৩০ মার্চ ২০১৫

সনাতন ধর্ম

জানি না কতটুকু তুলে ধরতে পেরেছিঃ
সনাতন ধর্ম হচ্ছে মহাসাগর বিশেষ। মনে করা যাক পুকুরের ছোট্ট একটি মাছকে মহাসাগরে ফেলে দেয়া হল। মাছটি সারা জীবন পুকুরের ছোট্ট পরিধিতে জীবন অতিবাহিত করেছে। তার কাছে তার ভূবন ততটুকুই (পুকুর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ)। মহাসাগর সম্পর্কে কোন ধারণা লাভ যেমন ছোট্ট মাছের পক্ষে সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি দু-একটি গ্রন্থ পড়ে বা কারো মুখ থেতে শুনে সনাতন ধর্ম সম্পর্কে ধারণা লাভ সম্ভব নয়। মহাসাগরের সুবিশাল পরিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে যেমন নিয়ম মাফিক পদ্ধতিতে অগ্রসর হতে হয়! ঠিক তেমনি সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হলে আমাদের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই অগ্রসর হতে হবে।
অনেকেই মনে করে সনাতন ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম! মূর্তি বা প্রতিমা পূজায় বিশ্বাসী! আবার অনেকেই সনাতন ধর্মকে ‘হিন্দু ধর্ম’ বলে আখ্যায়িত করে! যা নিত্যান্তই ভুল একটি ধারণা। সনাতন ধর্মের ভিত্তি বৈদিক শাস্ত্রের কোথায়ও ‘হিন্দু’ শব্দটির উল্লেখ নেই। নেই এই জন্য যে, তা আধুনিক কালে (ঊনবিংশ শতাব্দীতে) সৃষ্টি হয়েছে! বা কালক্রমে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সনাতন ধর্মকে ‘হিন্দু ধর্মে’ পরিণত করা হয়েছে! হিন্দু একটি নির্দিষ্ট জাতি! হিন্দু ধর্ম বলতে বোঝায় হিন্দু জাতির ধর্ম! বৈদিক শাস্ত্রের কোথায়ও কোন জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ বা সমাজের ধর্ম হিসেবে সনাতন ধর্মকে অভিহিত করা হয়নি। অভিহিত করা হয়েছে মানব জাতির বা জৈব ধর্ম (জীবের ধর্ম) হিসেবে।
সনাতন ধর্মের প্রকৃত রূপ উন্মোচনের জন্য আমাদের যে ধর্ম গ্রন্থগুলি পাঠ আবশ্যক তা হলো-
১। বেদ-৪টি (ঋকবেদ, সামবেদ, যর্জুবেদ, অথর্ববেদ)
২। উপনিষদ-১০৮টি
৩। গীতা-১টি (৭০০শ্লোক)
৪। ভাগবত-১টি (১৮,০০০শ্লোক)
৫। মহাভারত-১টি (৬০,০০০শ্লোক)
৬। পুরাণ-১৮টি
৭। রামায়ণ-১টি
৮। চৈতন্য চরিতামৃত-১টি
এই গ্রন্থগুলোর পাঠ করলে জানা যাবে সনাতন ধর্মের কলেবর কতো বিশাল আর জ্ঞানগভীর। তবে রামায়ন আর মহাভারতে বৈদিক যুগের ইতিহাস লিপিবদ্ধ। ধর্মের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেতে আমাদের আশ্রয় নিতে হবে ভাগবতের। তবে উল্লেখিত প্রতিটি গ্রন্থই মহা মূল্যবান আর প্রয়োজনীয়।
মানব জাতির স্বভাব হচ্ছে সহজ এবং সরল বিষয়গুলির প্রতি আসক্ত হওয়া। কঠিন বিষয়বস্তু এড়িয়ে চলা। যা আমাদের সমাজে আমরা পরিলক্ষিত করি। ধর্মের বেলায় ও একই ব্যাপারটি ঘটেছে। এতো বিশাল বৈদিক শাস্ত্রের ধারে কাছে না গিয়ে লোকজন সহজ এবং সরল দেব-দেবীর পূজায় নিজেদের ব্যস্ত রাখে। আর অন্যদিকে আমাদের সমাজের তথাকথিত জন্মগত ব্রাহ্মণ (পুরোহিত বা হোতা) নামধারী ব্যবসায়ীরা তাদের উদর পরিপূর্ণ করার জন্য সমাজে দেব-দেবী পূজার আজ্ঞা দেন। আজ্ঞা বলার কারণ অনেক। সমাজে সহজ সরল মানুষজন তাদের (পুরোহিতদের) অত্যাধিক শ্রদ্ধা ভক্তি করেন। পুরোহিতরা যে সিদ্ধান্ত দেন তা-ই শিরোধার্য হিসেবে ধরে নেন। আমি অনেক নামদারী ব্রাহ্মণের কাছে বৈদিক শাস্ত্র গুলোর নাম শুনতে চাইলে তারা প্রকৃতপক্ষে তা বলতে ব্যর্থ হন। যারা একটি ধর্মের শাস্ত্রীয় গ্রন্থের নাম বলতে অক্ষম, তাদের ব্রাহ্মণ বলার যুক্তি কোথায় আমি বুঝি না! তবে এখনও পুরোহিতদের মধ্যে অনেক জ্ঞানী এবং শাস্ত্রজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছেন। তবে তাঁরা কেন চুপচাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যান তা আমার কাছে রীতিমতো বিস্ময়!
দেব-দেবী পূজাকে ভাগবতের আলোকে অপধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অপধর্ম অর্থ্যাৎ ধর্মের সঠিক রূপ নয়। অপধর্মের অনুসারীরা স্বর্গসুখ আর জড় পৃথিবীতে সুখে থাকার আশায় উপরোক্ত পূজা-পাঠ করেন। যা সনাতন ধর্ম কোনভাবেই প্রকৃত রূপ হিসেবে সমর্থন করে না। প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে স্বর্গ-নরক-পৃথিবী সবকিছুর ভালবাসা কাটিয়ে আত্মাকে চিন্ময় জগতে নিয়ে পরম ব্রহ্মের সেবায় নিযুক্ত করা। এখানে শত-সহস্র দেবতা-উপদেবতাদের পূজা-পাঠ করার কোন সুযোগ নেই।
অনেকেই হয়ত ভাবেন আধুনিকযুগে এতো সময় কোথায় ঐ সব গ্রন্থগুলোর পাঠ করার। আবার আর্থিক দিকেরও একটি বিষয় এখানে রয়েছে। দেব-দেবী পূজায় কি অর্থ ও সময় খরচ হয় না! বরং মাত্রাতিরিক্ত খরচ হয় বিভিন্ন পূজানুষ্ঠানে! যার এক পঞ্চমাংশ সময় ও অর্থ খরচ করে সনাতন ধর্মের প্রকৃত রূপের অনুসন্ধান সম্ভব।
Credit:লিটন দেব জয়
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।