০১ এপ্রিল ২০১৬

রামায়ন কথা ( আদিকাণ্ড – ৩১ )

বিশ্বামিত্র মুনি রাম লক্ষণ কে সাথে নিয়ে গেলেন বনে । তাড়কা সম্বন্ধে বলে মুনি বললেন- “রাম! তাড়কার দেহে ব্রহ্মার বরে সহস্র হস্তীর শক্তি আছে।” রামচন্দ্র জানালেন- “ হে ব্রহ্মর্ষি ! তাঁড়কা নারী। নারীর ওপর অস্ত্র নিক্ষেপ কি প্রকারে করি ?” মহর্ষি বললেন- “নারী হোক বা পুরুষ, পাপ কর্মের ফল সকলকেই ভুগতে হয়। তাড়কা তার কৃতকর্মের ফল পাবেই।” মুনি রামচন্দ্র ও লক্ষণ কে নিয়ে তাড়কার বনে প্রবেশ করলো । হাড় হিম জঙ্গল সকল সৌন্দর্য হারিয়ে ভয়ঙ্কর চেহারা প্রাপ্তি করেছিল । বিকট দর্শন চামচিকা, এদিক ওদিক কেবল উড়ে বেড়াছিল্ল । চারপাশে অস্থি, কঙ্কালের খুলি গড়াগড়ি খাচ্ছে । এই জঙ্গলে তাড়কা যাকে পেতো তাকেই ভক্ষণ করত । মুনি বিশ্বামিত্র জানালেন “তোমরা সাবধানে চল। এই বনেই তাড়কা থাকে। সেই রাক্ষসী মহাবল ধরে।এছারা মায়াবিদ্যা জানে।” মানুষের গন্ধ পেয়ে তাড়কার নিদ্রাভঙ্গ হল। উদরের ক্ষুধা তীব্র হল। মনের আনন্দে সে আসতে লাগল। বড় বড় তাল, নারকেল, খেঁজুর , বাঁশবন দুলিয়ে এমন ভাবে আসতে লাগলো, যে দূর থেকেই দেখা গেল। মনে হচ্ছিল্ল যেনো এক বিশাল আলোরন জঙ্গল গুলোকে দোলা দিয়ে আসছে । অট্টহাস্য শোনা গেল তাড়কার । সামনে এসে সে রাম, লক্ষণ, মুনিকে দেখতে পেল। কচি বালক দেখে তাড়কার জিহ্বা দিয়ে জল ঝড়ে মাটিতে পড়ে পুকুর সৃষ্টি হল । বিশাল লম্বা চেহারা, স্থূল শরীর, মুখের দন্ত গুলি গজ হস্তীর নয়, হাতের নখ তীক্ষ্ণ তরবারির ন্যয় ছিলো রাক্ষসীর । চোখ দুটিতে আগুনের ভাটা জ্বলছিল । পা দুটি দেখে মনে হচ্ছিলো বিশাল আকৃতির স্থূল স্তম্ভের ন্যায়, স্তন্য মণ্ডল পর্বতের চূড়ার ন্যায়। রাক্ষসী কঙ্কাল, অস্থির মালা ধারন করেছিলো । 

রাক্ষসী অট্টহাস্য করে বলল- “প্রত্যহ কেবল মুনি ঋষিদের কৃশকায় শরীর ভক্ষণ করি। আজ বিধাতা আমার জন্য দুটি কোমল বালক প্রেরন করেছে। এদের খেয়ে মুখের স্বাদ পরিবর্তন করবো ।” শুনে রামচন্দ্র হাসতে লাগলেন । ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র বললেন- “রাম। সন্ধ্যা প্রায় সমাগত । তুমি শীঘ্র এর বধ কর। রাত্রে নিশাচর রাক্ষস রাক্ষসী দের শক্তি বৃদ্ধি পায়।” রামচন্দ্র তখন তাড়কাকে লক্ষ করে বাণ নিক্ষেপ করতে লাগলেন। তাড়কা মায়াবিদ্যা দ্বারা অদৃশ্য হয়ে শিলাবৃষ্টি সৃষ্টি করলো। রামচন্দ্র পবন বাণ নিক্ষেপ করে মেঘ সড়িয়ে দিলেন । তাড়কা তখন সামনে এসে আগুনের গোলা নিক্ষেপ করতে লাগলো। তাড়কার নিঃশ্বাসে বনে প্রলয় ঝড় বইছিল । কখনো আগুনের হুল্কা নিক্ষেপ হচ্ছিল্ল। রামচন্দ্র বাণ দ্বারা তা প্রতিরোধ করলেন । এইভাবে যুদ্ধ চলতে লাগল। তাড়কা বড় বড় শাল, শিশু গাছ রাম লক্ষণের দিকে ছুড়তে লাগলো । রামচন্দ্র বাণ দ্বারা সেই সব গাছ খন্ড খণ্ড করতে লাগলেন । তাড়কা তখন পর্বতের চূড়ার ন্যায় বৃহৎ প্রস্তর খণ্ড বর্ষণ করতে থাকলো। ভগবান রাম তীক্ষ্ণ শর নিক্ষেপ করে সেই প্রস্তর গুলি ধ্বংস করলেন । এরপর ভগবান রাম ধনুকে বজ্রবাণ আনয়ন করলেন। মন্ত্র পড়ে সেই বাণ নিক্ষেপ করলেন । কানে তালা লাগানো বাজের শব্দ ও ঝলসে যাওয়া বজ্রপাত সৃষ্টি করে সেই বাণ তাড়কার বুকে বিদ্ধ হল । 

সেই বাণ তাড়কার প্রান হরণ করল । তাড়কা মহা আর্তনাদ করে ভূপতিত হল । রক্তধারা নদীর ন্যায় প্রবাহিত হল। তাড়কা যখন ভূপতিত হল – তখন বসুমতী প্রবল কেঁপে উঠলো । গাছপালা গুলো ভেঙ্গে চুড়ে তাড়কার পৃষ্ঠদেশের তলায় চূর্ণ হল । বিশালাকৃতি বট, অশ্বত্থ , আম্র, কৃষ্ণচূড়া ইত্যাদি মহীরুহ গুলো চূর্ণ হল। বিকট রাক্ষসীর দেহ বিশাল পর্বতের ন্যায় জঙ্গলে পড়লো । দূর থেকে তাঁকে দেখলে এক পর্বত রূপে ভ্রম হবে । দেবতারা প্রীত হলেন । তাড়কার সদ্গতি হল। তাঁর শাপমুক্তি হল । বিশ্বামিত্র মুনি আশীর্বাদ করতে লাগলেন। অতঃ তিনি সন্ধ্যা হতে রাম লক্ষণ কে নিয়ে আশ্রমে গেলেন । আশ্রমের শিষ্যরা রাম লক্ষণ কে আদর যত্ন আপ্যায়ন করল। বনের মিষ্ট ফল, কন্দ, মধু রাম লক্ষণ কে খেতে দিলেন । বিশ্বামিত্র মুনি বললেন- “বতস্য রাম। কাল আমি তোমাকে বলি ও অতিবলি বিদ্যা দান করবো। তোমাকে আরোও কিছু দিব্যাস্ত্র প্রদান করবো।” রামচন্দ্র বললেন- “মহর্ষি । আপনাকে আমি গুরু রূপে প্রাপ্তি করে ধন্য হব। আপনি তপস্যা দ্বারা ব্রহ্মণ্যত্ব প্রাপ্তি করে ক্ষত্রিয় থেকে ব্রহ্মর্ষি হয়েছেন । জগতের কাছে আদর্শ তৈরী করেছেন।” তাড়কার আতঙ্ক মিটলেও তাড়কার তিন কোটি ( কৃত্তিবাসী রামায়নে লেখা তাড়কার সাথে ৩ কোটি রাক্ষস থাকতো ) রাক্ষস মারীচ , সুবাহু জীবিত ছিলো ।

( ক্রমশঃ )
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।