এই ঘটনা দক্ষযজ্ঞ সময়ে। ভগবান শিবের বিরোধী ছিলেন প্রজাপতি দক্ষ। শিবের সাথে হিংসা করে ভগবান শিবকে ছোটো ও হেয় করবার জন্য দক্ষ এমন এক যজ্ঞের আয়োজন করলেন- যে যজ্ঞে সমস্ত দেবতা, প্রানী, ঋষি, গন্ধর্ব, যক্ষ, কিন্নর, অসুর, নাগ, অপ্সরা, চারন, নবগ্রহ, সপ্তর্ষি এমনকি ব্রহ্মা, বিষ্ণু কে পর্যন্ত নিমন্ত্রণ জানালেন। আমন্ত্রণ জানালেন না কেবল নিজ কন্যা সতী ও জামাতা ভগবান মহেশ্বর কে।
মূর্খ দক্ষকে তাঁর পত্নী প্রসূতী, পিতা ব্রহ্মা, ইষ্ট নারায়ন সকলেই বুঝিয়েছেন- যে শিব ছাড়া যজ্ঞ অসম্ভব- এতে তোমার বিনাশ ঘটবে। কিন্তু দক্ষ সেই সব কথায় কান দেয়নি । যথারীতি শিব ছাড়াই যজ্ঞ আরম্ভ করলেন।
কৈলাসে বসে মহাদেবী মা সতী এই খবর পেয়ে যজ্ঞে যাবার জন্য বায়না ধরলেন । ভগবান নীলকণ্ঠ বহু বুঝিয়ে বললেন- " প্রিয়ে। বিনা নিমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে যাওয়া অশোভনীয়। তোমার ও আমার নিন্দে হবে। তোমার পিতা তোমাকে অনেক গাল মন্দ করবেন- যা তুমি সহ্য করতে পারবে না।" দেবী বললেন- "প্রভু । পিতৃগৃহে পিতামাতার কাছে যেতে নিমন্ত্রণের কি প্রয়োজন?
আমি সেখানে গিয়ে আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করবো- তিনি কেন এমন অশাস্ত্রীয় যজ্ঞ করছেন ?" দেবাদিদেব অনেক বোঝালেন । বোধ হয় তিঁনি মহামায়ার মায়াতে মহামায়ার স্বরূপ বিস্মৃত হয়েছিলেন। ক্রোধে বললেন- "আমি তোমাকে সেখানে যেতে দেবো না।" শুনে মহাদেবী সতী বললেন- "আপনি আমার সাথে এরূপ কটু বাক্য বলতে পারেন না? আপনি কি আমার স্বরূপ বিস্মৃত হয়েছেন?"
মহাদেবী সতীর এমন কন্ঠ মহাদেব কোনোদিন শোনেন নি ও তিনি এমন স্মর আশাও করেন নি। দেখতে দেখতে কৈলাস কেঁপে উঠলো মহাদেবী সতীর অট্টহাসিতে আর ভয়ানক বজ্রপাতে । দেবাদিদেব দেখলেন সতীর স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন করালবদনা , মুক্তকেশী, ক্রুদ্ধা, এলোকেশী, মুণ্ডধারিনী দেবী কালী । সেই চাউনি অতীব ভয়ানক ও অসহনীয়। দেখে মহাদেব পালাতে চাইলে দেবীর শরীর থেকে চতুর্ভুজা, ব্যঘ্র চর্ম পরিহিতা দেবী তারা প্রকট হয়ে পথ রোধ করলেন। সেই দেবী অট্টহাস্য করছেন ।
এদেখে মহাদেব আর একদিকে পালাতে চাইলে ষোড়োশী দেবী প্রকট হয়ে মহাদেবের সেই দিকের গতি রোধ করলেন। মহাদেব অপর দিকে পলায়ন করতে চাইলে একে একে ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলামুখী , মাতঙ্গী ও কমলা দেবী দশ দিক থেকে প্রকট হয়ে দশদিকের পথ রোধ করলেন । দেবাদিদেব শিব তখন কালিকার দিকে চেয়ে বললেন- "কে তুমি ? আমার কোমোল প্রানা সতী কই ?" দেবী সতী বললেন- "আমি তো আপনার সামনে।" দেবাদিদেব ভগবান শিব স্বয়ং শিবানীর মায়াজালে আচ্ছন্ন হয়ে মহামায়ার স্বরূপ বিস্মৃত হয়েছিলেন ।
এবার দেবাদিদেব বুঝলেন দেবী সতীই মহামায়া । তিনি স্তব করলেন - "হে দেবী। আমি বুঝেছি। তুমি আদ্যাশক্তি। তুমি পরমাপ্রকৃতি। তুমি দশদিকে বিরাজিতা। দশ দিক তোমার নিয়ন্ত্রনে। তুমিই সকল শক্তির উৎস। আমি তোমাকে পিতৃ গৃহে যাবার অনুমতি দিলাম।" মহাদেবের স্তবের পর নয় মহাবিদ্যা দেবী কালিকার মধ্যে বিলীন হলে দেবী কালিকা পুনঃ সতী রূপে আসলেন । এরপর বৃষ আরোহিতা হয়ে শিব গণ সহ চললেন দক্ষ মহলে । এই শেষ তাঁর সাক্ষাৎ দেবাদিদেবের সাথে । পুনঃ তিনি আসবেন হিমালয় নন্দিনী উমা রূপে।
বিস্তারিত দেখুন এখানে: Shree Krishna - The Supreme Personality of Godhead
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন