বীরভূমের প্রধানতম তীর্থ তারাপীঠ আজ আন্তর্জাতিক কৌতূহলের কেন্দ্রভূমি। শক্তিরঙ্গ বঙ্গভূমে অন্যতম প্রধান শাক্তপীঠ তারাপীঠ। ঠিক কবে এই পীঠস্থান আবিস্কৃত হয়, তা যেমন সঠিক জানা যায় না তেমনই সুস্পষ্ট নয় তারাদেবী সংক্রান্ত খুঁটিনাটি। অতিপ্রাচীন দেবী-শিলা মা উগ্রতারা, বশিষ্ঠদেবের পরম্পরা, সর্বোপরি দিব্যপুরুষ বামাচরণ চট্টোপাধ্যায় বা বামাক্ষ্যাপাকে ঘিরে চলিত রয়েছে অসংখ্য কিংবদন্তি। রহস্যের পরে রহস্য আবৃত রেখেছে এই শক্তিপীঠকে।
দেখা যাক রহস্যাবৃত তারাপীঠের কয়েকটি জরুরি তথ্যকে।
১. তারাপীঠ ৫১ পীঠের অন্তর্বর্তী নয়। ‘মহাপীঠপুরাণ’-এ উল্লিখিত পীঠস্থান-তলিকায় তারাপীঠের উল্লেখ নেই। জনচিত্তে অবশ্য একথা অনেকদিন ধরেই প্রচলিত রয়েছে যে, সতীর তৃতীয় নয়ন এখানে পড়েছিল। কিন্তু পুরাণাদি গ্রন্থে এর কোনও সমর্থন পাওয়া যায় না।
২. কিন্তু এই ‘তৃতীয় নয়ন’-এর কাহিনিকে প্রতীকী ধরে বিচার করলে একথা বোঝাই যায়, তারাপীঠ এক মহাশক্তির কেন্দ্র। পরবর্তী কালে গণবিশ্বাস এবং পুরাণ একত্র হয়ে তারাপীঠ-মহিমাকে অন্য মাত্রা প্রদান করেছে।
৩. তারাপীঠ আসলে একটি ‘সিদ্ধপীঠ’। সুদূর অতীত থেকে এখানে বহু সাধক এসেছেন তপস্যা করার জন্য। এবং তাঁদের সিদ্ধিলাভেই ধন্য হয়েছে এই পীঠ। সুতরাং এই পীঠের মহিমা অন্য শক্তিপীঠগুলির চাইতে একাবেরেই আলাদা।
৪. দেবী তারা-র উল্লেখ মূলত রয়েছে বজ্রযানী বৌদ্ধ ধর্মে। আবার দশমহাবিদ্যা স্তোত্রেও তিনি উপস্থিত। ‘তারারহস্য’ ও অন্যান্য তন্ত্রগ্রন্থ পাঠে বোঝা যায়, তারা কাল্ট অতি প্রাচীন। বজ্রযান গড়ে উঠেছিল মহাযানবাদ এবং লোকধর্মের মিশ্রণে। সেখানে দেবী তারার অবস্থিতি বেশ গুরত্বপূর্ণ স্থানে। দশমহাবিদ্যা স্তোত্র অবশ্য অনেক পরের রচনা। সেখানে তারার উল্লেখ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
৫. তারাপীঠ মন্দিরের স্থাপত্য খুই সাধারণ। কিন্তু এই মন্দির-স্থাপত্যে বাংলার নিজস্ব স্থাপত্য ভাবনার ছাপ রয়েছে। চালা ডিজাইনের মন্দির বাংলার ঐতিহ্যকেই ব্যক্ত করে।
৬. মায়ের শিলারূপ ঢাকা থাকে একটি আচ্ছাদনে। সেই আচ্ছাদনকেই মাতৃরূপের প্রতীক ধরা হয়। এই মূর্তিই তারামূর্তি হিসেবে ঘরে ঘরে পূজিতা।
৭. তারাপীঠ মহাঋষি বশিষ্ঠের সাধনপিঠ হিসেব প্রসিদ্ধ। ঐতিহাসিকভাবে এই বশিষ্ঠ ঠিক কে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। তিনি কি মাহাকাব্য-পুরাণে উল্লিখিত বশিষ্ঠ? সম্ভবত বশিষ্ঠ একটি সাধক-পরম্পরা। এই পরম্পরারই কোনও মহাত্মা এখানে সিদ্ধিলাভ করেন। তারাপূজার অন্তর্গত গুরুপংতি পূজায় বশিষ্ঠানন্দনাথের পূজা করতে হয়, আমার ধারণা ইনি কোনও নাথযোগী-তারাসাধক ও ইনিই সেই বশিষ্ঠ, শ্রী রামচন্নের গুরু বশিষ্ঠ না।
৮. তারপীঠের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ বামাচরণ চট্টোপাধ্যায় তথা বামাক্ষ্যাপা। তন্ত্রধর্মে তাঁর স্থান প্রশ্নাতীত উচ্চতায় স্থিত। তাঁকে ঘিরে যেমন আবর্তিত হয়েছে বাংলার তন্ত্রচর্চার একটি বড় অধ্যায়, তামনই তিনি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছেন অসংখ্য কিংবদন্তির।
৯. তারাপীঠ মহাশ্মশান আজও বহু তান্ত্রিকের বিচরণক্ষেত্র। তন্ত্রে উল্লিখিত শ্মাশানক্রিয়া সমাধা করতে সারা দেশ থেকে শাক্ত সাধকরা এখানে আসেন।
১০. তারাপীঠ দ্বারকা নদের তীরে অবস্থিত। দ্বারকা উত্তরবাহিনী জলধারা। উত্তরবাহিনী জলস্রোত কুলকুণ্ডলিনীর ঊর্ধ্বগতির প্রতীক। এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বিপুল।
১১. বাবা বামদেব ও মা তারার দর্শন অনেক মানুষ এখনও পেয়ে থাকেন।
১২. 'আধুনিকতার স্পর্শে তারাপীঠ সম্পূর্ণ বদলে গেছে ও তার মহিমা-মাহাত্ম্য ক্ষুণ্ণ হয়েছে' - বলে যারা উদ্বিগ্ন হ'ন, তারা মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন।
১৩. তারাপীঠের অদুরেই 'মলুটী'-তে মা তারার আর একটি সাধনক্ষেত্র বাম বাবার লীলাক্ষেত্রও বটে।
১৪. তারামায়ের ভৈরব মল্লারপুরের মল্লেশ্বর শিব বলে অনেকে বলে থান। কারণ হিসাবে তারা বলেন - কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার দিন মায়ের মুর্তি মন্দির থেকে বার করে তাই মল্লারপুরের মল্লেশ্বর শিব মন্দিরের দিকে মুখ করিয়ে বসানো হয়।
১৫. তারাপীঠ এক অদ্ভুত 'শক্তিকেন্দ্র' তাই মন্দিরের সংলগ্ন ও আশেপাশের গ্রামের পরিবারগুলিতে আদ্যশ্রাদ্ধের দিনেই মৎস্যমুখ হয় বা মাছ-ভাত খাওয়া হয়।
দেখা যাক রহস্যাবৃত তারাপীঠের কয়েকটি জরুরি তথ্যকে।
১. তারাপীঠ ৫১ পীঠের অন্তর্বর্তী নয়। ‘মহাপীঠপুরাণ’-এ উল্লিখিত পীঠস্থান-তলিকায় তারাপীঠের উল্লেখ নেই। জনচিত্তে অবশ্য একথা অনেকদিন ধরেই প্রচলিত রয়েছে যে, সতীর তৃতীয় নয়ন এখানে পড়েছিল। কিন্তু পুরাণাদি গ্রন্থে এর কোনও সমর্থন পাওয়া যায় না।
২. কিন্তু এই ‘তৃতীয় নয়ন’-এর কাহিনিকে প্রতীকী ধরে বিচার করলে একথা বোঝাই যায়, তারাপীঠ এক মহাশক্তির কেন্দ্র। পরবর্তী কালে গণবিশ্বাস এবং পুরাণ একত্র হয়ে তারাপীঠ-মহিমাকে অন্য মাত্রা প্রদান করেছে।
৩. তারাপীঠ আসলে একটি ‘সিদ্ধপীঠ’। সুদূর অতীত থেকে এখানে বহু সাধক এসেছেন তপস্যা করার জন্য। এবং তাঁদের সিদ্ধিলাভেই ধন্য হয়েছে এই পীঠ। সুতরাং এই পীঠের মহিমা অন্য শক্তিপীঠগুলির চাইতে একাবেরেই আলাদা।
৪. দেবী তারা-র উল্লেখ মূলত রয়েছে বজ্রযানী বৌদ্ধ ধর্মে। আবার দশমহাবিদ্যা স্তোত্রেও তিনি উপস্থিত। ‘তারারহস্য’ ও অন্যান্য তন্ত্রগ্রন্থ পাঠে বোঝা যায়, তারা কাল্ট অতি প্রাচীন। বজ্রযান গড়ে উঠেছিল মহাযানবাদ এবং লোকধর্মের মিশ্রণে। সেখানে দেবী তারার অবস্থিতি বেশ গুরত্বপূর্ণ স্থানে। দশমহাবিদ্যা স্তোত্র অবশ্য অনেক পরের রচনা। সেখানে তারার উল্লেখ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
৫. তারাপীঠ মন্দিরের স্থাপত্য খুই সাধারণ। কিন্তু এই মন্দির-স্থাপত্যে বাংলার নিজস্ব স্থাপত্য ভাবনার ছাপ রয়েছে। চালা ডিজাইনের মন্দির বাংলার ঐতিহ্যকেই ব্যক্ত করে।
৬. মায়ের শিলারূপ ঢাকা থাকে একটি আচ্ছাদনে। সেই আচ্ছাদনকেই মাতৃরূপের প্রতীক ধরা হয়। এই মূর্তিই তারামূর্তি হিসেবে ঘরে ঘরে পূজিতা।
৭. তারাপীঠ মহাঋষি বশিষ্ঠের সাধনপিঠ হিসেব প্রসিদ্ধ। ঐতিহাসিকভাবে এই বশিষ্ঠ ঠিক কে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। তিনি কি মাহাকাব্য-পুরাণে উল্লিখিত বশিষ্ঠ? সম্ভবত বশিষ্ঠ একটি সাধক-পরম্পরা। এই পরম্পরারই কোনও মহাত্মা এখানে সিদ্ধিলাভ করেন। তারাপূজার অন্তর্গত গুরুপংতি পূজায় বশিষ্ঠানন্দনাথের পূজা করতে হয়, আমার ধারণা ইনি কোনও নাথযোগী-তারাসাধক ও ইনিই সেই বশিষ্ঠ, শ্রী রামচন্নের গুরু বশিষ্ঠ না।
৮. তারপীঠের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ বামাচরণ চট্টোপাধ্যায় তথা বামাক্ষ্যাপা। তন্ত্রধর্মে তাঁর স্থান প্রশ্নাতীত উচ্চতায় স্থিত। তাঁকে ঘিরে যেমন আবর্তিত হয়েছে বাংলার তন্ত্রচর্চার একটি বড় অধ্যায়, তামনই তিনি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছেন অসংখ্য কিংবদন্তির।
৯. তারাপীঠ মহাশ্মশান আজও বহু তান্ত্রিকের বিচরণক্ষেত্র। তন্ত্রে উল্লিখিত শ্মাশানক্রিয়া সমাধা করতে সারা দেশ থেকে শাক্ত সাধকরা এখানে আসেন।
১০. তারাপীঠ দ্বারকা নদের তীরে অবস্থিত। দ্বারকা উত্তরবাহিনী জলধারা। উত্তরবাহিনী জলস্রোত কুলকুণ্ডলিনীর ঊর্ধ্বগতির প্রতীক। এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বিপুল।
১১. বাবা বামদেব ও মা তারার দর্শন অনেক মানুষ এখনও পেয়ে থাকেন।
১২. 'আধুনিকতার স্পর্শে তারাপীঠ সম্পূর্ণ বদলে গেছে ও তার মহিমা-মাহাত্ম্য ক্ষুণ্ণ হয়েছে' - বলে যারা উদ্বিগ্ন হ'ন, তারা মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন।
১৩. তারাপীঠের অদুরেই 'মলুটী'-তে মা তারার আর একটি সাধনক্ষেত্র বাম বাবার লীলাক্ষেত্রও বটে।
১৪. তারামায়ের ভৈরব মল্লারপুরের মল্লেশ্বর শিব বলে অনেকে বলে থান। কারণ হিসাবে তারা বলেন - কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার দিন মায়ের মুর্তি মন্দির থেকে বার করে তাই মল্লারপুরের মল্লেশ্বর শিব মন্দিরের দিকে মুখ করিয়ে বসানো হয়।
১৫. তারাপীঠ এক অদ্ভুত 'শক্তিকেন্দ্র' তাই মন্দিরের সংলগ্ন ও আশেপাশের গ্রামের পরিবারগুলিতে আদ্যশ্রাদ্ধের দিনেই মৎস্যমুখ হয় বা মাছ-ভাত খাওয়া হয়।
Written by: Prithwish Ghosh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন