মাহাবালিপুরাম মন্দির ভারতের মাহাবালিপুরামে, বঙ্গপোসাগরের একেবারে তীর ঘেষে অবস্থিত। এটি নির্মান করেছিলেন পাললাভা রাজা রাজাশিমাহা। ৮ম শতাব্দীর শুরুর দিকে নির্মিত মন্দিরটিতে দুটি কুটির আছে যার একটি পূর্ব(সমুদ্রমুখী) দিকে মুখ করে আছে অপরটি পশ্চিম দিকে।এর একটি মন্দির মহাদেব ও আরেকটি মন্দির বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে নির্মিত।
১৩শত বছরের ঝড় ও জোয়ারের ঢেউয়ে মন্দিরটির ক্ষয় ও ধ্বংষ হয়ে যাওয়ার কথা হলেও এটি এখনো অক্ষত।এই মন্দিরের উঠানে সমুদ্রের ঢেউ এসে পরে।
মাহাবালিপুরাম ছিল পেরিপ্লাস এবং টলেমি (১৪০ খ্রিস্টাব্দ) শাসনামলের সময়ে একটি সমুদ্র বন্দর।পুরোনো ইতিহাস বলে যে এখানে মূলত সাত মন্দির ছিল যার একটি এখন সমুদ্রের উপরে বাকি ৬ টি সমদ্রের নিচে। যার ধ্বংসাবশেষ এখনো পাওয়া যায়।
চেন্নাই থেকে ৫৮কিমি দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরের এই মন্দিরটি পৃথিবী বিখ্যাত, ইউনেস্কোর হেরিটেজ আখ্যাও লাভ করেছে।বর্তমানে এখানকার নাম মমল্লপুরম । পাথরের ব্লক একটার ওপর একটা বসিয়ে মন্দির গঠনের সাধারণ পদ্ধতির মন্দির এটি। সমুদ্রের পারে এর অবস্থানের কারণে এর নাম ‘শোর টেম্পল’। এমন করে মন্দির গঠনের পদ্ধতিকে স্ট্রাকচারাল পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।
বলা হয় পল্লব বংশের মহেন্দ্রবর্মন (খ্রী. ৫৮০-৬৩০) ‘বিচিত্র চিত্ত,’ তিনি সাধারণ ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারতেন। এখনকার সময় হলে তাঁকে হয়ত ‘পাগলা রাজা’ বলা হতো। তবে তাঁর জন্যই পৃথিবী আজ বিশেষ এক প্রকারের অপূর্ব ভাস্কর্য মণ্ডিত মন্দির দেখতে পাচ্ছে। তাঁর রাজত্বের আগে ইট-কাঠ ইত্যাদি দিয়েই মন্দির নির্মাণ হতো। উনি মনে করলেন এই সব বস্তু নশ্বর, তাই পাথর দ্বারা মন্দির করলে কেমন হয়। পাথর কেটে মূর্তি নির্মাণ আগে থেকেই চালু ছিল, এবার পাথর কেটে মন্দির নির্মাণ আরম্ভ করলেন। প্রথমে পাহাড়ের গায়ে গুহার আকারে এবং পরে তাঁহার পুত্র নরসিংহবর্মন (খ্রী.৬৩০-৬৬৮) পাহাড়ের ওপর থেকে শঙ্কুর আকারে শীর্ষ থেকে ক্রমশ ভিতের বা ভূমির তলের দিকে নেমে এসে।
মমল্লপুরম নামের উৎস নিয়ে দু-চার কথা আলোচনা করা সঙ্গত হবে। নরসিংহবর্মনের উপাধি ছিল মমল্ল। অনেকে বলেন নরসিংহবর্মনের এই উপাধিই মমল্লপুরম নামের কারণ। এই উপাধির কারণ আবার নাকি রাজার কুস্তিতে কথিত দক্ষতার জন্যে। যাই হোক মল্লাই বা মমল্লাই নাম নরসিংহবর্মনের কালের অনেক আগে থেকেই বৈষ্ণব সাধুগণ ব্যবহার করতেন।
নরসিংহবর্মনের চতুর্থ পুরুষ দ্বিতীয় নরসিংহবর্মন (৭০০-৭২৮) যিনি রাজসিংহ নামেও পরিচিত, মন্দির নির্মাণের পুরানো পদ্ধতি ফিরিয়ে আনলেন। অবশ্য ইট-কাঠ দিয়ে নয় পাথর খণ্ড পরস্পরের ওপর বসিয়ে নির্মাণ করলেন ‘শোর টেম্পল’ । তাঁর এমন পদ্ধতি উদ্ভাবন করার কারণ হল পাথর বা পাহাড় কাটার কাজে সময় বেশি লাগছিল মন্দির নির্মাণে। এ ছাড়া কঠিন পাথর গ্রানাইটের বদলে অপেক্ষাকৃত নরম বেলে পাথর বা স্যান্ড স্টোনের ব্যবহারও নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।
মমল্লপুরম এখনও পাথর, বিশেষ করে গ্রানাইটের ওপর ভাস্কর্য প্রস্তুত করার শিল্প জীবিত রেখেছে। গ্রামে আসবার পথের ধারে অসংখ্য দোকানে প্রচুর ভাস্কর্যের নমুনা বিক্রির জন্য রাখা। দেখা যায় দোকানে শিল্পীরা মূর্তি নির্মাণে ব্যস্ত।
Bangali Hindu Post (বাঙ্গালি হিন্দু পোস্ট)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন