্ছাই পূর্ণ করেন । এর অন্যথা হয় না।’ শুনে রাজা বিশ্বসিংহ মনে মনে প্রার্থনা করলেন ‘তিনি যেনো তাঁর হারানো সেনাদলকে ফিরে পান । তাঁর রাজ্য যেনো নিষ্কণ্টক হয় ।’ মহারাজ সেখানে প্রতিশ্রুতি দিলেন প্রার্থনা পূর্ণ হলে তিনি এখানে সোনার মন্দির ও নিত্য পূজোর ব্যবস্থা করবেন । বৃদ্ধা জানালেন , দেবীকে ছাগাদি বলি, সিঁদুর, গন্ধ, পুস্প, রক্ত বস্ত্র, অলংকার দ্বারা পূজা করতে হয় । যাই হোক , মহাদেবী ভবানী কামাখ্যা রাজার ইচ্ছা পূর্ণ করলেন। রাজার বাসনা পূর্ণ হল । অপর একটি জনশ্রুতি অনুসারে – একদিন রাজা বিশ্বসিংহ ঐ স্থানে এসে ঐ কুন্ডের মাহাত্ম্য শুনলেন । তিনি ভাবলেন পরীক্ষা করে দেখা যাক সত্যই এই কুন্ডে ইচ্ছা পূরনের কোন শক্তি আছে কিনা । এই ভেবে তিনি তার আঙুলের একটি হীরক আংটি ঐ কুন্ডে ফেলে মনে মনে বললেন- ‘যদি কাশীতে গঙ্গা তে আমি এই আংটি ফেরত পাই, তবেই দেবীর মহিমা মানবো।’ এই ঘটনার পর একদা তিনি কাশীধামে গিয়ে তর্পণ কালে ঐ আংটি পুনরায় ফেরত পেলেন। তিনি ঐ কুন্ডের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে আরও জানার জন্য পণ্ডিত দের একটি বিচারসভা বসালেন । পণ্ডিত গণ শাস্ত্র ঘেটে জানালেন । ঐ স্থানে দেবী সতীর যোনিদেশ পতিত হয়েছে। এবং দেবী সেখানে কামাখ্যা রূপে বিরাজিতা। এই শুনে মহারাজ সেখানে মন্দির নির্মাণে অগ্রসর হলেন । রাজার আদেশে লোকজন লেগে কাজে নেমে পড়লো। জঙ্গল পরিষ্কার করে কুন্ড উদ্ধারের সময় , বিশ্বকর্মা স্থাপিত মন্দিরের ভিত উদ্ধার হল। যোনীমুদ্রা সহ মূল পীঠ আবিস্কৃত হল। রাজা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সোনায় মুড়ে মন্দির বানাবেন। কিন্তু অত সোনা পাওয়া মুস্কিল। তাই কেবল ইট দ্বারা মন্দির নির্মাণের ব্যবস্থা হল। কিন্তু প্রতি দিন মন্দিরের ইট খসে খসে পড়তে লাগলো। একদা রাজা বিশ্বসিংহ কে স্বপ্নে মা দেখা দিয়ে বললেন – ‘ হে রাজন। কি প্রতিজ্ঞা করেছিলে মনে কর, সোনার মন্দির করবে বলেছিলে- তা কি বিস্মৃত হয়েছ?’ রাজা গদগদ হয়ে বলল- ‘মা সন্তানের অপরাধ ক্ষমা কর। এত স্বর্ণ কোথায় পাইবো?’ মা জানালেন- ‘চিন্তার কিছু নাই। প্রতি ইষ্টক এ এক রতি করে সোনা দিবে।’ রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই মতো মন্দির নির্মাণ করলেন । অসমের শোয়ালকুচি গ্রামের ব্রাহ্মণ দের পুরোহিত হিসাবে নিযুক্ত করা হল। মন্দির স্থাপনার পর প্রতিষ্ঠা ও নিত্য পূজার ব্যবস্থা করা হল। বর্তমানে সে বংশানুক্রমিক ভাবে সেই পুরোহিত গণ মায়ের নিত্য পূজা করেন । এই স্থানে তন্ত্র, পুরান আলোচনা হতে লাগলো। সাধুরা এখানেই তন্ত্র সাধনা করতে লাগলেন । সেই সব শাস্ত্রের জীর্ণ লিপি এখনও আসামের কিছু স্থানে পাওয়া যায়, কিছু গৃহে দেখা যায় ।

কার্টেসিঃ সুমন বসাক
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।