ওঁ ভূভবঃ স্বঃ
তত্ সবিতুর্বরেন্যং
ভর্গো দেবস্য ধীমহি ।
ধিয়ো যো নং প্রচোদয়াত্ ।।ওঁ।।
অনুবাদ :যিনি ত্রিলোকের স্রষ্টা অথ্যাৎ সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রসবিতা, সে সচ্চিদানন্দঘন নিরাকার পরমব্রহ্মের বরনীয় জ্যোতি কে আমরা ধ্যান করি। তিনি আমাদের মন ও বুদ্ধিকে শুভ কার্যে
প্রেরনা দান করুন।
তাত্পর্যঃ বলা যায় ভূ ভুবঃ স্বঃ অথ্যাৎ পৃথিবী ,অন্তরীক্ষ ,বিশ্বব্রহ্মন্ডে ,এবং সর্বত্র সেই পরমপুরুষ নিরাকার পরমেশ্বরের প্রভাব বা জ্যোতি বিদ্যমান ।তাকে ঘিরেই আমাদের জন্ম ,মৃত্যু ,জীবন সব। তাই তার কাছে আমাদের প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের জীবনকে সাত্ত্বিক ভাবে অতিবাহিত করার
জন্যে কৃপা করেন । ঋক ,সাম ,যজুঃ এই তিন বেদেই আমরা মন্ত্রটি পাই যথাক্রমে ঋকবেদ ৩/৬২/১০
যজুঃবেদ ৩/৩৫,৩০/২সামবেদ উত্তর আর্চিক ৬/৩/১০। এই মন্ত্রের দেবতা সবিতা ।
দ্রষ্ট্রা ঋষি বিশ্বামিত্র ,ছন্দ গায়ত্রী এবং এটাই বেদের সর্ব শ্রেষ্ঠ মন্ত্র এবং ছন্দ ।
ভগবান শ্রী কৃষ্ণ গীতার বিভূতিযোগে ৩৫নং শ্লোকে বলেছেন ছন্দ সমূহের মধ্যে আমি গায়ত্রী। এই হল অতি সংক্ষেপে গায়ত্রী মন্ত্রের বর্ননা ।
সূর্যের বিভিন্ন নাম আমরা পাই যেমন :সূর্য ,পুষা ,মিত্র
,সবিতা ,অর্য্যমা, বিষ্ণু ইত্যাদি এরা সবাই আদিত্য । আমরা
দেখছি যে সূর্যের সমার্থক শব্দ সবিতা । সূর্যকে বৈদিক ঋষিরা এই বিশ্বচরাচরের সকল শক্তির উত্স
হিসাবে চিন্তা করতেন ।বাস্তবেও অবশ্য তাই,আমরা
সূর্য শক্তিতেই বলিয়ান ।কিন্তু এই মন্ত্র সবিতা
সরাসরি সূর্যের সমার্থক শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয় নি। বেদভাষ্যকার
সায়নাচার্য এখানে
সূর্য ও সবিতার দুই রকম অর্থ করেছেন ।এই মন্ত্রে
সবিতা হল,সকল কারনের
কারন সেই সচ্চিদানন্দ
নিরাকার পরম ব্রহ্ম
।তাই সবিতা অর্থ জগত স্রষ্টা ।"সু" ধাতু থেকে সবিতৃ নিষ্পন্ন হয়েছে। যায়
জন্যে সবিতা মানে প্রসবিতা । নিরুক্তিকার
যস্ক অর্থ করেছেন "সর্ব্বস্য প্রসবিতা। "বেদ ভাষ্যে সায়ন ব্যাক্ষা করেছেন তত্সবিতুঃ
=জগত্প্রসবিতুঃ = বাংলা হচ্ছে নিখিল বিশ্বের
সৃষ্টিকারী ।তাই এই মন্ত্রে আমরা সেই পরমেশ্বরের বরনীয় জ্যোতিকে ধ্যান
করছি । যাকে এখানে সবিতা
বলা হয়েছে বা নাম দেওয়া হয়েছে ।ঋকবেদের ২য়
মন্ডলের ৩৮ সূক্তের ৭থেকে ১১ নং
মন্ত্রে সবিতাকে সকল শক্তির উত্স বলে তার স্তুতি করা হয়েছে।
বলা হয়েছে :হে সবিতা ,তুমি সকল কিছু সৃষ্টি করেছ অন্তরীক্ষ ,জল ,স্থল ।তুমি
সকল ভূত
,পশুপাখী ,স্থাবর জঙ্গম ইত্যাদিকে স্ব স্ব স্থানে রেখেছ। ইন্দ্র ,বরুন
,মিত্র ,অর্য্যমা ,বা
রুদ্র সবাই তোমার
শক্তিতে বলিয়ান ।কেউ তোমাকে হিংসা
করে না ।হে সবিতা (পরমেশ্বর) তোমার
দুতিমান জ্যোতিঃকে (অথ্যাৎ, সকল প্রকাশ যুক্ত শক্তি এবং অপ্রকাশিত
অতিন্দ্রিয় শক্তিকে) আমরা নমষ্কার করি। তুমি সকলের কল্যান কর। আমাদের জন্যে যেন সকল কিছু শুভ
হয় । এটাই এই গায়ত্রী মন্ত্রের দেবতা সবিতার তাত্পর্য।
উল্লেখ্য, এই মন্ত্রে সবিতার জ্যোতি মানে সরাসরি সূর্যের জ্যোতি এই অর্থে
ব্যবহৃত হয় নাই। হঠাৎ করে মন্ত্রটি দেখলে এটা মনে হতে
পারে ।তাই এটা বুঝতে
আমাদের এর পিছনের বিষয় গুলোকেও দেখতে হবে ।বেদে এক জায়গায় সবিতাকে
প্রজাপতি অথ্যাৎ
সমগ্র ভুতগনের সৃষ্টিকারি বলা হয়েছে। তাই এখানে
সূর্যের আলো
না বুঝে পরমশ্বরের
প্রভাবকে বুঝতে হবে।
বৈদিক ভাব বুঝানো
শক্ত কাজ অনেক ক্ষেত্রে নিজে বুঝলেও বোঝানো যায় না অপরকে ,যা হোক
চেষ্টা করেছি মাত্র সহজ ভাবে বুঝানোর। নমস্কার।
@Agni Sampad
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন