অগেহানন্দ ভারতীঃ
১৯২৩ সালের ২০ এপ্রিল অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে একটি ধর্মপ্রাণ ক্যথলিক খৃস্টান পরিবারে জন্মগ্রহন করেন লেওপলড ফিশার নামে এক ছেলে। বালক বয়সেই বই পড়ে ভারতবর্ষ সম্পর্কে তার আগ্রহ জাগে। ভারতের সংস্কৃতি আর ধর্ম সম্পর্কে তার কৌতূহল বেড়েই চলে। বালক বয়সে ফিসার একটি ক্যথলিক চার্চের সাথে যুক্ত হয় এবং সিদ্ধান্ত নেই পরবর্তী জীবন খৃস্টান ব্রহ্মচারী হয়ে কাটাবেন। কৈশোরে পদার্পণ করেই তার জীবনের কিছুটা হতাশা নেমে আসে, মনের ভিতর জন্ম নেয়া অনেক প্রশ্নে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত হতে হয় কিন্তু কিছুতে খুজে পায় না সেগুলো উত্তর।ক্যথলিক জীবনধারা সম্পর্কে তার মোহমুক্তি হয় আর পৃথিবীর সব প্রচলিত মতবাদ এবং ধর্ম নিয়ে তার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।
ফিসারের যখন ৮ বছর বয়স তখন তার সাথে এক ভারতীয়ের পরিচয় হয় যে ভিয়েনার বিখ্যাত মেডিক্যাল স্কুলে পড়তে এসেছিল।তার কাছ থেকে প্রতিভাবান ফিসার তার কাছ থেকে কয়েক বছরের মধ্যে ৫ টি ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষা শেখে এবং তাকে জার্মান ভাষা শিখতে সাহায্য করে। পরবর্তী জীবনে প্রায় ১৫ টি মৌলিক এবং আঞ্চলিক ভাষা রপ্ত করেন।
.
সেকেন্ডারি স্কুলে প্রবেশ করে ফিশার আরও বেশি ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে এবং স্কুলের ইণ্ডিয়ান ক্লাবে নিজের নাম লেখান এবং হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষা শিখতে শুরু করে।এভাবেই তার সামনে বৈদিক ভারতের সংস্কৃতি আর আধ্যাত্মবাদের বিশাল দুয়ার উন্মোচিত হয়ে পড়ে।পরবর্তীতে ফিশার লিখেছিলেন,’যখন আমার ১৫ বছর বয়স তখনই আমি বুঝেছিলাম ইউরোপের সমাজ আমি ছাড়তে চলেছি আর ভারতীয় আধ্যত্মবাদকে নিজের করে নিতে চলেছি’।
.এরপর ফিসার বিখ্যাত ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। সেখানে বহুমুখী ফিশার ভারতীয়শিক্ষা,সংস্কৃত ভাষা,তুলনামুলক ভাষাতত্ত্ব,নৃতত্ত্ব এবং দর্শন নিয়ে তার পড়াশুনা চালিয়ে যান।১৯৪৩ সালে বাধ্যতামুলক জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগদানের কারনে তাঁর পড়াশুনা বাধাগ্রস্থ হয়।
.
যুদ্ধের পর ফিসার ভিয়েনাতে ফিরে আসেন এবং ১৯৪৮ সালে তাঁর ডিগ্রী সমাপ্ত করেন। ১৯৪৯ সালে ভারতীয় কালচার আর আধ্যাত্মবাদ সম্পর্কে আরও জানতে তিনি ভারতে চলে আসেন।সেখানে তিনি ভারতীয় দর্শন চর্চা শুরু করেন। কিছুদিন পর দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মান ভাষার উপর শিক্ষকতাও করেন। এরপর তাঁর রামকৃষ্ণ মিশনেও যোগাযোগ হয়, সমাতালে চলতে থাকে ভারতীয় আধ্যত্মবাদ আর দর্শন চর্চা এবং যে সকল প্রশ্ন খুজতে তিনি সুদুর ভারতবর্ষে এসেছেন তার উত্তর খুজে চলা। এভাবে তিনি একসময় নিজের জীবনের গন্তব্য আর উদ্দ্যেশ খুজে পান। সিদ্ধান্ত নেন সন্ন্যাসী হবার এবং দশনামী সন্ন্যাসী হিসেবে দিক্ষা নেন আর পরবর্তী জীবন আধত্ম্য সাধনায় নিজেকে উৎসর্গ করেন।
১৯৫১ সালে লিওপ্লদ ফিসার দশনামী সন্ন্যাসী হিসেবে নিজের নতুন নাম নেন অগেহানন্দ ভারতী । এরপর ভারতী উত্তর ভারত থেকে দক্ষিন ভারতের প্রায় ১৫০০ মাইল খালি পায়ে সন্ন্যাসীদের সাথে ভ্রমন করেন।নিজের একাডেমিক শিক্ষার সাথে যুক্ত হয় বাস্তব আধ্যাত্মবাদ। নিজের এই বাস্তব জ্ঞান তিনি পরবর্তীতে তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করেন।
১৯৫১ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের রিডার হিসেবে এবং ১৯৫৫ সালে Nalanda Institute for Buddhist Research and Pali তে তুলনামুলক সাহিত্যে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। এরপর তিনি তাঁর অর্জিত জ্ঞান বিশ্বের সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৫৫ থেকে ৫৬ থাইল্যন্দে সেখান থেকে জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেখান থেকে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন।সব শেষে ১৯৬১ সালে Syracuse University, নিউইয়র্কে যোগদান করেন। এরপর তিনি সব সময় দুনিয়া ব্যপি ভ্রমণ করে বেড়ালেও এটাই ছিল তাঁর পার্মানেন্ট কর্মস্থল।
.এরপর দশ বছর তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃতত্ত্বের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন।১৯৬২ সালে ভারতী সকল অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার হিসেবে আত্মজীবনী লিখেন।
.১৯৭১ সালে ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের প্রধান হিসেব দায়িত্ব নেন এবং ১৯৭৭ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেন এবং আবারও দুনিয়া ব্যাপী শিক্ষকতা করতে নেমে পড়েন।
১৯৯১ সালের ১৪ মে এই মহৎপ্রান সন্ন্যাসী মানুষটির জীবনভর শিক্ষাগ্রহণ,শিক্ষকতা,ভ্রমন
• The Tantric Tradition. London : Rider, 1966.
• The Light at the Center: Context and Pretext of Modern Mysticism. Santa Barbara, CA : Ross-Erikson. 1976.
• The Ochre Robe : An Autobiography.
https://en.wikipedia.org/wiki/Agehananda_Bharati
Bangali Hindu Post (বাঙ্গালি হিন্দু পোস্ট)
—
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন