
তাই বলে কেউ ধরে নেবেন না যে শাস্ত্রে লেখা ঐ সব কথা মিথ্যা। যে ব্যাক্তি শাস্ত্র মানে না- ইহলোকে সে শান্তি তো পায় না, মরেও মুক্তি পায় না। হ্যা শাস্ত্র নিয়ম অবশ্যই পালনীয়, কিন্তু জীবিত থাকাকালিন পিতামাতার সেবা করা, দেখাশোনা করাও শাস্ত্রের বিধান । গণেশ জী বিশ্ব পরিক্রমা করেছিলেন হরগৌরীকে পরিক্রমা করেই। পিতার অঙ্গীকার করা বচন রাখতে রামচন্দ্র বনবাস গেছিলেন । খালি শাস্ত্রের একদিকটা দেখলেই হয় না। যাই হোক শ্রবণ কুমার পীঠে দাঁড়িপাল্লার মতোন বাঁশের সাথে বাধা ঝুঁড়িতে পিতামাতাকে বসিয়ে তীর্থে যেতেন । একদা শ্রবণ কুমার অন্ধ পিতামাতাকে একস্থানে বসিয়ে দ্বিপ্রহরের ফল মূলাদি সংগ্রহ করতে বের হলেন। ত্রেতা যুগে ভারতবর্ষের বন আজকের মতো রুক্ষ ছিলো না। চারপাশে সবুজে সবুজ, এছাড়া গাছ গুলি নানাপ্রকার মিষ্ট ফলে বারোমাস ভরা থাকতো। মানুষ পশু পাখীর তুলনায় ত্রিনগুণ বৃক্ষ ছিলো। যত ইচ্ছা বনের ফল খাও – এমন ছিলো । শ্রবণ কুমার ফলমূলাদি আহরণ করে নদীতে জল নিতে গেলো। নদীর নিকটেই দশরথ রাজা ধনুর্বাণ নিয়ে মৃগ অন্বেষণ করছিলেন । শ্রবন কুমার যখন জল ভরছিলেন তাঁর শব্দে দশরথ রাজা ভাবলেন কোন মৃগ জল খাচ্ছে । তিনি আগেপিছে না দেখে অব্যর্থ শব্দেভেদী বাণ চালালেন । বাণ গিয়ে শ্রবন কুমারের বুক বিদ্ধ করল । মানবের চিৎকারে দশরথ রাজা ভয় পেয়ে গিয়ে দেখেন তার বাণ শ্রবণকুমারের বুক বিদ্ধ করছে। দশরথ রাজা মুনির সামনে গিয়ে বললেন- “হে মুনিকুমার । আমার দ্বারা অজান্তে মহাপাপ হয়েছে। আমি আপনাকে বধ করতে চাইনি। আমি মৃগ ভ্রমে বাণ নিক্ষেপ করেছিলাম। আপনি এই অধম দশরথকে ক্ষমা করুন।”
আহত শ্রবণকুমার বললেন- “হে রাজন! আমি শ্রবন কুমার। আমার পিতা অন্ধমুনির কাছে আমাকে শীঘ্র নিয়ে চলুন। আমার পিতামাতা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন।” এই বলে শ্রবণকুমার দেহত্যাগ করলেন । রাজা মুনি কুমারের মৃতদেহ তার পিতামাতার কাছে নিয়ে গেলেন । মুনি আর মুনি পত্নী কে বললেন- “মুনিবর । আমি অযোধ্যার নৃপতি দশরথ । মৃগ ভ্রমে আমার নিক্ষেপিত শরে আপনাদের পুত্র শ্রবণ কুমারের প্রান গেছে। আমার দ্বারা অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটি হয়েছে । ” শুনে বৃদ্ধ পিতামাতা শোকে কেঁদে উঠলেন । বিশেষ করে শ্রবণকুমারের মা এই শোক সহ্য করতে না পেরে তখুনি প্রান ত্যাগ করলেন। বৃদ্ধ অন্ধ মুনি বললেন- “দশরথ। অগ্নিতে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় হাত দিলে হাত পুড়েই যায়। তোমার অনিচ্ছাকৃত ভুলে আমরা পুত্র হারালাম। আমার স্ত্রী দেহ রেখেছেন। আমিও আর এই দেহ রাখবো না। আমি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি যেভাবে আমরা পুত্রশোকে দেহ ত্যাগ করলাম, তুমিও পুত্রশোকে ইহলোকে ত্যাগ করবে।” দশরথ বললেন- “মুনিন্দ্র আমি অপুত্রক। আমার কোন পুত্র নেই। কিভাবে আপনার শাপ বাস্তবায়িত হবে?” অন্ধ মুনি বললেন- “সম্রাট । ব্রাহ্মণের বাক্য কদাপি মিথ্যা হয় না। তুমি ঋষশৃঙ্গ মুনিকে এনে পুত্রেষ্টি যজ্ঞ সম্পন্ন কর। তোমার অবশ্যই পুত্র হবে।” এই বলে অন্ধ মুনি প্রান ত্যাজিলেন । দশরথ তিনজনকে প্রনাম জানিয়ে বললেন- “আপনারা আশীর্বাদ দিলেন অভিশাপের ছলে।” এরপর রাজা তিনজনের দেহ সৎকার করলেন ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন