২৫ আগস্ট ২০১৭

যুগাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও দ্বারকা নগরী

ম্লেচ্ছ-বিধর্মী ও স্বধর্মীয় কিছু অতি-পণ্ডিত মানুষ সনাতন হিন্দু ধর্মের দেবদেবী নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। সেইসব মানুষেরা ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কে যথেষ্ট খারাপ ভাবে সমালোচনা করে। তাদের উদ্দেশ্যে এই পোস্ট।

যুগাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও দ্বারকা নগরী

=================================

দ্বাপর যুগের সন্ধিক্ষণে আবির্ভূত যুগাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। পাশবিক শক্তি যখন সত্য সুন্দর ও পবিত্রতাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই অসুন্দরকে দমন করে মানবজাতিকে রক্ষা এবং শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠার জন্য যুগাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবত গীতার বর্ণনায় শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপর যুগের সন্ধিক্ষণে বিশৃঙ্খল ও অবক্ষয়িত মূল্যবোধের পৃথিবীতে মানবপ্রেমের অমিত বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলনই সে বাণীর মূল বিষয়। তাই তিনি ভক্তদের কাছে প্রেমাবতার।

দ্বাপর যুগের অস্তিত্ব এবং বর্তমান

==========================


দ্বাপর যুগের অস্তিত্ব এবং বিভিন্ন নিদর্শন বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন। দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকার রাজা ছিলেন। বর্তমান ভারতের গুজরাট প্রদেশে জামনগর জেলার গোমতি নদীর তীরে দ্বারকা নগরী অবস্থিত এবং এখানে প্রায় ৮০০ বছর আগে নির্মিত ৫৭ মিটার উঁচু কৃষ্ণ মন্দির আছে। এটাই সমস্ত সন্যাসীদের কাছে দ্বারকা বলে স্বীকৃত। অন্যদিকে মহাভারতে বলা হয়েছে যে শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃৃক প্রতিষ্ঠিত দ্বারকা সাগরে নিমজ্জিত হয়েছিল। এই মহাকাব্যের পরিশিষ্ট অংশ হরিবংশে বলা হয়েছে-এই সমৃদ্ধ নগরী ভারতের পশ্চিম উপকূলে যেখানে গোমতী এসে সাগরে মিলেছে সেখানে অবস্থিত।

গোয়ায় অবস্থিত ন্যাশানাল ইন্সটিটিউট অব ওসেনোগ্রাফি এর মেরিন আরকিওলজি সেন্টারের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ড. এস আর রাও বলেছেন- জলনিমগ্ন দ্বারকা নগরী খুঁজে পাওয়া গেছে। এই প্রবন্ধে তিনি সমুদ্রে ডুবে যাওয়া জাহাজ আবিষ্কারের সময় খুঁজে পাওয়া জলের নিচে অবস্থিত হিন্দু মন্দিরসহ একটা নগরী আবিষ্কারের এক অত্যাশ্চর্য বর্ণনা দেন। রূপকথার গল্প থেকে তিনি তুলে আনেন দ্বারকা কে মানুষের চোখের সামনে। এই স্থানেই পাওয়া গেছে ২১০ টি জাহাজের ভগ্নাবশেষ যা প্রমাণ করে এখানে এক সময় অবস্থিত ছিল এক বিশাল সমুদ্র বন্দর যা আবার মানুষের চোখের সামনে ঊঠে আসছে। ভারতীয় সমুদ্র উপকূলে অনেক প্রাচীন বন্দর ডুবে গেছে তার মাঝে দ্বারকা অন্যতম। যদিও পুরানো দ্বারকার উপরই নতুন দ্বারকা অবস্থিত তবুও এর প্রকৃত পরিচয় ১৯৭৯-৮০ সালের আগে পাওয়া যায়নি।

এ সময় দ্বারকাধীশ মন্দিরের সামনের মাটি খুড়ে খ্রিষ্টপূর্ব ১৪ শতকের তিনটি মন্দিরের ধবংসাবশেষ পাওয়া যায় এবং ডুবন্ত নগরীটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করা হয়। এর মাঝে খ্রীষ্টপূর্ব নবম শতকে নির্মিত বিষ্ণু মন্দির সবচেয়ে পুরোনো। এখানে বিষ্ণু, ব্রহ্মা ও দেবাদিদেবের মূর্তি আছে। প্রথমদিকে মাটির স্থরে একটা লাল মাটির বস্তু পাওয়া গেছে। এটি প্রভাসক্ষেত্রের এবং বয়স ১৫শ খ্রিষ্টপূর্বের (কার্বন ১৪ প্রণালীতে বয়স পাওয়া গেছে)। প্রভাস হচ্ছে আরেকটি মহাভারতীয় তীর্থ যেটি সৌরাষ্ট্রের দক্ষিণে অবস্থিত। আরকিওলজিষ্ট হিসে বোরালা বলেছেন, মহাভারতের যুদ্ধ খ্রিষ্টপূর্ব ১৪০০ শতকে হবার প্রমাণও পাওয়া গেছে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ শতকে সমুদ্রের তীরে বসতি ছিল বলে প্রমাণ পাওয়ার পর ডুবন্ত দ্বারকার খোঁজার সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে গিয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা কচ্ছ উপকূলে মাটি পরীক্ষা করে জানিয়েছেন ১০০০০ বছর আগে এই কচ্ছ উপসাগরীয় অঞ্চল ৬০ মিটার নিচু ছিল। হরিবংশে (বিষ্ণু পর্ব- ৫৭-১০৩) একে সমুদ্রের ভেতরে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমান দ্বারকার ৩২ কিমি দুরে খুঁজতে শুরু করেন। এই দ্বারকাতেই পাওয়া গেছে হরপ্পা যুগের পুতির মালা, হাড়ি-পাতিল এবং পলা আকৃতির বিরাট দালানের খন্ডাংশ। এগুলো অনেক প্রাচীন বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। এছাড়া শামুক, ঝিনুক এর তৈরি দেয়াল, সিন্ধু সভ্যতার শঙ্খের সীলমোহরসহ আরো অনেক আরটিফেক্ট এ ভর্তি এই স্থান।

পানির ৬.৪১ মিটার নিচে একটি দুর্গ পাওয়া গেছে, যেটা চুনাপাথরের অর্ধ বৃত্তাকার ব্লক দিয়ে তৈরী। এটি সমুদ্র নারায়ণ মন্দির থেকে ৬০০ মিটার সমুদ্র গভীরে অবস্থিত। এখানে তিন ছিদ্র বিশিষ্ট ত্রিফলা নোঙর উদ্ধার করা হয়েছে- যা ক্ষয় রোধক দেয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হত সাথে সাথে শত্রুর আক্রমণ থেকেও বাঁচাত।

ডুবে যাওয়ার কারণ

===================

বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে- ১০০০০ বছর আগে সমুদ্র পৃষ্ঠ বর্তমান থেকে ৬০ মিটার নিচু ছিল। অতএব ৩৫০০ বছর আগে সমুদ্র ৯ মিটার নিচু ছিল। দ্বারকা ডুবে যাওয়ার কারণ সমুদ্র পৃষ্টের ঊচ্চতা বৃদ্ধি। এভাবে সমুদ্র উপকূল ধ্বংস হতে খুব একটা দেখা যায়না- শুধু মাত্র কার এস সিটি বাহরাইনের এক বন্দর এই সময় এই ডুবে যায়। দুই স্থানের বয়সকাল প্রায় একই বলে নির্ধারন করেছেন বিজ্ঞানীরা। দ্বারকায় যে তৈজসপত্র পাওয়া গেছে তা থেকে বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন যে এস্থানে অনেক পুরোনো এক সভ্যতা ছিল যা মহাভারতে বর্ণিত শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরীর সাথে মিলে যায়।

মহাভারতে আছে- শ্রীকৃষ্ণের বয়স যখন ১২৫ তখন যদু বংশ ধ্বংস হয় সামান্য এক কারণে। এটা দেখে শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম বনবাসী হবার সংকল্প করেন এবং অর্জুনকে সংবাদ পাঠান। বনে শ্রীকৃষ্ণ বসে থাকা অবস্থায় জরা নামে এক ব্যাধ হরিণ মনে করে কৃষ্ণ কে বান মারেন। শ্রীকৃষ্ণ সেখানেই দেহত্যাগ করেন। অর্জুন এই সংবাদ পেয়ে দ্বারকায় এসে শ্রীকৃষ্ণের দেহ সৎকার করেন। এর পর পরই দ্বারকা সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়। যে নগরী শ্রীকৃষ্ণ নিজের হাতে শাসন করেছিলেন সে নগরী শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুর পর পরই সমুদ্রের মাঝে বিলীন হয়।

Courtesy by: Prithish Gosh
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।