‘মনস’ শব্দের স্ত্রী লিঙ্গে ‘আপ’ প্রত্যয় করে মনসা শব্দের ব্যুৎপত্তি। সুতরাং এই দিক থেকে মনসা মনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। দেবী ভাগবত ও ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ পুরান বলেন – সর্প ভয় থেকে মনুষ্যদের উদ্ধারের জন্য পরম পিতা ব্রহ্মা কশ্যপ মুনিকে বিশেষ মন্ত্র বিশেষ বা বিদ্যা আবিস্কারের কথা বলেন। হয়তো এখানে বিষের ঔষধ আবিস্কারের কথা সেই সাথেও বলা হয়। কশ্যপ মুনি এই বিষয় নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করছিলেন। তখন তাঁর মন থেকে এক দেবীর সৃষ্টি হয়। তিনটি কারনে দেবীর নাম হয় মনসা।
'সা চ কন্যা ভগবতী কশ্যপস্য চ মানসী ।
তেনৈব মনসা দেবী মনসা বা চ দীব্যতি ।।
মনসা ধ্যায়তে যা চ পরমাত্মানমীশ্বর ম্ ।
তেন যা মনসা দেবী তেন যোগেন দীব্যতি ।।
আত্মারামা চ সা দেবী বৈষ্ণবী সিদ্ধযোগিনী ।' ---- ( দেবীভাগবত পুরাণ )
প্রথমতঃ মনসা কশ্যপ মুনির মানস কন্যা, কেননা চিন্তা ভাবনার সময় মুনির মন থেকে উৎপন্না। দ্বিতীয় মানুষের মন তদীয় ক্রীড়া ক্ষেত্র, তৃতীয়তঃ নিজেও মনে মনে পরমাত্মার ধ্যান করেন বলে দেবীর নাম মনসা। মন মানুষের শত্রু আবার মন মানুষের মিত্র হতে পারে। “মন এব মনুষ্যানাং কারণং বন্ধমোক্ষয়োঃ।” মন যদি শুদ্ধ, একাগ্র চিত্ত, নিজ বশীভূত, ভগবৎপরায়ণ হয় - ত সেই মন মোক্ষের কারন। তাই এই মনকে ‘মিত্র’ বলা যাবে। কিন্তু মন যদি অশুদ্ধ, চঞ্চল, ইন্দ্রিয় পরায়ণ, ভগবৎ বিমুখ হয়- ত সেই মন নরক গমনের হেতু। এই মন হল শত্রু মন। কশ্যপ মুনি মানব কল্যাণের জন্য ঔষধ আবিস্কারের কথা ভেবেছিলেন - তাই তাঁর মন থেকে দেবীর সৃষ্টি হল। তাই শাস্ত্রের এই শিক্ষা যে, আমাদের সর্বদা কল্যাণকর, হিতকর, ভগবানের কথা-
ইত্যাদি মনে ভাবনা চিন্তা করতে হবে।
মনসা আদিবাসী দেবতা। পূর্বে শুধু নিম্নবর্ণীয় হিন্দুদের মধ্যে তাঁর পূজা প্রচলিত ছিল। পরবর্তীকালে উচ্চবর্ণীয় হিন্দুসমাজেও মনসা পূজা প্রচলন লাভ করে। মনসার সাথে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণদের আত্মীয়তা কীভাবে গড়ে উঠলো সেই কথাটা একটু বলি। বর্তমানে মনসা আর আদিবাসী দেবতা নন, বরং তিনি একজন হিন্দু দেবীতে রূপান্তরিত হয়েছেন। হিন্দু দেবী হিসেবে তাঁকে নাগ বা সর্পজাতির পিতা কশ্যপ ও মাতা কদ্রুর সন্তান রূপে কল্পনা করা হয়েছে। খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দী নাগাদ্ মনসাকে শিবের কন্যারূপে কল্পনা করে তাঁকে শৈবধর্মের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সময় থেকেই প্রজনন ও বিবাহ রীতির দেবী হিসেবেও মনসা স্বীকৃতি লাভ করেন। কিংবদন্তি অনুযায়ী, শিব বিষপান করলে মনসা তাঁকে রক্ষা করেন; সেই থেকে তিনি বিষহরি নামে পরিচিতা হন। তাঁর জনপ্রিয়তা দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত প্রসারিত হয়। মনসার পূজকেরা শৈবধর্মের প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও অবতীর্ণ হন।
'সা চ কন্যা ভগবতী কশ্যপস্য চ মানসী ।
তেনৈব মনসা দেবী মনসা বা চ দীব্যতি ।।
মনসা ধ্যায়তে যা চ পরমাত্মানমীশ্বর ম্ ।
তেন যা মনসা দেবী তেন যোগেন দীব্যতি ।।
আত্মারামা চ সা দেবী বৈষ্ণবী সিদ্ধযোগিনী ।' ---- ( দেবীভাগবত পুরাণ )
প্রথমতঃ মনসা কশ্যপ মুনির মানস কন্যা, কেননা চিন্তা ভাবনার সময় মুনির মন থেকে উৎপন্না। দ্বিতীয় মানুষের মন তদীয় ক্রীড়া ক্ষেত্র, তৃতীয়তঃ নিজেও মনে মনে পরমাত্মার ধ্যান করেন বলে দেবীর নাম মনসা। মন মানুষের শত্রু আবার মন মানুষের মিত্র হতে পারে। “মন এব মনুষ্যানাং কারণং বন্ধমোক্ষয়োঃ।” মন যদি শুদ্ধ, একাগ্র চিত্ত, নিজ বশীভূত, ভগবৎপরায়ণ হয় - ত সেই মন মোক্ষের কারন। তাই এই মনকে ‘মিত্র’ বলা যাবে। কিন্তু মন যদি অশুদ্ধ, চঞ্চল, ইন্দ্রিয় পরায়ণ, ভগবৎ বিমুখ হয়- ত সেই মন নরক গমনের হেতু। এই মন হল শত্রু মন। কশ্যপ মুনি মানব কল্যাণের জন্য ঔষধ আবিস্কারের কথা ভেবেছিলেন - তাই তাঁর মন থেকে দেবীর সৃষ্টি হল। তাই শাস্ত্রের এই শিক্ষা যে, আমাদের সর্বদা কল্যাণকর, হিতকর, ভগবানের কথা-
ইত্যাদি মনে ভাবনা চিন্তা করতে হবে।
মনসা আদিবাসী দেবতা। পূর্বে শুধু নিম্নবর্ণীয় হিন্দুদের মধ্যে তাঁর পূজা প্রচলিত ছিল। পরবর্তীকালে উচ্চবর্ণীয় হিন্দুসমাজেও মনসা পূজা প্রচলন লাভ করে। মনসার সাথে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণদের আত্মীয়তা কীভাবে গড়ে উঠলো সেই কথাটা একটু বলি। বর্তমানে মনসা আর আদিবাসী দেবতা নন, বরং তিনি একজন হিন্দু দেবীতে রূপান্তরিত হয়েছেন। হিন্দু দেবী হিসেবে তাঁকে নাগ বা সর্পজাতির পিতা কশ্যপ ও মাতা কদ্রুর সন্তান রূপে কল্পনা করা হয়েছে। খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দী নাগাদ্ মনসাকে শিবের কন্যারূপে কল্পনা করে তাঁকে শৈবধর্মের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সময় থেকেই প্রজনন ও বিবাহ রীতির দেবী হিসেবেও মনসা স্বীকৃতি লাভ করেন। কিংবদন্তি অনুযায়ী, শিব বিষপান করলে মনসা তাঁকে রক্ষা করেন; সেই থেকে তিনি বিষহরি নামে পরিচিতা হন। তাঁর জনপ্রিয়তা দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত প্রসারিত হয়। মনসার পূজকেরা শৈবধর্মের প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও অবতীর্ণ হন।
শিবের কন্যারূপে মনসার জন্মকাহিনি এরই ফলশ্রুতি। এর পরেই হিন্দুধর্মের ব্রাহ্মণ্যবাদী মূলধারায় মনসা দেবীরূপে স্বীকৃতিলাভ করেন। শ্রী আশুতোষ ভট্রাচার্য তার মনসামঙ্গল নামক সংকলন গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন- ‘’এখন দেখিতে হয় পশ্চিম-ভারতের ‘মনসা’ নামটি কখন হইতে জাঙ্গুলী দেবীর পরিবর্তে ব্যবহৃত হইতে আরম্ভ হয়। পূর্বেই বলিয়াছি জাঙ্গুলির সঙ্গে বৌদ্ধ সমাজের সম্পর্ক ছিল, তিনি তান্ত্রিক বৌদ্ধ দেবী ছিলেন। পাল রাজত্বের অবসানে সেন রাজত্বের যখন প্রতিষ্ঠা হইল, তখন এদেশে বৌদ্ধ ধর্মের বিলোপ ও তাহার স্থানে হিন্দুধর্মের পুনরাভ্যুত্থান হইয়াছিল, সেই সময়ে যে সকল বৌদ্ধ দেবদেবীকে নুতন নাম দিয়া হিন্দুসমাজের মধ্যে গ্রহণ করা হইয়াছিল, এই সর্পদেবী তাহাদের অন্যতম। বৌদ্ধ সংস্রবের জন্য তাঁহার জাঙ্গুলী নাম পরিত্যাক্ত হয় এবং তাহার পরিবর্তে মনসা নামকরণ হয়। বাংলার পূর্বোক্ত অর্বাচীন পুরাণগুলি ইহার কিছুকাল মধ্যেই রচিত হয় এবং তাহার মধ্য দিয়া মনসাকে শিবের কন্যারুপে দাবী করিয়া হিন্দু-সমাজের মধ্যে গ্রহণ করা হয়।’’
-
মনসা দেবী বা সর্প দেবী হিসাবে পুজা বোধ হয় বৌদ্ধ ধর্ম থেকে এসেছে বৌদ্ধ গ্রন্থেই সর্প দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায় । ‘বিনয়বস্তু’ ও ‘সাধনমালা’ নামক বৌদ্ধ গ্রন্থে সর্পের দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। এখানে সর্পের দেবীর বর্ণনা আছে। ‘সাধনমালা’ গ্রন্থে সর্প দেবীকে ‘জাঙ্গুলি’ বা ‘জাঙ্গুলিতারা’ বলে উল্লেখ করা আছে। প্রাচীন যুগে সাপের ওঝাকে বলা হতো জাঙ্গুলিক (বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস --- ডঃ অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়)। দক্ষিণ ভারতে দ্রাবিড় জাতির অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন ‘মঞ্চাম্মা’ বা ‘মনোমাঞ্চী’। পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন শাস্ত্রীর মতে মঞ্চামা নাম থেকেই ‘মনসা’ নামের উৎপত্তি। আবার ডাঃ আশুতোষ ভট্টাচার্য বৌদ্ধ সর্প দেবী জাঙ্গুলিকেই ‘মনসা’ বলে মানেন।
-
মনসা দেবী বা সর্প দেবী হিসাবে পুজা বোধ হয় বৌদ্ধ ধর্ম থেকে এসেছে বৌদ্ধ গ্রন্থেই সর্প দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায় । ‘বিনয়বস্তু’ ও ‘সাধনমালা’ নামক বৌদ্ধ গ্রন্থে সর্পের দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। এখানে সর্পের দেবীর বর্ণনা আছে। ‘সাধনমালা’ গ্রন্থে সর্প দেবীকে ‘জাঙ্গুলি’ বা ‘জাঙ্গুলিতারা’ বলে উল্লেখ করা আছে। প্রাচীন যুগে সাপের ওঝাকে বলা হতো জাঙ্গুলিক (বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস --- ডঃ অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়)। দক্ষিণ ভারতে দ্রাবিড় জাতির অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন ‘মঞ্চাম্মা’ বা ‘মনোমাঞ্চী’। পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন শাস্ত্রীর মতে মঞ্চামা নাম থেকেই ‘মনসা’ নামের উৎপত্তি। আবার ডাঃ আশুতোষ ভট্টাচার্য বৌদ্ধ সর্প দেবী জাঙ্গুলিকেই ‘মনসা’ বলে মানেন।
তাঁর মতে -- “অত্যন্ত প্রাচীনকাল হইতেই এই পূর্ব ভারতীয় বৌদ্ধ সমাজে জাঙ্গুলীদেবীর পূজা প্রচলিত হইয়া আসিতেছে। বৌদ্ধ তান্ত্রিক সাধনার সূত্র গ্রন্থ 'সাধনমালা'-তে এই জাঙ্গুলী দেবীর পূজার প্রকরণ ও তাহার মন্ত্রের সম্বন্ধে বিস্তৃত উল্লেখ আছে। তাহা হইতে সহজেই অনুমতি হইতে পারে যে, এই জাঙ্গুলীদেবী বর্তমানে সমাজে পূজিতা সর্প দেবী।” গবেষকদের মতে মনসা অনার্য দেবতা, পরে আর্য দের পুরানে স্থান পেয়েছেন। গবেষকরা বলেন বঙ্গদেশ ছিল জঙ্গলে ভরা। সাপের উপদ্রব ছিল বেশী। বাংলা ছিল কৃষি প্রধান। এই বিষাক্ত সাপেদের সাথেই তাঁদের বসবাস ও দ্বন্দ্ব। একটি বিষাক্ত প্রানী, যার ছোবোলেই মৃত্যু। তাই 'মনসা পূজা' বঙ্গদেশে বিশেষ প্রসার পায়। ত্রিপুরা, ওড়িশা, আসাম, দুই বঙ্গ, বিহারে এই পূজোর প্রচলন বেশী। হিমালয়ের পাদদেশে জঙ্গলে ছিল সাপেদের অবাধ বিচরণ ভূমি। মানুষের বসতি বাড়লো, সাপেদের সাথে সংঘাত বাড়লো। প্রথমে নিম্ন জাতির মধ্যে এই পূজোর প্রসার থাকলে কালক্রমে ব্রাহ্মণ্য দেবী হয়ে ওঠেন মা মনসা।
Courtesy by: Prithwish Ghosh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন