১৮ মার্চ ২০১৫

বেলুড় মঠ, হাওড়া, পশিম বঙ্গ




বেলুড় মঠ রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দপ্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেহাওড়া শহরের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বেলুড়ে গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে এই মঠ অবস্থিত। মঠের রামকৃষ্ণ মন্দিরটির স্থাপত্যে হিন্দু, ইসলাম ও খ্রিস্টীয়ধর্মচেতনার সংমিশ্রণ লক্ষিত হয়।
৪০ একর জমির উপর অবস্থিত মূল মঠপ্রাঙ্গনে রামকৃষ্ণ পরমহংস,সারদা দেবী, স্বামী বিবেকানন্দের দেহাবশেষের উপর অবস্থিত মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনের সদর কার্যালয় অবস্থিত। এছাড়াও রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ইতিহাসকে তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি সংগ্রহশালাও এখানে স্থাপিত হয়েছে। বেলুড় মঠ-সন্নিহিত একটি প্রাঙ্গনে গড়ে উঠেছে রামকৃষ্ণ মিশন অনুমোদিত বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্র। স্বামী বিবেকানন্দের পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে মন্দিরের নকশা নির্মাণ করেছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসের অপর সাক্ষাতশিষ্য স্বামী বিজ্ঞানানন্দ। বেলুড় মঠ ভারতের একটি প্রধান পর্যটন আকর্ষণ এবং ভক্তদের নিকট একটি পবিত্র তীর্থ।
বেলুড় মঠ বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, নারীকল্যাণ, শ্রমিক ও অনগ্রসর শ্রেণীর স্বার্থে গ্রামোন্নয়ন, ত্রাণ, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। রামকৃষ্ণ পরমহংস, সারদা দেবী, স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম ও প্রয়াণতিথি, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও বড়দিনউৎসব উদযাপন করে এই কেন্দ্র। দুর্গাপূজা, বিশেষত মহাষ্টমীরকুমারীপূজা দেখতে এখানে প্রতি বছর প্রচুর জনসমাগম হয়।
১৮৯৭ সালে পাশ্চাত্য থেকে কয়েকজন অনুগামী সংগ্রহ করে কলম্বো প্রত্যাবর্তন করেন স্বামী বিবেকানন্দ। এরপর ভারতে ফিরেই তিনি দুটি মঠের গোড়াপত্তন করেন। একটি আলমোড়ার নিকট হিমালয়ে অবস্থিত মায়াবতীতে অদ্বৈত আশ্রম ও অপরটি কলকাতার সন্নিকটস্থ বেলুড়ে রামকৃষ্ণ মিশন। এই মঠদুটি স্থাপনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল রামকৃষ্ণ মিশনে যোগদানে ইচ্ছুক যুবকদের গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ এবং তাদের মিশনের কাজকর্মের উপযুক্ত করে তোলা। এই বছরেই দুর্ভিক্ষের সময় জনসেবার মাধ্যমে মিশনের কাজের সূচনা হয়।
বিশ্বধর্ম মহাসভায় ভাষণদানের আগে পরিব্রাজক জীবনে স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল পর্যটন করেছিলেন। এই সময় তাজমহল, ফতেপুর সিক্রি, দেওয়ান-ই-খাস, রাজপুতানার প্রাসাদ এবং মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও অন্যান্য অঞ্চলের প্রাচীন মন্দিরগুলি দর্শন করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ভ্রমণকালে সেই অঞ্চলের আধুনিক, মধ্যযুগীয়, গথিক ও রেনেসাঁ স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যগুলিও অবগত হন। কথিত আছে, এই সকল স্থাপত্যের সংমিশ্রণে স্বামী বিবেকানন্দই বেলুড় মঠ স্থাপত্যের পূর্বপরিকল্পনা রচনা করেছিলেন।.
স্বামী বিবেকানন্দের পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁর সন্ন্যাসী-ভ্রাতা ও রামকৃষ্ণ পরমহংসের অপর সাক্ষাতশিষ্য স্বামী বিজ্ঞানানন্দ মন্দিরের নকশা প্রস্তুত করেন। বিজ্ঞানানন্দ পূর্বাশ্রমে ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ১৬ মার্চ, ১৯৩৫ মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। মার্টিন বার্ন অ্যান্ড কোম্পানি এই বিরাট মন্দিরটি নির্মাণ করেন। রামকৃষ্ণ মিশন এই মন্দিরের বর্ণনা দেন “স্থাপত্যের ঐকতান” রূপে।
আধুনিক ধর্মস্থান বেলুড় মঠ মন্দির, মসজিদ ও গির্জার স্থাপত্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণে নির্মিত। রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলনের বিশ্বাস অনুসারে বিশ্বধর্মের আদর্শকে তুলে ধরার জন্য একাধিক ধর্মের স্থাপত্য ও প্রতীকতত্ত্ব থেকে মন্দিরের এই স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য সংকলিত হয়েছে।ধর্মের রূপতাত্ত্বিক দিকটিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন এই মন্দির।
মন্দিরের মূল প্রবেশপথটি বৌদ্ধ আদর্শে নির্মিত। মূল প্রবেশপথের উপরের অংশটি উচ্চ স্তম্ভযুক্ত দক্ষিণ ভারতীয় মন্দিরের আদর্শে নির্মিত। মন্দিরের ভিতরের জানালা ও অলিন্দ উত্তর ভারতের রাজপুত ও মুঘল স্থাপত্যের আদর্শে তৈরি। কেন্দ্রীয় গম্বুজটি ইউরোপীয় রেনেসাঁ স্থাপত্যের নিদর্শন। আবার ভিতরের মেঝেটি কতটা খ্রিস্টান ক্রসের আকারে বিন্যস্ত।
বেলুড় মঠের অভ্যন্তরে দ্রষ্টব্য স্থানগুলি হল শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দির, পুরনো ঠাকুরঘর, স্বামী বিবেকানন্দের বাসকক্ষ, স্বামী ব্রহ্মানন্দ মন্দির, শ্রীমা সারদাদেবী মন্দির, স্বামী বিবেকানন্দ মন্দির, সমাধি পীঠ, পুরনো মঠ, রামকৃষ্ণ মিউজিয়াম ইত্যাদি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বহিরাগত দর্শক ও পূণ্যার্থীদের দর্শনের নিমিত্ত মঠ ও মন্দিরের দ্বার খোলা রাখা হয়। দেশ ও বিদেশ থেকে বহু মানুষ প্রতিদিন এই মন্দিরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন।
দ্বিতল রামকৃষ্ণ সংগ্রহালয়ে রামকৃষ্ণ পরমহংস, সারদা দেবী, স্বামী বিবেকানন্দ ও অন্যান্য কয়েকজন বিশিষ্ট শিষ্যের ব্যবহৃত দ্রব্যাদি সংরক্ষিত রয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে পাশ্চাত্যে স্বামী বিবেকানন্দ পরিহিত লং কোট, ভগিনী নিবেদিতার টেবিল, ও মিসেস সেভিয়ারের একটি অর্গান। সংগ্রহালয়ে রামকৃষ্ণ আন্দোলন ও সমসাময়িক বাংলার ইতিহাস চিত্রের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে।


Bangali Hindu Post (বাঙ্গালি হিন্দু পোস্ট)
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।