কৃষ্ণভাবনায় ভাবিত হয়ে যিনি মুক্তির পথে এগিয়ে চলেছেন, তিনি প্রতিটি জীবেরই অত্যন্ত প্রিয় এবং প্রতিটি জীবই তার প্রিয়। কৃষ্ণভাবনামৃত লাভ করার ফলেই এটি সম্ভব। এই প্রকার ব্যাক্তি কোন কিছুকেই শ্রীকৃষ্ণের থেকে ভিন্নরূপে দেখেন না। একটি গাছের ডালপালা যেমন গাছটি থেকে ভিন্ন নয়, তেমনই তিনিও দেখেন যে, প্রতিটি জীবও ভগবানের থেকে অভিন্ন। তিনি জানেন, গাছের গোড়ায় জল দিলে যেমন সমস্ত গাছটিকে জল দেওয়া হয় অথবা উদরকে খাদ্য দিলে যেমন সমস্ত দেহকেই খাদ্য দেওয়া হয়, তেমনই ভগবানের সেবা করার ফলে সমস্ত জীব-জগতের সেবা করা হয়। এভাবেই শ্রীকৃষ্ণের দাসত্ব করার মাধ্যমে তিনি সকলেরই দাসত্ব করে চলেছেন। তাই তিনি সকলেরই প্রিয় এবং সকলেই তার অতি প্রিয়। যেহেতু তার কার্যকলাপে সকলেই সন্তুষ্ট, তাই তার চেতনা পবিত্র ও নির্মল। যেহেতু তাঁর চেতনা পবিত্র ও নির্মল, তাই তাঁর মন সম্পূর্ণরূপে সংযত। আর তাঁর চিত্ত সংযত হবার ফলে তাঁর ইন্দ্রিয়গুলিও সংযত। তাঁর মন সর্বদাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে নিবদ্ধ, তাই তিনি কখনোই ভগবানকে বিস্মৃত হন না। সুতরাং, তাঁর ইন্দ্রিয়গুলি কৃষ্ণসেবা ব্যাতিত জড় কার্যকলাপে নিযুক্ত হবার কোন সম্ভাবনা থাকে না। তিনি কৃষ্ণকথা ছাড়া আর কিছুই শোনেন না, তিনি কৃষ্ণপ্রসাদ ছাড়া আর কিছুই গ্রহণ করেন না এবং তিনি ভগবানের মন্দির ছাড়া অন্য কোথাও যেতে চান না। তাই, তাঁর ইন্দ্রিয়গুলি সর্বতোভাবে সংযত। এভাবেই যার ইন্দ্রিয় সংযত হয়েছে, তিনি কারও ক্ষতিসাধন করেন না। এখানে কেউ প্রশ্ন করতে পারে " তাহলে অর্জুন কেন কুরুক্ষেত্রে জুদ্ধে অন্যদের আঘাত দিলেন? তিনি কি ভগবৎ- চেতনাময় ছিলেন না? " সেই প্রশ্নের উত্তর ভগবদ্গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে অর্জুনকে অপরাধী বলে মনে হতে পারে, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে সমবেত ব্যাক্তিরা স্বতন্ত্রভাবে চিরকাল বেঁচে থাকবে, কেন না আত্মাকে কখনো হত্যা করা যায় না। তাই আত্মার পরিপ্রেক্ষিতে কুরুখেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে কেউই নিহত হয়নি। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশ অনুযায়ী কেবল তাদের পোশাকের পরিবর্তন হয়েছিলো। তাই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুন সত্যি সত্যিই যুদ্ধ করছিলেন না। সম্পূর্ণভাবে কৃষ্ণভাবনাময় হয়ে তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদেশ পালন করেছিলেন। এই ধরনের ভগবদ্ভক্ত কোন অবস্থাতেই কর্মবন্ধনে আবদ্ধ হন না।
তথ্যসূত্রঃ শ্রীমদ্ভাগবতগীতা যথাযথ
সংকলিত
তথ্যসূত্রঃ শ্রীমদ্ভাগবতগীতা যথাযথ
সংকলিত
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন