শ্রীরামকৃষ্ণ -- দেখ, অমৃত-সাগরে যাবার অনন্ত পথ। যে কোন প্রকারে এ-সাগরে পড়তে পারলেই হল। মনে কর অমৃতের একটি কুণ্ড আছে। কোনরকমে এই অমৃত একটু মুখে পড়লেই অমর হবে; -- তা তুমি নিজে ঝাঁপ দিয়েই পড়, বা সিঁড়িতে আস্তে আস্তে নেমে একটু খাও, বা কেউ তোমায় ধাক্কা মেরে ফেলেই দিক। একই ফল। একটু অমৃত আস্বাদন করলেই অমর হবে।
“অনন্ত পথ -- তার মধ্যে জ্ঞান, কর্ম, ভক্তি -- যে পথ দিয়া যাও, আন্তরিক হলে ঈশ্বরকে পাবে।
“মোটামুটি যোগ তিনপ্রকার; জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ, আর ভক্তিযোগ।
“জ্ঞানযোগ -- জ্ঞানী, ব্রহ্মকে জানতে চায়; নেতি নেতি বিচার করে। ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা -- এই বিচার করে। সদসৎ বিচার করে। বিচারের শেষ যেখানে, সেখানে সমাধি হয়, আর ব্রহ্মজ্ঞানলাভ হয়।
“কর্মযোগ -- কর্ম দ্বারা ঈশ্বরে মন রাখা। তুমি যা শিখাচ্ছ। অনাসক্ত হয়ে প্রাণায়াম, ধ্যানধারণাদি কর্মযোগ। সংসারী লোকেরা যদি অনাসক্ত হয়ে ঈশ্বরে ফল সমর্পণ করে, তাতে ভক্তি রেখে, সংসারের কর্ম করে, সেও কর্মযোগ। ঈশ্বরে ফল সমর্পণ করে পূজা জপাদি করার নামও কর্মযোগ। ঈশ্বরলাভই কর্মযোগের উদ্দেশ্য।
“ভক্তিযোগ -- ঈশ্বরের নামগুণকীর্তন এই সব করে তাঁতে মন রাখা। কলিযুগের পক্ষে ভক্তিযোগ সহজ পথ। ভক্তিযোগই যুগধর্ম।
“কর্মযোগ বড় কঠিন -- প্রথমতঃ, আগেই বলেছি, সময় কই? শাস্ত্রে যে-সব কর্ম করতে বলেছে, তার সময় কি? কলিতে আয়ু কম। তারপর অনাসক্ত হয়ে, ফল কামনা না করে, কর্ম করা ভারী কঠিন। ঈশ্বরলাভ না করলে অনাসক্ত হওয়া যায় না। তুমি হয়তো জান না, কিন্তু কোথা থেকে আসক্তি এসে পড়ে।
“জ্ঞানযোগও -- এ-যুগে ভারী কঠিন। জীবের একে অন্নগত প্রাণ; তাতে আয়ু কম। আবার দেহবুদ্ধি কোন মতে যায় না। এদিকে দেহবুদ্ধি না গেলে একেবারে জ্ঞানই হবে না। জ্ঞানী বলে, আমি সেই ব্রহ্ম; আমি শরীর নই, আমি ক্ষুধা, তৃষ্ণা, রোগ, শোক, জন্ম, মৃত্যু, সুখ, দুঃখ -- এ-সকলের পার। যদি রোগ, শোক, সুখ দুঃখ -- এ-সব বোধ থাকে, তুমি জ্ঞানী কেমন করে হবে? এদিকে কাঁটায় হাত কেটে যাচ্ছে, দরদর করে রক্ত পড়ছে, খুব লাগছে -- অথচ বলছে, কই হাত তো কাটে নাই। আমার কি হয়েছে?”
জয় মা কালী
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন