শম্ভুনেত্রাগ্নিনির্দগ্ধঃ শম্ভোরনুগ্রাৎ । ত্রত রূপং যতঃ প্রাপ কামরূপং ততোহভবৎ ।। ( কালিকাপুরান ।। একপঞ্চাশ অধ্যায় ।। ৬৭ ) অর্থাৎ- হর ললাট অগ্নিতে কামদেব ভস্মীভূত হন। পুনরায় হরের ইচ্ছায় কামদেব এখানেই তার সুন্দর রূপ ফিরে পান। তাই এই স্থানকে কামরূপ বলা হয়েছে । কামরূপং মহাপীঠং সর্বকামফলপ্রদম্ । কলৌ শীঘ্রফলং দেবী কামরূপে জপঃ স্মৃত ।। ( কুব্জিকা তন্ত্র/ সপ্তম পটল ) এর অর্থ- এখানে কামনার অনুরূপ ফল পাওয়া যায় বলে এই স্থান কামরূপ নামে খ্যাত। বিশেষতঃ কলিযুগে এই স্থান অতীব জাগ্রত। কামরূপ অভিযান কালে কোচ ( কোচবিহার রাজ বংশ ) নরপতি রাজা বিশ্বসিংহ দেবীর এই পীঠ উদ্ধার ও মন্দির নির্মাণ করেছিলেন । আহোম রাজার সাথে যুদ্ধ চলার সময় একদা তিনি ও তাঁর ভাই শিবসিংহ মূল সৈন্য দল থেকে পৃথক হয়ে পড়েন । এবং তাঁরা দুজন ক্লান্ত ও তৃষ্ণার্ত হয়ে এই পর্বতে জঙ্গলে ঢাকা কুন্ডের সামনে এসে উপস্থিত হন। তারা জানতেন না সেটি দেবী পীঠ। উভয়ে দেখলেন সামনে এক বৃদ্ধা পূজা করছেন । দুইজন গিয়ে সেই বৃদ্ধার কাছে জল চাইলেন । বৃদ্ধা বললেন- ‘সামনের ঝর্না থেকে জল পান করো।’ জল পান করে এসে রাজা বিশ্বসিংহ ও তাঁর ভাই শিবসিংহ জানতে চাইলেন এই মৃত্তিকা স্তূপের সামনে কার পূজা করছেন ? বৃদ্ধা জানালো- ‘ইনি তাঁদের দেবী। এখানে যে যা প্রার্থনা ব্যক্ত করে- দেবী তাঁর সেই ইচ্ছাই পূর্ণ করেন । এর অন্যথা হয় না।’ শুনে রাজা বিশ্বসিংহ মনে মনে প্রার্থনা করলেন ‘তিনি যেনো তাঁর হারানো সেনাদলকে ফিরে পান । তাঁর রাজ্য যেনো নিষ্কণ্টক হয় ।’ মহারাজ সেখানে প্রতিশ্রুতি দিলেন প্রার্থনা পূর্ণ হলে তিনি এখানে সোনার মন্দির ও নিত্য পূজোর ব্যবস্থা করবেন । বৃদ্ধা জানালেন , দেবীকে ছাগাদি বলি, সিঁদুর, গন্ধ, পুস্প, রক্ত বস্ত্র, অলংকার দ্বারা পূজা করতে হয় । যাই হোক , মহাদেবী ভবানী কামাখ্যা রাজার ইচ্ছা পূর্ণ করলেন। রাজার বাসনা পূর্ণ হল । অপর একটি জনশ্রুতি অনুসারে – একদিন রাজা বিশ্বসিংহ ঐ স্থানে এসে ঐ কুন্ডের মাহাত্ম্য শুনলেন । তিনি ভাবলেন পরীক্ষা করে দেখা যাক সত্যই এই কুন্ডে ইচ্ছা পূরনের কোন শক্তি আছে কিনা । এই ভেবে তিনি তার আঙুলের একটি হীরক আংটি ঐ কুন্ডে ফেলে মনে মনে বললেন- ‘যদি কাশীতে গঙ্গা তে আমি এই আংটি ফেরত পাই, তবেই দেবীর মহিমা মানবো।’ এই ঘটনার পর একদা তিনি কাশীধামে গিয়ে তর্পণ কালে ঐ আংটি পুনরায় ফেরত পেলেন। তিনি ঐ কুন্ডের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে আরও জানার জন্য পণ্ডিত দের একটি বিচারসভা বসালেন । পণ্ডিত গণ শাস্ত্র ঘেটে জানালেন । ঐ স্থানে দেবী সতীর যোনিদেশ পতিত হয়েছে। এবং দেবী সেখানে কামাখ্যা রূপে বিরাজিতা। এই শুনে মহারাজ সেখানে মন্দির নির্মাণে অগ্রসর হলেন । রাজার আদেশে লোকজন লেগে কাজে নেমে পড়লো। জঙ্গল পরিষ্কার করে কুন্ড উদ্ধারের সময় , বিশ্বকর্মা স্থাপিত মন্দিরের ভিত উদ্ধার হল। যোনীমুদ্রা সহ মূল পীঠ আবিস্কৃত হল। রাজা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সোনায় মুড়ে মন্দির বানাবেন। কিন্তু অত সোনা পাওয়া মুস্কিল। তাই কেবল ইট দ্বারা মন্দির নির্মাণের ব্যবস্থা হল। কিন্তু প্রতি দিন মন্দিরের ইট খসে খসে পড়তে লাগলো। একদা রাজা বিশ্বসিংহ কে স্বপ্নে মা দেখা দিয়ে বললেন – ‘ হে রাজন। কি প্রতিজ্ঞা করেছিলে মনে কর, সোনার মন্দির করবে বলেছিলে- তা কি বিস্মৃত হয়েছ?’ রাজা গদগদ হয়ে বলল- ‘মা সন্তানের অপরাধ ক্ষমা কর। এত স্বর্ণ কোথায় পাইবো?’ মা জানালেন- ‘চিন্তার কিছু নাই। প্রতি ইষ্টক এ এক রতি করে সোনা দিবে।’ রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই মতো মন্দির নির্মাণ করলেন । অসমের শোয়ালকুচি গ্রামের ব্রাহ্মণ দের পুরোহিত হিসাবে নিযুক্ত করা হল। মন্দির স্থাপনার পর প্রতিষ্ঠা ও নিত্য পূজার ব্যবস্থা করা হল। বর্তমানে সে বংশানুক্রমিক ভাবে সেই পুরোহিত গণ মায়ের নিত্য পূজা করেন । এই স্থানে তন্ত্র, পুরান আলোচনা হতে লাগলো। সাধুরা এখানেই তন্ত্র সাধনা করতে লাগলেন । সেই সব শাস্ত্রের জীর্ণ লিপি এখনও আসামের কিছু স্থানে পাওয়া যায়, কিছু গৃহে দেখা যায় ।
কার্টেসিঃ সুমন বসাক
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন