সনাতন ধর্ম যতগুলো স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে, তার মধ্য জন্মান্তরবাদ অন্যতম। আমাদের ধর্ম বিশ্বাস করে, জীবের মৃত্যুর পর জীবাত্মা একদেহ পরিত্যাগ করলে কর্মফল ভোগ করার জন্য অন্য দেহ ধারণ করে এ জগতেই পুনরায় জন্মগ্রহণ করে। যেমন একই ব্যক্তি পুরাতন ছিন্ন বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, সেইরূপ জীবাত্মাও জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ গ্রহন করে। বেদ, উপনিষদ এবং ভগবৎ গীতার মতে, এই জীবাত্মা স্বরূপতঃ ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু জাগতিক বস্তুর প্রতি আসক্তিবশতই আত্মাকে দেহ ধারণ করতে হয়।
মূলত, জীবাত্মার একাধিক জন্মগ্রহণের কারণ হল তার ভোগাকাঙ্ক্ষা। সনাতন ধর্ম পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে বিধায় প্রত্যেক জীবের কর্মফল পূর্ববর্তী জন্মের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে বলে ধারনা করা হয়।
আমাদের ধর্মের মতে কর্ম করলেই তার ফল উৎপন্ন হবে, আর কর্মকর্তাকে তা অবশ্যই ভোগ করতে হবে। আর এই কর্মফল ভোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মোক্ষপ্রাপ্তি বা জন্ম মৃত্যুরূপ সংসারচক্র থেকে মুক্তি হবে না। আর এরূপ পুনঃপুনঃ জন্ম গ্রহণকেই বলা হয় জন্মান্তরবাদ।
মাধ্যমিক পর্যায়ের হিন্দুধর্ম বইয়ে আমরা পড়েছি যে, জীবাত্মা হচ্ছে পরমাত্মার অংশ বিশেষ। অংশের মধ্যেও মূলবস্তুর গুনাগুন বিদ্যমান। তাই পরমাত্মার ন্যায় জীবাত্মাও অব্যয়, জন্ম মৃত্যুহীন, শাশ্বতবস্তু। কিন্তু পঞ্চ উপাদানে গড়া আমাদের এই দেহ নশ্বর। আজ আছে, তো কাল নেই। এই দেহকে আশ্রয় করেই জীবাত্মার অভিযাত্রা, আবার জীবাত্মাকে লাভ করে দেহ হয় সজীব। দেহহীন আত্মা নিষ্ক্রিয়, আত্মাহীন দেহ জড়। যিনি জীবদেহ ধারণ করে এসেছেন তারই দেহনাশ নিশ্চিত হয়ে রয়েছে। তবে “যত দিন পরমাত্মা বা ঈশ্বরপ্রাপ্তি না ঘটে তত দিন জীবাত্মাকে বারবার নতুন দেহ ধারণ করে মোক্ষলাভ বা ঈশ্বর প্রাপ্তির জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।” মূলত এটাই জন্মান্তরবাদের মূল কারণ।
ঈশ্বরের সৃষ্টি এই পৃথিবীতে সূর্য ও চাঁদের আলো ধনী গরীব নির্বিশেষে সকল মানুষই সমান ভাবে প্রাপ্ত হয়। আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি তাহলে কেন সমাজে কিছু মানুষ ধনী, কেন কিছু মানুষ গরীব?? কেন একটি শিশু বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নেয়; স্বাভাবিক দৃষ্টিতে যে কোন অপরাধই করেনি?? কেনই বা একটি মানুষ দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যুবরণ করবে?? মানুষের যদি কর্মফলের ওপর এসব ভোগান্তি হয়, তাহলে আমাদের অবশ্যই জন্মান্তরবাদ বিশ্বাস করতে হবে। শেষ করছি গীতার একটি শ্লোক দিয়েঃ
“জাতস্য
হি ধ্রবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।
তস্মাদপরিহার্যেহর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি।।” (গীতা ২/২৭)
অথ্যাৎ, যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী; এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব তোমার কর্তব্য সম্পাদন করার সময় শোক করা উচিত নয়।
শ্রী জয় রায় (১৭/০৭/১৩)
তস্মাদপরিহার্যেহর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি।।” (গীতা ২/২৭)
অথ্যাৎ, যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী; এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব তোমার কর্তব্য সম্পাদন করার সময় শোক করা উচিত নয়।
শ্রী জয় রায় (১৭/০৭/১৩)
1 Comments:
অনেক কিছু জানতে পারলাম।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন