১৯ জুলাই ২০১৩

"বর্ণ প্রথার সংস্কার জরুরি কেন"




বর্ণ প্রথা শ্রী ভগবানের সৃষ্টি। কিন্তু তিনি তা গুণ কর্ম অনুসারে নির্ণয় করতে বলেছেন , বর্তমান হিন্দু সমাজের রীতি অনুসারে জন্ম অনুসারে তা নির্ণয় করতে বলেন নি। বেদ বা গীতায় জন্মসুত্রে বর্ণ নির্ণয়ের পক্ষে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ -ও নেই ।
হিন্দু সমাজের ব্যবহারিক জগতের বিধি বিধান দেশ কাল পরিস্থিতিতে মাঝে মাঝে পরিবর্তন হয়। এমন -ই এক সামাজিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সময় কিছু মানুষ জন্মানুসারে বর্ণ নির্ণয়ের প্রথা সুরু করেন। যারা সুরু করেছিলেন বা যারা কঠোর ভাবে তা মানতেন ,তাঁরা কেউ কেউ সুবিধাবাদি হলেও, সবাই খারাপ ছিলেন না। সুবিধাবাদী লোক গুলো ছাড়া বাকী যারা এই প্রথার প্রবর্তক ছিলেন তাঁরা আধুনিক অর্থনীতির ''শ্রম বিভাজন " নীতি প্রচলন করে সমাজ থেকে বেকারি উতখাত করতে চেয়েছিলেন।

আশা করা গেছিল যে এর ফলে এক-ই পেশার মানুষের সন্তান সেই পেশায় দক্ষতা সহজেই পিতা ও পরিবার থেকে সিখে নেবে। পরিবার এক্ষেত্রে প্রসিক্ষন কেন্দ্র হয়ে উঠবে। এর সাথে আধ্যাত্মিকতার কোনও অনিবার্য সংযোগ নেই। পেশা যাই হোক না কেন , সে ঈশ্বর লাভ করতেই পারেন।কিন্তু কালে সেই উদারতাও বন্ধ হতে সুরু হলে বুদ্ধাবতারে ভগবান বর্ণ , যজ্ঞ , বলি প্রভৃতি প্রথার বিকৃত রূপের নিন্দা করেন।
মুসলিম আক্রমন ও খ্রিস্টান শাসনের মোট ১০০০ বছরের কুশাসনে ওই সব প্রথার বিকৃত রুপ গুলি আরও নিকৃষ্ট রুপ ধারন করে। এক শ্রেণীর উচ্চ বর্ণের মানুষের ঘৃণায় হিন্দু দের এক অংশ স্বধর্ম ত্যাগ করেন। যদিও মুসলিম আগ্রাসন - ও এ বিষয়ে অনেকটা দায়ী । তবে ব্রিটিশ শাসনের সময় জোর করে ধর্মান্তর প্রায় হয়-ই নি। যা হয়েছে তা লোভ, পাশ্চাত্য শিক্ষা বা হিন্দু সমাজের উচ্চ বর্ণের ঘৃণার কারনে ঘটেছে। লালন ফকিরের ঘটনাও ব্রিটিশ যুগের। স্বাধীন ভারতেও এই কু প্রথার অবসান আজও ঘটে নি। অনেকেই জানেন না যে এই ঘৃণার সুযোগ নিয়ে খ্রিস্টান ও মুসলিমরা আজও ভারতে ধর্মান্তর ঘটাচ্ছে। বহু দেশ ও ভারতীয় সভ্যতার অনুরাগী মানুষ মুসলিম ও খ্রিস্টান হবে না বলে বৌদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন। উত্তর ,মধ্য ভারতে প্রতি বছর-ই কিছু তথা কথিত নিম্ন বর্ণের হিন্দু বুদ্ধের শরণে চলে যাচ্ছেন। এই আত্মঘাতী জন্ম সূত্রে জাত নির্ণয়ের কুপ্রথা বন্ধ না করলে হিন্দু জাতি আরও সঙ্খ্যায় কমবে। জন গননার রিপোর্ট ধারাবাহিক ভাবে দেখলে সেই কমার প্রবনতা স্পষ্ট বোঝা যাবে।

এই প্রসঙ্গে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা এই যে , সারা পৃথিবীতে পুরোহিত শ্রেণী ও শাসক স্রেনি একত্রে অবহেলিত মানুষকে চুটিয়ে শাসন ও শোষণ করেছে , ভারতেও তা হয়েছে। কিন্তু এ দেশের হিন্দু সমাজের ওই শাসক ও পুরোহিত শ্রেণী থেকেই আবার অবতার ও সাধক গন এসে ধর্ম ও দেশ রক্ষা করেছে যা অন্য দেশে বা অন্য রিলিজিওনে প্রায় কখনও ঘটে নি। জন্মসুত্রে শাসক শ্রেণীর কৃষ্ণ বা বুদ্ধ কিম্বা পুরোহিত শ্রেণীর রামানুজ বা চৈতন্য দেব বা রামকৃষ্ণ দেব তাঁদের যুগ হিসেবে যথা সম্ভব হিন্দু ও ভারতীয় সমাজের বৈপ্লবিক সংস্কার করেছেন। তাঁদের অবদানকে তাই স্রদ্ধানত চিত্তে স্বীকার করতে হবে। উচ্চ বর্ণ মানেই তাই নিকৃষ্ট ,মানবতা বিরোধী জীব নয়--- এ সত্য ও মানতে হবে। তথা কথিত উচ্চ বর্ণে আবির্ভূত হয়েও এই দিব্য পুরুষেরা বর্ণ ,শ্রেণী , মতের ঊর্ধ্বে তাঁদের জীবন ও আদর্শ কে স্থাপন করেছিলেন। তাঁরা হিন্দু ও ভারতীয় সমাজের যতটুকু সংস্কার করতে পেরেছিলেন, তার পরেও আরও কাজ বাকী রয়ে গেছে। এই প্রজন্মের সকল বর্ণের হিন্দুকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে। প্রনবানন্দ মহারাজ যেমন বলতেন যে , সবার আগে চাই হিন্দুতে হিন্দুতে মিলন, তারপর হিন্দু অহিন্দুর মিলন এমনিতেই সুসম্পন্ন হবে।

পোস্ট টা একটু বড় হল। শান্ত চিত্তে পড়তে অনুরধ করি সবাইকে। আর অযথা বিতর্ক না করতেও অনুরধ করি । সকলের মঙ্গল হোক।
হরি ওঁ। জয় মা। জয় প্রভু।

written by : Debasish Singha
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।